পৃথিবীর পুরো আকাশই এক  – শামীম আজাদ

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

শামীম আজাদ একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক ও সংস্কৃতিকর্মী। কবিতায় অসামান্য অবদানের জন্য সম্প্রতি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে মনোনীত হয়েছেন। বহির্বিশ্বে বাংলা ভাষা, বাংলা কবিতা অনুবাদ, বাংলাদেশের ইতিহাস প্রচার এবং দেশে মূলধারার কবি হিসেবে নিরন্তর অবদান রেখে চলেছেন। বাংলা  সাহিত্যে  অর্ধ শতাব্দীর এই পথচলার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া  নিয়ে কবির সাথে আলাপচারিতা – লিখেছেন জুয়েল রাজ 

 

রাত পোহালেই উড়াল দিচ্ছেন বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে , চলছে  গোছগাছ  সেই ব্যস্ততার ফাঁকেই কিছুটা অধিকার নিয়েই সময় ছিনিয়ে নেয়া-

সত্তর দশকের কবি হিসেবে পরিচিত হলেও একক কাব্যগ্রন্থ আশির দশকের গোড়ার প্রকাশিত হয়। কিন্তু তারপর তিনি ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের পরিবর্তন ও বৈচিত্রপূর্ণ অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে কবিতায় বাঁক বদল করতে সমর্থ হয়েছেন। শামীম আজাদ বর্তমান প্রজন্মের পাঠকের কাছেও পরিচিত ও আদৃত। তার কবিতাগ্রন্থ মেজাজে ও ভাবে রকমারি এবং বিষয়ে বৈচিত্র্যময়। উপমা ও রূপকের অভিনবত্ব তার কবিতার ছায়াকে অনায়াসে অন্য কবিতার ছায়া থেকে আলাদা করে দেয়।

 

 

 

 

 

 

কবিতা , গল্প , উপন্যাস, নাটক সব ক্ষেত্রেই সরব উপস্থিতি কবি শামীম আজাদের  এই অনুপ্রেরণা আসলে কি ছিল? আপনি কি জানতেন আপনি কবে হবেন ?

শামীম আজাদ বলেন, কবি হয়ে ও তো কেউ জন্মগ্রহণ করে না, মূলত আমার বাবা মা ছোটবেলায়  আমাকে দিয়ে সবকিছুই চেষ্টা করিয়েছেন, সবকিছুই আমাকে বানাতে চেয়েছিলেন হয়তো। কিন্তু কবি বানানোর কোন চেষ্টা করেছেন বলে আমার মনে পড়ে না।

সাপ্তাহিক বিচিত্রা মূলত আমার ভিত কে শক্ত করে দিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে পড়াশোনা করেছেন , সেটি পড়তে গিয়ে ইংরেজী সাহিত্য  ও পড়তে হয়েছে , মহান শিক্ষকদের সান্নিধ্য আসলে আমাকে শানিত করেছে।

শামীম আজাদ বলেন , পৃথিবীর দায় মিটিয়ে আমাকে কবি হতে হয়েছে , আমার স্বামী , সংসার সন্তান সব কিছু সামলিয়ে  গভীর রাতে আমাকে লিখতে হয়েছে । যদি বলো তাহলে বলতে পারো সময় এবং বোধ আমাকে কবি  করে গড়ে নিয়েছে।

উত্তারধীকার প্রাপ্ত শামীম তরফদার  থেকে শামীম আজাদ হয়ে উঠার গল্প আমরা দেখি তাঁর লেখায় খুব সুন্দর ভাবে তিনি উল্লেখ করেছেন,

 

 

 

দেহের বাইরে দেহ নিয়ে

আর মনের বাইরে মন

যেই খানেতে আছে এক

পাগলা কবি’র বন।

দেহের বাইরে মন এখন

বনের বাইরে ক্ষন

ক্ষন থেকে ক্ষনান্তরে

শামীম’র মরণ!

মনে হচ্ছে ৩য় বার জন্ম নিচ্ছি। এই নেবার কাল টা ব্যাখ্যা করতে চাই। দুরূহ বলব না- দূর্দান্ত। প্রথমে ছিল দেহগত শামীম তরফদার, শামীম আজাদ হয়ে দ্বিতীয় পর্ব । তা ছিল লেইট স্টার্ট। আর দেশের দেহের বাইরে দেশ নির্মানে ৩য় বার। ডায়াস্প্ররার কবি হয়ে কিন্তু এ পর্বেও লেইট স্টার্ট। সে দূর্ঘটনা বশত সাথী হয়ে গেছি কবিতাবনে এখন যে সব কবিতার পাখি, পশু ও হাংগর আর আছে কাকাতুয়া সুন্দর তাদের সাথী। এতদিনে বুঝি যাত্রা অব্যাহত রাখাটাই কথা। and how wonderful it can be!

এসব উপলব্ধির সময়ই ক’দিন আগে লিখেছিলামঃ

আজন্ম জন্মোন্মুখ আমি

শীতার্ত রাতে তাই

তোমার চাঁদচোয়া জল ও চুম্বনে

আমি বারংবার জন্মাই!

পানিতে টোকা লাগলে নাকি গুনাওয়ারের গা চমকায়। বাজে কথা, কবির গা চমকায়। চুল্কায়, চনবন করে ওঠে মাতাল কবি। সে কবি যতদূর যায় তার দেশের বাইরে দেশ যায়। সে হামা দেয় কিংবা হরিতকি খায়। অথবা এপিং ফরেস্টে ইস্টার এ্যাগ পুতে দেয় তার জানালায় কিন্তু বসে থাকে মস্ত এক হলুদিয়া বাঘ। সে উপ্লব্ধিতেই এক লাল শীতে লিখেছিলাম, রে পাখি হলুদিয়া/ তুইও হতে পারিস/জানালার বাঘ রাধাচূড়া।

বিলেতে রাধাচূড়া নেই, কদম নেই।এইযে আমার এত ওরাউড়ি তবু মাঝে মাঝে সকল কনক কালো হয়ে যায়। দেহ যন্ত্রের বাইরের দারুন লা জবাব জামায় টান পরে। জামার বাইরে আছে এক রূপালী রাজহাঁস (গাড়ি)। তারপর রাজহাসের নিচে রঙ্গীলা রাস্তা ওপরে আকাশের ওষুধ।বাঁয়ে হাতে হলোপন্ড (ফাঁপা)। ডানে হুইপ্সক্রস হাস্পাতাল। সেখানে বসে থাকে সাদা সাদা মাছি। ছাদের ছত্রাকেও অক্সিজেন।

আমি মাঝে মাঝে সেই হাসপাতাল থেকে মলম এনে মাখি। সে এমন মলম যে মাখা মাত্র নাই হয়ে যায়। আমার চুল থেকে ঝরে যায় সকল ঝিনুক!

এর মধ্যে আমি বসে থাকি এই যে কাল কদম সে কবে সবুজ হবে। ফুল ওয়ালী জডিও জানেনা। ওল্ড হোমের আইরিন ও চেনেনা। আমি গুগল গুতিয়ে রাতের ময়ূরের সঙ্গে চিৎকার করে ক্রন্দন করি।আর

আপন তারা খুঁজি সই

পাখির প্রাণে প্রাণে

গাত্রচ্ছাল উড়াল দেয়

পৈরদাদার ভূবনে।

আমার দাদা পৈরদাদার কবর এক বটগাছের নিচে, মুরূজপুরে – মৌলভীবাজারের মনু নদীর ওপারে। তাদের কবরের ওপর গাঢ় কাউয়ালুলী লতা আর পাশে চির হরিত হেইছা ঘাস। এত দূর থেকে আমি আমার রাজ হাঁস থেকে সেখানেই লাফিয়ে পড়ি। সুইমস্যুট সঙ্গে নেই বলে রাজিনার বোরখা পরেই সামনের পুকুরে সাঁতরাই। এভাবেই বিলেতের ব্লসম- আমার কলমী কাহিনী গুলো লাল আর কালো হতে থাকে।

কে যেন দূর থেকে হাত তুলে বলে ‘হও’।আর আমি হই। গজাতে থাকি।

মানুষ যে কি বিচিত্র – প্রেমের মতই সে কোটিবার জন্মায়।

 

অনাবাসী কবি , প্রবাসী কবি নানা ভাবে বিভাজন নিয়ে বহুদিন ধরেই বিতর্ক চলে আসছে। বাংলা একাডেমি অনাবাসী কবিদের জন্য আলাদা ভাবে পুরস্কারের প্রচলন ও করেছে ,এই প্রথম কোন অনাবসী কবিকে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কারের  এই সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। শামীম আজাদ বলেন সাহিত্যের কোন  ভৌগলিক সীমানা নেই, পৃথিবীর পুরো আকাশই এক । আমার অবস্থান নয় , আমার কাজের ক্ষেত্রই সেখানে বিবেচ্য হওয়া উচিত। সবার ক্ষেত্রেই সেটি প্রযোজ্য।

 

কবিতার সীমানা নিয়ে , তাঁর কবিতায় আমার কাছে মনে হয়েছে চমৎকার  ভাবে তিনি বলেছেন,

 

শিল্পকে মনে করি একটি টেবিল

তা যে কোনো মাপ ও বর্ণেরই সম্ভব

মজবুত কাঠামোয় একবার

ভালোবাসার স্বর্ণজলে ধুয়ে নিলেই তা শুদ্ধ

তারপর তাতে যা রাখবে তাই খাদ্য।”

…..

