আওয়ামী লীগ যেন মিছিল বা সভা-সমাবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
ডেইলি স্টার বাংলার ভাষ্যে শনিবার দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এই মন্তব্য করেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।”

ইদানীং আওয়ামী লীগ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করছে। সেই মিছিল যাতে আওয়ামী আর করতে না পারে সে কারণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এই কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এই নির্দেশ তিনি দিতে পারেন কিনা?
আওয়ামী লীগ কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন না। গণ আন্দোলনে তাঁদের পতন হয়েছে, এটা সত্যি কথা। কিন্তু, সেই পতন তাদের মিছিল মিটিং করার সাংবিধানিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ বা সীমিত করে না। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদ দেশের জনগণকে জনসভা করার কিংবা মিছিলে যোগ দেবার অধিকার দিয়েছে। ৩৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী,
“জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।”
আওয়ামী লীগের যে কয়টা ঝটিকা মিছিল হয়েছে, তার সবগুলোই হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে এবং নিরস্ত্র অবস্থায়। এতে অংশ নেওয়া কারো হাতে অস্ত্র কিংবা বিস্ফোরক ছিলো বলে আমি কোনো পত্রিকাতে দেখি নাই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তাহলে সমস্যা কোন জায়গায়? তিনি সংবিধান রক্ষা করবেন এই শপথ নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হয়েছেন। এখন কেনো সেই শপথ ভঙ্গ করছেন তিনি?
গত বছরের অগাস্ট মাসের পাঁচ তারিখে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটলে, ক্রান্তিকালীন সরকার হিসাবে অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে। আমাদের সংবিধানে এই ধরনের কোন সরকারের ব্যবস্থা নেই। সহজ হিসাবে এরা নিজেরাই একটা অবৈধ সরকার। তবে, সে কথা অবশ্য পুরোপুরি বলা যায় না। আগের সরকার জনরোষের মুখে পালিয়ে যাওয়াতে সরকারের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে, জরুরী ব্যবস্থা হিসাবে এই সরকার এসেছে। আসার আগে এরা সুপ্রিম কোর্ট থেকেও একটা রুলিং নিয়েছে। ফলে, এদেরকে পুরোপুরি অবৈধ সরকার বলা যায় না টেকনিক্যালি। তারপরেও এই সরকারকে সম্পূর্ণ বৈধতা পেতে গেলে আসলে পরের নির্বাচিত সরকার এবং সংসদের উপর নির্ভর করতে হবে। তারা যদি অন্তর্বর্তী সরকার এবং তাদের কার্যক্রমকে বৈধতা দেয়, তবে বৈধ। আর বৈধতা না দিলে অবৈধ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিজেরই যেখানে বৈধতা নির্ভর করছে আগামী সংসদের উপরে, সেখানে এই রকমভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করতে থাকলে, তিনি কি আশা করতে পারেন যে তাঁর সরকার এবং তাঁকে বৈধতা দেবে আগামীর সরকার? বিএনপি বা জামাত সরকার এলে হয়তো দিতেও পারে। যেহেতু এই দুই দলই আওয়ামী বিরোধী। তবে, সেখানেই কি তাঁর বিপদ শেষ হবে? এই দেশে আওয়ামী লীগ এখনও বৃহত্তম রাজনৈতিক সংগঠন। আপাতত তারা চাপের মুখে আছে। কিন্তু, এই অবস্থা চিরস্থায়ী হবে না। অদূর ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ যখন ফিরে আসবে, আমি নিশ্চিত সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে তাঁকে বিচারের সম্মুখীন করবে তারা।
রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই।