ডিসেম্বরের মধ্যেই দেশ ধ্বংসের মিশন শেষ করতে চায় ইউনূস গং

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

নিজস্ব প্রতিবেদক :

দেশের ভেতরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। একাধিক কূটনৈতিক ও গোয়েন্দা সূত্র বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী ডিসেম্বরের মধ্যেই দেশের রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা ভেঙে দিতে চায়। উদ্দেশ্য: বঙ্গোপসাগর, রাখাইন ও কিয়াউকফিউ বন্দরের নিয়ন্ত্রণ ঘিরে একটি বৃহৎ ভূরাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণ।

শুক্রবার (৬ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধ্বেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই হিসেবে আরও ১০ মাস পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সূত্র বলছে, এ সময়ের মধ্যেই আমেরিকার আরোপিত মিশন শেষ করতে চান ড. ইউনূস।

ভাষণে ইউনূস বলেছেন, জাতিসংঘের মহাসচিব গত মার্চ মাসে ঢাকা সফরকালে রাখাইন রাজ্যে মানবিক বিপর্যয়ের মোকাবেলার জন্য একটি ত্রাণ চ্যানেলের প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন এই প্রস্তাবটি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সহায়ক হবে। বিষয়টি প্রস্তাব পর্যায়েই রয়ে গেছে। আমরা লক্ষ্য করেছি রাখাইনের জন্য বাংলাদেশ করিডোর দিয়ে দিয়েছে বলে একটা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমি সুস্পষ্টভাবে বলছি, এটি সর্বৈব মিথ্যা। এটা চিলে কান নিয়ে যাওয়ার গল্প।

অথচ গত মাসে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে খলিলুর রহমান বলেন, রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে মানবিক করিডর হচ্ছে একটা জরুরি সময়ে দুর্যোগপূর্ণ জায়গা থেকে মানুষকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা। এখানে কাউকে সরানো হচ্ছে না। যেটা করা হচ্ছে তাতে এখানে ত্রাণসামগ্রী ও উপকরণ অন্য রুটে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জাতিসংঘ আমাদের এতটুকু বলেছে, পণ্যটি বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে রাখাইনে নেওয়ার জন্য। যেটা প্রয়োজন আছে, সেটা হলো ত্রাণ সরবরাহ করা।

এর আগে খলিলুর বলেছিলেন, করিডোর নয়, বাংলাদেশ আসলে প্যাসেস দিচ্ছে। তবে প্যাসেস ও করিডোর কী তা নিয়ে তিনি বিস্তারিত কিছুই বলেননি। সবশেষ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ত্রাণ চ্যানেল তৈরির কথা বলেন। এটাও কেমন হবে তাও বিস্তারিত জানাননি।

অথচ তার এসব বক্তব্যের আগে গত ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, রোহিঙ্গা সংকটে শর্তসাপেক্ষে করিডোর স্থাপন বিষয়ে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। এ ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে খলিলুর ইনিয়ে-বিনিয়ে সরকার করিডোর নিয়ে মিথ্যাচার করছে।

যারা অসত্য কল্পকাহিনী বানিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ক্রমাগত বিভ্রান্ত করে অশান্তি সৃষ্টিতে নিয়োজিত, এটা তাদেরই শিল্পকর্ম। আপনারা এ বিষয়ে হুঁশিয়ার থাকবেন। কোনোভাবেই বিভ্রান্ত হবেন না। এসব অপপ্রচার সত্ত্বেও আমরা লক্ষ্যচ্যুত হবো না। এই জটিল সমস্যাটি সমাধানে আমাদের কাজ চালিয়ে যাব।

বিশ্লেষকদের মতে, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে চলা এই তৎপরতা শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ নয়—এটি যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের কৌশলগত প্রকল্পের অংশ। এ প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ ব্যাহত করা এবং রাখাইনে আরাকান আর্মিকে অস্ত্রসহায়তা দিয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি।

