শেখ হাসিনা আপনাদের সব বলবেন–এই তবে রাজনৈতিক জ্ঞান!

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

কবীর য়াহমদ –

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ফেসবুকের আওয়ামী-অ্যাক্টিভিস্টদের একাংশের কাছে অজনপ্রিয়। দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের কাছে তিনি অজনপ্রিয় কিনা সেটা জানা যায়নি। তবে ধারণা করা যায়, যারা তার ফেসবুক দেখেন, তাদের বেশিরভাগ তাঁকে পছন্দ নাও করতে পারেন।

ফেসবুক অ্যাক্টিভিস্টদের অনেকেই নিজেদের সর্বজ্ঞানী ভাবেন। তাদের অনেকেই, বিশেষ করে বিদেশে বসে অ্যাক্টিভিজম করা অনেকেই, পাঁচ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দলের পক্ষে কথা বলার কারণে নিজেদের আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক ভাবতে বসেছেন বলেও ধারণা করছি। এখানে আমি তাদের সম্পর্কে যেভাবে বলছি, এটা অনেকটাই খোলাখুলি বর্ণনা বলে, অনেকেই আমার প্রতি মনঃক্ষুণ্ণ হতে পারেন। হোক, সমস্যা নাই। তবে বলি, বিষয়টাকে ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না। এটাকে নিন আপনার দলীয় স্বার্থ বিবেচনায়। আপনাদের কারো অবদান কেউ অস্বীকার করে না, কিন্তু প্রয়োজনে মানিয়ে নেওয়াটাও শেখা দরকার।

ভেবে দেখুন, যে আপনারা ওবায়দুল কাদেরের এত সমালোচনা করছেন; এর কী কারণ? আপনারা কি ভেবেছিলেন, ক্ষমতাচ্যুত হয়ে যাওয়ার পর পরই ওবায়দুল কাদেরের কথা বলা শুরু করে দেওয়া উচিত ছিল?

ওবায়দুল কাদের এতদিন কথা বললে, আজকের এই দেশ পরিস্থিতিতে তিনি প্রাসঙ্গিক থাকতেন না। এখন যখন মনে হলো কথা শুরুর দরকার, তখনই কিন্তু কথা বলা শুরু করেছেন। তাঁর এই সাক্ষাৎকারে আপনারা যারা বিক্ষুব্ধ, আপনাদের এই অবস্থা বাদ দিয়ে দেখুন, সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কম্পন শুরু হয়ে গেছে। তাঁকে নিয়ে ভাবনা, আওয়ামী লীগ নিয়ে ভাবনা আর বেশি জোরদার হয়েছে।

এখানে আপনারা ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে ভীত হয়ে যাওয়া আপনাদের বিরুদ্ধপক্ষকে উজ্জীবিত করছেন কিনা ভেবে দেখুন!

দিন দুয়েক আগে দ্য ওয়াল-এ ওবায়দুল কাদেরের সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর অনেককে দেখছি তাঁকে একেবারে ধুয়ে দিতে। শুরুতে আমিও একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। পরক্ষণে ভাবলাম, স্ট্যাটাসে আমার বিশ্লেষণ সম্ভবত ভুল। আমি তাৎক্ষণিক ওবায়দুল কাদেরকে যেভাবে দেখছি, সেটা পূর্বধারণা ও ক্ষোভ থেকেই। এই ওবায়দুল কাদের সেই ওবায়দুল কাদের নন। এই কাদের, অন্য কাদের; এই কাদের পুরনো ওবায়দুল কাদের!

এই ওবায়দুল কাদের এখনো সামান্য একটা সাক্ষাৎকার দিয়ে সারাদেশের মনোযোগ তাঁর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখছেন; যেমনটা দীর্ঘদিন তাঁকে দেখা যায়নি।

ক্ষমতাচ্যুতির সাড়ে নয় মাস পর ওবায়দুল কাদেরের আবির্ভাবকে হালকা ভাবে দেখার অবকাশ নাই। এটা আওয়ামী লীগের একটা কৌশল ধরে নিন। তিনি নিজ থেকে কথা বলেছেন, এমনটা ভাবার সুযোগ নাই। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছাড়া তিনি কথা বলেননি। ধরে নিন, শেখ হাসিনা কথা বলতে বলেছেন বলেই তিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

