আজ জন্মদিন তোমার (জুলাই ৩৬-ছমন্বয়কদের ছল)

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

কলমে “টিম-বাংলাদেশ চাও”

প্রিয়,

দেখো এবারও তোমার জন্মদিনে থাকা হলো না অথচ মনে মনে হাজারবার ভেবেছি এবার তোমার জন্মদিনের দিন ঢাকা গিয়ে তোমাকে চমকে দেব।তুমি বিস্ময়ে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে রেগে গিয়ে বলবে কেন তোমাকে জানাইনি আমি ফিরছি তোমার বুকে ঝাঁপ দিতে। হলো না প্রিয়,আমাদের দেশ কি এক তান্ডবে অশান্ত-আমার যাওয়া হলো না তোমার বহুভাষার চোখের নীচে নিজেকে সঁপে দিতে।

আমাদের বহু মতানৈক্য ছিল দেশের এ চলমান বিক্ষোভ নিয়ে।তুমি অনেকবার আমার উপর উষ্মা প্রকাশ করেছো;কিন্তু আমাদের সম্পর্কের যে সৌন্দর্য তা হলো একে অন্যের সব কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা,বিশ্লেষণ করে সহমত বা দ্বিমত পোষণ করা।অন্য অনেকের মতো তুমি ব্যক্তিগত পাওয়া-না পাওয়ার বিক্ষুব্ধতাকে পুঁজি করে আমাকে পুরো ত্যাগ করোনি।তুমি বুঝেছিলে এক পর্যায়ে দেশ এক ভয়াবহ কালো থাবার নীচে চলে এসেছে।যা সাময়িক বিভ্রান্তি ও স্বীকার না করার মানসিকতা থেকে মানু্‌ষ ধরতে পারছে না।

আমাদের প্রাথমিক আলাপ ছিল কি নিয়ে আন্দোলন? কারণ আমরা যুক্তি দিয়ে বিষয়টা বুঝতে পারছিলাম না২০১৮ এর পরিপত্র কোটা বাতিলের,কোর্ট বাতিল করলো,কোটা যেন বহাল হতে না পারে তা নিয়ে সরকার আপিল করলো,ছাত্ররাও চায় কোটার বিলুপ্তি;তাহলে সমস্যা কোথায়?আমরা দুজনেই বুঝলাম সমস্যা হলো রাজনৈতিক সরকারের দীর্ঘদিন দায়িত্বে থাকা। অনেকেই রেজিমের পরিবর্তন চাইছেবিক্ষোভে যা হয় দুর্নীতি,দুর্বৃত্তায়ন ও দুঃশাসনকে পয়েন্ট করে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া তা কিন্তু এ আন্দোলনে হয়নি। কতিপয় মানুষ তার ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে অজুহাত দেখিয়ে সামনে এগিয়েছে।

আমাদের বোঝাপড়ার ভেতর আমরা দেখলাম একজনসরকারপ্রধানের মেজাজ হারানো,চাটুকারদের ফাঁদে আটকা পড়া,প্রজন্মের পালস ধরতে না পারা,নির্মম লুটপাটের ইতিহাস ও দম্ভ।এ যেন এক বুবি ট্র‍্যাপ কোনভাবেই যা থেকে বের হবার উপায় নেই।

মানুষ কখন কোন কিছুর আর তোয়াক্বা করে না?যখন সে বুঝে এর বেশি হারাবার আর কিছু নেই।বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ কি সেই খাদের কিনারে চলে এসেছিলো?

