প্রেরিত বার্তা -
পনের অক্টোবর রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় “পূর্বাচল-দ্য ইস্টার্ন স্কাই” এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক আনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের পঁচিশ বছরের দীর্ঘ পথচলা উদযাপন করেছে। দুই শতাধিক দর্শকের উপস্থিতিতে নানা রঙ এর বাহার আর কলরবে সন্ধ্যাটি ছিল মনোমুগ্ধকর। সুন্দর পরিবেশে ভিন্ন ভাষাভাষি সহ সমাজের প্রতিষ্ঠিত কিছু ব্যক্তিদের উপস্থিতি আনন্দঘন মুহূর্তগুলোকে আরো আনন্দময় করে তোলে।
অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এইচএম লর্ড লেফটেনেন্ট অফ বেডফোর্ডশায়ার, সুজান লুসাডা ও তাঁর স্বামী সাইমন লুসাডা; সারাহ ওয়েন এমপি ফর লুটন নর্থ এন্ড শ্যাডো মিনিস্টার ফর লোকাল গভার্নমেন্ট, কমিউনিটিস এন্ড ফেইথ; রেইচেল হপকিন্স এমপি ফর লুটন সাউথ; কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইয়াকুব হানিফ, মেয়র অফ লুটন; কাউন্সিলর হেইজেল সিমন্স এমবিই, লিডার অফ লুটন বারা কাউন্সিল; কাউন্সিলর জাভেদ হুসেইন, ডেপুটী লিডার অফ দ্য কাউন্সিল এবং আরো অনেক কাউন্সিলর সহ বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ শিখরে নিজের সংস্কৃতিকে পৌঁছানোর যে যাত্রা পূর্বাচল শুরু করেছিল ২৫ বছর আগে, আজ রজত জয়ন্তী সেলিব্রেশনের শুরুতে পূর্বাচলের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ডক্টর আনোয়ারুল হকের উদ্দীপনামূলক লেখা গান সমবেত কণ্ঠে গেয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন পূর্বাচলের এক ঝাঁক পাখি। “এক ঝাঁক পাখি উড়ে এলো আকাশে” – এটিই ছিল পূর্বাচলের সূচনা সঙ্গীত (থিম সং)। এ গানে মনোমুগ্ধকর সুরের সৃষ্টি করেন কলকাতার বিখ্যাত সুরকার ও সংগীত শিল্পী সৌম্যেন অধিকারী। গানের কথায় শব্দ চয়নের মুন্সিয়ানা আপ্লুত করেছিল শিল্পীরা সহ অন্যান্য সদস্যদের। এই গানের মাধ্যমে পূর্বাচলের প্রতি তাদের ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়েছিল উপস্থিত সকলের মধ্যে।
সূচনা সঙ্গীতের পরই পূর্বাচলের চেয়ার ডক্টর নাজিয়া খানম ওবিই ডিএল উপস্থিত সুধীবৃন্দকে স্বাদর আমন্ত্রণ জানান এবং এইচএম লর্ড লেফটেনেন্ট অফ বেডফোর্ডশায়ার, সুজান লুসাডাকে স্টেজে আহ্বান করেন। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন ডক্টর আনোয়ারুল হক এবং সাহনাজ সাদ। তাঁদের সাবলীল উপস্থাপনা ছিল অনুষ্ঠানের প্রাণ।
পঁচিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন সম্বলিত ম্যাগাজিন প্রকাশ করে পূর্বাচল, যেটি অনুষ্ঠানে আগত সবাইকেই প্রদান করা হয়। এই বইতে ধরে রাখা হয়েছে পূর্বাচলের বিগত ২৫ বছরের নানা কর্মকাণ্ডের কিছু ঐতিহাসিক দলিল। মনের মাধুরী মিশিয়ে বছরের পর বছর পূর্বাচল বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও কৃষ্টি যা এই প্রবাসে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন, এই ম্যাগাজিনে আছে তারই কিছু সংরক্ষিত প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশ নিয়ে নিজেদের অনুভুতি ছোট ছোট কবিতার মধ্য দিয়ে ক্ষুদে কবিরা সূক্ষ্মভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তাদের লেখা কবিতায়। বাংলাদেশ নিয়ে নিজেদের লেখা কবিতা স্বকন্ঠে পাঠ করে তাদের অনুভুতি প্রকাশ করার সুযোগ পেয়ে গর্বে বুক ভরে উঠেছে ওদের আর তার রেশ ছড়িয়েছে ভিন্ন ভাষাভাষি অতিথিদের মাঝে, হয়েছে প্রশংসিত।
পূর্বাচলের পথ চলা শুরু হয় ১৯৯৮ সালে রমাদান উপলক্ষে এক মাস ব্যাপী রেডিও অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে। ডক্টর নাজিয়া খানম ওবিই ডিএল এর ডাকে সেদিন এক ঝাঁক পাখি যে পথচলা শুরু করেছিল, হাঁটি হাঁটি পা পা করে সেই শিশু আজ ২৫ বছরের যুবক। অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রেমিক পূর্বাচল সদস্যদের স্মৃতিচারণে পূর্বাচলের প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এবং প্রকাশ পেয়েছে কৃতজ্ঞতাবোধের। এই প্রবাসে পূর্বাচল তৈরী করেছে অনেক গুনী শিল্পী, তৈরী হয়েছে, কণ্ঠশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, লেখক, কবি, অভিনেতা, আবৃত্তিকার ও গীতিকার।
সুদুর কোলকাতা থেকে আগত জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী সৌম্যেন অধিকারী সহ স্থানীয় বাংলাদেশী শিল্পী সাজেদা কামাল শেফালি, নেসমিনা পারভিন নওরিন, জি এইচ রাসেল এবং ঢাকা থেকে আগত পরমেশ বড়ুয়ার গাওয়া গান অতিথিদের প্রাণমন ছুঁয়ে যায়। এসব গানে সৌম্যেন অধিকারীর বাজানো হারমোনিয়ামের পাশাপাশি তবলায় ঝড় তুলেছিলে লন্ডনের বিশিষ্ট তবলা বাদক পিয়াস বড়ুয়া। অবশেষে ডক্টর নাজিয়া খানম সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে নাচ গানের আনন্দে ভরা এই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন।