
অভিষেক জিকু –
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর দলবলের দ্বৈত নাগরিকত্বের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে তাঁদের যাবতীয় দ্বিচারিতার বীজ। প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর পরামর্শদাতাদের অনেকেই শুধু বাংলাদেশের নাগরিক নন, তাঁদের অন্য দেশেরও নাগরিকত্ব রয়েছে। তাই বাংলাদেশ ছাড়াও অন্য দেশের স্বার্থ দেখতে হচ্ছে তাঁদের। সেই স্বার্থের সংঘাতেই ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশের। সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইউনূসদের কাঁধে বন্দুক রেখে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমারা চীন বিরোধিতার নামে বাংলাদেশের মাটিকে কাজে লাগাচ্ছে। পশ্চিমাদের চীন মোকাবিলার এই খেলায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বাংলাদেশের স্বার্থ। এমনকী, উগ্র ভারত বিরোধিতার জিগির তোলার পিছনেও রয়েছে পশ্চিমাদের কৌশল। তাঁরা, ইউনূস-সহ পশ্চিমা নাগরিকদের কাজে লাগিয়েছে ভারত ও বাংলাদেশের মতো দুই বন্ধু রাষ্ট্রের মধ্যে ছায়াযুদ্ধের পরিবেশ তৈরি করতে। তাঁদের আসল উদ্দেশ্যই হলো বাংলাদেশের মাটিতে মার্কিনী আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা। আর তাঁদের এই উদ্দেশ্য সাধনে সার্বিক সহায়তা করছেন ইউনূস- সহ প্রভাবশালী পশ্চিমা নাগরিকরা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে বাংলাদেশ আদৌ কি আর স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র রয়েছে? ইউনূসদের নাগরিকত্বের দিকে চোখ রাখলে সন্দেহ জাগতে বাধ্য। এঁদের অনেকেরই রয়েছে ডুয়েল সিটিজেনশিপ। অর্থাৎ ‘গাছেরও খাবো, তলারও খাবো’ এমন সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন তাঁরা। প্রথমেই আসা যাক মুহাম্মদ ইউনূসের কথায়। শান্তিতে নোবেল জয়ী এই অর্থনীতিবিদ বহুদিন ধরেই বাংলাদেশের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিক। তাই দুই দেশেরই স্বার্থ রক্ষা করা তাঁর কর্তব্য। সেই কারণেই সেন্টমার্টিন হোক বা মানবিক করিডোর, তিনি দু নৌকায় পা দিয়েই সিদ্ধান্ত নেবেন। কারণ সেটাই তাঁর কর্তব্য। বাংলাদেশের সংবিধান ডুয়েল সিটিজেনশিপ থাকলে কাউকে রাষ্ট্র ক্ষমতা দিতে পারে না। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের নামে চলছে এক আজব বাংলাদেশ! তাই বিনা নির্বাচনেই প্রায় এক বছর ধরে সর্বোচ্চ সরকারি দায়িত্বে রয়েছেন একজন বিদেশের নাগরিক।
ইউনূস একা নন, বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশেরও নাগরিকত্ব নিয়ে বহাল তবিয়তে সরকারি নীতি নির্ধারণে বড় ভূমিকায় থাকা মানুষদের তালিকাটি বর্তমানে বেশ লম্বা। উপদেষ্টামন্ডলীর পরিবেশ মন্ত্রকের ভারপ্রাপ্ত সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের রয়েছে ব্রিটিশ নাগরিকত্বও। প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ে বিশেষ দূত লুৎফী সিদ্দিকীর রয়েছে বাংলাদেশের পাশাপাশি সুইজারল্যান্ডেরও নাগরিকত্ব। বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিক। তাই তিনি মানবিক করিডোর, চট্টগ্রাম বন্দর প্রভৃতি নিয়ে এতো উৎসাহী। যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখা সুনাগরিক হিসাবে ইউনূসের মতো তাঁরও কর্তব্য। নিজের দেশের সহ-নাগরিকের হাতেই তাই ইউনূস রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ক দায়িত্বও অর্পণ করেছেন।