আবু মকসুদ-
১০/১১ সেপ্টেম্বর সম্মিলিত সাহিত্য সংস্কৃতিক পরিষদ যুক্তরাজ্য আয়োজিত বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। লোক সমাগম এবং বই বিক্রির দিক থেকে এই বইমেলাকে সফল হিসাবে অভিহিত করা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা মেলা নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন তারা সবাই এই মেলাকে সফলতম মেলা বলছেন।
আমরা প্রতি বছর চেষ্টা করি আগের বছরকে ছাপিয়ে যেতে, এবারও সেই চেষ্টা করা হয়েছে। আগত মানুষের উচ্ছ্বাস এবং আনন্দ প্রকাশে প্রচেষ্টা সফল হয়েছে বলে মনে করি।
কোনরকম প্রাতিষ্ঠানিক আনুকূল্য ছাড়া। সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে এত বড় মেলা আয়োজন করা এবং সফলভাবে আঞ্জাম দেওয়া কতটুকু কষ্টকর সেটা মেলা সংশ্লিষ্টরাই বলতে পারবেন।
তবে মানুষের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে। আনন্দ ফুর্তি শেষে মানুষকে বই হাতে ফিরে যেতে দেখে কোন কষ্টের কথাই মনে থাকে না। মনে হয় শ্রমটুকু বিফলে যায়নি।
অনেকে অভিযোগ করেন মেলায় বই বিক্রি হয় না লোকজন শুধু ছবি তুলতে কিংবা আলাপচারীতেই সমস্ত সময় ব্যয় করে। এই অভিযোগ সর্বাংশে সত্য নয়।
খবর নিয়ে জানলাম মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশক কেউ নাখোশ নন, আশানুরূপ বই বিক্রি হয়েছে। অনেক প্রকাশকের প্রায় সব বই বিক্রি হয়ে গেছে। মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রায় সতেরজন প্রকাশক পরের বছর মেলায় উপস্থিত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বইয়ের বিক্রি আশানুরূপ না হলে তারা নিশ্চয়ই আগ্রহ দেখাতেন না। মেলা থেকে ফিরে যাওয়ার সময় প্রায় প্রত্যেকের হাতে বইয়ের ব্যাগ দেখা গেছে।
পরেরবারের মেলার জন্য প্রকাশকদের প্রতি সামান্য অনুরোধ রাখতে চাই বই নির্বাচনে তারা যেন পাঠকের রুচি বিবেচনা করেন। সুনির্বাচিত কিছু বই যদি পাঠকের সামনে পরিবেশন করা যায় পাঠক অবশ্যই গ্রহণ করবে। বইয়ের বিনিময় মূল্য ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখবেন। আমার জানামতে অনেকেই বই কিনতে এসেছেন কিন্তু অতিরিক্ত মূল্যের কারণে চাহিদার বই কিনতে পারেননি। মূল্য সাশ্রয়ী হলে বইয়ের বিক্রি দ্বিগুণ হবে।
সফল মেলা হয়েছে। মেলার পরে প্রতিবছর ভালমন্দ প্রতিক্রিয়া আমরা পাই, শুনি। এবারও প্রায় নিরানব্বই শতাংশ ইতিবাচক মন্তব্য পেয়েছি। যারা আগ্রহ নিয়ে মেলায় এসেছেন সাহায্য সহযোগীতা করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
অসংখ্য ইতিবাচক মন্তব্যের মধ্যে দুয়েকটা নেতিবাচক মন্তব্যও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যদিও ইতি এবং নেতি পাশাপাশি চলে তবু এদুটির মধ্যে একটু সামঞ্জস্য থাকা উচিত।
প্রথম নেতিবাচক যে মন্তব্য নজরে এসেছে সেটা হচ্ছে কিছু সংখ্যক অতিথিকে যথাযথ মর্যাদা দিতে পারিনি। আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি যে হয়তো সবাইকে প্রীতিপূর্ণ সম্ভাষণে আমন্ত্রণ জানিয়ে মঞ্চে নিতে পারিনি; আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। আমাদের তালিকাভুক্ত অতিথির বাইরেও অনেক সম্মানিত ব্যক্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন। তাৎক্ষণিকভাবে সবাইকে মঞ্চে বসাতে হলে মঞ্চে অন্তত ৫০টি চেয়ার রাখতে হতো। বাস্তব কারণেই তা সম্ভব হয়নি আমরা সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এবং আমাদের যদি কোন কমতি থেকে থাকে এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
