বাংলাদেশে জঙ্গিবাদীদের আবাধ দৌরাত্ম

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
অভিষেক জিকু- 
শেখ হাসিনার বিদায়ের পর থেকে বাংলাদেশে বেড়েই চলেছে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা। মৌলবাদীরা দিন দিন আরও সক্রিয় হচ্ছে। সমাজের বিভিন্নস্তরে তাদের প্রভাব বাড়ছে। বাড়ছে জঙ্গিবাদীদের কার্যকলাপও। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মৌলবাদীরা তৃণমূল স্তরে তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে অতি সক্রিয়। চলছে অবাধে ইসলামিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রক্রিয়াও। তাই সংখ্যালঘুরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের বিন্দুমাত্র নিরাপত্তা নেই। ধর্মীয় স্বাধীনতা আজ তাদের বিলাস কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়।
বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতিতে থাবা বসিয়ে আগের থেকে অনেক বেড়ে গিয়েছে ওয়াজ- মাহফিল বা ইজতেমার জমায়েত। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে এইসব কর্মসূচিতে মানুষের মনে গেঁথে দেওয়া হচ্ছে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাউল ,যাত্রাপালা বা অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড  এখন প্রায় বন্ধ। দেশপ্রেমের বদলে উগ্রতাই এখন প্রচারের মুখ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাবেতাতুল ওয়ায়েজীন বাংলাদেশের মতো সংগঠনগুলি ওয়াজ-মাহাফিলের  মতো অনুষ্ঠানের নামে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের অবাধে প্রচার চালাচ্ছে সর্বত্র। মুফতি আমির হামজা, আলী হাসান ওসামা, রফিকুল ইসলাম মাদানী (শিশু বক্তা নামে বেশি পরিচিত), শরিফুল ইসলাম নায়েক, মাহমুদুল হাসান গুনোবি (হাসান), আবু ত্বয়া মুহাম্মদ আদনান, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস আনসারীর মতো জঙ্গিবাদের প্রচারকরা প্রকাশ্যে তাদের কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। এরা সকলেই জঙ্গিবাদী কার্যকলাপে যুক্ত থাকায় ২০২১ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিল।
বাংলাদেশের মূলধারার মাদ্রাসাতেও  মৌলবাদের পাঠ দেওয়া হয়। কওমি মাদ্রাসা হয়ে উঠেছে শিশু মনে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপনের মাধ্যম। মাদ্রাসায় পড়তে আসা কিশোরদের মধ্যে মৌলবাদের প্রচারই হয়ে উঠেছে মাদ্রাসার মূল পঠন-পাঠনের বিষয়। ফলে বাড়ছে সাম্প্রদায়িক বিভেদ। সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মনে ঘৃণা ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে মৌলবাদীরা। জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামিক ছাত্র শিবির স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে তাদের দাপট দেখাতে শুরু করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি হয়ে উঠেছে মৌলবাদী কার্যক্রমের পীঠস্থান। শিশুমনেই গেঁথে দেওয়া হচ্ছে ধর্মীয় বিদ্বেষ। ধীরে ধীরে সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে মৌলবাদীদের প্রভাব।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় এনজিওর নামে কোটি কোটি বিদেশী অর্থ ঢুকছে মৌলবাদের প্রচারে। বাড়ছে জঙ্গিবাদও। বিদেশি অর্থের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের ব্যাপক প্রসার। মূলত সৌদি, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে তরুণদের মধ্যে মৌলবাদের প্রসারে এই অর্থ ঢুকছে বাংলাদেশে। এই সব দেশের সরকারি, আধা-সরকারি এবং বেসরকারি দাতব্য সংস্থার কাছ থেকে মৌলবাদীরা ধর্মীয় কাজকর্মের জন্য এই অর্থ পেয়ে থাকে। এছাড়াও কওমি মাদ্রাসা, জামায়াত ও আহল-ই-হাদীসের ছত্রছায়ায় থাকা বিভিন্ন সংগঠনের রয়েছে নিয়মিত অর্থায়ণের নিজস্ব কৌশল। এছাড়া বিভিন্ন দেশে সক্রিয় তাবলীগ জামায়াতে বাংলাদেশেও মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার প্রচার চালাচ্ছে। সেইসঙ্গে তারা মদদ জোগাচ্ছে জঙ্গিবাদীদেরও।
