জুয়েল রাজ-
সম্প্রতি সময়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীতেই আলোচিত হয়ে উঠেছে ইসকন নামের সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানটি। ইসকন আসলে কী? এই নিয়ে নানা কৌতুহল আছে সাধারণ মানুষের মাঝে। আলাদা ধর্ম না মতবাদ? আমি নিজে ও ব্যাক্তিগত ভাবে ইসকনের ভাবাদর্শের মানুষ না। আমার মনে হয় এই দ্বাবিংশ শতাব্দীতে শুধুমাত্র ধর্মের নামে, লাখো কোটি তরুণের ,তারুণ্যের অপচয় করছে প্রতিষ্ঠানটি। শুধুমাত্র স্বর্গ লাভের আশায় পৃথিবীর আর কিছুই তারা উপভোগ করল না। পৃথিবীর কোন কাজে লাগল না। জীবনের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। তাঁদের যাপিত জীবন, ছুৎমার্গ এসব আমার পছন্দ নয়। কিন্ত তাঁদের সেই অধিকার আছে তাঁদের বিশ্বাস লালন করার।
আর ইসকন আদতে কোন ধর্ম নয়, সনাতন ধর্মের একমাত্র প্রতিনিধি ও নয়, ইসকন একটি মতবাদ বা মুভমেন্ট। হিন্দুধর্মের প্রধান চারটি শাখা শাক্তধর্ম বৈষ্ণবধর্ম, শৈবধর্ম ও স্মার্তধর্ম।
ইসকন মূলত বৈষ্ণব ধর্ম বা দর্শনের অনুসারী। বৈষ্ণব ধর্মের মূল কথা হল আত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন এবং এই একাত্মতার জন্য যে পথ অবলম্বন করা হয় তা হলো, কেবলমাত্র প্রেম ও ভক্তি এবং সম্পূর্ণরূপে অহিংসা। বৈষ্ণব দর্শনে পরমাত্মার উপাসনার জন্য সকল প্রকার জাগতিক গুন বর্জন করে নির্গুণ হয়ে পরমাত্মার সাথে একাত্ম হওয়ার উপদেশ রয়েছে।
বৈষ্ণবধর্ম অনেক উপধারায় বিভক্ত, তার মধ্যে দুটি উল্লেখ্যোগ্য হল গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম এবং শ্রী বৈষ্ণবধর্ম।
গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষার উপর ভিত্তি করে প্রচার প্রসার ঘটে। তিনি ১৬ শতকের একজন সাধক এবং ভগবান কৃষ্ণের প্রবল ভক্ত ছিলেন। যিনি মূলত পরমাত্মার সাথে আত্মার মিলনে বিশ্বাস করে এবং শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তি প্রেমের নীতির উপর দাঁড়িয়ে এই মতবাদ ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে দেন। মূলত ভারতীয় উপমহাদেশে বর্ণপ্রথা বা জাতিভেদ এবং ইসলামী শাসনের প্রভাবে দলে দলে মানুষ ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নিচ্ছিল ,সেই সময়ে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য জাতিভেদ ভুলে সবাইক বুকে টেনে নেন।”সহজ কথায় আয় ভাই বুকে আয় ” এবং হিন্দু ধর্মকে আগলে রাখেন বলা যায়। এবং শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু ছিলেন বর্তমান বাংলাদেশের সিলেটের ঢাকাদক্ষিণ এর মানুষ। সেই বিখ্যাত উক্তি “মেরেছিস কলসির কানা ,তাই বলে কি প্রেম দিবনা” শ্রী চৈতন্য’র এই বাণী তো প্রবাদ হিসাবে প্রচলিত।
তাঁর মতবাদে ভক্তরা পবিত্র নামটি পাঠ করে এবং ভগবান কৃষ্ণ এবং দেবী রাধাকে স্মরণ ও প্রশংসা করার জন্য “হরে কৃষ্ণ, হরে রাম” উচ্চারণ করে। ভগবত গীতা এবং ভাগবত পুরাণের শিক্ষার উপর ভিত্তি করে, ১৯৬৬ সালে, শ্রীল প্রভুপাদ গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম প্রচারের জন্য কৃষ্ণ চেতনার জন্য ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি (ইসকন) প্রতিষ্ঠা করেন। যা আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। অনলাইন ঘাটাঘাটি করলেই ইসকেনের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন।
বৈষ্ণবধর্মের মূল নীতি হল মোক্ষ লাভের জন্য ভগবান বিষ্ণু এবং তাঁর অবতারদের প্রতি ভক্তি। বৈষ্ণবরা অহিংসার অনুশীলন করে।
কিন্তু হঠাৎ করেই ইসকন কে জঙ্গি বা সংগঠন , ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি ইত্যাদি নানান অভিযোগে তাদের কে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষনার দাবী জানাচ্ছেন কিন্তু কেন?
এত বছর পর হঠাৎ কেন মনে হল ইসকন একটি জঙ্গি সংগঠন এবং এদের এখনই বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা জরুরী।
মূল কারণ হচ্ছে সনাতন মঞ্চের নামে যে সংগঠনটি ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেছে এই আট দফাই মূলত ইসকন নিষিদ্ধের দাবীর মূল কারণ । কি ছিল সেই আট দফা দাবী ?সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শান্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথাপোযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে। হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে। পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টিকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে।
‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইন’ যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা রুম বরাদ্দ করতে হবে। সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন করতে হবে এবং শারদীয় দুর্গাপুজায় ৫ দিন ছুটি দিতে হবে।
এই চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ,গত ২২ নভেম্বর রংপুরের মহাসমাবেশে তার বক্তব্যে বলন, আমরা মোঘল নই, আমরা ওলন্দাজ নই, আমরা ফরাসি নই, আমরা ব্রিটিশ নই, আমরা উড়ে আসিনি। আমরা এই বঙ্গ যিনি প্রহ্লাদ মহারাজের পৌত্র, বলি মহারাজের পুত্র, সেই বঙ্গ মহারাজ বঙ্গের নাম অনুসারে যে বঙ্গ ভূমি আমরা তার উত্তরাধিকার। আমাদের এখানে প্রথম অধিকার রয়েছে। আমাদের অধিকারকে অস্বীকার করার কোনো প্রচেষ্টা সনাতনীরা আর মেনে নেবে না।এই যে হুমকি বা দাবী এই বিষয়টা যারা মেনে নিতে পারেন নি, মূলত তারাই আওয়াজ তুলেন ইসকন নিষিদ্ধের।
এই আট দফার দাবীগুলো যদি বাস্তবায়ন হয় সমস্যা কোন জায়গায়? মূল সমস্যাই হচ্ছে দেবোত্তর সম্পত্তি দখল ছেড়ে দিতে হবে, অর্পিত সম্পত্তি ফেরত দিলে অনেককেই দখলকৃত জমি ফেরত দিতে হবে। সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের যত ঘটনা বাংলাদেশে ঘটে এর বাইরে নানা রঙ থাকলে ও পিছনে ভূমি দখল একটি বিশেষ কারণ। সবচেয়ে বড় কারণ বিচারহীনতা , সাম্প্রাদায়িক সহিংসতা ,নিপীড়ন কিংবা ধর্মীয়ভাবে হেনস্তা আম গাছে ঢিল ছুড়ার মত বিষয় বাংলাদেশে। যেন এইটা হতেই পারে। ব্যাপার না।
আমি অনেককেই বলতে শুনি বাংলাদেশে যা ঘটে সেসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা এসব বড় বিষয় না। এবং তা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় কিছুই না। অপরাধ শিকার না করে বরং বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টেনে এক ধরণের স্বস্তি বোধ করেন।
এই সনাতনী মঞ্চ বা ইসকন যে কাজটি করেছে বাংলাদেশের সনাতন ধর্মালম্বী তরুণ সমাজকে ব্যাপকভাবে এই দাবীর সাথে সম্পৃক্ত করতে পেরেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন প্রতিবাদে, দাবি আদায়ে এত ব্যাপক ভাবে অংশগ্রহণের কোন ইতিহাস আছে বলে আমার জানা নেই। আর এখানেই ভয়ের ক্ষেত্রটা তৈরী হয়েছে,মানুষ একবার যখন ভয় কাটিয়ে উঠে, কিংবা প্রতিবাদ করতে শিখে যায় তাদের আসলে দাবীয়ে রাখা যায় না।
সব সরকারই যদি একই নির্যাতনের পথে হাটে ,এই মানুষগুলো যাবে কোথায়? তাই রুখে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আর কোন পথ খোলা ছিল কি?