দেশের সর্বোচ্চ পদাধিকারী যখন বলে তার পিয়ন চারশ কোটি টাকার মালিক তখন মানুষ ক্ষমতার কাছে কত তুচ্ছ তা বোধ করে অন্তরে ফুঁসে উঠে।এই তীব্র ঘেন্না মানুষকে কোন আগপাশ বিবেচনা না করে পথে নামতে হয়তো বাধ্য করেছে।

তুমি জানোই যে কোন হুটোপুটির সময় একদল থাকে যারা দক্ষতার সাথে নিজের ঘরে ফসল উঠিয়ে ফেলে। এখানে বিবিধ ভিন্ন ভিন্ন দলের সাথে যারা আগামীতে লাভবান হতে যাচ্ছে বিশেষভাবে তা হচ্ছে হিজবুত তাহরী।

আমার যেটা মনে হয়েছে প্রিয় এবং এটাই বাস্তবতা ২০১৩ সালে রাজনৈতিক নেতৃত্ববিহীন যে গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে উঠেছিলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে, তা আমরা সঠিকভাবে গুছিয়ে নিয়ে আসতে পারিনি না পারার বহুবিধ কারণ আছে যেমন রাজনৈতিক,ব্যক্তিস্বার্থ,সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাবানদের অন্য মাত্রার হিসেব নিকেশ ও আমাদের ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া। পরাজিত শক্তি এমন করে এই ২০২৪ সালে মাথাচাড়া দিতে পেরেছে এসব কারণেই,সাথে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র।

দেখো তুমি আমাকে ফোন করে বললে রংপুরে এক ছাত্রের পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর কথা সেই ১৬ জুলাই সম্ভবত।অথচ তার একদিন আগেই ইউএস এম্বেসি দুজন মারা যাবার খবর চাউর করে দিলো।তোমাকে যখন বললাম রাবার বুলেটে কেউ মারা যায়! তুমি আমাকে এত ঘেন্না করলে যে ফোন রেখে দিলে।রংপুরের সে স্টুডেন্টের গুলি খাওয়ার ভিডিও তো খুব সুন্দর করে কন্টেন্ট রেভুলেশন আকারে বানানো হয়েছে।বানিয়েছে কারা তাও জানো-ব্যাচেলরখ্য্যত পরিচালক ও তার ভাই বেরাদাররা। তোমাকে বললাম ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করলে জানা যাবে আবু কোন চরমপন্থী দলের সুইসাইডাল স্কোয়াডের সদস্য।তার সেই দুহাত দুপাশে দিয়ে হাঁটু গেড়ে জেসাস ক্রাইস্টের ভঙ্গীমা কতদিনের চর্চায় হয়,প্রিয়?তুমি দেখলে প্রফেসর ইউনুস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণের পর রংপুরে নাগরিক বিক্ষোভে নিহত সেই ছেলের বাসায় গেলেন কিন্তু তিনি মুগ্ধ’র বাসায় যাননি।কারণ মুগ্ধ তাদের লোক নয়। মুগ্ধ কথা বলেছিলো শিবিরের বিরুদ্ধে।

 

আমার প্রফেসর ও তরুণ বন্ধু আমাকে ডিজিটাল ক্রুসেডের রূপরেখা ও কালার রেভুলেশন বা লাল বিপ্লবের ডট নিয়ে প্রশ্ন করেছেন আবার নিজেরা আমার সাথে পাজলও মিলিয়েছেন।আমার দুই প্রফেসর শশাঙ্ক রিডেমপশন মুভির সেই জেসাসের মতো হাত ছড়ানো ছবি মরগ্যান ফ্রিম্যনের, রংপুরের আবু’র ছবি আর ইউনুসের সাগর পাড়ে হাত ছড়ানো ছবি মিলিয়ে দেখতে বললেন।

দেখো ১৯৯৬ থেকে শিবির বিসিএসে মুক্তিযুদ্ধ কোটা থাকার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে।আর কোনো দলের কিন্তু এ নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই।২০০১ এ বিএনপি এর কিছু সংস্কার করে।২০০৯ এ আবার আওয়ামী লীগ এ কোটা নিয়ে এলে শিবির এ নিয়ে আবার ঝাঁপ দেয়।২০১৪ তে সুবিধা না হলেও ২০১৮ তে শিবির তার সাংগঠনিক কার্যক্রমকে ধর্মীয় দাওয়াতের আড়ালে রেখে সাধারণ ছাত্রদেরও এর সাথে সম্পৃক্ত করতে পারে।