” আর সর্বশ্রেষ্ঠ দেবদূত তাঁকেই বলি,

যিনি একবারও অন্তত কোনো খর্বকায় কবির

কবিতা পাঠ করেছেন এবং মুখ ফিরিয়ে নেননি।

কারণ তিনি জানেন বালখিল্য হলেও

তারা প্রতিজনই একজন দেবতার সমান।”

 

৯০ এর দশকে ব্রিটেন সরকার আন্তর্জাতিক ভাবে  পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে  অন্যান্য ভাষার শিক্ষক নিয়োগ দেয় , সেই  নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষক হিসাবে লন্ডনে পাড়ি জমান শামীম আজাদ। কিন্ত শুধু পেশায় আটকে থাকেন নি। বিলেতের  বাংলা শিল্প , সাহিত্য ,সংস্কৃতি , এমন কি প্রগতিশীল আন্দোলন সংগ্রামে ও সামনের সারিতে থেকেছেন।

লন্ডনের বৈশাখী মেলা, সিজন অব বাংলা ড্রামা, বইমেলা, পহেলা বৈশাখ সহ যে কোন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সবার আগে যে মুখটি আমাদের সামনে ভেসে উঠে তিনি হচ্ছেন  কবি শামীম আজাদ আমাদের সবার “ শামীম আপা “ ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের   সর্বোচ্চ ফাঁসির দাবীতে বাংলাদেশের মত  পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যখন মানুষ  সোচ্চার হয়ে উঠেছিল , বিলেতের প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে সেই সব মিছিলে সবার আগে থাকতেন শামীম আজাদ।

কবিতার বাইরে মহান মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে প্রতিবছর মাসব্যাপী পালন করেন বিজয় ফুল কর্মসুচি , শুধু ব্রিটেন নয়  তাঁর এই কর্মসূচী পৃথীবির বিভিন্ন দেশে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন। যাতে করে নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলে , জানতে পারে।

 

কবি কখনো পরবাসী হয়না , শামীম আজাদ যখন লেখেন,

 

‘পুরো গ্রাম গ্রাসিয়াছো

ভাসিয়াছ মনুগাঙ জল

খোলনি জলের জানালা

আর তোমার অতল।’

আমি মনুগাঙের তীরের মুরূজপুরে নই, মৌলবীবাজারে নই, এমনকি বাংলাদেশেও নই। আমি বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বহুদূর তেরো নদী পেরিয়ে আছি এই লন্ডিনিয়ামে। বহুবছর। তবু আমার মন বেড়ায় ঘুরে ঘুরে। প্রতি নিয়ত দাদা পৈরদাদার উত্তরাধিকারের চিহ্ন উঠে আসে আমার কবিতায়, আমার অন্তরে… আমার কলিজায়। মেঘের মসলিনে যে সামিয়ানা ছাদ হয়ে আছে এ পুরাতন পৃথিবীর উপর আমি তাই ধরে টানি। তাই দিয়ে সব কাচিয়ে তুলি। আমি চলে যাই টাঙাইল, এথেন্স, ঢাকা, বুদাপেস্ট ও কখনো মৌলভীবাজার, মুরূজপুরে। লন্ডনের লাবন্য থেকে বার বার যাই মনপোড়া মুরূজপুরে।

মাঝরাতে হঠাৎ যখন আকাশের ছাদ থেকে জল উগড়ায়, সে জল আমার মেহগনী চুলের সিঁথিতে হাঁটে। আমি সরীসৃপ হয়ে যাই, হয়ে যাই মায়ময় এক মীন। সাঁতরাতে সাঁতরাতে চলে যাই সিলেটের কিন ব্রীজের নিচে সুরমায়। কখনো ব্রীজের উপর দিয়ে জালালী কইতরের সঙ্গে উড়তে উড়তে মৌলবীবাজার খান কটেজ, কমরুচাচার পাঠানো রিক্সায় উঠে পড়ি। মনুগাঙের পিচ্ছিল পাড় পেরুই এবং আবারও ফিরে এসে টাওয়ার ব্রীজ ক্যাসেল কবুতর হয়ে যাই।

আসলে যেতাম। হায়, এখন আর সে মৃন্ময় খেয়া নেই, আমার জন্য অপেক্ষা নেই আর কৈশোর হাত ধরে দাঁড়িয়ে নেই, আমার দাদা টংগীঘরে আমাদের জন্য পথের দিকে চেয়ে হুক্কা টানতে টানতে বিরক্ত হয়ে বসে নেই। এখন আমাদের গাড়ি সড়ক ধরে বাঁধের ওপর দিয়ে দুপাশে জারুল আর শিমুল ভেদ করে উঠানে ঊটের মত এসে দাঁড়ায়। আসবার সময় পথে পথে নালার পাশে পাশে সুপারির ছইয়ের ফাঁকে আজ আর কোন বউ ঝি উঁকি দেয় না। সবই এখন ইট আর কক্রিটের দেয়াল। পাথর আর পাথর।

কিন্তু কি করে যেন পাথর ভেদ করে কানে আসে ঘুঘু, কাক ও ময়না,র ডাক। আমি আমার শৈশবের সেই পুকুরের রঙ এ দেখি পাড়ের সবুজ কলাগাছের ছায়া। ঐপাড়ে বুদ্ধবটের গোড়ায় দাদাদাদীর কবর। পাড়ের হাঁটুতে একজোড়া খেজুর গাছ। জলে নামার জন্য সিঁড়ির স্থানে দিনারপুরী চৌকো কালো কালো ঝামা।

পুকুর পাড়ে আমার লন্ডনী চাচাতো ভাইরা চাইনীজ স্টাইলের একটা ছাদওলা ঘাট করেছে। প্যাগোডা চূড়োর বিদ্যুৎ সংযোগ।আলো পড়ে জলে, সে আলোতে আকর্ষিত হয়ে পতঙ্গরা আত্মাহূতি দেয় আর তারা হয়ে যায় মাছের আহার। আমি তাই তারে পতঙ্গ পুকুর বলে ডাকি।

পৈরদাদার টান বলে কথা! একবার লন্ডন থেকে ঢাকায় নেমেই কি এক চুম্বক বুজান আর আমি সোজা তার গাড়িতে করে মুরূজপুর চলে গিয়েছিলাম।

পথে পথে পান করেছি ডাবের শীতল জল, কুট কুট করে খেয়েছি গ্লুকোজ বিস্কুট আর সারা পথে শুনেছি রেজওয়ানা বন্যার গান।

 

 

শামীম আজাদ বলেন, আমি কখনো বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম না । দৈনিক পত্রিকায় কবিতা লেখা, ঈদ সংখ্যায় গল্প উপন্যাস লেখা, আর বর্তমান সময়ে এসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে তোমাদের মতো তরুণ প্রজন্মের সাথে ও আমার সরাসরি যোগাযোগ আমাকে অনেক কিছু ভাবতে শিখিয়েছে , লেখার খোঁড়াক জুগিয়ে যাচ্ছে ।

পুরষ্কার প্রাপ্তি নিয়ে বলেন, সম্মানের এবং ভালোবাসার   তো অবশ্যই তাঁর চেয়ে বড় যে প্রাপ্তি এতো মানুষ যে আমাকে ভালোবাসে সেটি আমার হয়তো জানা  হতো না। শুধু লন্ডন ঢাকা নয় বাংলা ভাষাভাষী মানুষ, পৃথিবীর নানাপ্রান্ত থেকে আমাকে যে ভালবাসা জানিয়েছেন , আমি  এই কয়েকদিন ধরে শুধু  ভাবছি “ শামিম এতোটা কী প্রাপ্য ছিল তোমার “ কত মানুষকে আমি চিনি না জানি না , কিন্ত তাঁদের সেই ভালবাসা তো ব্যাক্তি শামীম আজাদ কে নয় , কবি শামীম আজাদের ঋণ। আমার পুরস্কার উৎসর্গ করেছি আমার ৩ শহীদ শিক্ষকগনদের অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী অধ্যাপক,  মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ও অধ্যাপক আনোয়ার পাশা । এবং বাংলা একাডেমির প্রতি কৃতজ্ঞ, লেখকের স্থানীক অবস্থান নয় বাংলাদেশের সাহিত্যে তাঁর সামগ্রিক  অবদানই বিবেচনা করেছেন।

 

 

 

 