ইসকন নিষিদ্ধ জরুরী কেন? কি অপরাধ করেছে ?
ইসকন যে কয়েকটা অপরাধ করেছে তার মধ্যে প্রধান অপরাধ , প্রতিবাদ করতে শিখে গেছে, বাদবাকী অপরাধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সারা বাংলাদেশের তরুণ সমাজের মাঝে ধর্মীয় চেতনার উন্মেষ ঘটাচ্ছে। বাংলাদেশের হিন্দু তরুণরা ধর্মীয় নানা রীতিনীতি বিমুখ এর নানাবিধ কারণ ও আছে , নানা মত পথ রীতির কারণে যাপিত জীবনে খুব একটা ধর্ম কর্মের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকেনা। ইসকন তাদের সেই শুধু নাম জপ আর কীর্তনের সহজিয়া দর্শনে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে বলে আমার ধারণা। আর সবচেয়ে বড় অপরাধ যদি হয় সেটি হলো দখল হওয়া প্রচুর আশ্রমের সম্পত্তি আইনী প্রক্রিয়ায় দখল ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। কোন কোন জায়গায় তারা দখল প্রতিরোধে রুখে দাঁড়িয়েছে। আর এই কারণেই তাদের জঙ্গি বলা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ছাড়া ও পৃথিবীর দেড় শতাধিক দেশে ইসকনের এই প্রেম বিলানোর কার্যক্রম চলমান আছে, বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে ইসকনের দর্শন অন্তর্ভুক্ত করেছে ,কিন্ত কেউ তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করে নাই।
বাংলাদেশের সনাতন ধর্মালম্বীরা দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করে ,জান, মাল, সম্ভ্রম সব হারিয়ে একটি দেশের স্বাধীনতা অর্জনে ভূমিকা রাখার পরও শুধুমাত্র ধর্ম বিশ্বাসের কারণে ,ভীন্ন দেশের দালাল , গোয়েন্দার প্রতিনিধি হিসাবে প্রকাশ্যে তাচ্ছিল্য করা ,কতটুকো মানসিক বেদনার কারণ হতে পারে, সেটি ভুক্তভোগী ছাড়া অন্য কারো পক্ষে অনুমান করা সম্ভব নয়।
( শিবিরের মিছিলে জাতীয় পতাকার অবমাননা )
১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ বাদ দিলেও পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রায় সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আর বিশেষ করে বলল বাংলাদেশের হিন্দু জনগোষ্ঠী বেশির ভাগ সেই আক্রমণের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিভিন্ন সময়ে আক্রমণের শিকার হয়েছে এবং প্রতিটি সরকারের আমলেই ধারাবাহিকভাবে তা চলে আসছে। সামান্য কম আর বেশী, তবে ‘এবার জুলাইয়ের শুরু থেকেই দেশের নানা জায়গায় বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটছিলো, যা এখনো চলছে।
সরকার চাইলে এই নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধ করা যে সম্ভব তার উজ্জ্বল উদাহরণ হচ্ছে এই বছরের দুর্গাপূজা।
এবারের দূর্গাপুজা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হলেও রাষ্ট্র কিন্ত তা সামাল দিয়েছে। তাই যে কোন সরকার এটি চাইলেই করতে পারে। তা প্রমাণিত হয়েছে। ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছিলো। সরকার বিহীন এই তিনদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তাদের বিভিন্ন স্থাপনার ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এই নির্যাতন নিপীড়নের ২২০০ ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে ।
চিন্ময় দাস বলেছিলেন, ‘কেউ যদি আমাদের উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করেন, তাহলে এ ভূমি আফগানিস্তান হবে, সিরিয়া হবে। শুধু সংখ্যালঘু পরিচয়ে ৯৩ জনকে পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ভেটেরিনারি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দুদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। মাঝখানে কিছুদিন এমন অপকর্ম থেমে গিয়েছিল। এখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠছে। আমরা আর নীরব থাকব না।মূলত এই সব বক্তব্যের পরই আলোচনায় উঠে আসে ইসকন প্রসঙ্গ। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রাম নগরীর টেরিবাজার এলাকায় হিন্দু অধ্যুষিত হাজারী গলিতে ‘ইসকন নিয়ে ফেসবুকে দেওয়া পোস্ট’কে কেন্দ্র করে অন্তত ৮২ জনকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই এলাকায় যৌথবাহিনীর ব্যাপক অভিযান চালায়।
ভারত বিদ্বেষী এবং হিন্দু বিদ্বেষী হিসাবে পরিচিত আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এক অনুষ্ঠানে ‘ইসকনকে সাম্প্রদায়িক ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর’ সংগঠন হিসেবে মন্তব্য করে ইসকন নিষিদ্ধের দাবীটি উসকে দেন।
যেমনটা করেছিলেন ২০১৩ সালে ব্লগারদের নাস্তিক বলে ছবি ছাপিয়ে ছিলেন পত্রিকায়।
জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সনাতন মঞ্চের নেতা চিন্ময় দাসকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আদালতে উপস্থাপন করা হয় এ সময় তার অনুসারীরা সেখানে জমায়েত হন। এ নিয়ে সেখানে বিএনপি জামায়াত বিএনপি পন্থী আইনজীবীদের সাথে সংঘর্ষ হয় । সংঘর্ষ চলাকালে আদালতের মূল ফটকের উল্টো দিকের এক গলিতে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। কোন ধরনের তদন্ত প্রমাণ ছাড়াই সেই হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হচ্ছে ইসকনকে।
এক পক্ষ এর সাথে দেখছেন আওয়ামী লীগ ,এক পক্ষ দেখছেন ভারত । মাঝখান থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অস্থিত্বই অস্বীকার করা হচ্ছে। যেন বাংলাদেশে হিন্দুদের যে তিক্ত অভিজ্ঞতা বা দাবি সেটি শুধু অস্বীকার নয় ,রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত করা হয়েছে।
যুক্তির খাতিরে যদি ধরেই নেই আওয়ামী লীগ বা ভারতের হয়ে হিন্দুরা এই আন্দোলন করছে, সেই ক্ষেত্রে সরকার যদি তাদের দাবি মেনে নেয় তাহলেই তো সেই ষড়যন্ত্র ত্বত্ত্ব বিলোপ হয়ে যায়।
তাদের যে আটদফা দাবী তার কোন দাবীই কি অযৌক্তিক ? যদি যৌক্তিক দাবি হয় তাহলে মেনে নিতে সমস্যা কোথায়? আর যদি কোন দাবী অযৌক্তিক মনে হয় সেটি নিয়ে আলোচনা করা যায় ,নানা রকম সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়েছে, সাথে নাহয় সংখ্যালঘু সংস্কার কমিটি নামে আরেকটা কমিটি ও করে এর সংস্কার করা যায়। সরকার তা না করে , আন্দোলনকারীদের নেতা চিন্ময় প্রভুকে গ্রেফতার করেছে জাতীয় পতাকা অবমাননার, রাষ্ট্রদোহীতার মামলায়। অথচ একই কাজ জামায়াত শিবির তাদের মিছিলে করেছে যার ছবি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। সবচেয়ে বড় যে বিষয় কোন ব্যাক্তি রাষ্ট্রদোহীতার মামলা করতে পারেনা বলেই আইনে বলা আছে, অথচ এক ব্যাক্তির করা মামলায় চিন্ময় দাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এবং আদালত জামিন নামঞ্জুর করেছে।
