জি ২০ সম্মেলন, ভারত বাংলাদেশ চাওয়া পাওয়া

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
জুয়েল রাজ: 
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  সম্প্রতি ত্রিদেশীয় সফর বাংলাদেশের রাজনীতিতে সর্বোচ্চ চর্চিত বিষয়।  জাপান,  যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং আগামী নির্বাচন ঘিরে এই সফর নিয়ে রাজনীতির মাঠ, টেলিভিশনের পর্দা পত্রিকার পাতা সব জায়গায় ব্যাপক আলোচনা চলছে। সেই আলোচনার আগুনে  ঘি ঢেলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের  বাংলাদেশি কূটনৈতিকের  নিরাপত্তা ব্যবস্থা শিথিল করার ঘোষণা।  আর এর সবকিছুই আলোচিত হওয়ার মূল কারণ আগামী জাতীয় নির্বাচন। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্ব কূটনৈতিক  সম্পর্কে  বিভিন্ন মেরুকরণ  ঘটছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী  আমেরিকার মত ক্ষমতাবান রাষ্ট্রের বিরূদ্ধে সরাসরি  কথা বলছেন। দিনদিন সেই বিষয়গুলো আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।
নতুন মেরুকরণে রাশিয়া চায়না বলয় কে বাংলাদেশ হয়ত বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে।
এর বাইরে আমরা যতোই অস্বীকার করি ভারত কে বাংলাদেশ অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। তেমনি বাংলাদেশকে ও ভারতের অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। যে দলই রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকুক,  ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কের মেরুকরণ সব সময় ভীন্ন হয়। ভৌগলিক কারণ ও সেখানে একটি বড় ভূমিকা রাখে হয়তো।
আগামী সেপ্টেম্বরে  ভারতে অনুষ্ঠিত  হতে যাচ্ছে ১৮ তম জি ২০ সম্মেলন।  বিশ্বের ১৯টি ধনী দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বয়ে জি-২০ গঠিত। সদস্য দেশগুলো হলোচনের আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিলনমন, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র। আঞ্চলিক সংস্থা হিসাবে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সেই জোটে বাংলাদেশ নেই। তবুও জি ২০ সম্মেলনে বাংলাদেশ থাকছে।
প্রথা অনুযায়ী, এ সংগঠনের সভাপতি বেশ কিছু দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাকে বিভিন্ন বৈঠক ও শীর্ষ পর্যায়ের সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায়। বাংলাদেশ, মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সভাপতি হিসেবে ভারত অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। দক্ষিন এশিয়ার একমাত্র দেশ বাংলাদেশে যাকে ভারত সেখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এই আমন্ত্রণ বাংলাদেশের জন্য এবং প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনার জন্য অবশ্যই সম্মানের।
ভারত সভাপতি হিসাবে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী বাংলাদেশকে ২০২৩ সালের জি-২০ প্রক্রিয়ায় আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এটা বাংলাদেশকে আজকের দিনের বড় ইস্যুগুলো, সেটা খাদ্য এবং জ্বালানি নিরাপত্তা কিংবা পরিবেশের জন্য জীবনযাত্রা কিংবা নারীর নেতৃত্বে উন্নয়ন, সব ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ হওয়ার এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।
শুধু তাই নয়,  এই জি ২০ সম্নেলনই  ভারতের  প্রধানমন্ত্রী  নরেন্দ্র মোদি ও  বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনার  সরকার প্রধান হিসাবে এই সরকারের শেষ আনুষ্ঠানিক  বৈঠক।  তাই দুই দেশেরই বেশ কিছু ইস্যু সেখানে  গুরুত্ব পাবে। বিশেষ করে  দুই দেশের নির্বাচনেই সেই বৈঠক   প্রভাব  ফেলবে।  পশ্চিমী চাপে ভারত কে পাশে চায় বাংলাদেশ শিরোনামে গত ১০ মে আনন্দ বাজার একটি প্রতিবেদন  প্রকাশ করেছে।  সেখানে উল্লেখ করেছে
