ইউনূসের সরকারের অধীনে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনায় জামাত-শিবিরের হামলা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নেতৃত্বে গ্রহণের পর থেকেই মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আগ্রাসন চালাচ্ছে জামায়াত-শিবির। একাত্তরের বিরোধী এই শক্তি এখন উঠেপড়ে লেগেছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলো নিশ্চিহ্ন করতে। আর এর পেছনে নিশ্চুপ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।

দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননার ঘটনা ক্রমেই উদ্বেগজনক মাত্রা লাভ করছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ইতিহাসকে পুনর্লিখনের প্রচেষ্টা এবং মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনাগুলো ধ্বংসের অভিযোগ তীব্র হচ্ছে।

গত ২৯ মে লালমনিরহাট শহরের বিডিআর রোডে শিশু পার্কসংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্মারক মঞ্চে নির্মিত একটি অত্যন্ত মূল্যবান ম্যুরাল জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ভেঙে ফেলা হয়। এই ম্যুরালে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধ, মুজিবনগর সরকার, ৭১-এর গণহত্যা, বিজয়ের উচ্ছ্বাস, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠসহ স্বাধীনতার গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল।

স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানা যায়, জেলা প্রশাসন ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই ম্যুরালটি “চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়” বলে সেটি ঢেকে দেয়। এরপর শ্রমিকদের মাধ্যমে ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়, যা ব্যাপক সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় তোলে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রক্ষায় নিযুক্ত বিভিন্ন সংগঠন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তারা বলছেন, “আমাদের ইতিহাস ও বীরের স্মৃতি লালন করার পরিবর্তে তা ধ্বংস করা হচ্ছে; যা জাতীয় ঐক্যের জন্য হুমকি।”

এ ছাড়াও, দেশের অন্যান্য প্রান্তে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ ও অবমাননার খবর সাম্প্রতিককালে ক্রমশ বাড়ছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ৭৮ বছর বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ওরফে কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনা গত বছরের ডিসেম্বরে বিজয়ের মাসে ঘটে। মুক্তিযোদ্ধাদের এই দুরবস্থা সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতন সমাজকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

সর্বশেষ ২৭ মে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রাতের আঁধারে উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়। গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহরের গোলাপবাগ বাজার গোহাটিতে অবস্থিত এই শহীদ মিনারটি দেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রাচীর ভাঙার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে এবং স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে, মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভাঙার অভিযোগও ওঠেছে, যা দেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলো সুরক্ষার বিষয়ে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে।

এমন প্রেক্ষাপটে সরকারের মদদে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে বর্তমান সরকার যুদ্ধ অপরাধি এই গোষ্ঠীটিকে সমর্থন দিতে সর্বাত্মকভাবে কাজ করছে।

২০১২ সালের ২২ আগস্ট মগবাজারের বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন জামায়াতে ইসলামীর তখনকার সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৪ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যা, হত্যা ও নির্যাতনের ছয়টি ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড দেন তাকে। ২০১৯ সালে সেই রায় বহাল থাকলেও, গতবছর ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়ার পর রিভিউ আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২৭ মে ২০২৫ তারিখে তাকে বেকসুর খালাস দেন। মুক্তির সময় তাঁকে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান এবং একটি কালো রঙের এসইউভিতে করে শাহবাগ মোড়ে দলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হয়। এটি স্পষ্টতই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগে অনুষ্ঠিত গণজাগরণ মঞ্চকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো এবং তৎকালীন তরুণ গণজাগরণ কে ভুল হিসাবে প্রমাণ করার জামায়াত ইসলামের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের” পর দেশের ক্ষমতাসীন মহলে ইতিহাস ও মূল্যবোধ পুনর্লিখনের চেষ্টা হচ্ছে, যার ফলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ ও তাদের স্মৃতি বিপন্ন। এই ধরনের ঘটনা দেশের ঐতিহ্য ও জাতীয় সমৃদ্ধির জন্য হুমকি স্বরূপ।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১