আমেরিকার উদ্দেশ্য সফল না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন দেবে না ইউনুস

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে, তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি ও নিরাপত্তা ইস্যু। বিএনপি ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইলেও, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করেনি।

বাংলাদেশে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে তুলেছে জাতিসংঘের ঘোষিত তিন বছর মেয়াদী প্রকল্প “ব্যালট”। এর লক্ষ্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা হলেও, বিশ্লেষকদের মতে, প্রকল্পটি বাস্তবিক অর্থে নির্বাচন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার পাঁয়তারা।

বিশ্লেষক ও কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, এই অনিশ্চয়তা শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ফসল নয়, বরং একটি বৃহৎ আন্তর্জাতিক পরিকল্পনার অংশ। যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই অধ্যাপক ইউনূসের সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। আর আমেরিকার এজেন্ডা বাস্তাবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন না।

২০১৮ সালে মিয়ানমারে অং সান সু চির সরকার চীনের সঙ্গে কিয়াউকফিউ গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে চুক্তি করে। এই চুক্তির পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র রাখাইন রাজ্যে অস্থিরতা সৃষ্টির পরিকল্পনায় নামে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। পরবর্তী সময় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিধনযজ্ঞ, তাদের বাংলাদেশে স্থানান্তর এবং মানবিক করিডোর স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল সেই মার্কিন কৌশলের অংশ। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করছে বলেও দাবি উঠেছে।

ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ড. ইউনূস হচ্ছেন বাংলাদেশের “অং সান সুচি”। যে সুচিকে মার্কিনিরা ক্ষমতায় এনেছিল চীনকে ঠেকাতে, কিন্তু পরে ব্যর্থ হলে তাকে সরিয়ে কারাবন্দি করে। এবার সেই একই মডেলে ইউনূসকে বসানো হয়েছে ক্ষমতায়। যদি মার্কিন স্বার্থ পূরণ না হয়, তাহলে তার ভবিষ্যৎও হবে সুচির মতো।

সূত্র বলছে, ড. ইউনূসকে জাতিসংঘ মহাসচিব বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বাইডেন প্রশাসন। বিনিময়ে তাকে ব্যবহার করা হচ্ছে এক উচ্চপর্যায়ের প্রক্সি যুদ্ধে, যার মূল লক্ষ্য—বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি, মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের সহযোগিতা এবং চীনের “বেল্ট অ্যান্ড রোড” পরিকল্পনা ব্যাহত করা।

সম্প্রতি ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, “ডিসেম্বরেই নির্বাচন হওয়া উচিত।” এই বক্তব্যে সামরিক বাহিনীর অবস্থান পরিষ্কার হলো যে, তারা দীর্ঘ মেয়াদি অনিশ্চয়তার মধ্যে না গিয়ে একটি সময়সীমার মধ্যেই নির্বাচন চায়।

এদিকে গতকাল বুধবার (২৮ মে) নয়াপল্টনে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, “আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”

তিনিও দেশবাসীকে প্রস্তুত থাকতে বলেন এবং দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন, “ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত হয় তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। ’

বিশ্লেষকদের মতে,একদিকে রাজনৈতিক দল ও সেনাবাহিনীর নির্বাচনের দাবির চাপ, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক শক্তির সমীকরণে পরিচালিত একটি অনির্বাচিত সরকার—বাংলাদেশ এক গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রবেশ করছে। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত এই উত্তেজনা আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, বঙ্গোপসাগরের দখল, রোহিঙ্গা করিডোর এবং কৌশলগত বন্দর ব্যবহার ঘিরে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে চীন-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার অন্যতম ক্ষেত্র। এই অবস্থায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১