চিকিৎসকদের ঘিরে ইউনূসপন্থী মবের তাণ্ডব, সেনাবাহিনীকে বলল ‘দালাল’

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতিতে হামলা চালিয়েছে জুলাই আন্দোলনে কথিত আহতরা। বুধবার (২৮ মে) বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায় একদল ‘জুলাই আহত’ পরিচয়ধারী মব। তাদের হাতে ছিল রড, লাঠি ও চাপাতি। এ ঘটনাটি দেশজুড়ে মব কালচারের উদ্বেগজনক রূপ এবং চিকিৎসাসেবায় সঙ্কটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, সকাল থেকে হাসপাতালের পরিবেশ ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। মব তৈরি করে ‘আহত’ পরিচয়ের ওই গোষ্ঠী হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়ে, কর্মবিরতি পালনকারী চিকিৎসক-নার্সদের ওপর হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে আসলেও, হামলাকারীরা সেনাদের উদ্দেশ্য করে “আওয়ামী লীগের দালাল” স্লোগান দেয়।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাধ্য হয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন। এই কর্মবিরতি ও হামলার কারণে হাসপাতালের সব চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আউটডোর ও নির্ধারিত অপারেশন বাতিল, কেবল জরুরি সেবা সীমিত পরিসরে চালু রাখা হয়েছে। ফলে অসংখ্য রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

হামলার শিকার এক নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা যাদের সুস্থ করতে দিনরাত পরিশ্রম করেছি, তারাই এখন আমাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। এই উগ্রতা ও সহিংসতা আমাদের জন্য চরম হতাশাজনক। এদের অধিকাংশ শিক্ষিত নয়, সাধারণ শ্রমজীবী বা বেকার লোক। শিক্ষিত হলে হয়তো এমন উগ্র আচরণ হতো না।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়তে থাকা মব সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা বর্তমানে একটি গুরুতর জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি হাসপাতালও যদি মবের হাত থেকে রক্ষা না পায়, তা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্বের জন্য এক বড় সংকেত। জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন নয়, বরং এটি রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যর্থতার প্রতীক।

বিশ্লেষকরা আরও উল্লেখ করেন, এনসিপি ও সমমনা দলগুলোর মদদপুষ্ট কর্মীরা ‘আহত’ পরিচয়ের আড়ালে হাসপাতাল দখল ও সেবাবাতিলের মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে, যা রাষ্ট্র ও নাগরিক সুরক্ষার জন্য ভয়াবহ সতর্কতা।

সম্প্রতি মব সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা মোকাবিলায় দেশের সেনাবাহিনী কঠোর পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছে। সোমবার সংবাদ সম্মেলনে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, “কেউ যদি মব তৈরি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়, তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে।”

বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ‘মব কালচার’ নতুন মাত্রা পেয়েছে। সরকারের ওপর প্রশ্ন উঠছে কীভাবে এমন বিশৃঙ্খলা মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এনসিপি ও অন্যান্য দলের মদদপুষ্ট গোষ্ঠীগুলো নানা দাবিদাওয়া নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সড়কে মব তৈরি করে জনজীবন বিপর্যস্ত করছে। এরই অংশ হিসেবে এই ধরণের হাসপাতালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে।

সামাজিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মব কালচার দ্রুত বেড়ে যাওয়া রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের সংকটের পরিচায়ক। এর মোকাবিলায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নেতাদের ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ প্রয়োজন। বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের হামলা ও মব সহিংসতা দেশের স্বাস্থ্যসেবার ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে। চিকিৎসক-নার্সরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে, তারা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে হীনমন্যতা অনুভব করবেন, যা সেবার মান ও পরিমাণ হ্রাসের কারণ হবে। রোগীদের জন্য চিকিৎসা গ্রহণও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১