রাষ্ট্রের নীতিগত সিদ্ধান্তেই কি লাদেনকে আশ্রয় দেয় পাকিস্তান?
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাষ্ট্রের নীতিগত সিদ্ধান্তেই কি ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দিয়েছিল পাকিস্তান, সম্প্রতি এমন এক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার। এমনকি জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টি পাকিস্তানের একটি রাষ্ট্রীয়নীতি এই বিষয়টি নিয়েও জানতে চাওয়া হয় তার কাছে। সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পরে সার্বিক বিষয় নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম স্কাই নিউজের মুখোমুখি হন তিনি। আর সেখানেই উঠে আসে বেশ চাঞ্চল্যকর কিছু তত্ত্ব। যদিও তিনি দাবি করেন পাকিস্তানের অভ্যন্তরে কোন জঙ্গি আস্তানা নেই, কিন্তু কোন প্রমাণ স্বরূপ সারমর্ম টানতে পারেননি তিনি।
সম্প্রতি স্কাই নিউজে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র/প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা মো. আসিফ স্বীকারক্তি দিয়েছিলেন যে, পাকিস্তান দীর্ঘ দিন ধরেই একাধিক জঙ্গি সংগঠনকে সমর্থন দিয়ে পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে। শুধু তাই নয় অর্থ সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি পাকিস্তান এই জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নিজেদের প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহারও করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। আর জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতার এই বিষয়টি পাকিস্তানের একটি রাষ্ট্রীয় নীতি বলেও জানিয়েছিলেন খাজা আসিফ। আর সেই সাক্ষাৎকারের রেশ টেনেই আতাউল্লাহ তারারকে প্রশ্ন করেন ইয়ালদা হাকিম।

পাকিস্তানের জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টি উদ্দৃত করে ইয়ালদা হাকিম বলেন, কয়েকবছর আগেও এই জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতার জন্যই কিন্তু পাকিস্তান বিশ্বের দরবারে গ্রে লিস্টে ছিল। আবারও বলছি, সেই তালিকা থেকে পাকিস্তান তার নাম মুছে নিয়েছে সেটা কিন্তু বেশি কাল আগের কথা না। জঙ্গিদের আশ্রয় দাতা হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছিল। এমনকি সে সময় ট্রাম্প উদৃত করেছিলেন, পাকিস্তান জঙ্গি সংগঠনগুলো নিয়ে দ্বিচারিতা করছে। তারা বলছে তারা জঙ্গি নির্মুলে সচেষ্ট অথচ তারাই জঙ্গিদের আশ্রয় দিচ্ছে।
ইয়ালদা হাকিমের কথার জবাব দিতে গিয়ে ৯/১১ এর প্রসঙ্গ টেনে আতাউল্লাহ তারার বলেন, ৯/১১’র পর থেকে এখন পর্যন্ত জঙ্গিবাদ নিধনের দিক দিয়ে পাকিস্তান সব থেকে এগিয়ে আছে। বিষয়টা হচ্ছে, বিশ্ব শান্তির জন্য আমরাই গ্রান্টর হিসেবে কাজ করছি। কেননা আমরা জঙ্গি সংগঠনগুলো এবং বিশ্বের মাঝের একটি দেয়াল তুলে রেখেছি। যা বিশ্বকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
৯/১১ এর প্রসঙ্গ তুলতেই ইয়ালদা হাকিমের প্রশ্নের মুখোমুখি হন পাকিস্তানের এই তথ্যমন্ত্রী। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে কোন জঙ্গি আস্তানা নেই, আতাউল্লাহ তারারের করা এমন মন্তব্যকে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে ইয়ালদা হাকিম বলেন, পাকিস্তানের জেনারেল পারভেজ মোশারফ, বেনজির ভুট্টো, খাজা আসিফ এমনকি বিল্লাল ভুট্টো পর্যন্ত বলছেন জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা এবং আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি পাকিস্তানের ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এবং আমরা সবাই জানি ওসামা বিন লাদেন পাকিস্তানের অ্যাবোতাবাদে লুকিয়ে ছিল। এই যে জঙ্গি আশ্রয় দেওয়ার ঘটনা প্রবাহ এবং আপনাদের স্বরাষ্ট্র/প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর যে বক্তব্য তা তো নিশ্চিত ভাবে ইঙ্গিত করছে যে পাকিস্তানে এখনও জঙ্গি আস্তানা থাকার সম্ভাবনা আছে।
প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে পাকিস্তানের এই তথ্যমন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্র/প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর তথ্যকে ভুল ভাবে বিশ্লেষন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ৮০র দশকে সোভিয়েত যখন আফগানিস্তান আক্রমন করেছিল তখন কিন্তু আমরা প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে ছিলাম, যা এখনও ইতিহাস হয়ে আছে এবং নিশ্চিতভাবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু ছিলাম। ৯/১১র পরে সবকিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে, জঙ্গি নির্মূলে পাকিস্তান অনেক কিছুই বিসর্জন দিয়েছে, এমনকি জীবন বিলিয়ে দিতেও পিছ পা হচ্ছে না। এমনকি আজকেও বেলুচিস্তানে জঙ্গি হামলায় আমাদের ৭ জন সেনা নিহত হয়েছে।
যদিও পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রীর দেওয়া এই তথ্যকে পশ্চিমাদের কাছে থাকা গোয়েন্দা তথ্যের সাথে সাংঘর্ষিক বলে জানান ব্রিটিশ এই সাংবাদিক।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের সামরিক শহর অ্যাবোতাবাদে যুক্তরাষ্ট্রের এক গোপন সেনা অভিযানে বিন লাদেন নিহত হন। এ ঘটনায় বিব্রত পাকিস্তান সরকার মার্কিন অভিযানের দুই মাস পর ঘটনার বিস্তারিত অনুসন্ধানে একটি কমিশন গঠন করে। ঘটনা তদন্তে কমিশন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ ২০১ জন লোকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। ছয় মাস আগে অনুসন্ধান শেষ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিশন। কিন্তু পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করে চাপা দিয়ে রাখে। সেই প্রতিবেদনের ফাঁস হওয়া একটি কপি আল জাজিরার হাতে পৌঁছলে প্রায় পুরো প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে দেয় তারা। এর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ দেশটিতে আল জাজিরার ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, লাদেন আফগানিস্তানের তোরা বোরা পর্বতে মার্কিন হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার পর পালিয়ে ২০০২ সালের মাঝামাঝি পাকিস্তানে প্রবেশ করেন। এরপর থেকে মার্কিন অভিযানে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো বিঘ্ন ছাড়াই লাদেন পাকিস্তানে আত্মগোপন করে ছিলেন। লাদেন অভিযানে পাকিস্তানে প্রবেশ করা যুক্তরাষ্ট্রের হেলিকপ্টারগুলো লাদেনের লাশ নিয়ে পাকিস্তান ছাড়ার ২৪ মিনিট পর পাকিস্তানের জেট বিমানগুলো সেদিকে ধাওয়া করে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। পাকিস্তানের আকাশে যুক্তরাষ্ট্রের এই গোপন প্রবেশ চিহ্নিত করতে না পারায় সমারিক কর্মকর্তাদের দোষারোপ করা হয়।