নিজেস্ব প্রতিবেদক:
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি হয়েছে। যদিও পুরো প্রক্রিয়াটিই অনেকের কাছে একটি ‘পূর্বপরিকল্পিত নাটক’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সদ্য গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
সাক্ষাৎ শেষে সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, “স্যার বলছেন, আমি যদি কাজ করতে না পারি… যে জায়গা থেকে তোমরা আমাকে আনছিলা একটা গণ-অভ্যুত্থানের পর। কিন্তু এখন আমি জিম্মি।”
এই বক্তব্য ঘিরেই প্রশ্ন উঠছে—তিনি কীভাবে জিম্মি, কে করছেন, কাদের কাছে জবাবদিহি করছেন একজন প্রধান উপদেষ্টা?
সাবেক এক আমলা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার এই কথার মধ্যেই নাটকের ছাপ স্পষ্ট। একদিকে তিনি ‘গণ অভ্যুত্থান’ দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন বলে দাবি করছেন, অন্যদিকে আবার গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর চাপ সামলাতে না পারার অজুহাত দিচ্ছেন। এটা কৌশলগত নাটক ছাড়া কিছু নয়।”
এদিকে বিএনপি আজ এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের পদত্যাগ দাবি করেছে।
এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় এনসিপি ঘনিষ্ঠ এক নেতা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন—“সংস্কার সুপারিশ বাস্তবায়ন না হলে আইন, অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন—তাদেরও আমরা পদত্যাগে বাধ্য করব।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই চাপ, পাল্টা চাপ, আবার ‘উদ্বিগ্ন মুখে’ প্রধান উপদেষ্টার ‘আমি পারছি না’-জাতীয় মন্তব্য আসলে এক ধরনের জনমত প্রভাবিত করার অপচেষ্টা।
এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা যদি সত্যিই পদত্যাগ করতে চান, সেটা স্পষ্ট করে বলতে পারেন। কিন্তু মাঝখানে বারবার ‘ভাবছি’, ‘জিম্মি’, ‘কমন জায়গায় আসেনি রাজনৈতিক দলগুলো’ এসব বলে আসলে দায় এড়ানোর চেষ্টা চলছে। এটা একটি সাজানো নাটক।”
আরও নাটকীয় হয়ে ওঠে পরিস্থিতি, যখন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আগের বিভাজনমূলক বক্তব্যের জন্য ‘দুঃখপ্রকাশ’ করেন।
রাজনীতির মাঠে প্রশ্ন উঠেছে—তাহলে কি প্রধান উপদেষ্টা নিজেই চান না এই সরকার চলুক? নাকি সেটিই প্রেক্ষাপট তৈরি করে পদত্যাগ করে সবার সহানুভূতি নেওয়ার একটি কৌশল?
জাতীয় নিরাপত্তা ও সামরিক বিশ্লেষক বলেন, “দেশের এমন একটি স্পর্শকাতর সময়ে প্রধান উপদেষ্টা যদি সত্যিই দায়িত্ব ছাড়তে চান, তাহলে সেটা স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট হতে হবে। ভাসা-ভাসি বার্তা দিয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করা চলবে না।”
রাজনীতির এই ‘পদত্যাগ নাটক’ আদৌ বাস্তবতা না কি পরিকল্পিত কৌশল—সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। তবে এটুকু স্পষ্ট, এ ধরনের অস্থির বার্তা গণমানুষের আস্থাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে।