আবার অবরোধের বিকল্প হিসেবে হরতাল ছাড়া ভিন্ন কোনো জুতসই কর্মসূচি প্রস্তাব করতেও বলা হয়েছে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের। এখন পর্যন্ত দলের বেশির ভাগ নেতা ও বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলোর ডাকে তৃতীয় দফা অবরোধ শুরু হচ্ছে আজ বুধবার ভোর থেকে। ৪৮ ঘণ্টার এই অবরোধ শেষ হবে শুক্রবার ভোর ৬টায়।
জেলায় কর্মসূচি জোরদার করার উদ্যোগ
বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ সূত্রগুলো বলছে, জেলা পর্যায়ে কর্মসূচি জোরদার করতে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় গিয়ে কর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমন নির্দেশনা যাঁরা পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে অন্তত তিনজন কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাঁরা এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নোয়াখালী অঞ্চলের একজন নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁকে ঢাকা মহানগরের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নির্বাচনী এলাকায় যেতে বলা হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে তিনি তাঁর সংসদীয় এলাকায় গিয়ে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হবেন।
একই তথ্য জানিয়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের একজন সাবেক সংসদ সদস্যও। তিনি জানান, তাঁকে নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে আন্দোলন জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দলের এমন নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, অবরোধ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সারা দেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। এ কাজটি সফলভাবে করতে হলে জেলা পর্যায়ের আন্দোলন আরো তীব্র করতে হবে। অর্থাৎ জেলা পর্যায়ের সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করতে হবে। এখন এই বিষয়টির ওপর দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নজর দিচ্ছেন বেশি।
চলমান আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি, সফলতা-ঘাটতি নিয়ে প্রায় প্রতিদিন দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এসব বৈঠকে অংশ নেওয়া দলের নীতিনির্ধারকদের বিশ্লেষণ, সরকার তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে দেশকে নির্বাচনমুখী করার কৌশল নিয়েছে। জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনমুখী করতে পারলে আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়তে পারে বলে সরকার মনে করছে। পাল্টা কৌশল হিসেবে তফসিলকে কেন্দ্র করে আন্দোলন জোরদার করার পরিকল্পনা নিচ্ছে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকার মনে করছে তফসিল ঘোষণা হলে বিরোধী দল কাবু হয়ে পড়বে। এটা তাদের দুরাশা। আমরা বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের তফসিল ঘোষণার উদাহরণ অনেক দেখেছি। তফসিল ঘোষণার পরে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তিত হয়েছে, সেই উদাহরণও অনেক দেখেছি। শুধু তা-ই নয়, তফসিল ঘোষণার পরে যে নির্বাচন হওয়ার কথা তা বাতিল হওয়ার উদাহরণও আছে।’
অবরোধের উপযুক্ত বিকল্প এখনো পাওয়া যায়নি
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সাম্প্রতিক কয়েকটি বৈঠকে কর্মসূচির বিষয়ে মূল্যায়ন হচ্ছে, এখন পর্যন্ত অবরোধ ভালোভাবে পালিত হচ্ছে। বড় শহরগুলোয় মানুষের চলাচল বাড়লেও তা খুব বেশি হচ্ছে বলা যাবে না। মানুষ জীবন-জীবিকার তাগিদেই শুধু বাসা থেকে বের হচ্ছে।
তবে বিএনপি ও জোট শরিকদের কারো কারো আশঙ্কা, জ্যেষ্ঠ নেতাদের গ্রেপ্তার, দমন-নিপীড়নে অবরোধ অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে। তাই বিকল্প কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আসা উচিত। একই সঙ্গে বিএনপির দলীয় কার্যালয় খোলার দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত। তবে এক সপ্তাহেও উপযুক্ত বিকল্প কর্মসূচি খুঁজে পায়নি দলটি।
ঢাকা মহানগর বিএনপি, দলের অঙ্গসহযোগী সংগঠন ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের বেশির ভাগ নেতাই অবরোধের বিকল্প হিসেবে হরতালের পক্ষে মত দিচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের মধ্যেই থাকতে হবে। তফসিলের আগে-পরের দিনগুলো আন্দোলনের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বিএনপির আন্দোলনের শরিক গণতন্ত্র মঞ্চসহ কয়েকটি দল অবরোধের বিকল্প হিসেবে হরতালসহ কয়েকটি কর্মসূচির প্রস্তাব দিয়েছে। ঢাকায় অবস্থানসহ আরো কয়েকটি কর্মসূচি নিয়েও তারা ভাবছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যে ধারায় কর্মসূচি চলছে তা থেকে পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই। বর্তমান ধারার সঙ্গে মিলিয়ে আমরা কয়েকটি কর্মসূচির বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছি। আজ আমাদের মতামত বিএনপিকে জানাব।’
গত ২৮ অক্টোর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত হরতাল-অবরোধ মিলিয়ে ছয় দিনের কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নেতাকর্মীদের পথে পথে অবরোধ তৈরি করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে মহসড়কে অবরোধ তৈরি করুন।
(কালেরকন্ঠ থেকে নেয়া)