২০১৮ তে সরকার এ আন্দোলন কোনভাবে সামাল দিতে পারলেও ২০২৪ এ আর শেষ রক্ষা হয় না।

তোমাকে আগেই বলেছি

পাবলিক পারসেপশন,গণঘৃণা এক অন্যরকম ব্যাপার।

২০১৮ তে যারা ১৮ বা ২০ বছর বয়সী ছিল তারা ২০২৪ এ প্রাপ্তবয়স্ক। এ ৬ বছরে তারা শিবিরের রাজনীতি থেকে বের হয়ে,ভিপি নুরুর দল থেকে বের হয়ে, নিজেদের দল গঠন করেছে শিবির ও নুরের পরামর্শে-ছাত্রশক্তি নামে। কারণ শিবির বা নুরুর দলের নামে দল হলে সাধারণ ছাত্রদের মাঝে তাদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরী হবে না।

এ ৬ বছর তারা দেশের ৬৪ জেলায় সব পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে তাদের প্রতিনিধি ও সদস্য রিক্রুট করেছে।

গণজাগরণ মঞ্চের অধিকাংশ মাথাকে তারা ক্রয় করেছে,নিজেদের দলে ভিড়িয়েছে।

প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোতে সংযোগ স্থাপন করতে পারে এমন ব্যক্তিকে মূল ধরে তারা আন্দোলনে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে।যে এই কাজ করেছে সে আগে “দৃষ্টিপাত” নামক একটি ব্লগে ছিল, খোঁজ নিলেই জানতে পারবে সেই ব্লগের কাজ কি ছিল।

নিরলসভাবে প্রতিটা স্তরে-শিক্ষা,চিকিৎসা, ব্যবসা,আইনশৃংখলা রক্ষাকারীবাহিনী,বিচারবিভাগ,বিজিবি,আর্মি,নাগরিক সমাজ সর্বত্র নিজেদের মানুষ রাখার ব্যবস্থা করেছে

তাদের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ করেছে আর্ব সুদৃঢ় ও সুসংহত।

স্টুডেন্টদের যে নেতাকে চিহ্নিত করেছে একটি পত্রিকা,প্রতিবেদনে তার নাম মাহফুজ আব্দুল্লাহ (তোমাকে লিংক দিয়ে দেব)।তার যদি ব্যাকগ্রাউন্ড দেখো সে শিবির থেকে বহিষ্কৃত,সে সিনেযোগের মতো একটি সিনেমা বিষয়ক ম্যাগাজিন বের করেছে,তার পিতা চট্টগ্রামের বিএনপির নেতা।সে তার তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক শক্তির সাথে একীভূত হয়ে এ নাগরিক বিক্ষোভ এগিয়ে নিতে পেরেছে।

তোমাকে মনে রাখতে হবে আমার গ্রামের তরুণের জন্য আমার এ লেখা পড়া খুব দুরূহতার জন্যে পিনাকীর ভিডিও,ইলিয়াসের ভিডিও,জুলকারনাইনের প্রোপাগান্ডা শুনা বুঝা অনেক সহজ।সরকার তো মানুষের মননের উন্নতির জন্য,চিন্তার বিস্তৃতির জন্য কোন বিনিয়োগ করেনি।কিন্তু বিরুদ্ধপক্ষ তাদের সর্বস্ব বিনিয়োগ করেছে,এই ফাঁকের সুযোগ নিয়েছে পূর্ণভাবে।

তুমি জানি মুখ বেঁকিয়ে বলবে কেন দেশে কি শিবির করা নিষিদ্ধ না কি! না নিষিদ্ধ না,জামাত করাও নিষিদ্ধ ছিল না।এটা আমাদের ব্যর্থতা আমরা গণজাগরণ মঞ্চ থেকে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কাজটি সম্পন্ন করতে পারিনি। শিক্ষা কারিকুলাম ছিল গোঁজামিলে ভরা। বাচ্চাদের মানসিক বিকাশের ধারা বদলে দেয়া হয়েছে সুকৌশলে। জামায়াতশিবির আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব পরিপন্থী-তাই তাদের রাজনীতি কোনোদিনই আমাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ছিল না।তারা মনে প্রাণে বাংলাদেশকে ঘৃণা করে।

তুমি অন্য অনেকের মতোই আমাকে বলেছো আমেরিকার লাভ কী আমার দেশে ডানপন্থীদের ক্ষমতায়িত করে!

তোমার এখানে ভিন্ন গল্পটা জানতে হবে-যেমন ধরো ইউক্রেনের ওরেঞ্জ রেভুলেশন;ইউক্রেন যদি রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে থাকে তাহলে রাশিয়া পরাশক্তি হিসেবে বিশেষ অবস্থানে থাকে।রাশিয়াকে দুর্বল করতে পশ্চিমা শক্তি কি করলো?রাশিয়া ও ইউক্রেনের ভেতর যুদ্ধ বাধিয়ে দিলো।এজন্য পশ্চিমারা কি করলো?

২০০৪ সালের ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ছিল রুশ–পশ্চিমা প্রক্সি যুদ্ধেরই একটি অপেক্ষাকৃত ‘অহিংস’ সংস্করণ।

যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনে নিজেদের পছন্দনীয় প্রার্থীকে (অর্থাৎ ইয়ুশ্চেঙ্কোকে) বিজয়ী করার জন্য ইউক্রেনে একটি গোপন কিন্তু বিস্তৃত ‘রাজনৈতিক–মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’ পরিচালনা করে। এই ‘যুদ্ধে’র কৌশলসমূহের মধ্যে ছিল ছাত্র ও তরুণদের দিয়ে আন্দোলন পরিচালনা করা, বিরোধী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং প্রচারমাধ্যমকে নিজেদের পছন্দনীয় প্রার্থীর পক্ষে সুকৌশলে ব্যবহার করা। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মার্কিন রাষ্ট্রীয় বৈদেশিক সহায়তা সংস্থা ‘ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট’, যুক্তরাষ্ট্রের তদানীন্তন ক্ষমতাসীন দল ‘রিপাবলিকান পার্টি’র ‘ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট’, তদানীন্তন বিরোধী দল ‘ডেমোক্রেটিক পার্টি’র ‘ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট’, মার্কিন এনজিও ‘ফ্রিডম হাউজ’, মার্কিন ধনকুবের জর্জ সোরোসের নিয়ন্ত্রণাধীন ‘ওপেন সোসাইটি ইনস্টিটিউট’ (বর্তমানে ‘ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন্স’) এবং সর্বোপরি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মার্কিন অর্থায়নে ইউক্রেনে ‘পোরা!’ (ইউক্রেনীয়: Пора!) বা ‘এখনই সময়’ নামক একটি যুব সংগঠন স্থাপিত হয়। এই সংগঠনটি ইউক্রেন জুড়ে ১৫০টি গ্রুপ ও ৭২টি আঞ্চলিক কেন্দ্র স্থাপন করে এবং অন্তত ৩০,০০০ ইউক্রেনীয় তরুণ–তরুণী এই সংগঠনের অংশ ছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে, এই সংগঠনটির লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনে সরকারবিরোধী ‘অহিংস আন্দোলন’ গড়ে তোলা এবং ‘জাতীয় গণতন্ত্রে’র বিকাশ ঘটানো। কার্যত এই সংগঠনটি সৃষ্টির পশ্চাতে মার্কিনিদের উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনীয় সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য এদেরকে ব্যবহার করা। মার্কিনিদের পরোক্ষ নির্দেশনায় এই গ্রুপগুলো ইন্টারনেট ব্যবহার করে ইউক্রেনীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায়। এর অংশ হিসেবে তারা বিভিন্ন ওয়েবসাইট খোলে এবং সেগুলোতে সরকারবিরোধী লেখালেখির মাধ্যমে ও সরকারকে ব্যঙ্গ করে জনসাধারণের মধ্যে সরকারবিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে দিতে থাকে।

(আমি তোমাকে ওরেঞ্জ রেভুলেশনের উপর লেখা সহজবোধ্য লিংক দেব)

এ পর্যন্ত পড়ে কি তোমার আমার দেশে ঘটে যাওয়া নাগরিক বিক্ষোভের আড়ালে নীরব সামরিক বিপ্লব কিভাবে হলো সেই ছক বুঝতে পারছো?

