ফ্রি ফিলিস্তিন দাবীতে থমকে গিয়েছিল লন্ডন
জুয়েল রাজ-
যুদ্ধ বিরতি ও স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবীতে পুরো লন্ডন শহর যেন থমকে গিয়েছিল গতকাল। লন্ডনের পাশাপাশি ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর থেকে বাস ভর্তি হয়ে লোকজন এসে যোগ দিয়েছিলেন এই বিক্ষোভ সমাবেশে। ব্রিটেনের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বিক্ষোভ সমাবেশ বলে দাবী করেছেন অংশগ্রহণকারী গণ।
গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে শনিবার বিশাল বিক্ষোভ হয়েছে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। এদিন কর্মসূচিতে পাঁচ লাখের বেশি মানুষের অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন আয়োজকরা।
শনিবার দুপুরে মধ্য লন্ডনের হাইড পার্ক থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। সেখান থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে টেমস নদীর দক্ষিণ তীরে মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে বিক্ষোভ শেষ হয় বিকেল ৪টায়।
ফিরতি পথে রেলস্টেশন গুলোতে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়েছিল মানুষ। হুইল চেয়ার নিয়ে, কোলের শিশু থেকে শুরু করে আবাল বৃদ্ধ বণিতা কেউ বাদ যায়নি সেখানে। কারে হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা, কারও মাথায় স্কার্প, অনেকেই গালে একেঁছেন দেশটির পতাকা।
ভিক্টোরিয়া স্টেশনে এডাম ও তার এক বান্ধবী তরুণীর সাথে কথা বলছিলাম, আদৌ কি এই ধরণের সমাবেশ বিক্ষোভ করে কোন লাভ হবে?
মাথায় ফিলিস্তিনি পতাকার স্কার্প পরা তরুণী বলেন, আমরা জানি এই বিক্ষোভে দেশের কতৃপক্ষ নীতিগত কোন মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে না,কিন্ত সাধারণ মানুষের মধ্যে যুদ্ধ বিরোধী সচেতনতা তৈরী হবে, আজকে এই সমাবেশে পৃথিবীর নানা দেশের ধর্মের বর্ণের , বিশ্বাসের মানুষ এসে যোগ দিয়েছিলেন। এটাও তো বড় প্রাপ্তি।
এদিকে মিছিল ঘিরে সকাল থেকেই বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয় বিভিন্ন পয়েন্টে। হোয়াইটহলে রিমেমব্রেন্স সানডে ফুটপ্রিন্টের চারপাশে ব্যারিকেডগুলো আরও জোরালো করা হয়। পুলিশ সদস্যদের তল্লাশির বাড়তি অনুমতিও দেওয়া হয়।
লন্ডনের ভক্সল ব্রীজের পাশে ডানপন্থী উগ্রবাদী ৮২ জনকে গ্রেফতার করেছে লন্ডন পুলিশ, যারা বিক্ষোভে আক্রমন করার প্রস্তুতি নিয়েছিল বলে ধারণা পুলিশের। চায়না টাউনের পাশে ও পুলিশের সাথে বিক্ষোভ বিরোধী সংঘর্ষ হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশ সার্ভিস বলেছে, শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিতে প্রায় দুই হাজার অফিসার মধ্য লন্ডনে মোতায়েন করা ছিল। এটি স্বাভাবিক সংখ্যার দ্বিগুণ। কারণ, বিক্ষোভটি আর্মিস্টিস ডের সঙ্গে মিলে গেছে।
আয়োজক সংগঠন স্টপ দ্য ওয়ার কোয়ালিশন জানায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাস ভাড়া করে মিছিলে অংশ নিয়েছে মানুষ। বাস কোম্পানিগুলো তাদের জানিয়েছে, বাসের সব টিকিট কাটা শেষ হয়ে গেছে।
লেবার দলের সাবেক প্রধান জেরমী করবিন সমাবেশে একাত্মতা ঘোষণা করেন এবং বক্তব্য রাখেন, সমাবেশের লোকজন তাকে জনগণের প্রধানমন্ত্রী ( পিপলস প্রাইম মিনিস্টার) বলে সম্বোধন করেন। ব্রিটিশ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি আপসানা বেগম সমাবেশে বক্তব্য রাখেন৷
গতকালের মিছিলের দিনটি ছিল ব্রিটেনের ঐতিহাসিক দিন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধবিরতি দিবস ১১ নভেম্বর। এদিন নিহত সেনাদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ফলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন, এদিন যেন মিছিল-সমাবেশের অনুমতি দেওয়া না হয়। কিন্তু পুলিশপ্রধান তাঁর আপত্তি উপেক্ষা করে বিক্ষোভের অনুমতি দিয়েছিলেন। ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে এক মাস ধরে প্রতি শনিবার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করে আসছেন ব্রিটেনের ফিলিস্তিনপন্থিরা।
এদিকে, গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় বিশ্বব্যাপী বাড়ছে ইহুদি-বিদ্বেষ। ফলে তারা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বিশ্বখ্যাত যুক্তরাজ্যের হার্ভার্ড, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ও পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ইসরায়েলবিরোধী স্লোগানের নিন্দার পাশাপাশি ইহুদি-বিদ্বেষ মোকাবিলায় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।