সুমন দেবনাথ-
মাত্র এক সপ্তাহ আগে ও ব্রিটেনের মানুষ এই নামের সাথে পরিচিত ছিল না। বাংলাদেশি গণমাধ্যমের লোকজন ও কেউ জানতেন না কিছুই। কিন্ত হঠাৎ করেই বাংলাদেশি এই তরুণকে নিয়ে পুরো ব্রিটেন জুড়েই চলছে তোলপাড়। যুক্তরাজ্যের সরকারী দল কনজার্ভেটিভ পার্টি থেকে লন্ডনের মেয়র নির্বাচনে মনোনয়ন দৌড়ে উঠে এসেছে তাঁর নাম। দলের বাঘা বাঘা সব প্রতিযোগীকে পিছনে ফেলে শেষ তিনে এসে পৌঁছেছেন মোজাম্মেল।
ব্রিটেনের মূল ধারার গণমাধ্যম গুলো তাঁকে নিয়ে ছাপছে বিশাল বিশাল সব প্রতিবেদন।
বাংলাদেশের বরিশালের এক অজপাড়াগাঁতে জন্ম ও বড় হওয়া মোজাম্মেলের। তিনি নিজেই ব্রিটিশ গণমাধ্যমেকে জানিয়েছেন, ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁর একজোড়া জুতো ছিল না। ৮ ভাই বোনের সাথে এক মাটির ঘরে ছিল তার বসবাস। ২১ বছর বয়সে তিনি লন্ডনে পড়তে আসেন, সেটা ছিল তাঁর জীবনের প্রথক বিমান ভ্রমণ।
গত মঙ্গলবার (১৩ জুন) লন্ডনের আসন্ন মেয়র নির্বাচনে সম্ভাব্য তিনজন প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করেন টোরি পার্টির নীতিনির্ধারকরা। সংক্ষিপ্ত সেই তালিকায় মোজাম্মেল হোসেনের নাম রয়েছে। বাকি দুজন হলেন কনজারভেটিভ পার্টির আইনপ্রণেতা সুসান হল এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা ও প্রযুক্তি ব্যবসায়ী ড্যানিয়েল করস্কি।আর এই নাম ঘোষণার মধ্য দিয়েই আলোচনায় আসেন মোজাম্মেল।
মোজাম্মেল হোসেন ১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সে ব্রিটেনে আসেন। আইন বিষয়ে লেখাপড়া করেন লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০১ সালে বার এট ল ডিগ্রি অর্জন করা এই পেশাদার আইনজীবী ২০১৯ সালে ব্রিটেনের কুইনস কনসাল নিযুক্ত হন। কুইনস কনসাল হলো যারা ব্রিটেনের রাজপরিবারের আইনী সহায়তা করে থাকেন । এখন কিং কনসাল (কে সি) হিসাবে নিযুক্ত আছেন। এবং তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি আইনজীবি যিনি কে সি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে আরো তিনজন বাঙালি কুইনস কনসাল হিসাবে নিয়োগ লাভ করেছেন বলে জানা গেছে । তাঁরা হলেন আখলাকুর রহমান, আজমালুল হক এবং মিস তরফদার।
মোজাম্মেল হোসেন বলেন, লন্ডন শহর আমাকে তৈরি করেছে, প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। আমার যা কিছু আছে, সব এই লন্ডন শহর থেকে পেয়েছি। লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হলে লন্ডনকে নিরাপদ ও জনবান্ধব নগরী হিসেবে বিনির্মাণ করতে চাই।কনজার্ভেটিভ পার্টি থেকে চুড়ান্ত মনোনয়ন পেলে দুইবারের মেয়র পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাদিক খানের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি।৮ বছর পর পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ মেয়র সাদিক খানকে যেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে প্রস্তুত তিনি।
মেয়র হলে ছুরিকাঘাত জনিত অপরাধ দমনে বিশেষ কাজ করবেন। সাদিক খানের বিতর্কিত ইউনেজ বাতিল করবেন। একইসঙ্গে পুরো শহরে লাখ লাখ গাছ লাগাবেন। গাছ লাগানোর মাধ্যমেই লন্ডনের দূষণ মোকাবিলা করবেন বলে জানান তিনি।
মোজাম্মেল খুব দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, তিনি লন্ডনের মূল্যবোধে তৈরি একজন মানুষ। এই শহরের প্রতি কৃতজ্ঞ তিনি। এই শহর তাকে সব দিয়েছে। শহরকে নিরাপদ করার জন্য যা যা প্রয়োজন, তাই সর্বস্ব দিয়ে করবেন।
তিনি মনে করেন, ২০ বছর আগে তিনি যে সুযোগ পেয়েছেন, পূর্ব লন্ডনের অনেক ছেলে সেই সুযোগ পায় না। তিনি সেই সুযোগ তৈরি করতে চান। তার দীর্ঘ ক্রিমিনাল আইনপেশায় জড়িত থাকার কারণে তিনি খুবই আত্মবিশ্বাসী যে, লন্ডনের নিরাপত্তা তিনিই ফিরিয়ে আনতে পারবেন। সাদিক খানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সে কখনোই কোনো ঘটনার জন্য দায়িত্ব বা দায় নিতে চায় না।
মোজাম্মেল বলেন, তিনি খুবই হতাশ হয়েছিলেন, যেদিন জেলে থাকা ১৮ বছরের এক যুবক বলেছিল, সারা জীবন সে যে স্থিতিশীলতা খুঁজেছে, সেটা জেলের মধ্যেই সে পেয়েছে। দেশের তরুণদের মধ্যে কোনো আশা নেই। তিনি ব্রিটিশ তরুণ ও কিশোরদের মধ্যে আশার আলো হয়ে থাকতে চান, সেটা ইতিমধ্যেই তার জীবন সংগ্রাম, উঠে আসার গল্পের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে।