যুক্তরাজ্যের বাঙালি জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে স্যার কিয়ার স্টারমার এবংজোনাথন অ্যাশওয়ার্থের নেতিবাচক মন্তব্যের নিন্দা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

বিআরআই এবং আইসিএসএফ-এর যৌথ বিবৃতি​​ ​​     

 

বিজ্ঞপ্তি:

যুক্তরাজ্যের বাঙালি জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে, লেবার পার্টির স্যার কিয়ারস্টারমার এবং জোনাথন অ্যাশওয়ার্থের সাম্প্রতিক নেতিবাচক মন্তব্যে আমরাক্ষোভহতাশা প্রকাশ করছিতাদের এহেন সংকীর্ণ মন্তব্য এমন একটিসম্প্রদায়কে আলাদাভাবে চিহ্নিত করেছে, যারা ব্রিটিশ সমাজ এবং তারঅর্থনীতিতে, বিশেষত এর সরকারি সেবাগুলিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেচলেছেউপরন্তু, আধুনিক ব্রিটেনও অনেকাংশে গড়ে উঠেছে ঐতিহাসিকবাংলা অঞ্চল থেকে আহরিত সম্পদ দ্বারাদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ব্রিটেনের ইতিহাসের ন্যায্যতম সময়ে, লাখোবাঙালি সেনা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অংশ হিসেবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইকরেছেসেই সাথে নিজের জনগোষ্ঠীকে বিপদের মুখে রেখেও বাংলা বিপুলসম্পদ এবং খাদ্য সরবরাহের মাধ্যমে যুদ্ধে অবদান রেখেছে, যার ফলাফলছিল একটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ যা লক্ষ লক্ষ বাঙালির মৃত্যু ঘটিয়েছিলফ্যাসিবাদের পরাজয়ের আট দশক পর, বর্তমান ব্রিটিশ রাজনৈতিকনেতৃত্বের মুখে সেই একই ধরনের ফ্যাসিবাদী বার্তা শুনতে পাওয়াটিপ্রবলভাবে উদ্বেগজনকস্টারমার এবং অ্যাশওয়ার্থের এই মন্তব্য তাদেরনিজেদের ইতিহাসের ব্যাপারেই কৃতজ্ঞতাহীনতা এবং অজ্ঞতার পরিচায়ক

বাঙালি জনগোষ্ঠী ইতিহাস জুড়েই অমানবিক নৃশংসতা সহ্য করেছে, বিশেষত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে। ১৭৭০ সালে বাংলার মহামন্বন্তর, যা প্রায় এক কোটি মানুষকে হত্যা করেছিলো, এবং ১৯৪৩ সালেরমহা মন্বন্তর, যা ত্রিশ লক্ষেরও অধিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিলএগুলিসবই ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ নীতি দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হয়েছিলএকইসাথে, বাঙালি জনগোষ্ঠী নিজ মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হবার ইতিহাসওবহন করে, উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়, পাকিস্তান সংগঠিত গণহত্যার ফলে লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু বাঙালির কথাএমনকি আধুনিক ব্রিটেনেও, বাঙালি জনসমাজ জাতিগত বৈষম্যসহিংসতার শিকার হয়েছে (যেমনঃ আলতাব আলি হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি)।

পৌণঃপুনিক এই বিপর্যয়গুলো বাঙালির সুদীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাসেরওউজ্জ্বল স্মারক, যা তাদের সামষ্টিক মানসিকতাজনস্মৃতিতে গভীর ছাপফেলেছেসেইসাথে, এগুলো একটি জনগোষ্ঠীর ঘুরে দাঁড়াবার মানসিকতাএবং মর্যাদাবোধকে নির্দেশ করেএকারণে এও অনুমেয় যে তারা স্বভাববতইএধরণের বৈষম্যমুলকঅন্যায় আচরণের ব্যাপারে স্পর্শকাতর হয়ে উঠতেপারেআমাদের গুরুতর উদ্বেগ এই যে স্টারমার এবং অ্যাশওয়ার্থের এইধরনের তাচ্ছিল্যসূচক বক্তব্যের ফলে, দীর্ঘদিন যাবত প্রান্তিকিকৃত একটিজনসমাজের প্রতি আরও বৈষম্যমূলক এবং সহিংস আক্রমণ নেমে আসতেপারে যদি না তা সমালোচিত এবং সংশোধিত হয়একই রাজনৈতিক দলেরদু’জন শীর্ষ নেতা যখন একই নৃগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, একইধরণের জাতিবাদিসরলিকরণ পুনরাবৃত্তি করে এবং উভয়ই তাদের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কোনওসুস্পষ্ট ক্ষমাপ্রার্থনা এবং তা প্রত্যাহারের আন্তরিক প্রচেষ্টা এড়িয়ে যায়, তখনতা লেবার পার্টির বর্তমান নেতৃত্বের একটি অংশের মধ্যে গড়ে ওঠাবাঙালিবিদ্বেষএর সূচক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে

তা যদি নাও হয়, অন্ততপক্ষে, এটি কাকতালীয় একটি সাঙ্ঘাতিকরাজনৈতিক ভুল তো বটেইধরণের মারাত্মক ভুলের প্রশমনকল্পে এবংতার প্রায়শ্চিত্তকরণে দলের সদিচ্ছা স্পষ্ট করতে হলে, লেবারকেঅনতিবিলম্বে ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক অতীতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবংক্ষতিপূরণ প্রদানের উপায় নিয়ে আলোচনা শুরু করতে হবেতা না করে, কমিউনিটি টিভি চ্যানেলে হাজির হয়েলেবার এবং বাংলাদেশের মধ্যেগভীর সম্পর্কেরক্লিশে উদ্ধৃতি পুনরাবৃত্তি করে যেউদ্বেগস্যার স্টারমারব্যক্ত করেছেন, তা কেবলমাত্র ঠুনকোকথার কথা” (insincere lip service) হিসাবেই বিবেচিত হবেতাই, আমরা স্যার কিয়ার স্টারমার এবং জোনাথনঅ্যাশওয়ার্থকে তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করতে এবং আন্তরিকনিঃশর্ত কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে আহ্বান জানাচ্ছি

আমরা ব্রিটিশ সমাজে বাঙালি জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিপ্রদান এবং তাদের অধিকার এবং মর্যাদারক্ষার জোরালো দাবী জানাচ্ছিশতাব্দীব্যাপী নিপীড়ন, ব্যাপকবিস্তৃত অমানবিকীকরণ এবং একাধিকগণহত্যার শিকার জনগোষ্ঠী হিসেবে, আমরা কেবল যুক্তরাজ্যের বাঙালিদেরসাথেই নয়, বরং যে কোনও প্রান্তিকিকৃত সম্প্রদায়ের সাথে একাত্মতা প্রকাশকরছি যারা যেকোনো স্থানে, যেকারো দ্বারা জাতিবাদি সরলিকরণেরমুখোমুখি হচ্ছে; সেইসাথে ন্যায়বিচারসমতার পক্ষে আমাদের নিরলসপ্রচেষ্টা জারি রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি

বিআরআই সম্পর্কে

বিআরআই একটি স্বেচ্ছাসেবাভিত্তিক শিক্ষামূলক উদ্যোগ যা বাংলা, বাঙালিতদসংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণাকর্মে আগ্রহী স্বেচ্ছাসেবীদেরকেগবেষণাবিষয়ক শিক্ষা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসম্যক গবেষণা অভিজ্ঞতাপ্রদানের লক্ষ্যে কাজ করছেবর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বাঙালিগবেষক, অধ্যাপক, পেশাজীবিউৎসাহী ব্যক্তিবর্গ এই উদ্যোগের সাথে যুক্তআছেন বাংলাবাঙালির প্রতি তাঁদের ভালোবাসাকর্তব্যবোধেরভিত্তিতেএছাড়াওসংগঠন বাঙালিত্ব সম্পর্কিত কিছু প্রাসঙ্গিক সামাজিককর্মকান্ডের সাথেও জড়িত

আইসিএসএফ সম্পর্কে

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ) আন্তর্জাতিকঅপরাধের ভিকটিমদের পক্ষে কর্মরত বিশেষজ্ঞ এবং কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিতস্বাধীন বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক, যা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে সংগঠিতজেনোসাইডের স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০