ইউনূসের মিথ্যাচার ফাঁস করলেন ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে স্থবিরতা, শিল্প ধ্বংসের শঙ্কা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর দেশজুড়ে অর্থনৈতিক সংস্কারের নামে নানা ধরনের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে এসব আশ্বাসের মিল না থাকায় ব্যবসায়ী মহল ক্রমেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি শিল্পপতিদের এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদের নীতিকে দায়ী করে একে “শিল্প ধ্বংসকারী” আখ্যা দেন তারা।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসে আন্তর্জাতিক মহলে ‘গণতন্ত্র ও বিনিয়োগবান্ধব সরকারের’ ইমেজ তৈরি করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, তার এই ইমেজ তৈরির প্রচেষ্টা যতটা ছিল প্রচারনির্ভর, ততটাই ছিল বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন।

দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অবস্থা এখন ভয়াবহ সংকটের দিকে যাচ্ছে। আর এই সংকটের দায় সরাসরি চাপছে সরকারের অদূরদর্শী ও শিল্পবিরোধী নীতির ওপর— এমনটাই দাবি করছে দেশের প্রধান প্রধান ব্যবসায়ী সংগঠন ও শীর্ষ উদ্যোক্তারা।

গত এপ্রিলে আয়োজন করা হয় ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫’। সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। এতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনকে সামনে এনে ‘বিনিয়োগ হিরো’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা হয়। ইউনূস এবং তার ঘনিষ্ঠদের নেতৃত্বে বিদেশি প্রতিনিধিদের সামনে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা বলা হলেও বাস্তবে বিনিয়োগের কোনো ইতিবাচক অগ্রগতি হয়নি।

সম্প্রতি গুলশানে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা সরাসরি ইউনূসের সমালোচনায় মুখর হন। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, “১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল পরিকল্পিতভাবে, আর ২০২৫ সালে পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলা হচ্ছে আমাদের শিল্প ও উদ্যোক্তাদের।”

তিনি বলেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, উচ্চ সুদের হার, আমদানিনির্ভর নীতিমালায় দেশি শিল্প চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা গ্যাস বিল দিচ্ছি, তবু গ্যাস পাচ্ছি না। কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, অথচ ব্যাংক টাকা ফেরত চাচ্ছে। বিনিয়োগ কোথায়, উৎপাদন কোথায়? এভাবে চলতে থাকলে দুর্ভিক্ষ অনিবার্য।

ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যাংকঋণের সুদের হার ১৩–১৫ শতাংশে পৌঁছেছে, অথচ উৎপাদনের হার নেমেছে ৬০ শতাংশের নিচে। এনবিআর ও অন্যান্য সংস্থার হয়রানি বাড়ছে, যা ব্যবসা পরিচালনায় বাড়তি বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, “একদিকে গ্যাস নেই, অন্যদিকে কারখানা চালাতে না পারলেও সুদের চাপ বাড়ছে। তিন মাস সুদ না দিলে ঋণখেলাপি করে দিচ্ছে ব্যাংক। অথচ সরকার সময় বেঁধে দিয়ে বেতন দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।”

শওকত আজিজ রাসেল জানান, বই ছাপার অজুহাতে সম্প্রতি ১০ হাজার টন কাগজ আমদানি করা হয়েছে, যা এখন বাজারে খোলা দামে বিক্রি হচ্ছে। এর ফলে দেশীয় কাগজ কল হুমকির মুখে পড়েছে।

তিনি বলেন, এখন আবার ৩০ হাজার টন কাগজ ডিউটি ও ডেমারেজ ফ্রি আমদানি হচ্ছে। চিনিকল থাকা সত্ত্বেও চিনি আমদানি করা হচ্ছে — এসব নীতির পেছনে রয়েছে গভীর শিল্পবিরোধী ষড়যন্ত্র।”

বিটিএমএ সভাপতির দাবি, গত আট মাসে দেশে এক টাকারও বিনিয়োগ আসেনি। তিনি বলেন, বিডা বড় বড় বিনিয়োগের কথা বলছে, অথচ বাস্তবে সরকার টু সরকার আলোচনাও কোনো ফল দিচ্ছে না। এখানে বিনিয়োগ করে উৎপাদনে যেতে ৫ বছর লেগে যায় — এমন পরিস্থিতিতে কেউ আসবে না।

ব্যবসায়ীরা মনে করেন, ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার বাস্তবতা বিবর্জিত অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করছে। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবভিত্তিক শিল্পবান্ধব নীতি গ্রহণ এবং উদ্যোক্তাবান্ধব পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন।

ড. ইউনূস সরকারের প্রচারনির্ভর অর্থনৈতিক কৌশল ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত মিথ্যাচার এখন দেশের বাস্তবতার মুখোমুখি। বিদেশি বিনিয়োগ নেই, দেশীয় শিল্প ধ্বংসের মুখে, আর উদ্যোক্তারা নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। ব্যবসায়ী সমাজ বলছে— এখনই বাস্তবসম্মত, নিরপেক্ষ ও টেকসই অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ না করলে সামনে অপেক্ষা করছে ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১