দ্বিতীয় প্রশ্ন উঠেছে ভারতের ভূমিকা নিয়ে, চিন্ময় প্রভূকে গ্রেফতারের পর ভারত যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সেটি নিয়ে।
একটা উদাহরণ যদি দেই, খুব অমূলক হবে কী না জানিনা। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলা , হত্যা ,নির্যাতন নিপীড়ন এর প্রতিবাদে সারা পৃথিবীর মুসলিম সম্প্রদায় যে প্রতিক্রিয়া দেখান , রাজপথে যে বিক্ষোভ দেখান সেখানে সব চেয়ে বড় যে কারণ সেটি ধর্মীয়। বাংলাদেশে যখন হিন্দু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ভারত ও ধর্মীয় কারণেই মূলত প্রতিবাদ বা প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই ধর্মীয় অনূভুতি সারা পৃথিবীতেই একইভাবে কার্যকর ,ধর্ম বিশ্বাসী মানুষের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।
বাংলাদেশ সরকার যদি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারত, প্রতিটা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করত তাহলে ভারতের প্রতিক্রিয়া দেখানোর সুযোগ ছিলনা। অথবা যদি সনাতন মঞ্চ কিংবা ইসকনের জঙ্গিবাদের কোন সুনির্দিষ্ট ঘটনার প্রমাণ থেকে থাকে, চিন্ময় প্রভু কোন ভাবে সংশ্লিষ্ট থেকে থাকেন তাও দেশবাসীকে জানানো উচিত। এরপরে যদি কেউ প্রতিক্রিয়া দেখায় তখনই নানা ষড়যন্ত্র তন্ত্র আবিস্কার করা যেতে পারে।
মহাত্মাগান্ধীর অহিংস আন্দোলন ইতিহাসের পাতায় পড়া, এর বাইরে আমার ধারণা এই প্রথম এই কোন বড় ধরণের লক্ষ লক্ষ লোকের প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে, যেখানে কোন ধরণের সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। সেই নেতৃত্ব বা মুভমেন্ট কে জঙ্গি হিসাবে নিষিদ্ধকরণের জন্য উতলা হওয়ার আর কি কারন থাকতে পারে আমি জানিনা।
অথচ বাংলাদেশে ওয়াজের নামে কি ভয়ংকর হিংস্রতা, ভীন্ন ধর্মের নামে কটাক্ষ করা, উপহাস করা সবই প্রকাশ্যে ,সরকার ,রাষ্ট্র কেউ কোনদিন বাঁধা দেয় নাই। সংখ্যালঘুরা সেই অপমান দিনের পর দিন মেনে নিচ্ছে।
যেখানে দাবী আদায়ের নামে , চা খাওয়া নিয়ে, প্রতিদিন কলেজ লুট হচ্ছে ,হাসপাতাল লুট হচ্ছে, ভাংচুর হচ্ছে , রক্তারক্তি হচ্ছে, সেখানে এরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার দাবী নিয়ে এই অহিংস আন্দোলন করছে, সেখানে ইসকন নিষিদ্ধ এই জন্যই জরুরী কারণ এদের হরেকৃষ্ণ হরে রাম ভগবানের নাম জপের মাঝে লুকিয়ে আছে ভয়ংকর সন্ত্রাসী ।যাদের হাতে আছে গ্রেনেড, মিসাইল।যারা প্রতিদিন লাশ ফেলছে ,রগ কাটছে দেশের আনাচে কানাচে! প্রতিদিন মাইক বাজিয়ে কীর্তনে ,ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাইক লাগিয়ে হুমকি দিচ্ছে বাংলাদেশের মুসলমানদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেবে!
অথচ এই চিন্ময় দাস বাববার পরিস্কার করে বলেছেন, ‘৫ আগস্টের পর সনাতনীদের ওপর চালানো হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদে আমাদের আন্দোলন। এই আন্দোলন বর্তমান সরকার কিংবা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়।তার মানে বাংলাদেশে আপনি জানমালের নিরাপত্তা ও চাইতে পারবেন না ,যদি আপনি ভীন্ন ধর্মের হোন!