বৈষম্যহীন !বাংলাদেশে প্রথম বৈষম্যের শিকার বঙ্গবন্ধু

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

জুয়েল রাজ –
বঙ্গবন্ধু এক মহাকাব্যের অমর নাম। আর সেই মহাকাব্য জুড়ে বিস্তৃত ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই বাংলাদেশ। তাই যতদিন বাংলাদেশ নামক কোন রাষ্ট্র বা বাংলা শব্দের চিহ্ন অভিধানে থাকবে , বঙ্গবন্ধু ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত তার অস্থিত্বের জানান দিবেন। কেউ পছন্দ করুক বা না করুক, ভাল বাসুক বা না বাসুক , কিছুই যায় আসে না। এইটা ইতিহাসের মধুরতম এবং একই সাথে নির্মমতম বাস্তবতা। সেই দীর্ঘ ইতিহাস আমরা জানি কিন্তু ধারণ করতে ব্যার্থ হয়েছি। তাই বলে বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে প্রথম সরকারের মাত্র সাড়ে তিন বছরের সংক্ষিপ্ত সময়টুকু নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। শূণ্য থেকে শুরু করে তাঁর সরকারকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশের অগণিত সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ সকল ক্ষেত্রে রাষ্ট্র এবং জাতিগঠন কার্যক্রম শুরু হয়। আইন শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন, যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃনির্মাণ, মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধীদের জনরোষ থেকে রক্ষা করা এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো লক্ষ লক্ষ ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য খাদ্য সংগ্রহ করা এবং আরো অনেক সমস্যার সমাধান তাঁর সরকারের সামনে সুবিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এতসব সমস্যা সত্ত্বেও শেখ মুজিব একটি নূতন শাসনতন্ত্র প্রণয়নে কখনই দ্বিধাগ্রস্ত হননি এবং সে কাজটি তিনি দশ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করেন। স্বাধীনতার তিন মাসের মধ্যে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা হয়। পনেরো মাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় (৭ মার্চ ১৯৭৩)। একশত চল্লিশটি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির পথনির্দেশনা নির্ধারণ করেন : ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়।’ বাস্তবিকপক্ষে মুজিব সরকার গুরুত্বপূর্ণ সকল ক্ষেত্রে মৌলিক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির সূচনা করেন। এতসব অর্জন সত্ত্বেও মূলত উগ্র বামপন্থীদের তরফ থেকে বিরোধিতা আসে যারা স্বাধীনতা যুদ্ধকে একটি ‘অসম্পূর্ণ বিপ্লব’ বলে গণ্য করে অস্ত্র ধারণ করে। ফলে দেশে একটি চরম নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে এবং জনগণের মধ্যে হতাশা দেখা এরকম একটা অস্থিতিশীল অবস্থার সুযোগ নিয়ে একদল সেনাসদস্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে এবং পরিবারের অন্য যেসব সদস্য তাঁর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন তাদের সবাইকে হত্যা করে।
যদিও পরবর্তীতে এই হত্যাকান্ডে দেশি বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র এই হত্যাকাণ্ড ঘোঁটানোর নানা বিবরণ প্রমাণ আজ প্রামাণিত।
১৫ আগস্ট বাঙালির জীবনে , বাংলাদেশের ইতিহাসের কালো অধ্যায়, পৃথিবীর ইতিহাসে , এমন ববর্বরতম রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস নেই। তবু থেমে নেই আগস্ট ট্র্যাজেডি বারবার ফিরে এসেছে বাংলাদেশে । বিশেষ করে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে।

আওয়ামী লীগ বারবার সেখান থেকে উৎরে গেছে। চলতি বছরের আগস্ট আওয়ামী লীগ কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
কেন পারেনি , নেতৃত্বের কি ভুল ছিল কি বিশুদ্ধ ছিল, সেই রাজনৈতিক আলোচনা আজ নয় । যে ভাবেই হউক , যে কৌশলেই হোক, দেশি বিদেশী ষড়যন্ত্র হোক , অথবা ছাত্র জনতার একক বিজয় হোক বাংলাদেশের এই অভ্যুথানে ছাত্র জনতা পক্ষ বিজয়ী হয়েছেন । যে আন্দোলন ছিল বৈষম্যহীন ছাত্র আন্দোলন। যা এক সময় সরকার আন্দোলন হিসাবে আভির্ভুত হয়।
বহু রক্ত আর লাশের মিছিল পেরিয়ে সেই বিপ্লবীরা আজ রাষ্ট্র ক্ষমতায়। কিন্তু বিপ্লবীদের সেই বৈষম্যবিহীন স্বপ্নের বাংলাদেশে প্রথম যিনি আক্রান্ত হলেন , তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান । ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার চলে যাওয়ার ঘোষণামাত্র গ্ণভবন সংসদ ভবনের চিত্র আমরা দেখেছি । এই বিপ্লবের সাথে বাংলাদেশ পরিচিত না। তাই আমরা ধরে নিলাম বিজয়ের আনন্দ কিংবা ক্ষোভের প্রকাশ হিসাবে বিজয়ীরা এই যজ্ঞ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে ও আমরা সেই আভাস পাই কিছুটা। কিন্তু ধানমন্ডি ৩২ কেন ?