সেই এন্টি ১৯৭১,মুসলিম লীগের অরাজনৈতিক নাতি-পুতি,এন্টি লীগ,এন্টি হাসিনা,এন্টি হিন্দু,এন্টি মুজিব,এন্টি আহমদিয়া,এন্টি কাদিয়ানী,এন্টি শিয়া,এন্টি পাহাড়ী,এন্টি সংখ্যালঘু এন্টি উইমেন জনগোষ্ঠীসাথে আছে সব পেশার সব শ্রেণীর মানুষের আবেগকে কাজে লাগানো।কারণ আজকে যে মানুষ ২৪ বছরের সে শুধু ছাত্রলীগ,যুবলীগ,আওয়ামী লীগের ডকট্রিন দেখেছে।

সে জানে না ২০০১ থেকে ২০০৬ যে দেশে আঠারো ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকতো না,সে জানে না পূর্ণিমা রাণী শীলদের গণধর্ষণের কাহিনী,সে জানে না বিরোধীদলকে গ্রেনেড হামলা করে নিশ্চিহ্ন করার সেই বিভীষিকা,সে জানে না ৬৪ জেলায় একসাথে জঙ্গীদের বোমা বিস্ফোরণের সেই দুর্যোগ,সে জানে না হাওয়া ভবনে গুণে গুণে সবকিছুর জন্য ১০ পার্সেন্ট ঘুষ দেয়ার কাহিনী।সে জানে না আর্মি শাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে ২০০৭ এ কিভাবে আর্মির সাধারণ ক্যাপ্টেন যৌথ অভিযানের নামে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে-ফখরুদ্দিন মাঈনউদ্দিন কিভাবে দেশকে রাজনীতি শূন্য করে এই ইউনুসকে বসাতে চেয়েছিলো সেই ২০০৭ এ।

বাংলাদেশ ভৌগলিক অবস্থানের কারণে আমেরিকার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানে যদি আমেরিকা একবার ঘাঁটি গড়ে তুলতে পারে জঙ্গী নিধনের উসিলায় তাহলে মিয়ানমার যে চীনের বন্ধু তাকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।তোমার বুঝতে হবে মিয়ানমার বিশ্বের ১২তম শক্তিশালী সামরিক শক্তি।

একটা মজার কথা কি জানো?যে দেশের মানুষ সুঁইটা পর্যন্ত ভারতের ব্যবহার করে তারা কিন্তু চরম ভারতবিরোধী।জানি একবারও ভারত না যাওয়া তুমি বলবে ভারত কি আমাদের বিনে পয়সায় দেয় না কি!

