নিজস্ব প্রতিবেদক:
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষিত দুর্নীতিমুক্ত উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি ও তার বেশ কয়েকজন উপদেষ্টাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। এরইমধ্যে আবার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ইউনূসের ঘনিষ্ঠ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে।

সূত্র জানায়, রাজধানী ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে লভ্যাংশ আদায় সেখানে ক্ষমতাবলে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিজের স্ত্রীকে ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্য বানিয়েছেন তিনি। প্রতিষ্ঠাকালীন থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শেয়ারহোল্ডার ছিলেন খলিলুর রহমান। এ ক্ষেত্রে তার স্ত্রী নুরুন্নাহার রহমানকে নমিনি করা হয়েছিল।
বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইনগতভাবে “অলাভজনক” বা “সেবামূলক” প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধিত। তবে ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অন্যতম একটি ব্যয়বহুল বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হয় একজন শিক্ষার্থীকে। অলাভজনক হলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ড। অর্থ আত্মসাতকারীদের মূল হোতা ছিলেন খলিলুর রহমান। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রভাব খাটিয়ে স্ত্রীকে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য বানিয়েছেন তিনি। মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইস্ট ওয়েস্ট থেকে অর্থ আত্মসাৎ করা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারও তার কৌশলের অংশ।
অভিযোগ রয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় পুলিশ হত্যায় অগ্রভাগে ছিল ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বিপথগামী কিছু শিক্ষার্থী, যাদের অর্থ যোগান দিয়েছিলেন খলিলুর রহমান। ২০২৪ সালে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পান এই খলিল। শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গা বিষয়ক পরামর্শকের দায়িত্বও তার হাতে। তিনি করিডোরের নামে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনার একজন মূল হোতা।
এছাড়াও, খলিলুর রহমানের অতীতও প্রশ্নবিদ্ধ। ২০০১ সালের আগস্ট। রাজধানীর নীলক্ষেতে ঘটে এক মর্মান্তিক ঘটনা। প্রধান উপদেষ্টার প্রটোকল অফিসার আয়েশা আফসারী নিহত হন স্বামী জহিরুল ইসলামের গুলিতে। পরে জহিরুল আত্মহত্যা করেন। প্রথমে ঘটনাটি পারিবারিক কলহ হিসেবে তুলে ধরা হলেও তদন্তে বেরিয়ে আসে ভয়ঙ্কর এক সত্য—আয়েশা ছিলেন ধর্ষণের শিকার। ধর্ষক, আর কেউ নন— তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টা লতিফুর রহমানের ভায়রাভাই এবং তার দপ্তরের পিএস-১ খলিলুর রহমান।
প্রলোভনের মাধ্যমে নিউইয়র্কে পোস্টিং, সেখানে যৌন নির্যাতন, স্বামীর মানসিক বিপর্যয় এবং শেষ পর্যন্ত এক জোড়া প্রাণের মর্মান্তিক পরিণতি—এই ভয়ঙ্কর গল্পটি চাপা পড়ে যায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নর্থইস্ট নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, খলিলুর রহমান দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর আশ্রয় নেন যুক্তরাষ্ট্রে। পরিচয় পাল্টে হন ‘রজার রহমান’। নিউইয়র্ক, কানেকটিকাট, ম্যাসাচুসেটস, মেরিল্যান্ড—বিভিন্ন জায়গায় ছদ্মনামে অবস্থান করেন। ২০১৪ সালে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন যুক্তরাষ্ট্রে, নিজেকে বিএনপির কর্মী দাবি করে প্রাণনাশের শঙ্কার কথা বলেন। অথচ আসল সত্য ছিল—নিজের অপরাধ আড়াল করে নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা।
প্রশ্ন উঠছে— যে ব্যক্তি ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত, আত্মগোপনে ছিল দুই দশক, ছদ্মনামে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়, সে কীভাবে আবার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে আসীন হয়? আরও বড় প্রশ্ন— এই নিয়োগে কি রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা আন্তর্জাতিক কোনো চুক্তির ছায়া? ড. ইউনূসের অতীতও প্রশ্নবিদ্ধ—গ্রামীণ ব্যাংকের উচ্চ সুদের দায়ে বহু আত্মহত্যা, বিদেশি কোম্পানির হাতে নীতিনির্ধারণ ক্ষমতা তুলে দেওয়া। আর এবার অবৈধভাবে ক্ষমতা নিয়ে তিনি আরও বেপোরোয়া হয়ে উঠেছেন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ক্ষমতায় থাকাকালীন বিশেষ সুবিধা নেয়ায় নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ২০২৪ সালের ৮ই অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন। এরপর তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দ্রুত সরকারি অনুমোদন ও বিশেষ সুবিধা পায়। সেই সাথে আছে, গ্রামীণ ব্যাংকের কর মওকুফ ও সরকারিভাবে ব্যাংকে শেয়ারের পরিমাণ ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে থাকা শ্রম আইন লঙ্ঘন ও অর্থপাচারের মামলা দ্রুত খারিজ হয়ে যাওয়ায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশিষ্টজনেরা বলছেন, এভাবে নিজ প্রতিষ্ঠানের সুবিধা পাওয়া এবং মামলা খারিজ হওয়া স্বার্থের সংঘর্ষ তৈরি করে এবং জন আস্থা হারানোর ঝুঁকি বাড়ায়।
ইউনূসের মতো একজন ধূর্ত ও খলিলের মতো একজন ধর্ষকের ছদ্মবেশে ফিরে এসে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, অভিবাসন নীতি ও বিশ্ববিদ্যালয় নীতিতে আধিপত্য বিস্তার কেবল নৈতিক অবক্ষয়ের উদাহরণ নয়, বরং এটি একটি রাষ্ট্রের ভেতর থেকে ধ্বংসের সূক্ষ্ম নকশা। খলিল যদি বৈধভাবেই দ্বিতীয় দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করেন, তবে তা প্রকাশে অসুবিধা থাকার কথা নয়। কিন্তু ২৬ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস, ফেসবুকে পরিচয় লুকিয়ে রাখা এবং এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়ে নীরবতা—সব মিলিয়ে বিষয়টি ঘনীভূত রহস্যের রূপ নিয়েছে।
বিশ্লেষকদের প্রশ্ন, যদি সত্যিই রজার ও খলিল একই ব্যক্তি হন, তবে তার মতো একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির এই গোপনীয়তা কি রাষ্ট্রীয় স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ? সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি ইতিমধ্যেই ‘টক অব দ্য টাউন’-এ পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকা কোনো ব্যক্তি যদি দ্বৈত নাগরিকত্ব গোপন করেন, তবে তা শুধু আইনি নয়, নৈতিকভাবেও প্রশ্নবিদ্ধ।