জুয়েল রাজ –
কিছুদিন আগ , সাংবাদিকদের এক ঘরোয়া আড্ডায় সহকর্মী সিনিয়রকয়েকজনের সাথে নানা বিষয়ে কথা হচ্ছিল , আর বাংলাদেশীদেরআড্ডায় যা হয় , সব শেষ হয় গিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ।একজনের দাবী খালেদা জিয়া আছেন বলে এখনো বিএনপি আছে , উনি চোখ বুঝলেই তারেক জিয়ার নেতৃত্ব থাকবে না। বিএনপি খন্ডবিখন্ড হয়ে যাবে। কারণ তারেক জিয়া এখনো নেতা হয়ে উঠতেপারেন নি। পাশ থেকে অন্য একজন বলেন সমস্যা নেই, তখনহাল ধরবেন পিনাকী ভট্টাচার্য্য !
কথাটা যদিও তিনি মজার চলে কিংবা হেয়ালি করে বলেছেন, কিন্তবাস্তবতা ও পরিস্থিতি আসলে কী? বিএনপির সিনিয়র নেতাদেরঅবস্থা জানি না। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর চিত্রঅনুযায়ী মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীদের জন্য পিনাকী ভট্টাচার্য্যএখন বিএনপির ত্বাত্তিক গুরু। তার বক্তব্য এখন তারেক জিয়ারবক্তব্যের চেয়ে ও বেশী পছন্দ করে বিএনপির লোকজন। তারলিখিত বইয়ের প্রচার প্রচারণা এবং তার ইউটিউব ভিডিওর বক্তব্যকে রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করে।
তারেক জিয়া যা পারেন নি অতীতে বিভিন্ন সময় নানা ঘোষণা , মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে পিনাকী সেখানে সফল। ভিডিও বার্তারমাধ্যমেই পিনাকী ও আবেদন জানিয়েছিলেন, ভারত বয়কটের ফলাফল হয়তো শূন্য , কিন্তু দেখা গেল বিএনপির নেতা কর্মীরাসেই টোপ গিলেছেন। দেশে বিদেশে তারা ভারত বিরোধী নানাসমাবেশ র্যালী করেছেন, বিভিন্ন দেশের হাই কমিশনে গিয়ে নানাদাবী সম্বলিত স্মারকলিপি দিয়েছেন।
পিনাকী আসলে কি চাইছেন? তিনি কি বাংলাদেশের ধ্রুব রাঠী হতে চাইছেন? নাকি অন্য কোন কারণে তার এই বিবর্তন? পিনাকীরবিবির্তন এক অসীম গবেষণার বিষয় , এমন ও হতে পারে অদূরভবিষ্যতে রাজনৈতিক বিজ্ঞানে তিনি পঠিত হতে পারেন অথবাতাকে নিয়ে গবেষণা ও হতে পারে।
পিনাকীর তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ , ইনফোরমেটিভ , কিন্তু তাই বলেতাকে জ্ঞানী বলার অবকাশ নাই। যেভাবে সার্চ ইঞ্জিনকে জ্ঞানীবলা যায় না। তার বই , স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে মূলত মৌলিককিছু নয়, আমি যতদূর পড়েছি সব অন্যের লেখা থেকে রেফারেন্সহিসাবে নেয়া। তাই টানা পড়ার আগ্রহ বোধ করিনি। সেখানে তিনিগুরুত্ব দিয়েছেন আওয়ামী লীগ বিরোধী ও তখনকার বঙ্গবন্ধুসরকার বিরোধী লেখক প্রকাশনা সমূহ কে , এবং সেই সব বিতর্কিতইতিহাসের স্বাক্ষ্যের মাঝে মাঝে নিজের মত ও বিতর্কিত কিছুঘটনাবলিকে সংযোজিত করেছেন। এর বড় একটা অংশ আবারমুক্তিযুদ্ধে ভারতের লাভ ক্ষতি, সৈনিক দের লুটপাট এই জাতীয়বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন। খুব সম্ভবত তার সর্বশেষ প্রকাশিত বই ‘’ স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ’’ যা লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়েছে । এরপ্রকাশনা বাজারজাত করণ এবং প্রচারণায় যারা জড়িত ছিলেনসবাই মূলত আওয়ামী লীগ বিপক্ষ শিবিরের ভীন্ন রাজনৈতিকমতাদর্শের লোকজন। আর সেটাই স্বাভাবিক।