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদাবরএকজন সদস্য ও এধা, উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তাঁকে অর্থ উপদেষ্টাকে সহায়তা করতে তাঁকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। আমনিসুজ্জামানের রয়েছে অস্ট্রেলিার নাগরিকত্ব। প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহায়ক সফিউর রহমান সুইজারল্যান্ডেরও নাগরিক। প্রধান উপদেষ্টার প্রতিমন্ত্রী মর্যাদাপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী শেখ মঈনুদ্দিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তাঁর হাতে রয়েছে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রকের ভার। বাংলাদেশের ডাক, যোগাযোগ ও আইসিটি দপ্তরে প্রতিমন্ত্রী মর্যাদাপ্রাপ্ত ইউনূসের সহায়ক ফয়েজ তাইয়েব আহমেদ, নেদারল্যান্ডের নাগরিক। বিডা বা বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটির কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ব্রিটিশ নাগরিক।
শুধু তাই নয় রাষ্ট্র সংস্কারের কাজেও ইউনূসকে বিদেশিরাই সহায়তা করছেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান আলি রিয়াজ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তাঁর হাতেই রয়েছে সংবিধান সংস্কারের ভার। নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। গণমাধ্যম বা মিডিয়া সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ ব্রিটিশ নাগরিক। দুর্নীতি বিরোধী সংস্কার কমিশনের সদস্য মুশতাক হোসেন খান ব্রিটিশ নাগরিক। কানাডার নাগরিক লামিয়া মোর্শেদ হচ্ছেন সংস্কার কমিশনের মুখ্য সমন্বয়ক। ইউনূস সেন্টার এবং গ্রামীণ হেলথকেয়ার ট্রাস্টের নির্বাহী এই পরিচালকের কাঁধেই রয়েছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহায়কের দায়িত্ব। প্রধান উপদেষ্টা ঐকমত্য নির্মাণের জন্য জেষ্ঠ সচিব মর্যাদার মনির হায়দার হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। মেক্সিকোয় জেষ্ঠ সচিবের মর্যাদাপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত এম মুশফিকুল ফজল আনসারে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ইউনূসের ব্যক্তিগত সচিব শাজিব এম খায়রুল ইসলামেরও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব।
বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরবর্তীতে এতোগুলো সরকার তৈরি হলেও কখনও বিদেশি নাগরিকদের এমন রমরমা অতীতে দেখা যায়নি। বিএনপি, আওয়ামি লিগ তো বটেই, এমনকি সেনাশাসকরাও দ্বৈত নাগরিকদের থেকে দূরে রেখেছেন রাষ্ট্র পরিচালনার ভার। কিন্তু ইউনূসের আমলে দুনৌকায় পা দেওয়া মানুষরাই রাষ্ট্রপরিচালনায় গুরু দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ক্ষুন্ন হচ্ছে জাতীয় স্বার্থ। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নীরব দর্শক। তাঁর ব্যস্ততা বিদেশ সফরে। রাষ্ট্রীয় সফরের নামে প্রতিমাসে গড়ে একটিরও বেশি রাষ্ট্র সফর করে তিনি বিশাল অঙ্কের অর্থ খরচ করতে জাতিকে বাধ্য করে চলেছেন। তাঁর বিবেক ও দেশপ্রেম দুটিই বাঁধা আছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। কারণ তিনি নিজেই সেখানকারও নাগরিক। বাংলাদেশের থেকেও তাই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ বেশি করে দেখছেন। আর এই সরকারের দৃশ্যত দুই চালিকা শক্তি জামায়াত, বিএনপি ও এনসিপি ব্যস্ত নিজেদের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ণে। জামায়াত দলীয় নিবন্ধন উদ্ধারের পাশাপাশি মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দলীয় নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে পেরে খুশিতে ডগমগ। ইউনূসদের কাঁধে বন্দুক রেখে মৌলবাদীদের অবাধ বিচরন ভূমি করতে চাইছে বাংলাদেশকে। ছাত্রাবস্থাতেই হাতে চাঁদ পেয়ে এনসিপি নেতারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য-সহ বিভিন্ন দুর্নীতিতে মত্ত। আর বিএনপি ব্যস্ত নিজেদের সংগঠনকে চাঙ্গা করে দ্রুত নির্বাচন আদায়ে। আর দলগুলোর ব্যস্ততার ফাঁকে ইউনূস ব্যস্ত পশ্চিমাদের খুশি করার কাজে। ক্ষুন্ন হচ্ছে দেশের স্বার্থ। বিপদ বাড়ছে সাধারণ মানুষের।