তিব্বতে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বাঁধ দিচ্ছে চীন , শুকিয়ে যাবে বাংলাদেশে যমুনা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
অভিষেক জিকু- 
চীন নিজেদের বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে আরও বড় নদী বাঁধ দিতে চলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তিব্বত মালভূমির পূর্ব পাশের নির্মীয়মাণ এই বাঁধ সর্বনাশ ডেকে আনবে বাংলাদেশের। তিব্বতে যমুনার উৎসমুখে নদী শাসনে বদলে যেতে পারে নদী মাতৃক বাংলাদেশের মানচিত্রও। বর্ষায় যেমন প্রচুর পানি ডোবাবে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকাকে, তেমনি শুকনো মৌসুমে  শুকিয়ে যাবে যমুনার অববাহিকা অঞ্চল। পরিবর্তিত হতে পারে বহু নদীর গতিপথ । শুধু তাই নয়, অনেকেরই আশঙ্কা দুনিয়ার সবচেয়ে বড় এই বাঁধ নির্মিত হলে ভূমিকম্পের আশঙ্কাও বেড়ে যাবে। ১৭৮৭ সালে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পেই যমুনার গতিপথে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল বাংলাদেশে। অথচ, চীনের এই সর্বনাশা নদী শাসন প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ নীরব।  দেশের সর্বনাশ হবে জেনেও ভারত বিরোধিতাকে দৃশ্যমান করতে   দেশের সর্বনাশে ও মুখ খুলছে  না কেউ।
তিব্বত মালভূমির পূর্ব পাশে জিমা ইয়ংজং হিমবাহে চীন বানাচ্ছে এই বাঁধ। নিজেদের দেশের জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় বাঁধ তারা তৈরি করছে বলে চীনা গণমাধ্যমেই খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। নিম্ন উপত্যকায় এই বাঁধটি হচ্ছে ইয়ারলুং সাংপো নদীতে। এই নদীটিই ভারতের অরুণাচল প্রদেশে শিয়াং বা সিয়ং নদী হিসাবে পরিচিত। তারপর আসাম রাজ্যে প্রবেশের পর সিয়ংয়ের নাম হয় ব্রহ্মপুত্র। এই ব্রহ্মপুত্রই কুড়িগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের কাছে ব্রহ্মপুত্র দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বাঁক নিয়ে জামালপুর ও ময়মনসিংহ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভৈরববাজারের দক্ষিণে মেঘনায় পড়েছে। তারপর ১৭৮৭ সালে ভূমিকম্পে দিক পরিবর্তন করে নদীটি। এই নদীরই প্রধান শাখা হচ্ছে যমুনা। এই যমুনার আসল উৎসমুখেই যদি নদী শাসন করা হয় তবে সহজেই অনুমেয় বাংলাদেশের জন্য কতো বড় সর্বনাশ অপেক্ষা করছে।
সবচেয়ে আশঙ্কার কথা, নিজেদের দেশের এতো বড় ক্ষতি হতে চলেছে জেনেও বাংলাদেশের প্রভাবশালী মানুষজন রহস্যজনক কারণে নীরব রয়েছেন। চীনের সঙ্গে তাদের সখ্যতা বাড়লেও দেশের স্বার্থে চীনকে এই প্রকল্প থেকে বিরত থাকার অনুরোধটুকুও তারা করছেন না। অনেকেই তাই মনে করেন, চীন তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য প্রচুর অর্থও খরচ করছে বাংলাদেশের জনমতকে নিজেদের অনুকূলে রেখে বাংলাদেশেরই সর্বনাশ করতে। ভূ-রাজনীতিতে চীন কতোটা স্বার্থপর তা সমসাময়িক ঘটনাবলির দিকে নজর দিলেই স্পষ্ট। কমিউনিস্ট শাসিত নব্য সাম্রাজ্যবাদী দেশটি কারও বন্ধু হতে পারে না। প্রতিবেশীদের সর্বনাশেই বেশি খুশি হয় শি জিনপিংয়ের চীন, এমন ধারনা অনেকেরই।
আন্তর্জাতিকস্তরে ‘সুদ খোর’ হিসাবে পরিচিত দেশটি বাংলাদেশকেও ঋণের জালে আবদ্ধ করতে চাইছে বহুদিন ধরে। কিন্তু আমাদের নীতিনির্ধারকরা  সব জেনেও চীন বন্ধনা  করে দেশের সর্বনাশ ডেকে আনছেন। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে চীনাপ্রেম আরও বেড়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি হিসাবে চিহ্নিত দেশটির সঙ্গে, দেশের সর্বনাশের আশঙ্কা মাথায় রেখেও অনেকেই ব্যক্তি স্বার্থে সখ্যতা বাড়িয়ে চলেছেন। যমুনার উৎসমুখে জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণ নিয়েও তাই তারা নীরব।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ চুপ থাকলেও ভারতে কিন্তু দলমত নির্বিশেষ প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চীন যাতে তাদের ইচ্ছা মতো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তারজন্য আন্তর্জাতিক স্তরেও ইতিমধ্যেই লবি করা শুরু করেছে ইন্ডিয়া। কিন্তু বাংলাদেশ এখনও নীরব। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নদী বাঁধে সবচেয়ে ক্ষতি হবে বাংলাদেশেরই। কারণ চীন থেকে কম পানি এলে শুকনো মৌসুমে ভারতের মধ্যে দিয়ে আরও কম পানি আসবে বাংলাদেশে। আবার বর্ষায় পুরো পানিটাই ভারত থেকে বাংলাদেশের দিকে নেমে যাবে নদীর স্বাভাবিক ছন্দে। তাই বিপদ বাড়বে যমুনার অববাহিকা অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি।
‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’ সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুসারে বাঁধটি তৈরি করতে ১৩৭ বিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে। দুনিয়াতে এতো ব্যায় বহুল প্রকল্প আর নেই। বাঁধটি তৈরি হলে বছরে ৩০ হাজার কোটি কিলোওয়াট-ঘণ্টা পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্য মাত্রা পূরণে, প্রকৌশলের মতো শিল্পগুলোকে চাঙ্গা করে তুলতে এবং তিব্বতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করাই তাদের লক্ষ্য। কিন্তু নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করতে গিয়ে অন্য দেশের সর্বনাশ করতে চলেছে চীন।
এই বাঁধটি নির্মিত হলে স্থানীয় জনজীবন ও ভৌগোলিক চীটড় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। নদীর প্রবাহ এবং পথকেও প্রভাবিত করবে। এছাড়াও কয়েক লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবেন।
এই বাঁধটির আগে চীন ১৩ হাজার ৪৮৩ কোটি ডলার খরচ করে নির্মাণ করেছিল থ্রি গর্জেস বাঁধ। তখন সেটাই ছিল দুনিয়ার সবচেয়ে বড় নদী বাঁধ। তখনই ১৪ লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া হন। এবারের বাঁধটি নির্মাণে খরচ হচ্ছে থ্রি গর্জেসের অন্তত তিন গুণ। ফলে কোটি খানেক মানুষ ঘর ছাড়া হতে পারেন। চীনা সরকারি গণমাধ্যমেই বলা হচ্ছে, নতুন প্রকল্পে উৎপাদন সক্ষমতা আগের বাঁধ থেকে তিন গুণ বেশি। ফলে সর্বনাশের আশঙ্কাও বাড়ছে তিন গুণ। কিন্তু নীরব বাংলাদেশের নেতারা!
বেজিং মুখে যাই প্রতিশ্রুতি দিক না কেন, চীনের এই বাঁধ ব্রহ্মপুত্রের স্বাভাবিক প্রবাহকে রুখে দেবেই। ফলে বর্ষায় উজানের দিকে আরও পানি ঠেলে দেবে, এই আশঙ্কা মোটেই অমূলক নয়। আবার শুকনো মৌসুমে পানির অভাবও দেখা যেতে পারে। এমনিতেই ব্রহ্মপুত্র বা ইয়ারলুং সাংপোর অবস্থান ভূমিকম্প প্রবণ এলাকাতে। এধরনের নদী শাসন ভূমিকম্পের আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ধ্বংস হবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য।
২০০৫ সালে নাসার বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, চীনের থ্রি গর্জেস বাঁধের বিপুল পানি রাশির চাপে পৃথিবী আগের চেয়ে কিছুটা ন্যুব্জ হয়ে গিয়েছে। ফলে পৃথিবীর মাঝের অংশ সামান্য স্ফীত এবং দুই মেরু অঞ্চল চেপে গিয়েছে। পৃথিবীর আহ্নিক গতির বেগেও পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। এবার থ্রি গর্জেসের তিন গুণ বড় বাঁধ নির্মিত হলে পৃথিবীর ভারসাম্যও নষ্ট হতে পারে, এমনই আশঙ্কা ভূ-বিজ্ঞানীদের। চীন তবু নিজেদের প্রকল্প রূপায়ণ করতে চলেছে। দুনিয়ার অন্যান্য দেশে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ। কিন্তু বাংলাদেশ এখনও নীরব। বরং বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে জেনেও কেউ কেউ চীনা অর্থে নিজেদের বৈভব বজায় রাখতেই বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত। ফলে যমুনার অববাহিকা অঞ্চলে দুর্যোগের সম্ভাবনা থেকে চীনের হাত ধরে আগামী দিনে মারাত্মক সর্বনাশ হতে চলেছে গোটা বাংলাদেশের।
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১