বিপ্লব শেষে আপনারা যদি মনে করতেন দেশে কোন ভাস্কর্য রাখবেন  না ,অথবা বঙ্গবন্ধুর কোন ভাস্কর্য রাখবেন না। অথবা মুক্তিযুদ্ধের কোন স্মৃতিচিহ্ন রাখবেন না । সেটা বিপ্লবের বিজয়ীরা করতেই পারেন। ব্রিটেনে আমরা দেখেছি ব্ল্যাক লাইফ মেটার আন্দোলনের সময় দাস ব্যবস্যায় জড়িতদের ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু যে জঘন্যভাবে কদর্য ভাবে বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য কে ভেঙে ফেলা হয়েছে, মনে হয়েছে যত ক্ষোভ জমা আছে সব বঙ্গবন্ধুর উপড়।
কিন্তু কি দোষ করেছিল ধানমন্ডি ৩২ ! এই বাড়ি রাজনৈতিক কার্যালয় না, ব্যবসায়ী কার্যালয় না, স্মৃতি যাদুঘর হিসাবে আছে। বিপ্লবীরা কি জানতেন না। এই ৩২ নম্বর শুধু বঙ্গবন্ধুর বাসভবন ছিল না। ৩২ নম্বর বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের আঁতুড়ঘর। আজকে যে বাংলাদেশে বিপ্লব ঘটিয়েছেন বঙ্গবন্ধু না থাকলে সেই দেশটার মালিক হতে পারতেন না।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহুপট পরিবর্তন হয়েছে, রক্তপাত হয়েছে , কিন্তু ধানমণ্ডি ৩২ ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পরে এইভাবে আক্রান্ত হয়নি। জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া এই প্রথম। বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস মুছে দিতে গিয়ে, ভাস্কর্য ভেঙ্গে , বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশ থেকে মুছে ফেলা যাবেনা।
ইতিহাস তার আপন গতিতে চলে, চাইলে ও ইতিহাসের গতিপথ বদলে দেয়া যায় না। সময় সময় বাঁক বদল ঘটে । পৃথিবীর দেশে দেশে বহু বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর , বহু বিপ্লবের সাক্ষী বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের রাজনীতি ও বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। তাই ২০২৪ এর আগস্ট বিপ্লব ও স্থায়ী কিছু নয়। ছাত্র জনতার যে অভ্যুথান ঘটেছে সেখানে অ ব্যবহৃত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন ভাষণ ও বক্তব্যের অংশ বিশেষ। ৭ই মার্চের ভাষণের নানা অংশ সেখানে ব্যবহৃত হয়েছে। তার মানে বঙ্গবন্ধু সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রেরণা দিয়েছেন ।

কিন্তু ধানমণ্ডি বত্রিশের আগুন , ও ভাস্কর্য্যের প্রতি ঘৃণা , অবজ্ঞার ধরণ দেখে
ইতিহাসের কুখ্যাত শাসক এডলফ হিটলারের একটা বহুল প্রচলিত বিখ্যাত উক্তিটি মনে উদ্রেক হয়েছে- “ সন্ত্রাস, নাশকতা, হত্যা এবং বিস্ময়ের মধ্য দিয়ে শত্রুর মনোবল ভেঙে দাও, এটাই যুদ্ধের ভবিষ্যৎ”। প্রতিরোধের মনোবোল ভাঙতেই হয়ত অভ্যুথানকারীরা এই পথ বেছে নিয়েছিল।

তবে আশার কথা হচ্ছে , এই যে আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন অভিযান চলছে। বঙ্গবন্ধুকে অপমানিত নির্বাসিত করার আপ্রাণ চেষ্ঠা করা হচ্ছে। সেটি একদিন থেকে ভাল হচ্ছে।
কারণ যারা মুক্তিযুদ্ধ কে লালন করেন। জীবনে আওয়ামী লীগ করেন নাই। কোনদিন ধারে কাছে ও যান নাই , বঙ্গবন্ধুকে অপমানের দৃশ্য ,৩২ ধানমণ্ডির শ্মশান হয়ে যাওয়ার দৃশ্য তাদেরকে কাঁদিয়েছে। তাদের কান্না ,আমি শুনেছি। বঙ্গবন্ধু , প্রতি যে সম্মান , যে ভালোবাসা কোন বিপ্লবেরই ক্ষমতা নেই, এদের বুক থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার।

আপনারা বিপ্লব কে মুক্তিযুদ্ধ বানিয়ে ১৫ আগস্টকে নির্বাসিত করতে চাইছেন। বাংলাদেশে সেটা সম্ভব নয়, অন্নদা শংকর  বহু আগেই লিখে রেখেছেন ” যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী বহমান , ততোদিন  রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবর রহমান”

 

বঙ্গবন্ধু কে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ ছিলনা , এখনো নেই , আগামীতে ও হবে না। বিপ্লব আসবে বিপ্লব যাবে , পৃথিবীর শেষ মানুষটা বেঁচে থাকা পর্যন্ত পৃথিবীতে বিপ্লব চলমান থাকবে। কিন্ত বাংলাদেশ যতদিন থাকবে বঙ্গবন্ধুকে বিনাশের বৃথা চেষ্টা করে লাভ নেই। বরং সেই দূর্যোগে এই একটি নাম হয়ে উঠে বিপ্লবের শিরস্ত্রাণ ।
আওয়ামী লীগ কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ নয়। আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম। যে দেশে যে নেতার ডাকে ৩০ লাখ লোক প্রাণ দিতে পারে সেই দেশে কয়েক হাজার নেতাকর্মী হত্যার মধ্য দিয়ে, একটি বাসভবন জ্বালিয়ে দিয়ে সেই মানুষকে এই ভূখণ্ড থেকে ভাস্কর্য ভেঙে , আর ছবি ছিড়ে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা বোকামী ছাড়া আর কিছু নয়। বরং সেই আগুন দ্বিগুণ হয়ে ছড়িয়ে পরেছে ।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০