নিজস্ব প্রতিবেদক :
বঙ্গোপসাগরের দখল, রাখাইনে কিয়াউকফিউ বন্দর ঘিরে চীনা প্রভাব রোধ এবং যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কৌশলগত পরিকল্পনার বাস্তবায়নে সরব হয়ে উঠেছে আমেরিকান প্রশাসন। এই পরিকল্পনার কেন্দ্রে অবস্থান করছেন এক বাংলাদেশি—ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সূত্র বলছে, ড. ইউনূসকে জাতিসংঘ মহাসচিব বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বাইডেন প্রশাসন। বিনিময়ে তাকে ব্যবহার করা হচ্ছে এক উচ্চপর্যায়ের প্রক্সি যুদ্ধে, যার মূল লক্ষ্য—বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি, মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের সহযোগিতা এবং চীনের “বেল্ট অ্যান্ড রোড” পরিকল্পনা ব্যাহত করা।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক সরকারকে হটিয়ে টিয়ে ড. ইউনূস ক্ষমতায় আসেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে। এরপর তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ গ্রুপ দ্রুত সরকারি অনুমোদন ও ছাড়পত্র পায়। গ্রামীণ ব্যাংকের কর মওকুফ, ব্যাংকে সরকারের শেয়ার কমানো—সব কিছুই প্রশ্ন তুলেছে। সবচেয়ে বড় কথা, ইউনূসের বিরুদ্ধে থাকা অর্থপাচার ও শ্রম আইন ভঙ্গের মামলা হঠাৎ করে খারিজ হয়ে যায়—যা স্বচ্ছতা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তোলে। বিশিষ্টজনেরা বলছেন, এটি স্পষ্ট স্বার্থের সংঘর্ষ। এতে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা ও জনআস্থা ঝুঁকিতে পড়ছে।
বিশ্বস্ত সূত্রের দাবি, মার্কিন অর্থায়নে তুরস্ক থেকে ড্রোন ও আগ্নেয়াস্ত্র আমদানি করে সেগুলো আরাকান আর্মির হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ কাজে সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড. ইউনূসের ঘনিষ্ঠরা।
রাখাইনে কিয়াউকফিউ বন্দর প্রকল্প চীনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চীনের ভারত মহাসাগর পর্যন্ত সরাসরি সংযোগ গড়ে উঠবে, যার মাধ্যমে মালাক্কা প্রণালী এড়িয়ে জ্বালানি আমদানি সম্ভব হবে। এটাই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের মূল কারণ।
গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, পাকিস্তান থেকে আসা একটি কার্গোতে তুরস্কের অস্ত্র ছিল যা রাখাইনে পাঠানোর পরিকল্পনায় আনা হয়। ইউনূসের সহযোগীরা এই বিষয়ে জানতেন। এমনকি এদের কয়েকজনের তুরস্ক সফরের সময় সামরিক বৈঠকের তথ্যও আছে।
সম্প্রতি তুরস্ক সফর করেছেন ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্যমন্ত্রী মাহফুজ আলম। তাদের উদ্দেশ্য ছিল তুরস্কের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করা এবং অস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা।
ড. ইউনূসের প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পিনাকী ভট্টাচার্য, ইলিয়াস হোসেন এবং কনক সারোয়ার। এই তিনজন নিয়মিত সেনাবাহিনী ও সরকারবিরোধী প্রচার চালাচ্ছেন। সেনাপ্রধানকে ভারতঘেঁষা আখ্যা দিয়ে তাকে জনরোষে ফেলার অপচেষ্টা চলছে।
২০১৮ সালে সুচির সরকার কিয়াউকফিউ বন্দর প্রকল্পে চুক্তি করে, আর সেই থেকেই যুক্তরাষ্ট্র রাখাইনে অস্থিরতা সৃষ্টির পরিকল্পনা নেয়। রোহিঙ্গা নিধন, বাংলাদেশে তাদের স্থানান্তর, মানবিক করিডোর—সব কিছুই সেই পরিকল্পনার অংশ। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার এসব প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন শুরু করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
সেনাবাহিনী করিডোর বাস্তবায়নে দ্বিমত পোষণ করছে। সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, এই পরিকল্পনায় সেনাবাহিনীর সম্মতি নেই। অথচ ইউনূসের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান দাবি করছেন, এ নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। দুটি বক্তব্য পরস্পরবিরোধী—এতেই ষড়যন্ত্রের গন্ধ স্পষ্ট।
ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ড. ইউনূস হচ্ছেন বাংলাদেশের “অং সান সুচি”। যে সুচিকে মার্কিনিরা ক্ষমতায় এনেছিল চীনকে ঠেকাতে, কিন্তু পরে ব্যর্থ হলে তাকে সরিয়ে কারাবন্দি করে। এবার সেই একই মডেলে ইউনূসকে বসানো হয়েছে ক্ষমতায়। যদি মার্কিন স্বার্থ পূরণ না হয়, তাহলে তার ভবিষ্যৎও হবে সুচির মতো।
আজ যাকে ‘গণতন্ত্রের মুক্তিদূত’ বলা হচ্ছে, তার ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে গভীর ষড়যন্ত্রের ছাপ। রাষ্ট্র, ভূ-রাজনীতি, স্বার্থ ও ক্ষমতা—সব মিলিয়ে এক জটিল পরিস্থিতি। সুশীল সমাজ ও সেনাবাহিনী এখন নিরীক্ষার মুখে। প্রশ্ন একটাই—ড. ইউনূস কি সত্যিই শান্তির নায়ক, নাকি এক অস্থির যুগের রাজনৈতিক যন্ত্র?