বিশেষ প্রতিনিধি :
নিউইয়র্কে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বইমেলা-২০২৫ তে ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বইমেলা ও নবী-জিনাত সাহিত্য পুরস্কার’ পেয়েছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও গবেষক ড:সেজান মাহমুদ। ২৪ মে, শনিবার এক মনোজ্ঞ আয়োজনের মধ্য
দিয়ে তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন, এবারের আহ্বায়ক ডঃ নুরুন নবী । নগদ অর্থসম্মানী লেখকের হাতে তুলে দেন, নবী ফাউন্ডেশনের
অন্যতম কর্ণধার বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও সমাজচিন্তক ড: জিনাত নবী।
ফুল দিয়ে বরণ করেন খ্যাতিমান শিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম।
এই পর্বটি সঞ্চালনা করেন কবি ফকির ইলিয়াস।
নবী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ড: নুরুন নবী বলেন, অর্থসম্মানী এক হাজার ডলার ও একটি ক্রেস্ট দিয়ে এবারের পুরস্কারটি প্রবর্তিত হলো।
আগামী বছরেই এর অর্থসম্মানী বাড়ানো হবে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের
একজন বিশিষ্ট লেখক এই আজীবন সম্মাননা পাবেন। যিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবন,আদর্শ,কর্মযজ্ঞ,চেতনা, অসাম্প্রদায়িক
মূল্যবোধ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের একাত্তর- এর আলোকে আজীবন লেখালেখি করেছেন।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে ড: সেজান মাহমুদ বলেন, আমি একটি
আদর্শ নিয়েই কৈশোর থেকে লেখালেখি শুরু করেছিলাম। আমার মাতৃমাটির প্রতি আমি দায়বদ্ধ। এই পুরস্কার যারা প্রবর্তন করেছেন,
নবী ফাউন্ডেশনের দুই ব্যক্তিত্ব আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন। বিচারকমণ্ডলী আমাকে নির্বাচন করায় আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।
আমি একথাটিই নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমি আজীবন বঙ্গবন্ধু
ও মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ কে ধারণ করেই জীবন পরিচালিত করতে চাই। এই সম্মাননা আমি সেই প্রত্যয় ব্যক্ত করেই সানন্দে গ্রহণ করছি।
সেজান মাহমুদ বহু প্রতিভার লেখক। অফিশিয়াল নাম, সালেহ মোঃ মাহমুদুর রহমান। একাধারে কথাশিল্পী, কবি, গীতিকার, ছড়াকার, সুরকার, চলচ্চিত্রকার। অন্যদিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানী, জনস্বাস্থ্য ও গ্লোবাল হেলথ বিশেষজ্ঞ। ঢাকা থেকে এম, বি, বি, এস পাশ করার পর
আমেরিকার বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এন্ডোক্রাইনোলজিতে ফেলোশিপ,
জনস্বাস্থ্যে এম, পি, এইচ, এবং বার্মিংহাম থেকে জনস্বাস্থ্যের ওপরে পি, এইচ, ডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে কুইনিপীয়াক ইউনিভার্সিটির ফ্রাঙ্ক এইচ নেটার এমডি স্কুল অব মেডিসিনে ডিন
ফর ইকুইটি, ইনক্লুশন এন্ড ডাইভার্সিটি এবং প্রফেসর অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস হিসাবে কর্মরত।
মুক্তিযুদ্ধে নৌকমান্ডোদের গৌরবজনক ভূমিকার অকথিত সত্যি ঘটনা নিয়ে তাঁর লেখা বাংলাদেশের প্রথম ডকু-উপন্যাস ‘আপারেশন জ্যাকপট’ সৃশনশীলতা ছাড়িয়ে একটি দালিলিক গ্রন্থের সম্মান
পেয়েছে। তাঁর নিরিক্ষাধর্মী উপন্যাস ’অগ্নিবালক’ (২০০৯) প্রকাশিত হলে সৃজনশীল ও মননশীল
লেখক মহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয় এবং ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে “ফায়ার বর্ন” নামে প্রকাশিত হয়েছে লন্ডনের অস্টিন ম্যাকলি প্রকাশনী থেকে। তাঁর লেখা বাংলাদেশ টেক্সট বুক বোর্ড কর্তৃক
ষষ্ঠ শ্রেনীর জাতীয় পাঠ্য বইতে অর্ন্তভূক্ত হয়েছে বাংলা সাহিত্যের দিকপালদের পাশাপাশি (১৯৯৬)। বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেতারের গীতিকার হিসেবে লিখেছেন ‘নেলসন মেন্ডেলা’-সহ অনেক
জনপ্রিয় গান। ডোমদের জীবন নিয়ে তাঁর তথ্যচিত্র “লাশকাটা ঘর’ পেয়েছে ‘রিচমন্ড ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল এওয়ার্ড’ (২০১৪)। তাঁর উপন্যাস ‘মনের ঘুড়ি লাটাই’ অবলম্বনে পুর্ণদৈর্ঘ্য
চলচিত্র নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী। চিকিৎসা বিজ্ঞানী হিসাবে প্রকাশ করেছেন শতাধিক গবেষণাপত্র, নিবন্ধ, প্রবন্ধ।
প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ অগ্নিবালক (উপন্যাস), ফায়ার বর্ন(উপন্যাস ) , হারাম ও অন্যান্য গল্প (গল্পগ্রন্থ), অপারেশন জ্যাকপট, নির্বাচিত সায়েন্স ফিকশন, সায়েন্স ফিকশন সমগ্র-১,
হার্ভার্ডের স্মৃতি ও অন্য এক আমেরিকা (স্মৃতিকথা), পথ হারানোর পথ (কলাম সমগ্র-১);
মুক্তিযুদ্ধের কিশোর রচনা সমগ্র-১, বিজ্ঞান নির্ভর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র-১, প্রোজেক্ট ভূতং আধুনিকং (গল্পগ্রন্থ), হাবিজাবি (ছড়া), তুষার মানব, দ্বীপ পাহাড়ে আতঙ্ক, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দশ অভিযাত্রী, কিশোর রহস্য গল্প, পালটে শুধু লেবাস, ও ছড়ায় ছড়ায় সায়েন্স ফিকশন।
এর আগে তিনি পেয়েছেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমী প্রদত্ত পুরস্কার, আওয়ার প্রাইড এওয়ার্ড, আইফা লিটারেরি এন্ড সায়েন্স এওয়ার্ড এবং একাধিক আন্তর্জাতিক প্রফেশনাল পুরস্কার।
ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী চিকিৎসক ও অভিনয় শিল্পী তৃষ্ণা মাহমুদ, দুই পুত্র তিশিয়ান মাহমুদ ও রেনোয়া মাহমুদ কে নিয়ে বাস করছেন আমেরিকার কানেটিকাট অঙ্গরাজ্যে।