নতুন রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব, বিএনপির অবস্থান কোথায় ?

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

অভিষেক জিকু – 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে চলেছে। সেনা ছাউনিই হতে চলেছে সেই পরিবর্তনের আঁতুর ঘর। পাকিস্তানের মতোই উর্দিধারীরাই বোধহয় ফের শেষ কথা বলবেন।
দেশে বিদেশে রাজনৈতিক  মহলে ব্যাপক ভাবে আলোচনা আছে যে,   সরাসরি ক্ষমতা দখলের বদলে অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্তাদের নেতৃত্বে নতুন দল গঠন করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের নীল নকশা প্রায় প্রস্তুত। এই নিয়ে সামরিক বাহিনীতে চলছে তুমূল উত্তেজনা। সেনাবাহিনীতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও বিপক্ষে শক্তি এখন সরাসরি দুভাগে বিভক্ত। বর্তমান সেনা প্রধান ওয়াকার-উজ-জামানকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করে সেনাবাহিনীর প্রধান হতে সচেষ্ট বর্তমান কোয়ার্টার মাষ্টার জেনারেল লেঃ জেনারেল ফইজুর রহমান।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই তিনি লেফট্যানেন্ট জেনারেল পদে উন্নিত হন। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই)-এর মহাপরিচালকও করা হয় তাকে। তিনি এখন সেনাবাহিনীর নতুন চিফ অফ স্টাফ হওয়ার চেষ্টা করছেন। নতুন কৌশল অনুযায়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস হবেন রাষ্ট্রপতি। আর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহফুজ আলমকে করা হবে প্রধান উপদেষ্টা। বাকিদের অনেকেরই ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করার পর জামায়াত ও সেনাবাহিনীর একটা বড় অংশ এখন ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের দিয়ে তারা নতুন রাজনৈতিক দলও খুলতে চলেছেন। তবে কবে এবং কী নামে সেই দল আত্মপ্রকাশ করবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। আলোচনা চলছে। আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতে যারা সক্রিয় আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তাদের বাদ দিয়েই চলছে ক্ষমতা দখলের নতুন পরিকল্পনাষ। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের বহু সক্রিয় নেতাই সম্ভাব্য পালাবদলে উপেক্ষিতই থাকবেন। বর্তমান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনও থেকে যেতে পারেন ড. ইউনূসদের সম্ভাব্য দলে।
নতুন নকশা অনুযায়ী পাঁচ অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল থাকবেন নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে। সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল (অবসর প্রাপ্ত) ইকবাল করিম ভূঁইয়া হবেন নতুন দলটির চেয়ারম্যান। নির্বাহী চেয়ারম্যান হবেন আরেক সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল (অবঃ) আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক। নতুন দলটির মহাসচিব হচ্ছে লেফটেনেন্ট জেনারেল (অবঃ) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী। প্রেসিডিয়াম সদস্য হবেন মেজর জেনারেল (অবঃ) এহতেশামুল হক এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) শামিম কামাল। নতুন দলের নাম এখনও প্রকাশ করা না হলেও শিগগিরই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে জানা গিয়েছে। আর এই পরিকল্পনার কথা ফাঁস হতেই নতুন করে শুরু হয়েছে ক্ষমতা দখলের লড়াই।
বর্তমান সেনাপ্রধানের অপসারণে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছেন লেঃ জেনারেল ফয়জুর রহমান। ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক হিসাবে পাকিস্তানি গুপ্তচরদের সঙ্গে তার সম্পর্ক খুবই মধুর। ড. ইউনূসদের পরামর্শে পাকিস্তান সেনাকর্তাদের সঙ্গে তার বৈঠকও হয়। তাদের পরামর্শেই ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছেন জামায়াতপন্থী এই সেনা কর্মকর্তা।
জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে পদাতিক বাহিনীর ৩৩, ১৯, ৫৫, ৬৬, ২৪ ও ১০ নম্বর ডিভিশন লেঃ জেনারেল ফয়জুরের সঙ্গে রয়েছে। যেকোনও সময়েই তাই তিনি সেনা বাহিনীর প্রধান পদ দখল করতে পারেন। কিন্তু ৯টি ডিভিশনের প্রধানরা তাকে চাইছেন না। তারা সকলেই আওয়ামী লীগ পন্থী বলে পরিচিত। তাই সেনা বাহিনীর মধ্যেও শুরু হয়েছে ক্ষমতা দখলের লড়াই। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সেনা সদর দপ্তর হয়ে উঠেছে রাজনীতির আঁতুর ঘর। ফলে বিরোধ বাড়ছে সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে।