মূলত ২০১৩ সালের আগে উনাকে বাংলা ব্লগে যারা সম্পৃক্তছিলেন তারাই চিনতেন , এর বাইরে খুব পরিচিত ছিলেন কি নাআমার জানা নেই। এর আগে খুব সম্ভবত ২০০৮ সালে পুপুলারফার্মাসিটিউকাল এর কালাজ্বরের ঔষধ কেলংকারীতে তার নামআসে গণমাধ্যমে । ২০১৩ সালে মূলত গণ জাগরণ মঞ্চের পক্ষে ,স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারের সর্বোচ্চ সাজার দাবীতে আন্দোলনেবিভিন্ন টেলিভিশনে আলোচনায় যোগ দিয়ে তার যুক্তি ও ধারালোবক্তব্যের কারণে নজরে আসেন এবং পরিচিতি পান। সেইপরিচিতির পিছনেই তাকে তাড়া করে তার ব্যাক্তি জীবন , ধর্মীয়পরিচয় , তার কৃতকর্ম নানা বিষয়। আর তাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
সেই অবস্থান বদলে, ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর পিনাকি ভট্টাচার্যতার একটি ফেসবুক পোস্টে লেখে, ”জেহাদই হল বিশ্ব মানচিত্র থেকেইজরায়েলকে নির্মূল করার একমাত্র উপায়। আমার সমস্ত অনুরাগীও অনুগামীদের এই কাজে যোগদান করা উচিত।” উল্লেখ্য, পিনাকিভট্টাচার্য সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হামাসের প্রতি খোলাখুলি সমর্থনপ্রকাশ করেছে। গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে ইজরায়েলের উপরহামাসের যে হামলা, সেটিকে তাতে সে খুবই আনন্দিত বলেজানিয়েছে।
এই যে বিবির্তন , এর আগে ২০১৩ সালের ৫মে ঢাকায় হেফাজতেরনারকীয় তাণ্ডব ও নিরাপত্তা বাহিনীর সেই প্রতিরোধের পক্ষে , হেফাজতের মিথ্যাচারের বিপক্ষে জোরালো প্রতিবাদী ছিলেন তিনি।পরে দেখা যায় পুরো ইউটার্ন করেন তিনি। তিনি হেফাজতের সেইহাজার হাজার হত্যার পক্ষে কথা বলা শুরু করেন।
মুক্তিযুদ্ধ , বঙ্গবন্ধু , ধর্মনিরপেক্ষতা সহজ কথা মুক্তিযুদ্ধের মূল যেস্তম্ভগুলো আছে সেখানে তিনি বিতর্ক শুরু করেন , যেমন তারমুক্তিযুদ্ধে ইসলাম সম্পর্কে লেখেন ,
“ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ‘এই শব্দটির সাথে আমরা সমধিক পরিচিত।কিন্তু এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হওয়ায় এবং স্বাধীন বাংলাদেশরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে ইসলামের ভূমিকা কতোটা রয়েছে তা আমাদেরনতুন প্রজন্মের নিকট একেবারেই অজানা।মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদেরদেশে যে বয়ান আছে তাতে ইসলাম একেবারেই অনুপস্থিত।আমরাএখন বাংলাদেশকে জানি একটি ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে।কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম পুঁজি বা শক্তি যাই বলি না কেনো তা ছিলইসলাম।কিন্তু সেই ইসলামকে এবং যুদ্ধে অবদান রাখা বিরাটআলেম সমাজ কেই দেশ স্বাধীনের পর পর বিকৃত করে দেখানোহয়ছে বলে তিনি লি
এক্ষেত্রে কিছু ব্যাপারে দৃষ্টিপাত করা যাক–
১.মুক্তিযুদ্ধকালে সরকারি ঘোষণাপত্র এবং অন্যান্য নির্দেশাবলি ওবেতার কেন্দ্রে সকল স্থানে আল্লাহর নাম নিয়ে এবং পবিত্র কোরানতেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করা হয়েছে।ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনেরজন্য কখনোই মুক্তিযুদ্ধ হয়নি বরং একটি ইসলামিক শাসনব্যবস্থা, ন্যায় ও সাম্য ও ইনসাফের দেশ গঠনের জন্য যুদ্ধ হয়েছে।
২.রাজাকার বলতেই আমরা সারাজীবন জেনে এসেছিপাজামা,পাঞ্জাবী,টুপি,তসবিহ,লম্বা দাড়ি ধারণকারী মানুষ।কিন্তুআদৌতে কি তাই?বরং,লেখক কিছু স্থিরচিত্র সহ তুলেধরেছেন,অধিকাংশ রাজাকার এর ই দাড়ি, গোঁফ,তসবি,টুপি ছিলনা।