সূত্র জানায়, ড. ইউনূসকে জাতিসংঘ মহাসচিব বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে ব্যবহার করা হচ্ছে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রক্সি যুদ্ধে। তার ঘনিষ্ঠরা ইতিমধ্যে তুরস্ক থেকে অস্ত্র ও ড্রোন আমদানির পরিকল্পনায় সক্রিয়। এ পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোরের নামে অস্ত্র পাচারের পথ তৈরি করা।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তুরস্ক সফর করে ড্রোন ও লাইট অস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি করেছেন সরকারের একাধিক উপদেষ্টা। তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের কিছু ক্যাডারও এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত হয়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে আসা একটি কার্গোতে তুরস্কে তৈরি অস্ত্র ছিল, যার চূড়ান্ত গন্তব্য ছিল রাখাইন।

সেনাবাহিনী মানবিক করিডোর প্রকল্পে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়েছে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, “রাখাইনে করিডোর বাস্তবায়ন সেনাবাহিনীর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।”

এদিকে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফের শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার ১০ মাসের মাথায় ২০ বিলিয়ন ডলারের অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। যা অতীতের অতীতের সব দুর্নীতির রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে।

সরকারি উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসছে একের পর এক। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার দায়িত্ব পাওয়া নাহিদ ইসলাম, পরে রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠন করলেও, তার নিয়োগ করা ব্যক্তিগত সহকারী আতিক মুর্শেদ এখনো সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত।

আতিকের বিরুদ্ধে ১৫০ কোটি টাকার অর্থ বেহাতের অভিযোগ নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। অভিযোগ আছে, তাঁর ঘনিষ্ঠদের ঘিরেই ‘নগদ’ প্ল্যাটফর্মে একটি দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। আতিক মুর্শেদ ‘স্বার্থের সংঘাত’ স্বীকার করলেও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

আতিক মুর্শেদের স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা জুঁই ২০২৫ সালের ২০ মে নগদ লিমিটেডে ‘ম্যানেজার–কমপ্লায়েন্স’ পদে নিয়োগ পান। তাঁর তিন মাসের প্রবেশনসহ মাসিক বেতন নির্ধারিত হয় ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এই নিয়োগের তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়।

অপরদিকে, ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নিজের সহকারী মোয়াজ্জেম হোসেনকে ঘিরে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে আলোচনায়। মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, টেন্ডার বাণিজ্যসহ শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং তাঁর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, মোয়াজ্জেম ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, যা গত বছরের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, উপদেষ্টারা তাঁদের সহকারী বা ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে দুর্নীতি চালান—নিজেরা দায় এড়াতে। এবারও হয়তো একই কৌশল অনুসৃত হয়েছে।

সরকারি হিসাবেই দুর্নীতির আশঙ্কাজনক চিত্র উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (জুলাই ২০২৪ – ১৫ মে ২০২৫) ১০ মাসে সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট (STR) জমা পড়ে ২৭,১৩০টি, যা আগের বছরের তুলনায় ৮০ % বেশি।

দেশের পুঁজিবাজারেও নজিরবিহীন ধস চলছে। ক্ষমতাদখলকারী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে ৮ মাসে শেয়ারবাজার থেকে উধাও হয়েছে ৯০ হাজার কোটি টাকা।

দেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইউনূসের কথিত সংস্কার কর্মসূচি আসলে শিল্প ধ্বংসের হাতিয়ার। গ্যাস সংকট, ব্যাংক সুদের চড়া হার এবং আমদানিনির্ভর নীতির কারণে দেশি উদ্যোক্তারা দিশেহারা। বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, “২০২৫ সালে পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলা হচ্ছে আমাদের শিল্পকে।”

ইউনূসের পক্ষে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন পিনাকী ভট্টাচার্য, ইলিয়াস হোসেন এবং কনক সারোয়ার। সেনাপ্রধানকে ভারতঘেঁষা হিসেবে তুলে ধরে সেনাবাহিনীতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করাই তাদের মূল লক্ষ্য।

বাংলাদেশ এখন চরম এক দ্বিধা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দাঁড়িয়ে। দেশের ভেতরে চলমান অর্থনৈতিক ধ্বংস, আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক চাল এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বন্দ্ব—সব মিলিয়ে একটি গভীর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, সময় থাকতেই এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত না করা গেলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়বে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০