বাংলাদেশে ইসলাম হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ধর্ম। সেই কারণে সবসময়ই হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা মৌলবাদী আক্রমণের শিকার হন। আওয়ামী লীগের সরকার উৎখাতের পর ধর্মীয় সহিষ্ণুতা দ্রুত কমছে। ইসলাম ছাড়া আর কোনও মতবাদকেই মৌলবাদীরা সহ্য করতে পারছে না। তাই হিন্দুদের ওপর দেশজুড়ে চলছে হামলা। মন্দির, গির্জা শুধু নয়, সংখ্যালঘুদের ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত সম্পত্তিও লুটপাট চলছে। সংখ্যালঘুরা প্রতিবাদ করলেই গর্জে উঠছে রাষ্ট্রীয় শাসনযন্ত্র। ইসলাম বিরোধী ভূয়া প্রচারের নামে অনেককেই গ্রামছাড়া করা হয়েছে। জেল থেকে জঙ্গিবাদীরা ছাড়া পেলেও হিন্দুদের ভরা হচ্ছে মিথ্যা অভিযোগে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের আজ আর কোনও নিরাপত্তা নেই। অবাধে ধর্মান্তকরণের পাশাপাশি সংখ্যালঘু নাবালিকাদের বয়স্ক মুসলিমদের সঙ্গে বিবাহেও বাধ্য করা হচ্ছে। পার্বত্য এলাকার মানুষও আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
নতুন বছরের শুরু থেকেই দেশ জুড়ে প্রচুর ওয়াজ-মহফিলের আয়োজন করেছে মৌলবাদীরা। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে এইসব মাহফিল  থেকে ধর্মীয় প্রচারকরা হিন্দু ও সংখ্যালঘু বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। হিন্দু তথা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সাধারণ মুসলিমদের উত্তেজিত করতেই এধরনের  আয়োজন করা হচ্ছে। মুসলিমদের ধর্মীয় প্রচারকে বেগবান করতে হিন্দুদের মন্দিরের ওপর জারি করা হচ্ছে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা। বহু জায়গায় মন্দিরকে কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখার নির্দেশ ও দেয়া হয়। মাহফিল  চলাকালে হিন্দুদের পূজা বা আরতি করাতেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। স্থানীয় মৌলবাদীরা হিন্দুদের কীর্ত্তন বা ধর্মীয় সংগীত পরিবেশনেও নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। মাহফিলের  নামে মুসলিমরা তাদের জমায়েত থেকে ধর্মীয় প্রচার চালাতে পারলেও হিন্দু বা সংখ্যালঘুদের নিজস্ব ধর্মাচারণের ন্যূনতম অধিকারও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। উদাহরণ হিসাবে সিলেটের হিন্দু শিব মন্দিরের কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। মন্দিরটিকে স্থানীয় মুসলিম মৌলবাদীরা মোটা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। কারণ সিলেটের এম সি কলেজে ৯ থেকে ১১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ওয়াজ- মেহফিল। এই মেহফিলের স্থান এম সি কলেজ মন্দিরটি থেকে অন্তত দেড় কিমি দূরে। তবু মৌলবাদীরা মন্দিরটিকে ঢেকে দেয়। তাদের যুক্তি ছিল মাহফিলে  যাওয়ার পথে হিন্দুদের মন্দির দেখা নাকি পাপ। আবার খোদ ঢাকা শহরে ১০ জানুয়ারি ঐতিসাহিক রমনা কালী মন্দির লক্ষ্য করে ইচ্ছাকৃত ভাবে বাজানো হয় লাউডস্পিকার। সেখান থেকে চলে ওয়াজের  নামে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে মৌলবাদী প্রচার। সর্বশেষ চট্রগ্রামে ইসকনের অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হয় ,পুলিশ ও সেখানে মৌলবাদীদের পক্ষে দাঁড়ায়।
আসলে মৌলবাদীদের হাতের পুতুল হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মৌলবাদীরা চাইছে ইসলামিক রাষ্ট্র গঠন। সংস্কারের নামে বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী শক্তি বেশ সক্রিয়। তাই জঙ্গিবাদীরা জেল থেকে মুক্ত হয়ে নতুন করে বাংলাদেশকে আইএস বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনকে অবাধে বিচরণ ভূমিতে পরিণত করতে সচেষ্ট। তাই তাদের আক্রমণের মূল লক্ষ্যই হচ্ছেন সংখ্যালঘুরা। বাংলাদেশকে অস্থির করে তুলতে বিদেশী মদদে চলছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দেশের উন্নয়নের বদলে উপদেষ্টারা ব্যস্ত লুটপাটে। আর জামায়াতীরা ব্যস্ত মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের ষড়যন্ত্রে। ফলে সঙ্কটে সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ।
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১