দ্বিতীয় যে মন্তব্য আমাদের নজরে এসেছে তা খুবই হাস্যকর এবং খেলো। সেটা হচ্ছে আমাদের মেলার কারণে নাকি বিলেতের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। যারা এই বিভাজনের আবিষ্কারক তারা যদি একটু সৎ সাহস নিয়ে বিষয়টা খোলাসা করেন তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়।
আমি এখানে একটু পরিসংখ্যান দিতে চাচ্ছি। পরিসংখ্যানটা এরকম; ধরেন বিলেতে লেখালেখির সাথে জড়িত মানুষের সংখ্যা প্রায় একশ। আমরা প্রমাণসহ দেখিয়ে দিতে পারবো যে আমাদের সংগঠন কিংবা মেলার সাথে জড়িত আছেন ৯৮ জন। তেমনি ভাবে যদি সংগঠনের উল্লেখ করা হয় তাহলে বিলেতের শিল্প সাহিত্য সংগঠন আছে প্রায় ষাটটির মত আমাদের সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত আছে প্রায় সাতান্নটি সংগঠন। তাহলে বিভেদটা কোথায়। যারা বিভাজন আবিষ্কার করছেন তারা কিসের ভিত্তিতে করছেন। ১০০ জনের মধ্যে যদি একজন দলছুট হয়ে যায় তাহলে সেটা বিভাজন কিভাবে হয়! ৫৭ টি সংগঠন যৌথভাবে যেখানে মেলা আয়োজন করে সেখানে বিভেদের প্রশ্ন তোলাটাই বিভেদ অর্থাৎ যার কোন অস্তিত্ব নেই ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা।
এবারের একাদশ বইমেলায় বিভাজনের কারণে অনুপস্থিত ছিলেন এমন একজনের নাম কিংবা এমন এক সংগঠনের নাম উল্লেখ করে আপনাদের মত প্রতিষ্ঠিত করুন।
একজন স্বেচ্ছায় দলছুট হয়ে গেছে এ কারণে যদি মনে করেন বিভাজন তাহলে হে পরম হিতাকাঙ্ক্ষী নিরপেক্ষ মহৎ মানুষ আপনি কিংবা আপনারা একটু উদ্যমী হয়ে বিভাজন দূর করার জন্য চেষ্টা করুন।
আপনারা যদি মনে করেন বিলেতের সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিবেশ দুই গোত্রে বিভক্ত হয়ে গেছে হলে বিভক্তি দূর করার জন্য আপনারা নতুন গোত্রের প্রস্তাবনা নিয়ে হাজির হন।
তথাকথিত বিভক্তি নিশ্চয়ই আপনাদের পীড়া দিচ্ছে। এই পীড়া এক্ষুনি দূর করতে না পারলে ভবিষ্যতের ব্যাধি হিসেবে দেখা দিতে পারে তাই উদ্যমী হওয়ার সময় এখনই।
বিলেতের শিল্প সাংস্কৃতির সদস্যরা এক পরিবারের মতো বাস করেন। যেকোনো পরিবারেও ভুল বোঝাবুঝি মনোমালিন্য হয় আবার মিটেও যায়। সব ভুল বুঝাবুঝি কিংবা মনোমালিন্যের পরেও আমরা এক পরিবার।
আপনারা যারা অতি উৎসাহী হয়ে বিভাজন খুঁজছেন তারা যদি ভালোভাবে একটু খোঁজ খবর নেন তাহলে অত্যন্ত নিরাশ হবেন। আমাদের মাঝে কোন বিভাজন নেই। আমরা একসাথে ম্যানচেষ্টার বার্মিংহাম শেফিল্ড কার্ডিফ কিংবা এডিনবারায় জড়ো হই।
ঠিক তেমনি আমরা ম্যানচেস্টার, ওল্ডহ্যাম, চেষ্টার, লিভারপুল, সুইনডন, বার্মিংহাম, কার্ডিফ শেফিল্ড সহ বিলেতের প্রতিটি শহর থেকে পরিবারের ডাকে লন্ডনে জড়ো হই।
যারা বিভাজন দেখেন তারা একদিন আমাদের পারিবারিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে দেখুন এবং বিভাজন নিয়ে কথা বলুন বিভাজন নিয়ে আপনাদের চিন্তা কিংবা দুশ্চিন্তা নিমিষেই দূর হয়ে যাবে।
দয়া করে যার কোন অস্তিত্ব নেই তাকে আবিষ্কার করে অসুস্থ হবেন না। সুস্থতা যেকোনো বিভাজনের চেয়ে বেশি দরকারি।