অথচ,নাটক,সিনেমা,পোস্টারে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মানেই ইসলামিকচিহ্ন ধারণকারী ব্যক্তিদের চরিত্র চিত্রণ করা হয় যার সাথেবাস্তবতার আসলে কোনো মিল ই নেই।
.যুদ্ধের সময় কিছু সংখ্যক মানুষ পাক সেনাদের সাহায্য করেছিল বাতাদের হয়ে কাজ করেছিল যাদের রাজাকার বাহিনী বলা হয়।এইরাজাকার বাহিনীতে আসলে কারা যোগ দিয়েছিল।এটি বিশ্লেষণকরা দেখা যায়,
ক) ঐ সময়টাতে দেশে দুর্ভিক্ষাবস্থা বরাজ করছিল ফলে যারা ওইবাহিনীতে যোগ দিত তাদের পাক সরকার অর্থ সাহায্য করত।
খ)কিছু ভীত সন্ত্রস্ত মানুষ এবং সুযোগ সন্ধানী ও প্রতি হিংসাপরায়ণ জনগন পাক সেনাদের সাহায্য করেছিল।
ফলে,আলেম জনগোষ্ঠী বা ইসলাম লেবাস ধারী ব্যক্তিদেররাজাকার হিসেবে গন্য করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।রাজাকারবাহিনীর একটি বিরাট অংশ এসেছে আওয়ামী লীগ, মুসলিম লীগ, পিডিপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে।“
এছাড়া উল্লেখ্য যে, ধর্মীয় নেতাদের জন্য বর্ডার ক্রস করে ভারতেযাওয়া কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।এমনকি মাওলানা ভাসানীওবাঁধার সম্মুখীন হয়েছিল।
৩.মুক্তিযুদ্ধের দেশের আলেম সমাজের একটা বিরাট অংশপ্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছিল যা সম্পর্কে আমরা তরুণ প্রজন্মএকেবারেই অজ্ঞাত।সে সময়ে বাংলাদেশের শীর্ষ আলেম হাফেজ্জিহুজুর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রাজনৈতিক ও নৈতিক অবস্থান নেন।এবংমুক্তিযুদ্ধকে তিনি উল্লেখ করেন”জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমেরন্যায়যুদ্ধ’এবং তার সহচারীদের যুদ্ধে যোগ দিতে উৎসাহিত করেন।
মাওলানা ভাসানীর মুক্তিযুদ্ধের আগে, পরে এবং যুদ্ধ শেষে দেশেরজন্য লড়াই লক্ষণীয়।এক্ষেত্রে” কাগমারী সম্মেলন “উল্লখযোগ্য।এবং তিনিই ভারতে গিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিশ্ব বোদ্ধাদেরপাকিস্তান সরকারের গণহ্যতার ব্যাপারে অবহিত করেন এবংজনমত গঠনের চেষ্টা চালান।এছাড়া দেখা যায়,ভারতে অবস্থিত“জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ”নামক সংগঠন ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেব্যপকভাবে প্রচারণা চালিয়েছেন এবং সহযোগীতা করেছেন আরএই সাহায্য ছিল একটি অত্যাচারিত মুসলিম জনগোষ্ঠীকে উদ্ধারেরজন্য।
৪.মুক্তিযোদ্ধাদের প্রিয়জনদের নিকট লেখা চিঠিপত্রে স্পষ্টতই দেখাযায় তাদের মানসিক শক্তি এবং ভাবনায় ইসলামের ভাব–চিন্তাকতোটা ক্রিয়াশীল ভূমিকা পালন করেছে।এক আল্লাহর ওপরভরসা রেখে তারা শহীদ হতে প্রস্তুত ছিল।
৫.স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান ওকৌতুক নাটিকাতে পাকিস্তান সরকার কে ইসলাম ধর্মবিরোধী এবংবাঙলিদের ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিসেবে উপস্থাপনের মাধ্যমেমুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যোগানো হয়েছে।
৬.বাংলাদেশে যুদ্ধচলাকালীন অবস্থায় স্পষ্টতই প্রতিবেশী রাষ্ট্রভারতের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ছিল।কিন্তু এক্ষেত্রেদেখা যায়,জাতিগতভাবে পাকিস্তান এবং ভারত দুই জাতি।সম্ভবতএকারণেই পর পর দুবার অস্থায়ী সরকার কতৃক ভারতে স্বীকৃতিরআবেদন জানিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।সবশেষে,২৩ শেনভেম্বর পাঠানো চিঠিতে ভারতের সাথে মিল রেখে মূলনীতি হিসেবেধর্মনিরপেক্ষতা উল্লেখ করার পর ই ভারতের স্বীকৃতি পায়বাংলাদেশ।