এই সময়ের মধ্যে আপনারা তো অনেকের কথা শুনলেন। কই, কারো কথা কি কোথাও আলোচনায় এসেছে, আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল? করেনি তো! এই সাড়ে নয় মাসে আমি বাহাউদ্দিন নাসিমকে কথা বলতে দেখলাম, আমিনুল ইসলামকে কথা বলতে দেখলাম, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে কথা বলতে দেখলাম। এদেরকে প্রত্যেকের রাজনীতির দৌড় কি বুঝলেন না? এদের যোগ্যতা কতখানি এটা কি প্রমাণ হলো না?

বাদ দিন সারাদেশের কথা; আপনাদের কারো মাঝে কি দাগ ফেলেছে নাসিম-নাদেল-আমিনুলদের কোন কথা? অথচ এদের প্রত্যেকের বড় বড় পদ। কিন্তু দেখেন, এক ওবায়দুল কাদেরের একটা সাক্ষাৎকারের প্রভাব; টের পাচ্ছেন?

ওবায়দুল কাদের তাঁর সাক্ষাৎকারে অনেক কথা বলেছেন। তন্মধ্যে শুধু চিন্তা করেন সেই কথা, মবের লোকজনেরা তাঁকে নিরাপদে সরিয়ে দিয়েছে। এখানে কী বার্তা? এখানে একটা বার্তা, আন্দোলনকারীও চূড়ান্ত উশৃঙ্খল সময়ে তাঁকে সহায়তা করেছে। এটা প্রভাবের নির্দেশক। কে জানে, এটা সত্য নাকি মিথ্যা; তবে প্রভাবক হিসেবে এটা অসামান্য বয়ান!

আওয়ামী লীগের ফেসবুক অ্যাক্টিভিস্টদের যে অংশ ওবায়দুল কাদেরের মতো নেতাকে বাতিল বলে প্রমাণে মরিয়া হয়ে ওঠেছে, এরা না বুঝে আদতে তাদের বিরুদ্ধপক্ষকেই শক্তিশালী করছে। ধ্বংসস্তূপের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যেখানে তাদের জীবনের জয়গান গেয়ে নিজে এবং অন্যদের উজ্জীবিত করার কথা, সেখানে তাদের কণ্ঠে অন্য সুর। এটা আর যাই হোক আওয়ামী লীগের স্বার্থের পক্ষে সহায়ক নয়।

ওবায়দুল কাদেরও এসে গেছেন–এই যে আওয়াজ; এটা কিছু লোকের কাছে ভীতির, কিছু লোকের কাছে উদ্দীপনার। আপনারা অহেতুক বিরোধিতায় এটাকে কেবলই হালকা করিয়ে দিচ্ছেন।

আপনারা যারা ওবায়দুল কাদেরের মাঝে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আবদুল জলিল, জিল্লুর রহমান খুঁজেন; তারা ভুল করছেন। বিষয়টা তুলনার নয়, বিষয়টা সঙ্কট থেকে উত্তরণের। আপনারা এখন সঙ্কটে আছেন। এখান থেকে উত্তরণে দরকার যেখানে শৃঙ্খলা, সেখানে সেটা অগ্রাহ্য করে অন্য পথে হাঁটছেন। থাকছেন ব্যক্তিগত অপছন্দ আর পূর্বধারণায়। যেখানে আপনাদের সমষ্টি হওয়ার কথা, সেখানে হয়ে পড়ছে একক!

আচ্ছা, আপনাদের চাওয়ামতো ওবায়দুল কাদের আগামীতে কিছু বললেন না; তখন কী হবে? নাসিম-নাদেলদের দেখে তো বুঝলেন, এদের দিয়ে হবে না। বাকি যারা তাদের দিয়েও হবে না বলবেন নিশ্চিত। তাহলে বাকি থাকে কে? কেবলই তো দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা আপনাদের সব বলবেন–এই তবে রাজনৈতিক জ্ঞান! রাজনীতির আদর্শলিপি অথবা অ আ ক খ হলো নেতৃত্বের প্রতি আস্থা; আপনাদের দরকার আদর্শলিপি পাঠ!

#AwamiLeague

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১