নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর যমুনা সরকারি বাসভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। অংশ নেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয় এবং জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা একটি সামগ্রিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টা দেশব্যাপী স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন।
তবে একাধিক অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল রাখাইনে সহায়তার জন্য মানবিক করিডোর এবং তাতে সশস্ত্র বাহিনীর সম্মতি আদায়ের চেষ্টা। অথচ প্রেস উইং থেকে ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি’ পর্যালোচনার কথা বলে এক ধরনের বিভ্রান্তিকর বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, করিডোরের মতো একটি কৌশলগত বিষয় তিন বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে তা ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র আলোচনার মোড়কে উপস্থাপন করাটা জাতির সঙ্গে এক ধরনের মিথ্যাচার। পুরো প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ না হওয়ায় এবং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না আসায় বিষয়টি আরও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
বিশ্লেষক ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা মনে করেন, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাথে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সক্রিয় উপস্থিতিতে বিষয়টি ক্লিয়ার হয় করিডোর নিয়েই আলোচনা হয়েছে। বৈঠক হলো ফলপ্রসূ না হওয়ায় বিব্রতকর তথ্য চালাচ্ছে ছড়াচ্ছে ইউনুসের প্রেস উইং। জাতিকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে এবং একটি গোপন কূটকৌশল বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।
সরকারি মহলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, করিডোর ইস্যুতে তিন বাহিনীর ‘সম্মতি’ পেতে ইউনুস নিজেই এই বৈঠকের আয়োজন করেন। এরপর প্রেস উইং থেকে বিবৃতি দিয়ে বিষয়টিকে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত আলোচনা হিসেবে জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়—যা ছিল পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
একজন জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “সেনাবাহিনীর মতো একটি সংবেদনশীল ও পেশাদার বাহিনীর অংশগ্রহণকে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এতে যেমন বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি জাতীয় স্বার্থও হুমকির মুখে পড়ে।”
তিনি আরও বলেন, “করিডোরের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের ইস্যুতে প্রেস উইংয়ের মতো একটি অদক্ষ ইউনিটের পক্ষ থেকে বিভ্রান্তিকর বিবৃতি দেওয়া জাতির সঙ্গে এক ধরনের বড় মিথ্যাচার।”
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সরকার যদি করিডোর ইস্যুতে সত্যিই সশস্ত্র বাহিনীর মতামত ও অংশগ্রহণ চায়, তবে তা হতে হবে সংবিধানসম্মত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। অন্যথায় এসব উদ্যোগ দেশের নিরাপত্তা কাঠামোকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
তিন বাহিনীকে ঘিরে কৌশলগত আলোচনার বিষয়টি যেভাবে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা নিয়ে ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউনুসের প্রেস উইং কিংবা সংশ্লিষ্ট কোনো দপ্তর থেকে এখনো পর্যন্ত নতুন করে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।