পিনাকী তার মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে ইতালীয় এক সাংবাদিকের বয়ানে , পিনাকী উল্লেখ করেছেন , বঙ্গবন্ধু ক্ষমতালিপ্সু , উচ্চবিলাসী, সহ হেন কোন উপাধী নেই সেখানে উল্লেখ করেনি , ২৬ মার্চ কেন নিহত না হয়ে পাকিস্তানী বাহীনীর হাতে গ্রেফতার হলেন, ভূট্টোর সাথে হয়তো তার গোপন আঁতাত ছিল এই সব লিখিত আকারে ইচ্ছাকরেই প্রকাশ করছেন। বা তথ্য হিসাবে দলিল হিসাবে রাখতে চাইছেন।
বঙ্গবন্ধুর শত্রু ও তার ব্যাক্তিত্ব নিয়ে , আচরণ নিয়ে, সততা নিয়েপ্রশ্ন তুলেনি কোনদিন। তাঁর রাজনীতি কিংবা প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা আছে হয়ত। ব্যাক্তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিয়ে বিতর্ক নেই কোথাও। কিন্ত পিনাকি সুক্ষ ভাবে ইচ্ছাকৃত ভাবে,বঙ্গবন্ধুকে হেয় করতে কিংবা ঐতিহাসিক একটি বিতর্কের বীজ ,নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করতে এই বিষয়টি তার স্বাধীনতা উত্তরবাংলাদেশ বইয়ে লিপিবদ্ধ করেছেন। সাধারণ পাঠক কিন্তু বইয়েরটিকা টিপ্পনী দেখে না কোন পত্রিকায় কত সালে প্রকাশিত হয়েছিল সত্য না মিথ্যা তা যাচাই করবে না। তাঁরা হয়ত বিশ্বাস করবে পিনাকীর বইয়ের লেখাই সত্য। মূলত এইসব বিতর্কিত গালগল্পকেইতিহাসের মোড়কে জড়িয়ে বিভ্রান্তির জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে পিনাকী কে নিয়ে উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে,
পিনাকী একসময় বাম রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর১৮টি গ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন । বর্তমানে তিনি একজন জনপ্রিয়অনলাইন একটিভিস্ট, ফেসবুক, টুইটারে সক্রিয়ভাবে আলোচনাকরেন। ফেসবুকে তার ১০ লক্ষাধিক অনুসারী রয়েছে। তিনি প্রায়ইবাংলাদেশের ইতিহাস, চলমান রাজনীতি, মানবাধিকার বিষয়াবলীএবং পার্শ্ববর্তী দেশের ইস্যু নিয়ে লেখালিখি ও ভিডিও বানিয়েথাকেন।
এই পার্শ্ববর্তী দেশ মানে ভারত। আবার ভারত বাংলাদেশের কিছুইউটিউবার অনলাইন এক্টিভিস্ট আবার দাবী করছেন পিনাকীমূলত পাকিস্তানের টাকায় এই ভারত বিরোধীতা করছেন। আরেক অংশ বলছে পিনাকী মূলত চায়না বাম। তাই ভারত বিরোধীতার জন্য চীন তাকে দিয়ে এসব করায়। এই পাল্টাপাল্টি চলছে।
দেশত্যাগের আগে পিনাকী পপুলারের চিফ অপারেটিং অফিসারহিসেবে কাজ করতেন পপুলার ফার্মাসিটিক্যালসে। ২০০৮ সালে ডা. পিনাকী ভট্টাচার্য পপুলারের মাধ্যমে জীবন রক্ষাকারী ওষুধজালিয়াতি করে কয়েক কোটি টাকা লুটপাট করে। তার এইজালিয়াতির সাথে যুক্ত ছিল বিএনপি-জামায়াতের আমলে নিয়োগপাওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কিছুদুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। পিনাকীর এই অপকর্ম ব্রিটেনের টেলিগ্রাফপত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছিল।
এই সমালোচনার প্রেক্ষিতে তিনি তার ব্লগে , ফেইস বুকে বহুবার দায় স্বীকার করে লিখেন,
