নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঐক্যমত্য কমিশনের সঙ্গে পাহাড়ি অঞ্চলের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর বৈঠক নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে করিডোর ব্যবহার, চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম এবং টেসলার স্টারলিংক প্রযুক্তি দেশের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করছে কি না— এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। একইসঙ্গে পাহাড়ি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে ঐক্যমত্য কমিশনের আলোচনাকে ঘিরে সেনাবাহিনীর মতামত জানতে চান সাংবাদিকরা।

জবাবে সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়—এমন কোনো কর্মকাণ্ডে সেনাবাহিনী জড়িত ছিল, আছে বা থাকবে না। পাহাড়ি যেসব গোষ্ঠীর কথা বলা হচ্ছে, তারা একটি আত্মস্বীকৃত টেরোরিস্ট গ্রুপ (ইউপিডিএফ) যারা সংঘাতপূর্ণ কর্মকাণ্ডে জড়িত। সুতরাং তাদের নির্বাচন বা শান্তি প্রক্রিয়ায় আনার বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিতে সমীচীন নয়।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ঐক্যমত্য কমিশনের সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠীর বৈঠক সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরাসরি কোনো সংঘাতে রূপ নেয়নি। বরং বিষয়টি নিয়ে আলোচনার একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রয়েছে।
পাহাড়ে সক্রিয় আঞ্চলিক রাজনৈতিক ও সশস্ত্র সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর সঙ্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঐক্যমত কমিশনের এক বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা মহলে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে সংগঠনটির অতীত কার্যক্রম, স্বশস্ত্র তৎপরতা এবং সরকারের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ সম্পর্কের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে এই বৈঠকের বৈধতা ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় এদিন আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। আর মাইকেল চাকমার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ প্রতিনিধি দলে ছিলেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদে কেন্দ্রীয় সভাপতি অমল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও ইউপিডিএফের সদস্য জিকো ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি ও ইউপিডিএফ সদস্য সুনয়ন চাকমা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঐক্যমত কমিশন একটি নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে নানা মহলের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে তারা ইউপিডিএফ-এর সঙ্গে আলোচনায় বসে। যদিও বৈঠকের আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়নি, তবে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে বৈঠকের খবর ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় বিতর্ক।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যারা অস্ত্রের রাজনীতি করে এবং নির্বাচন ও রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, তাদের বৈধ প্ল্যাটফর্মে জায়গা দেওয়া বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে।