তিন পতাকা বৈঠক ,দেশ বিক্রির এক ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা !

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশের এক শান্তিপূর্ণ উপকূলীয় শহর কক্সবাজার। আর শান্তিপূর্ণ এই শহরের অনুষ্ঠিত হয়েছে এমন এক বৈঠক, যা বদলে দিয়েছে গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা চিত্র। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, কক্সবাজারে হয়ে যাওয়া এই বৈঠক মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের সার্বোভৌমত্ব ৩য় কোন পক্ষের হাতে তুলে দেওয়া, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিদেশি শক্তির কাছে দেশ বিকিয়ে মুহাম্মদ ইউনুসের ক্ষমতাকে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত করা।

বুধবার (২১ মে) কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক তানহারুল ইসলাম গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের প্রশিক্ষন দিতে এদিন বাংলাদেশে আসে মার্কিন সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনী, আসলেও কি তাই? অন্যদিকে বুধবার দুপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিছু ভিডিও চিত্র। যা বলছে, কোনো প্রশিক্ষন নয়, বরং কক্সবাজারে মার্কিন দুই বাহিনীর ভ্রমণের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। ভিডিও চিত্রগুলোতে দেখা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক শেষে বের হচ্ছেন মার্কিন সেনাবাহিনী-বিমানবাহিনী, আরাকান আর্মি ও বাংলাদেশের কিছু ‘নির্বাচিত’ সামরিক প্রতিনিধি।

আভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণের আড়ালে মার্কিন দুই বাহিনীর এই সফর ছিল দেশ বিক্রির আঁতাত। ত্রিপাক্ষিক এই বৈঠকের মূল এজেন্ডা ছিল, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আরাকান আর্মির ‘কৌশলগত প্রবেশ’ এবং মার্কিন ঘাঁটি স্থাপন। বৈঠকে আলোচনা হয় কিভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের কিছু অংশে আরাকান আর্মিকে মানবিক করিডোরের মাধ্যমে জায়গা ছেড়ে দেওয়া এবং রাখাইন রাজ্যসহ বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে নিয়ন্ত্রণ কিভাবে তাদের হস্তগত করা যায়। পাশাপাশি তাদের এই প্রবেশকে সামনে রেখে মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনী ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করার’ অজুহাতে বাংলাদেশের ভিতরে এবং বঙ্গোপসাগরে একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। স্পষ্টত এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দেওয়া।

ত্রিপাক্ষিক এই বৈঠক নিয়ে ইতোমধ্যেই ভারি হয়ে গেছে ক্যান্টনমেন্টের বাতাস। সাম্প্রতিক সময়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে ক্যু’য়ের প্রস্তুতির ঘটনা এবং বুধবারের এই বৈঠকের প্রভাবে বেশ অসন্তোষ চলছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে কাজ করা সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনীর মধ্যে এক প্রকার অস্বচ্ছতা তৈরি হয়েছে। দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থ নিচে ফেলে কেউ-কেউ ব্যক্তি স্বার্থ কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। একটা পক্ষ চাইছে দেশ বিকিয়ে দিয়ে সেনাবাহিনীর চেহারা সমুজ্জ্বল রাখতে, একটা পক্ষ চাইছে ড. ইউনূসের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে আরেকটা পক্ষ চাইছে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে রাজনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক ভাবে স্থিতিশীল করার জন্য। সেটা সময়ের কারনে হোক আর দায়িত্ব পালনের কারনেই হোক, ড. ইউনূসের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার পক্ষের লোকের পাল্লাই ভারি মনে হচ্ছে আমার কাছে।

সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা আরও বলেন, তারা এটাকে বলছে নিরাপত্তা সহায়তা। কিন্তু আমরা যারা গ্রাউন্ড লেভেলে কাজ করি তারা বুঝি, এটা আসলে ক্ষমতা দখলের খেলা এবং অন্তর্বর্তী সরকারে যারা আছে তারা এতে সায় দিচ্ছে, সায় দিচ্ছে সেনাবাহিনীর বেশ কিছু কর্মকর্তারা। নতুবা ড. ইউনুসের বিরোধিতা করার পর থেকেই কেনো সেনাপ্রধানের উপরে ক্যু’য়ের চেষ্টা হবে! আবার যদি ক্ষমতার দীর্ঘায়িত না করার উদ্দেশ্য হয়, তবে দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে আপনি করিডোর দিয়ে দিচ্ছেন, বন্দর দিয়ে দিচ্ছেন; কার স্বার্থে? সেদিন শফিকুল আলম (প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব) বললেন, বন্দর-করিডোরের বিকিয়ে দেওয়ার ম্যান্ডেট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তারা পেয়ে গেছেন। যেখানে বন্দর-করিডোরের জন্য সবচেয়ে ভুক্তভোগী হবে দেশ সেখানে এগুলো বিদেশীদের হস্তগত করা মানে আপনি ক্ষমতাকে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশ্যেই কাজ করছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত এই আলোচনার কথা অস্বীকার করেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়, তাহলে কী বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বজায় থাকবে? এমন প্রশ্নে কথা হয় এক ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকের সাথে। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে কক্সবাজারে যা ঘটছে তা শুধু একটি গোপন বৈঠক নয়, এটা দক্ষিণ এশিয়ার শক্তির ভারসাম্য ভেঙে ফেলার একটি প্রচেষ্টা। আরাকান আর্মিকে ঘুটি হিসেবে ব্যবহার করে সুযোগ করে দেওয়া হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। মিয়ানমারের একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে বাংলাদেশ সীমান্তে সক্রিয় করে তোলার মানে হচ্ছে, বাংলাদেশকে অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্ব দুই ফ্রন্টে চাপে ফেলা। এটা কেবল সামরিক কৌশল নয়, এটা মানসিক যুদ্ধ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি এ বিষয়ে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে, তাহলে ধরে নিতে হবে বঙ্গোপসাগরে একটি নতুন কোল্ড ওয়ারের মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশ না চাইলেও অজান্তে এই মঞ্চে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর যদি বাংলাদেশি কোনো গোষ্ঠী বা অংশ এতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকে, তাহলে সেটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার চূড়ান্ত আত্মঘাতী চুক্তি হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হবে। আমরা এখনো সময়ের মধ্যে আছি। কিন্তু সময়টা দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।

এটি কেবল একটি সামরিক চুক্তি নয় এটি একটি গোপন কৌশল, যেখানে জনগণকে শুধুমাত্র পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হচ্ছে। একদিকে রাখাইন আর্মি, অন্যদিকে মার্কিন বাহিনী, এবং মাঝে আমাদের নিজেদেরই কিছু খেলোয়াড়; এই ভয়ঙ্কর সমীকরণে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খায় , ‘কীভাবে এবং কেন আমাদের নিরাপত্তার জন্য, আমাদের ভবিষ্যৎকে গোপন আঁতাতে ঠেলে দেওয়া হবে?’

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১