সরাসরি ক্ষমতা দখল করলে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য ও কর্মকর্তারা আর কাজ নাও পেতে পারেন। বিশাল অঙ্কের আয়ের উৎস বন্ধ করতে নারাজ তারা। তাই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা দখলের ছক কষে চলেছেন ড. ইউনূস, লেঃ জেনারেল ফয়জুর রহমানরা। দেশের সাধারণ মানুষের উন্নয়নের বদলে নতুন করে দেশকে অস্থির করে তোলাই তাদের উদ্দেশ্য। একাত্তরের পরাজিত শক্তির হাত ধরে ড. ইউনূসরা ফের বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছেন। মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদীদের অবাধ দৌরাত্মের সুযোগ করে দিয়েছেন তারা। তাই ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি ৩২ ধানমন্ডীতে হামলা চালানোর সময় আইএস-এর পতাকাও উড়তে দেখা গিয়েছে।
ড. ইউনূসদের পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে অবসরে বাধ্য করবেন তারা। তারপর ড. ইউনূস নিজে রাষ্ট্রপতি হয়ে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে নির্বাচনের দাবিকে দাবিয়ে রাখবেন। তিনি রাষ্ট্রপতি হলে প্রধান উপদেষ্টা হবেন মাহফুজ আলম।
মাহফুজ সম্পর্কে ড. ইউনূস নিজেই বলেছেন, জুলাই ষড়যন্ত্রের মাস্টার মাইন্ড। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের ফাঁকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ লিডারস স্টেজ’ অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস তাকে ২০২৪ বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের এর ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলে অভিহিত করেছিলেন। বর্তমানে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টা হলেও ছাত্র আন্দোলনের বাকি নেতাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। ইসলামিক ছাত্র শিবিরের হাতেই তুলে দেওয়া হবে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মৌলবাদের প্রচার ও প্রসারের দায়িত্ব। জামায়াতের তত্ত্বাবধানে সেনা বাহিনীর ছত্রছায়ায় গোটা বাংলাদেশকেই কট্টর ইসলামিক রাষ্ট্র পরিণত করার চেষ্টা চলছে পুরোদমে। তাই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যান্য সমন্বয়করাও আগামী দিনে গুরুত্ব হারাতে চলেছেন।
বিএনপি নেতারা সেনা বাহিনীর এই তৎপরতা আঁচ পেলেও এখনই মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছেন না। তবে ষড়যন্ত্র যে চলছে সেটি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কথাতেই বোঝা যায়। তিনি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানালেও অন্তর্বর্তী সরকার সেটা চায় না। তারা চায় নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে সেনা বাহিনীর হাতেই ক্ষমতা তুলে দিতে। আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিকেও খতম করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। জামায়াত ও সেনা কর্মকর্তাদের
হাতের পুতুল হয়ে ক্ষমতার শীর্ষে বসে থাকাটাই এখন ড. ইউনূসের একমাত্র লক্ষ্য। দেশ নিয়ে কোনও কালেই তার কোনও ভাবনা ছিল না। এখনও নেই। তিনি শুধু নিজের জীবনের বাকি দিনগুলি সরকারি প্রোটোকলে কাটাতে চান। তাই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগের দিকে ঠেলে দিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির হাতে দেশকে জিম্মি রাখতেও কুণ্ঠিত নন তিনি।
এমনকী, দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যেও বিভাজনের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছেন।
ড. ইউনূসের কারণেই চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে সেনা কর্মকর্তাদের মনেও। কারণ তারা বুঝতে পারছেন, দেশকে আরও বিপদের দিকে ঠেলে দিয়ে মীরপুরের সামরিক কর্মকর্তা বাহিনীর প্রধান হওয়ার জন্য তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন। তারই পরিণামে বাংলাদেশে সেনা আজ কার্যত দুই বা তিন ভাগে বিভক্ত। ফলে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও চরম সঙ্কটে।
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১