এর কারণ কী?শুধুই তিস্তার পানি,শুধুই সীমান্তে প্রাণহানি?এ নিয়ে আমার এক আর্মি বন্ধু ইন্টারেস্টিং  কথা বলেছে-বাংলাদেশ আর্মি যা আগে পূর্ব পাকিস্তান ছিল এদের মূল ট্রেনিং দিয়েছে ব্রিটেন, সাথে ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের আর্মিরা।এখন আর্মিরা হচ্ছে যুদ্ধ সৈনিক,তাদের সামনে কাল্পনিক শত্রু উপস্থাপন না করলে তাদের ট্রেনিং দেয়া যায় না,ভেতরের লড়াকু কলিজাটা কাঁপানো যায় না।তো পাকিস্তানের শত্রু তো ভারতই।তাই অধিকাংশ ইন্টার পাশ আর্মি ভারতকে চরম শত্রু জ্ঞান করে জীবন যাপন করেছে আগেও, এখনো তাই করে; তাদের জন্য দৃশ্যমান শ্ত্রু হচ্ছে ভারত, পাকিস্তান তাদের বন্ধু কারণ তারা একই সাথে ব্রিটেনের কাছে ট্রেনিং করেছে এবং এই ধারা বাংলাদেশ হবার পরেও বংশ পরম্পরায় আমাদের অধিকাংশ আর্মি তাদের ডিএনএ তে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতার পরও দেখো ব্রিটেন আমাদের জেনোসাইডকে স্বীকৃতি দেয়নি কারণ ব্রিটেনের প্রশিক্ষিত পশ্চিম পাকিস্তানী আর্মি আমাদের ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে-জেনোসাইডের স্বীকৃতি দিলে ব্রিটেনেরও প্রশিক্ষক হিসেবে কাঠগড়ায় উঠবার সম্ভাবনা থাকে।

তুমি নানা অভিঘাতে আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছোরাজনৈতিক পাল্লা কোনদিকে ঝুঁকে আছে কার, এ নিয়ে আমরা যেভাবে দ্বিধাবিভক্ত এ নিয়ে আমি আমোদিত; আমাকে শেখ হাসিনা এক বস্তা টাকা দেয়নি,খালেদা তো দেয়ার প্রশ্নই উঠে না,গোলাম আযমের উত্তরসূরীদের আমাকে টাকা দেয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।তাহলে আমাকে কেন তুমি অপছন্দ করছো?

আমি যে সমন্বয়করা কোটা আন্দোলনের নামে সরকার পতনের আন্দোলন করলো,যেভাবে সাধারণ অল্পবয়সী আবেগী ছাত্রদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করলো- তাদের নাগরিক বিক্ষোভকে সমর্থন করিনি বলে?যে শিক্ষক ছাত্রদের উস্কে দেশকে চরমপন্থীদের হাতে তুলে দিলো তাকে নিয়ে নাচিনি বলে?এজন্য অপছন্দ করছো আমাকে!

আমাকে কথায় পেয়েছে জানি-৫ তারিখে দুপুরে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলেন।৫ ৬ ৭ আগস্ট এই তিনদিনে এক হাজারের উপর পুলিশ জবাই হলো,সাড়ে চারশ থানা লুটপাট হলো,গণভবনে কি অকথ্য অশ্লীলতা হলো আমি তা বলতে চাই না,হিন্দু বাড়ি পুড়লো,হিন্দু নারী যৌন নিগ্রহের শিকার হলো,লীগের মানুষ মরলো জঙ্গীদের হাতে,সব জেল থেকে জঙ্গীদের ছেড়ে দেয়া হলো,থানা থেকে আঠারো হাজার অস্ত্র লুট হলো এ নিয়ে প্রশ্ন হবে না? এ পুলিশ,লীগ যারা মৃত্যুবরণ করলো এদের হত্যার বিচার হবে !একবার প্রশ্ন উঠবে না এদের কে মেরেছে,কেন মেরেছে,এত নৈরাজ্য কেন করতে দেয়া হলো!সীমাহীন নৈরাজ্য ও হত্যাকে প্রধান উপদেষ্টা বললেন সেলিব্রেশনের সময় এমন হয়। এসব মৃতের জন্য কোন শোক হলো না। তাদের কারও পরিবার নেই,এমন মনে হলো যেন তারা আমাদের আদমশুমারিতে এক্সিস্টই করেন না।এ মৃদেহরা জন্মানুষের কাছ হতে কোন শোক আদায় করতে পারলো না কারণ মিডিয়া ৫ আগস্ট দুপুরের পর থেকে সম্পূর্ণভাবে ব্ল্যাকআউট হয়ে গেল। এরই মৃতেরা Ungrivable Body বা শুধুই নিথর দেহ হিসেবে পরিগণিত হলো।

