দুর্নীতিবাজ আসিফ কেন ইউনূসের এত প্রিয় ?

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াসহ সরকারে থাকা ছাত্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগ নিয়ে উত্তাল বাংলাদেশের রাজনীতি। এই উপদেষ্টাকে নিয়ে সমালোচনা যখন তুঙ্গে তখন তাকেই কাছে টেনে নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার উপদেষ্টা পরিষদ। প্রশ্ন উঠেছে, দুর্নীতিবাজ এই ছাত্র উপদেষ্টার কাছ থেকে  তবে কত টাকা নিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ইউনূস ও তার সহকারীরা।

সম্প্রতি বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে। তারা মনে করে, এই ব্যক্তিদের উপস্থিতি সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এই উপদেষ্টারা হলেন— যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। এ নিয়ে রাজপথ আটকিয়ে আন্দোলনও করেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। এসব উপদেষ্টাদের পদত্যাগ ও নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যখন বিএনপি রাজপথ নিয়ন্ত্রণে নিতে চাইছিল তখনই পদত্যাগের নাটক সাজান অধ্যাপক ইউনূস। এই নাটকও মঞ্চস্থ করান এনসিপির নেতা নাহিদ ইসলামকে দিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানেও উপস্থিত ছিলেন আসিফ। যা নিয়ে পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বিতর্ক।

এই উপদেষ্টার এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তদবির, টেন্ডার–বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার দুদক কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে অভিযোগের বিষয়ে আরও যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন হওয়ায় তার বিদেশ যাওয়া এবং এনআইডি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদন করা হয়েছে।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৮ সদস্যের সমন্বয়ক টিমে ১৭ নম্বর সমন্বয়ক ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পর উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। উপদেষ্টা হওয়ার পর নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু মোয়াজ্জেমকে সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন আসিফ। বিশ্লেষকরা বলছেন, মন্ত্রী বা উপদেষ্টারা তাদের ব্যক্তিগত সহকারী বা এপিএসের মাধ্যমেই তারা দুর্নীতিগুলো করে থাকেন। যাতে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। আসিফও তার বন্ধু মোয়াজ্জেমকে দিয়েই কাজটি করিয়েছেন। ধরা পড়ার শঙ্কায় পরে তাকে বলির পাঠা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এদিকে গত ২৩ এপ্রিল কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী জুলকারনাইন সায়ের বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক ভেরিফায়েড পোস্টে অভিযোগ উত্থাপন করেন যে, আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেন একটি সরকারি ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়েছেন।

পোস্টে তিনি একটি লাইসেন্সের ছবি সংযুক্ত করে দাবি করেন, “স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (কুমিল্লা) নির্বাহী প্রকৌশলী ১৬ মার্চ এই লাইসেন্স ইস্যু করেন। সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের দাবি অনুসারে, বিষয়টি নিশ্চিত করতে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শুরুতে এ বিষয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পরে তিনি বিষয়টি যাচাই করে জানান, “লাইসেন্সটি সত্য, তবে এটি তার জ্ঞাতসারে হয়নি। স্থানীয় এক ঠিকাদারের প্ররোচনায় তার শিক্ষক পিতা লাইসেন্সটি নিয়েছেন এবং এখনও পর্যন্ত সেটি কোনো কাজে ব্যবহৃত হয়নি।”

তবে প্রশ্ন উঠছে, একজন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হওয়ায় এই লাইসেন্স গ্রহণ প্রক্রিয়াটি কতটা স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ ছিল। বিশ্লেষকেরা বলছেন—এটি একটি ‘নৈতিক সংঘাত’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

আসিফের সঙ্গে হিজবুত তাহরীরের সম্পর্কের খবর নতুন নয়। অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী জুলকারনাইন তার ফেসবুক জানান, নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে জড়িত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বর্তমান প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। আর এই এজাজকে নিয়োগ দিয়েছিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদই। এজাজ ছাত্রজীবনে ইসলামি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন, ২০০২ সাল থেকে হিজবুত তাহরীরের সাথে জড়িত হন। এই সংগঠনের কাজ করতে গিয়ে কমপক্ষে দু’বার গ্রেপ্তার হন তিনি। এই হিজবুত তাহরীরের প্রভাব ও সমর্থনে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ক্যু’র পরিকল্পনা চলছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যক্তিগত স্বার্থ, করিডোর বাস্তবায়ন ও রাজনৈতিক আধিপত্য কায়েম করতে একটি অংশ দেশ ও সেনাবাহিনীকে সংঘর্ষের পথে ঠেলে দিচ্ছে। এর সঙ্গে জঙ্গি ও উগ্রবাদী শক্তির যোগসাজশ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এক অশনি সংকেত।

ফুলে ফেঁপে উঠেছে ইউনূসও: বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ক্ষমতায় থাকাকালীন বিশেষ সুবিধা নেয়ায় নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ২০২৪ সালের ৮ই অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন। এরপর তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দ্রুত সরকারি অনুমোদন ও বিশেষ সুবিধা পায়। সেই সাথে আছে, গ্রামীণ ব্যাংকের কর মওকুফ ও সরকারিভাবে ব্যাংকে শেয়ারের পরিমাণ ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে থাকা শ্রম আইন লঙ্ঘন ও অর্থপাচারের মামলা দ্রুত খারিজ হয়ে যাওয়ায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিশিষ্টজনেরা বলছেন, এভাবে নিজ প্রতিষ্ঠানের সুবিধা পাওয়া এবং মামলা খারিজ হওয়া স্বার্থের সংঘর্ষ তৈরি করে এবং জন আস্থা হারানোর ঝুঁকি বাড়ায়। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ফের মনে করিয়ে দিচ্ছে—রাজনীতিতে ব্যক্তি স্বার্থ, প্রভাব বিস্তার ও অভ্যন্তরীণ জোট অনেক সময়ই গণতন্ত্রের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করাই হয়ে উঠেছে সময়ের প্রধান দাবি।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১