সত্তর দশকের কবি হিসেবে পরিচিত হলেও একক কাব্য গ্রন্থ আশির দশকের গোড়ার প্রকাশিত হয়। কিন্তু তারপর তিনি ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের পরিবর্তন ও বৈচিত্রপূর্ণ অভিজ্ঞতার সংগে সংগে তাঁর কবিতার বাঁক বদল করতে সমর্থ হয়েছেন।হয়তো তাই তিনি বর্তমান প্রজন্মের পাঠকের কাছেও পরিচিত ও আদৃত।তাঁর কবিতাগ্রন্থ মেজাজে ও ভাবে রকমারি এবং বিষয় বৈচিত্র্যময়। উপমা ও রূপকের অভিনবত্ব তার কবিতার ছায়াকে অনায়াসে অন্য কবিতার ছায়া থেকে আলাদা করে দেয়। শামীম আজাদের ডায়াস্পোরিক অভিজ্ঞতা প্রসূত ভাব, বানী, শব্দ এবং প্রতীকগুলো বাঙালিয়ানায় রূপান্তরিত হয়ে বাংলা কবিতাতে নিয়ে আসে এক বৈশ্বিক আবহ। এমনকি তিনি যখন সিলেটের আঞ্চলিক শব্দ ও প্রমিত বাংলার শব্দের মিথোস্ক্রিয়া ঘটান তখন তা তাকে এক ভিন্ন মাত্রার কবি বলে চিহ্নিত করে। একই কবিতায় ক্রিয়া পদের দুইরূপ ব্যবহার করেন সমান পারঙ্গমতায়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সংযুক্ততা ও প্রিয় শিক্ষকদের হারানো তার সৃষ্টিশীলতাকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকেন্দ্রিক করে রেখেছে সারাজীবন। তাই এত বছর পরও তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন সাহিত্য সাময়িকি ও প্রকাশনা থেকে শুরু করে অন লাইন কাগজ ও সামাজিক মাধ্যমে সমান জনপ্রিয় এবং প্রাসঙ্গিক।

 

 

কবি বেলাল চৌধুরী এবং কবি মাসুদুজ্জামানের সংগে যৌথ দুখানা কাব্যগ্ন্রন্থ, ৮ খানা একক কবিতা গ্রন্থ এবং বাংলা ও ইংরাজী প্রকাশনা মিলিয়ে শামীম আজাদের গ্রন্থ সংখ্যা চল্লিশোর্ধ।  এবার বইমেলায় আসছেঃ নসাস- নির্বাচিত কবিতা পাঞ্জেরী- ১.শূন্যস্থানে চুম্বন (গল্প সংকলন) ২. শামীম আজাদের কবিতা সংগ্রহ জাগৃতি থেকে সিলেটি কবিতাঃ কইন্যা কিচ্ছা ও স্মৃতিঃ একলা জেগে রই এর নতুন সংস্করন হচ্ছে।

 

এখনো প্রজাপতির মত উড়ে বেড়ান কবি শামীম আজাদ, কখনো স্কটল্যান্ড সাহিত্য উৎসব তো কখনো উত্তর ইংল্যান্ড কখনো ওয়েলস। কোন ক্লান্তি নেই। কখনো নিজে মঞ্চে উঠে প্রতিনিধিত্ব করেন বাংলা সংস্কৃতির, গল্প বলা দাদীমা  হয়ে ছোট বড় সবাইকে গল্প শোনান (STORRY TELLING) , বিলেতের বাংলা কবিতার কবিদের নিয়ে  শুরু করেছেন পোয়েট্রি সার্জারী কর্মসুচি, কবিতার অনুবাদ  ইংরেজ কবিদের সাথে পারস্পারিক ভাবনা বিনিময় এইসব নিয়ে কাজ করছেন।

শামীম আজাদ তরুণদের জন্য আশ্রয় এবং প্রশ্রয়ের ভরসাস্থল , আমার প্রথম কবিতাগ্রন্থের ভুমিকা লিখে দিয়েছিলেন, এবং বই মেলায় ঘুরে ঘুরে প্রকাশকের স্টলে গিয়ে সেই বই নিয়ে  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে  পোস্ট ও করেছিলেন।

এখন মাঝে মাঝে ভাবী কেন করেছিলেন শুধুই আমাকে পছন্দ করেন বলে ?

পরে বুঝেছি তিনি মূলত অনুপ্রেরণার জন্য ,এই কাজটি করেছেন। অনুপ্রেরণার আশ্রয় হিসাবে আমাদের ছায়া দিয়ে রাখুন ।

 

 

 

 

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০