ইন্টারেস্টিং হলো যেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাখাওয়াত বললেন ৭.৬২ মি.মি.র গুলি আমার দেশের পুলিশ ব্যবহার করে না সেই তার দপ্তর বদল হয়ে গেল চোখের নিমিষে

প্রিয়,আমার লড়াইটা কোনকালে কোন দলের জন্য ছিল না।আমি মুক্তিযুদ্ধ,বাংলাদেশ,সেকুলারিজম ও নারীবাদের পক্ষের মানুষ।কেউ যখন আমার ত্রিশ লক্ষ শহীদকে অস্বীকার করে তার অজ্ঞানতাকে আমি ঘৃণা করি।কেউ যখন ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারকে পুড়িয়ে দেয় তার মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি চিহ্ন ধ্বংস করার মানসিকতাকে আমি কোন দ্বিধা ছাড়া চিনে ফেলি।কেউ যখন ক্যালিগ্রাফি নিয়ে উচ্ছ্বসিত হয় আমি তার মতলব জানি।কেউ যখন সংস্কারের নামে নিজের বাসার সবাইকে উপদেষ্টা সভায় এনে তোলে তখন আমি তার সততা ও সদিচ্ছার প্রতি বাটখারা আগে থেকেই দেখতে পাই।

তোমার জন্মদিনে এবার জাগতিক কোন উপহার দিতে পারলাম নানিজে তো যেতে পারলামই না। আমি একঘরে হয়েছি দেশে আইসিসের হামলা হয়েছে বলে,আমি নি:সঙ্গ নেকড়ে হয়েছি নায়িকা বাঁধন থেকে শুরু করে আমার প্রফেসরের কাজের বুয়ার ছেলেও টাকা পেয়েছে বলে,আমি খারিজ হয়েছি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকে দলিত করা গর্হিত অন্যায় বলে,আমি নাস্তিক ট্যাগ খেয়েছি জামায়াত ইসলামী ও ইসলামকে সমার্থক হিসেবে দেখি না বলে।

তোমার জন্য কিছু কিছু বিশ্লেষণ,লিংক,ছবি রেখে গেলাম যদি কখনো ইচ্ছে করে খুলে দেখো,জেনো আমি শুধু চেয়েছি তুমিসহ আমার আপন মানুষেরা নিরাপদ থাকুক, দেশ চলুক ৭২ এর সংবিধান অনুযায়ী ।আমাদের হয়তো আর কখনো দেখা হবে না। বাংলাদেশ যেমন আমার শিরায় শিরায় প্রবাহিত তুমিও একইরকমভাবে আমার রক্ত কণিকায় থাকবে আমৃত্যু।

ভালোবাসি প্রিয়। কোন এক জন্মদিনে যেন তোমার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলতে পারি-তোমার জন্যে একাত্তরের স্বাধীনতাএনেছি দেখো।যেন বলতে পারি ওরা যেভাবে প্রতিরক্ষার প্রথম ব্যূহ পুলিশ মেরেছে তার বিচার করেছি । ওরা যেভাবে আমার স্লোগান আমি কে তুমি কে বাঙালী বাঙালী কে অবমাননা করেছে তা ফিরিয়ে এনেছি।ওরা যেভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ট্রাইবুনালকে তছনছ করে এদের হিরো বানাবার প্রয়াস পেয়েছে তা রুখে দিয়েছি।ওরা যেভাবে হিন্দু মেরেছে সেভাবে চানতারাদের বিতাড়িত করেছি।

ভুলটা জানি প্রিয় একাত্তর থেকে-রক্তবীজের ঝাড় কখনো জিইয়ে রাখতে হয় না অথচ আমরা রেখেছি বারবার,প্রতিবার।সেই ভুলের মাশুল দিচ্ছি আজ পুরো দেশ দাবার গুটি হয়ে।

ভালো থাকার চেষ্টা করো-আমরা একসাথে সবচেয়ে বেশি থাকি যখন আমাদের দূরত্ব হয় অনতিক্রম্য;তুমি আমার ফিতরাত না,তুমি আমার নসিব জানোই তো…

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০