,সেপেটেম্বরে  প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফর ঘিরে বাংলাদেশ আসলে কি চাইছে ভারতের কাছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে ইইউ, ব্রিটেন, জাপান বাংলাদেশের গত বারের নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে সমালোচনা করছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ চাইছে, বন্ধু দেশ হিসাবে ভারত কূটনৈতিক ভাবে ওই দেশগুলির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলুক। ঢাকার বক্তব্য, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নেতৃত্ব ভারতের হাতে, তাই পশ্চিমের কাছে নয়াদিল্লির বক্তব্যের গুরুত্ব রয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে  পাকিস্তান  আগেই এই সম্মেলন কে বয়কট করেছে, সর্বশেষ  ১৯ মে  চীন জি ২০ সম্মেলন বয়কট করেছে, কারণ হিসাবে কাশ্মীরে জি ২০ সম্মেলন আয়োজন কে উল্লেখ করেছে দুই দেশ,  তাদের বক্তব্য হচ্ছে। হিমালয়ের নিকটে অবস্থিত কাশ্মির, ভারত এর অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করে এবং বাকি অর্ধেক পাকিস্তানের অধীনে।যদিও উভয় দেশই পুরো কাশ্মিরকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মির নিয়ে তিনবার লড়াই করেছে। কিন্ত মোদী সরকার  পাকিস্তান  চীনকে পাত্তা না দিয়েই এই সম্মেলন কাশ্মীরে সম্পন্ন করবেন। এর ফলে আন্তর্জাতিক ভাবে কাশ্মীর নিয়ে এবং আর্টিকেল ৩০৭ নিয়ে আর কোন সমালোচনা  থাকবে না। এই একটিমাত্র ইস্যু মোদী সরকারের আগাম নির্বাচনে ভারতে  বাজির তাস হবে। এই বাজি খেলেই বাজিমাত করতে চাইছেন মোদি। আর সেখানে প্রতিবশী বন্ধু রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে পাশে চাইছে।
কিন্ত শেখ হাসিনা কি শুধু দূতায়ালী সাহায্যই চাইবেন ভারতের কাছে? তা মনে হয় না।  ভারতের সাথে যে ইস্যুগুলো বহুল আলোচিত  তার মধ্যে রয়েছে সীমান্ত-হত্যা,   ও তিস্তার  পানির হিস্যা।  যদি ও তীরে এসে তরী ডুবার মত করে তিস্তা ইস্যুটি পশ্চিমবাংলায় মুখ্যমন্ত্রী   মমতা ব্যানার্জীর এক তরফা বিরোধীতার কারণে আর চুড়ান্ত আলোর মুখ দেখেনা।
ভারত বাংলাদেশের সম্পর্কের সমীকরণ বড় অদ্ভুত। রাষ্ট্র এবং সরকারের দেন দরবার লেনাদেনা  চলে এক পথ ধরে, আর সাধারণ মানুষের আবেগ চলে আরেক পথ ধরে। ভারত নিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ  মানুষের ভিতর এক ধরণের নেতিবাচক  মনোভাব কাজ করে। বিশেষ করে  ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকেই নানা রকম ভাবে প্রচার প্রপাগাণ্ডা  চলে আসছে, ভারত বাংলাদেশকে গ্রাস করতে চায়। আওয়ামী লীগ দেশটাকে প্রতিদিন একবার করে ভারতের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে৷ দেশটাকে শেষ করে দিছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশ ভারত নিয়ে যাবে। অথচ   ভারতীয় ভিসার জন্য প্রতিদিন মাইলের পর মাইল মানুষ লাইন ধরছে। চিকিৎসা,  ভ্রমণ  এমন কি ঈদ, পূজা  বিয়ের শপিং করতে লোকজনা ভারতে দৌঁড়ায়।এই সমীকরণ মেলানো কঠিন। ভারত কে বয়কট করার কথা কেউ ভাবতে পারে না। আর বাস্তবতাও তাই। কারণ আওয়ামী লীগ বিরোধীদের সবচেয়ে বড় বিদ্বেষ হচ্ছে ভারত বিদ্বেষ। আর উদাহরণ  হিসাবে বারবার এই মানুষ হত্যা আর নদীর পানির বিষয়টি সামনে চলে আসে। এই  ভারত বিরোধিতা মোকাবেলায় ভারতকে সেই দুইটি বিষয়ের  নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে হবে।
সীমান্তে মানুষ হত্যা এবং তিস্তার পানির ইস্যু সমস্যার সমাধান ও আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য বাজির তাস হবে।জি ২০ সম্মেলন শেখ হাসিনার জন্য তুরুপের শেষ তাস হবে কারণ, চলতি সময়ে পশ্চিমা বিশ্বের বাংলাদেশ ভাবনা নিয়ে যত আলোচনা হচ্ছে সেসব আলোচায় পানি ঢালতে  এই জি ২০ সম্মেলন বিরাট ভূমিকা রাখবে। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা   এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না।  আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে প্রায় সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান সেই সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। ভারত শেখ হাসিনাকে সেখানে সম্মানিত করে সেই দরজাটা খোলে দিয়েছে।
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০