হ্যাঁ, আমি পপুলার ফার্মাকে সেইসময় এই কেলেংকারী থেকে উদ্ধারকরেছিলাম। আমি একা নই আমার সাথে আরো কয়েকজন দক্ষপেশাদার কাজ করেছিলো। আমি যেহেতু সামনে থেকে উদ্ধার কর্মেরনেতৃত্ব দিয়েছিলাম, তাই আমার নিজের গায়ে এই কেলেংকারীর দাগলাগানোর ঝুঁকি নিয়েই পপুলারকে উদ্ধার করেছিলাম। কোনদক্ষতাও নাই। এই ঘটনার ব্যাখ্যা আমি ফেইসবুকে লিখেই দিয়েছি।
এই কথা আমি কখনো অস্বীকার করিনি যে পপুলার ফার্মারকালাজ্বরের ওষুধ নিয়ে কেলেংকারী হয়নি। আমি এটাও অস্বীকারকরিনি যে সেই সময়ে আমি পপুলার ফার্মার চিফ অপারেটিংঅফিসার ছিলাম (সিইও নয়)। আমি মার্কেটিং, সেলস, ডিস্ট্রিবিউশন ও আইটি এই বিভাগগুলোর দায়িত্বে ছিলাম। আমিফার্মাসিস্ট নই, আমি কখনোই ম্যানুফ্যাকচারিং-এ কাজ করিনি,আমার সেই ক্ষেত্রে কোন দক্ষতাও নাই। তিনি বারবার এর ব্যাক্তি দায় অস্বীকার করে পুপুলার কে উদ্ধার করার দায় স্বীকার করেন । আমি তো প্রেমে পড়িনি প্রেম আমার উপড়ে পড়েছে ধরনের একটা রোমান্টিক অবস্থা।
তারপর নাদিয়া ইসলাম কেলেংকারীতে তার ব্যাক্তি চরিত্র ও বিদেশী চর হিসাবে কাজ করার ইমেইল ফাঁস হলে সেখানে বিভিন্নসংস্থার সাথে তার যোগাযোগের কথা উল্লেখ করেন । প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ব্যাক্তি জীবন নিয়ে আমি কখনো আলোচনা করিনা। শুধুমাত্র প্রসঙ্গক্রমে এখানে নিয়ে আসতে হয়েছে।
আজকের এই লেখা আসলে পিনাকী মূল বিষয় ছিল না , মূল বিষয় ছিল বিএনপি। ভারতের লোকসভা নির্বাচন থেকে কি বিএনপি শিক্ষা গ্রহণ করবে?কীভাবে , কংগ্রেসের পুনরুত্থান হয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৯–এর নির্বাচনে যেভাবে কংগ্রেসের ভরাডুবিহয়েছিল, তাতে সবাই ধরেই নিয়েছিল, কংগ্রেস আর কোনো দিনউঠে দাঁড়াতে পারবে না। এবারের নির্বাচনের পর বুথফেরতজরিপগুলোতেও দেখা যাচ্ছিল, বিজেপির জয়জয়কার—কংগ্রেস‘নেই বললেই চলে’। সেই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস ,রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব নিয়ে বিগত এক দশক ধরেই নানা আলোচনা সমালোচন ছিল, সেই অবস্থান থেকে , জোটের বিশ্বাস অবিশ্বাস পিছনে ফেলে পৃথিবীর বৃহত্তম একটি দেশকে, রাহুল গান্ধী নাড়িয়ে দিয়ে ডুবে যাওয়া কংগ্রেস কে তীরে নিয়ে এসেছেন।
পিনাকী ভারতের ধ্রুব রাঠী না। তিনি যে ভাষায়, যে ধরণের গুজব ,কিংবা অর্ধ সত্য অর্ধ্মিথ্যা মিশিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি জন্ম দিতে চাইছেন , তা ধ্রুব করেন নি। গত বছর টাইম ম্যাগাজিনের ‘নেক্সটজেনারেশন লিডারস ২০২৩’ এর তালিকায় নাম উঠেছিলো ২৯বছর বয়সী ভারতীয় ইউটিউবার ধ্রুব রাঠীর নাম। তিনি তার‘ফ্যাক্ট-চেকিং’ কাজের জন্য এবং তিনি বিভিন্ন শিক্ষামূলক বিষয়েরওপর কন্টেন্ট তৈরি করার জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে, তাই বিএনপিকে তারেক রহমানের নেতৃত্বেই অগ্রসর হতে হবে। শুধুমাত্র ভারত বয়কট আন্দোলন করে, প্রতিবেশী দেশের সাথে বিরূপ সম্পর্ক জিইয়ে রেখে যদি বিএনপি বাংলাদেশের মানুষের মন জয় করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় চলে যাবে বলে ভেবে থাকে , তা একান্তই হাস্যকর। পিনাকী সেই তত্বই হয়ত বিএনপি কর্মীদের ভারত বিরোধী হতে প্ররোচিত করছেন। এই ত্বত্ত কি আদৌ কাজ করবে? পিনাকী কে ত্বাত্তিক গুরু হিসাবে গ্রহণ করে আসলে বিএনপি ডুববে ছাড়া ভাসবে বলে মনে হয়না।