নিজস্ব প্রতিবেদক:
সামাজিক কল্যাণমূলক কাজের জন্য সরকারের উদ্যোগে গঠিত ৭০০ কোটির বেশি টাকার ক্ষুদ্রঋণ তহবিল ‘গ্রামীণ ট্রাস্টের’ কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়া ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক ও প্রশ্ন। অভিযোগ উঠেছে, সিঙ্গেল সোর্স সিলেকশন (এসএসএস) পদ্ধতিতে এককভাবে গ্রামীণ ট্রাস্টকে নির্বাচন করে পুরো তহবিল ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিতে চাচ্ছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া ছাড়াই একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদ্ধতিতে “Exists high risk of favoritism and corruption”—অর্থাৎ এতে পক্ষপাতিত্ব ও দুর্নীতির আশঙ্কা থাকে এবং কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা হয় না। ফলে বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ খাতে কাজ করা অন্যান্য সংস্থা যেমন ব্র্যাক, আশা, ব্যুরো বাংলাদেশ বা সরকারি ব্যবস্থাপনায়ই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
১৯৭৪ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে শুরু হয় ‘পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রম’ নামে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম। তখন থেকেই ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়োজিত সরকারি সমাজকর্মীদের মাধ্যমে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এই ঋণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে কার্যক্রমটির আওতায় ৭০০ কোটির বেশি টাকার একটি ফান্ড রয়েছে। এই ফান্ড ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সরাসরি ‘গ্রামীণ ট্রাস্টকে’ দেওয়ার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘনিষ্ঠ মহলের তৎপরতায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদ বা উপদেষ্টা সভার অনুমোদন ছাড়াই এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারি সম্পদের এভাবে এককভাবে হস্তান্তর কখনোই স্বচ্ছতা বা জবাবদিহিতার মধ্যে পড়ে না। এই সিদ্ধান্তের ফলে শুধু ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ নয়, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের ওপরও চাপ তৈরি হতে পারে।’
সরকারি খাতের সমাজকর্মীদের একাংশ বলছে, ইউনিয়ন সমাজকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে মাঠ পর্যায়ে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছেন। হঠাৎ করে একটি বেসরকারি ট্রাস্টকে এ দায়িত্ব দিলে তাদের কাজের পরিধি সংকুচিত হয়ে যাবে এবং কর্মসংস্থানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এ বিষয়ে গ্রামীণ ট্রাস্ট বা ড. ইউনূসের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন একটি বৃহৎ তহবিলের ব্যবস্থাপনায় প্রতিযোগিতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। অন্যথায় এটি শুধুই পক্ষপাতের উদাহরণ হয়ে থাকবে, যেখানে রাষ্ট্রীয় অর্থের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।