ব্রিকলন নিউজ:
ষাটের দশকের কিংবদন্তী ছাত্রনেতা, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-কমিউনিষ্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর অন্যতম শীর্ষ সংগঠক, ঐক্য ন্যাপ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা পংকজ ভট্টাচার্য ছিলেন বাঙালির জাতি রাষ্ট্র প্রতিস্টা আন্দোলনের অন্যতম কুশীলব। স্বাধীনতার স্বর্ণদ্বীপে বিজয়ের পতাকা উত্তোলনে তাঁর অবদান ইতিহাসের স্বর্ণ অধ্যায়।
সোমবার, ১২ই জুন পংকজ ভট্টাচার্য স্মরণে লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক নাগরিক শোকসভায় বক্তারা উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
সোমবার বিকেলে পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে নাগরিক শোকসভা আয়োজক কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত শোকসভায় বক্তারা বলেন, মানুষের কল্যাণে মুক্তির স্বপ্নবহ যে-লড়াই পংকজ ভট্টাচার্য সূচনা করেছিলেন যৌবনের প্রারম্ভে, আশি বছর পেরিয়েও দেহান্তরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সেই লড়াই তাঁর অব্যাহত ছিল নানাভাবে নানা বিস্তারে।
নাগরিক শোক সভা কমিটির আহবায়ক ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত সংগ্রহের লক্ষ্যে বিলেতে গঠিত প্রথম সংগঠন কাউন্সিল ফর দ্যা পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ, ইউকে’র সাধারণ সম্পাদক হাবিব রহমানের সভাপতিত্বে ও কমিটির দুই সমন্বয়ক সাংবাদিক ও সাবেক ছাত্রনেতা সৈয়দ আনাস পাশা এবং ৮০র দশকের সাবেক ছাত্রনেতা সৈয়দ ইকবালের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত নাগরিক শোক সভায় মূল বক্তব্য রাখেন, ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শীর্ষ সংগঠক, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সভাপতি সুলতান শরীফ। বিশেষ বক্তা হিসেবে ছিলেন, পংকজ ভট্টাচার্যের এক সময়ের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা, সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি, বিলেতে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মাহমুদ এ রউফ, ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলনে ঢাকার উত্তাল রাজপথে পংকজ ভট্টাচার্যের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ড. আশফাক উদ্দিন আহমেদ ও বিবিসি বাংলার প্রাক্তন সাংবাদিক উদয় শংকর দাস। বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন ও সিপিবি নেতা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সৈয়দ রকিব, যুক্তরাজ্য জাসদ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশীদ, নাগরিক শোকসভা কমিটি উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, লেখক, সাংবাদিক হামিদ মোহাম্মদ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী, সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যুক্তরাজ্য শাখার সাবেক সভাপতি সৈয়দ এনামুল ইসলাম, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির যুক্তরাজ্য শাখার সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য সাংবাদিক জুয়েল রাজ ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আমান উদ্দিন। আলোচনা পর্বের ফাকে ফাকে সংগীত পরিবেশন ও কবিতা আবৃত্তি করেন বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রাক্তন মিনিষ্টার কাউন্সিলার শ্যামল কান্তি চৌধুরী, শিক্ষক মোস্তফা কামাল মিলন, সৈয়দা তামান্না ও শাহাব আহমেদ বাচ্চু।
পংকজ ভট্টাচার্যের রাজনৈতিক জীবনের আলোকে শাহাব আহমেদ বাচ্চু নির্মিত ও মুনিরা পারভীনের ধারা বর্ণনায় একটি ডকুমেন্টারী প্রদর্শনের মাধ্যমে শুরু হওয়া নাগরিক শোকসভার শুরুতেই পংকজ ভট্টাচার্যসহ সম্প্রতি পরলোকগত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানো হয় বাঙালির অহংকার প্রজন্মের সৎ ও দেশ প্রেমিক রাজনীতিক পংকজ ভট্টাচার্যের প্রতি।
বক্তারা বলেন, অসাম্প্রদায়িক, সমতাভিত্তিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা পঙ্কজ ভট্টাচার্য নিজ বিশ্বাস ও আস্থায় অবিচল থেকে সারাদেশের মানুষকে সংগঠিক করার কাজে আজীবন নিবেদিত ছিলেন। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন বলিষ্ট কণ্ঠস্বর ও সংগঠক।
অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানতে গিয়ে নাগরিক শোক সভা কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, জীবনসাথী রাখী দাশ পুরকায়স্থের আকস্মিক ও অকালপ্রয়াণ পংকজ ভট্টাচার্যের শেষ জীবনে ছিল বড় এক আঘাত। করোনা-কালে সীমান্তবর্তী গৌহাটি শহরে প্রয়াণের পর দেশের মাটিতে রাখী দাশ পুরকায়স্থের সৎকার হতে পারেনি। বেদনা ও প্রত্যয়ের সঙ্গে পঙ্কজ ভট্টাচার্য লিখেছিলেন, তাঁর চিতাভস্ম ও দেহাস্থি ব্রহ্মপুত্র নদে ভাসিয়ে দিলাম এই প্রত্যাশায় যে তা’ পলি হয়ে বাংলাদেশের জল ও মাটিতে মিশে থাকবে।
পঙ্কজ ভট্টাচার্যের প্রয়াণে তাঁরই ধ্বনির প্রতিধ্বনি করে আমরা বলতে পারি, তাঁর দেহভস্ম মিশে গেছে বাংলার মাটিতে, যে মাটি অক্ষয় ও অমর, এই মাটির কোলে চির আশ্রয় পেয়েছেন তিনি, তাঁর জীবনসাধনা দ্বারা অর্জন করেছেন চিরজীবীতের সম্মান।