ড. ইউনূসের চেষ্টা ব্যর্থ, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চলছেই-

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
অভিষেক জিকু-
শপথ গ্রহণের আগেই অশান্তি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্বগ্রহণের এক মাস অতিক্রান্ত হলেও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধ হয়নি বাংলাদেশে। ড. ইউনূস চেষ্টা করলেও সংখ্যালঘুদের আতঙ্ক কাটছে না। দুর্গা পুজোর আগে ও হিন্দুরা খুবই আতঙ্কিত ছিল, বিভিন্ন জায়গায় জামায়াত ও বিএনপির স্থানীয় নেতারা হিন্দুদের জমি দখল করছে। বিভিন্ন মন্দিরে হামলাও হচ্ছে। জাতীয় হিন্দু মহাজোটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী শেখ হাসিনার পতনের পরে হিন্দুদের ওপর ৪৮টি জেলায় ২৭৮টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। হতাহতের সংখ্যা শতাধিক। বিএনপি ও জামায়াতের স্থানীয় নেতাদের লোভের হাত থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশের দুই প্রকৃত বন্ধু প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটক এবং সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মভিটাও।
দেশভাগের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন ঋত্বিক এবং সুনীল। দুজনই ছিলেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মূর্ত প্রতীক। সুনীলের জন্মভিটা ছিল মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার কাজীবাকাই ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়ায় মৌজায়। তার পৈতৃক জমি ছিল ৭ একর ১৫ শতাংশ। ছিল একটি টিনের ঘরও। সেখানেই ছিল বাংলা ভাষার অত্যন্ত জনপ্রিয় এই কবির বহু ছবি, বই ও আসবাবপত্র। গড়ে উঠেছিল, ‘সুনীল স্মৃতি পাঠাগার’। কিন্তু গত ৯ সেপ্টেম্বর সেখানে হামলা চালান স্থানীয় বিএনপি নেতা সোহেল হাওলাদার। সমস্ত জিনিষপত্র তছনছ করে ঘরটির দখল নেন তিনি।
স্থানীয় মানুষদের হাতেগড়া ‘সুনীল স্মৃতি পাঠাগার’ পরিণত হয় ধ্বংস স্তুপে। অথচ সকলেই জানেন বাংলাদেশের প্রতি কী গভীর ভালোবাসা ছিল সুনীলের। ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতার উর্ধে উঠে চিরকাল মানবতার কথাই বলছিলেন জন্মসূত্রে পূর্ব পাকিস্তানের বাসিন্দা এই কবি।
ঋত্বিক ঘটকও পূর্ব পাকিস্তান থেকে শরণার্থী হয়েই কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। দেশভাগের যন্ত্রনা আমৃত্যু বহন করেছেন তিনি। তার প্রতিটি সৃষ্টিতেই ধরা পড়ে ছিন্নমূল মানুষের যন্ত্রনা। কিন্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সঙ্গে কখনও আপোষ করেননি তিনি। সেই ঋত্বিকের বসতভিটেও বেদখল হয়। ৫ আগস্টের পর গুড়িয়ে দেওয়া হয় রাজশাহী মিঞা পাড়ায় ঋত্বিকের পূর্বপুরুষদের আদি বাসস্থান। এই দুই বিশিষ্ট বাঙালির ‘অপরাধ’, তারা ছিলেন মৌলবাদীদের ভাষায় ‘হিন্দু’। অথচ, বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে যাদের ন্যূনতম জ্ঞান আছে তারা কেউই এই দুজনকে কোনও ধর্মের গন্ডিতেই বাঁধতে পারবেন না।
শুধু ঋত্বিক বা সুনীলই নন, বাংলাদেশের হিন্দুরা প্রায় সকলেই আক্রান্ত। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের বহু আগে থেকেই হিন্দুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল জামায়াত ও বিএনপির তৃণমূলস্তরের নেতারা। আওয়ামী লীগের মতো তাদেরও লোভ ছিল হিন্দুদের বিষয়-আশয়ের ওপর। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হিন্দুরা অনেকে সক্রিয় অংশ নিলেও পালাবদলের পরও ভূমিদস্যুদের হাত থেকে তারা রক্ষা পাচ্ছেন না। ধর্মীয় মৌলবাদীদের দাপটে তাদের ওপর হামলা এখনও চলছে। বংলাদেশের এই চলমান অশান্তিতে বিবিসি-র খবর অনুযায়ী, ৬৪০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। বর্তমানে মৃত্যুর মিছিল কিছুটা কম হলেও সংখ্যালঘুরা কিন্তু নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারছেন না। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন হিন্দু ডাক্তার, শিক্ষক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষজন। তাদের ভিটেমাটি পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দেওয়া হচ্ছে।বিএনপি-জামায়াতের দাপটে হিন্দুরা সরকারি চাকরিতেও নতুন করে বঞ্চনার শিকার।
ইতিমধ্যেই সরকারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো হয়েছে অন্তত ৬৭ জন শিক্ষককে। পুলিশ এবং প্রশাসনেও হিন্দুদের যোগ্য মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে না। বহু জায়গায় তাঁদের কম দামে ভিটেমাটি বিক্রি করে দেশ ছাড়তে বলা হচ্ছে। অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অথচ হিন্দুদেরও একটা বড় অংশ আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে পথে নেমেছিলেন। অভিযোগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা সেনা কর্মকর্তারা হামলা বন্ধ করতে চাইলেও তাদের বদনাম করার উদ্দেশ্যেই হিন্দুদের ওপর হামলা অব্যহত রয়েছে। অনেকে মনে করেন, ড. ইউনূসদের বিরুদ্ধেও শুরু হয়েছে গভীর আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। জাতিসংঘের চোখেও অন্তর্বর্তী সরকারকে অপদস্ত করার চেষ্টাতেও বিরাম নেই। পশ্চিমাদের চোখেও খারাপ করার চেষ্টা চলছে।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর ছাত্রদের অনুরোধেই ড. ইউনূস ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন। দায়িত্বগ্রহণের আগেই তিনি বলেছিলেন, ‘আমার উপর আস্থা রাখুন। দেশে কারও উপর কোনও হামলা হবে না। আমাদের সারা বাংলাদেশ একটা পরিবার’। সেদিনই তিনি বলেছিলেন, ‘আমার ওপর ভরসা রাখেন, তাহলে নিশ্চিত করেন যে এ দেশে কোনো জায়গায়, কারও ওপর হামলা হবে না। এটা আমাদের প্রথম দায়িত্ব। এটা যদি আমি করতে না পারি, আমার কথা যদি না শোনেন আপনারা, তাহলে আমার প্রয়োজন এখানে নাই। আমাকে বিদায় দেন’।
কিন্তু তিনি চাইলেও ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে শান্তি ফেরাতে দিচ্ছে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। নতুন করে ভারত-বিদ্বেষ জাগিয়ে তুলে অর্থনীতির বারোটা বাজানোরও পরিকল্পনা করছে ক্ষমতালোভীর দল।
ড. ইউনূস বলেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক দরকার। কিন্তু সেই সম্পর্ক হবে ন্যায্যতা এবং সমতার ভিত্তিতে’। তার সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, চলতি মাসেই নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনেরফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান ড. ইউনূসের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের চেষ্টা চলছে। তদারকি সরকার চাইছে দেশের সার্বিক উন্নতির স্বার্থেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে অটুট রাখতে। দুদেশের মানুষও সেটাই চান। ভারত থেকে পণ্য আমদানির রাস্তা বন্ধ করে দিলে জিনিষের দাম বাড়বে। মানুষ ক্ষিপ্ত হবে। সেটাই চাইছে ষরযন্ত্রীরা। তারা মানুষকে উত্তপ্ত করতে চাইছে। তাই ফের শুরু হয়েছে ভারত-বিদ্বেষ জিইয়ে রাখার নানা কৌশল। সেই কৌশলেরও একটি অংশ হচ্ছে হিন্দুদের ওপর ক্রমাগত নির্যাতন। আসলে সরকারের বদনাম করতে মরিয়া বিএনপি-জামায়াত জোট। ফের তারা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে সরাসরি নিজেদের হাতে ক্ষমতাতে নিতে চাইছে।
বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার তলানিতে এসে ঠেকেছে। বিদেশি সাহায্য না পেলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। বাড়বে মানুষের
দুর্ভোগ। আর সেটাই চাইছে বিএনপি-জামায়াত থিঙ্কট্যাঙ্ক। দুজনেরই টিকি বাঁধা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির কাছে। তাদের প্ররোচনাতেই সরকারকে বিব্রত করার খেলা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে।
তবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কোনও ক্ষতি হোক দিল্লি সেটা চায় না। তাই ১০ সেপ্টম্বর ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বাংলাদেশের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভারতের তরফ থেকে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে এসেছেন। ভারতীয় হাইকমিশনার জানান, পণ্য সরবরাহ থেকে শুরু করে বাংলাদেশে চলমান কোনো ভারতীয় প্রকল্পই স্থগিত করা হয়নি। ভারত বাংলাদেশের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবেও। তবে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় ভারত যে উদ্বিগ্ন সেটা খোদ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই একাধিকবার জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্ত আদতে ভারতের পক্ষে বাংলাদেশের  হিন্দুদের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব নয়। কারণ বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতা  আগের যে কোন সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ  পর্যায়ে রয়েছে এখন।
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১