সিলেটে আরিফুল হকের রেড  সিগন্যাল গ্রীন সিগন্যাল  থিয়োরি – 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
জুয়েল রাজ- 

 

অনেক জল ঘোলা করে,  ঢাকঢোল  পিটিয়ে সর্বশেষ সিলেট সিটি কর্পোরেশনের  বর্তমান মেয়র   বিএনপি’র নেতা আরিফুল হক চৌধুরী ২০ মে  সিলেটে সমাবেশ করে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি আর নির্বাচন করবনে না। তিনি মোটা দাগে যে অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন বর্জন করেছেন সেই অভিযোগ গুলো হল, নির্বাচনের পরিবেশ নেই,  ইভিএম ভোটের প্রতি অনাস্থা , দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার – হয়রানির অভিযোগ।

সর্বোপরি দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়ে  নির্বাচন থেকে  বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।   আরিফুল হক নির্বাচন করবেন না, সেটি গত ২ এপ্রিল যখন তিনি লন্ডনে এসেছিলেন তখনই নির্ধারিত হয়ে যায়। ২ এপ্রিল লন্ডনে এসে তিনি প্রায় ১৫ দিন লন্ডনে অবস্থান করেন।  আর তখনই গল্পের গরু আকাশে উড়ার মত অবস্থা শুরু হয়। একবার তিনি নির্বাচন করবেন,  আরেকবার তিনি নির্বাচন করবেন না। একবার বিএনপি ছাড়ছেন আরেক বার বিএনপি তাঁকে বহিস্কার করছে নানা আলোচনা ছিল দেশে বিদেশে। জনাব আরিফুল হক চৌধুরী  কিংবা  তাঁর নেতা তারেক  রহমান টু শব্দটি করেন নি। লন্ডন ছাড়ার আগে এক ইফতার পার্টিতে তারেক রহমান সহ তিনি আমিন্ত্রত হয়েছিলেন  সেখানেই প্রথম উল্লেখ করেন, ‘আমার নেতা আমাকে একটি সিগন্যাল দিয়েছেন। সেটি গ্রীন  না রেড তা সময়মতো সবাই জানবেন।’ এরপর দেশে ফিরেও তিনি একই কথা বলেন। এরপর একের পর এক অভিযোগ তুলতে শুরু করেন। কিন্ত নির্বাচন কেন্দ্রিক কোন প্রচারণা, জনসংযোগ  সভা সমতি কিছুই করেন নি। সিগন্যাল আসলে কি ছিল? সিলেটে তাঁর   জনপ্রিয়তার  হিসাব নিকাশ দেখিয়ে   ভোটে দাঁড়াতে,  লন্ডন থেকে গ্রিন সিগন্যাল চেয়েছিলেন তিনি। কিন্ত আরিফুল হককে  স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে- ভোটে দাঁড়ালেই রেড সিগন্যাল! কারণ আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোন নির্বাচনেই  যাবে না বিএনপি। এটা একদম পরিস্কার বলে দিয়েছিলেন তারেক রহমান । তাই যারা  বিদ্রোহী হয়ে ভোটে দাঁড়াচ্ছে তাদেরকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিস্কার করা হচ্ছে। মূলত এই রেড সিগন্যাল  নিয়েই দেশে ফিরেছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী ।

এবং সাক্ষাতের এই সুযোগে বিএন পির রাজনীতির  মাঠের  চমক জনাব আরিফ,  তাঁর নেতা তারেক রহমানের সাথে ও রাজনৈতিক বাজি খেলে নিয়েছেন। তিনি  নিজের জনপ্রিয়তার  ইতিহাস  পূঁজি করে,  সেই বাজি জিতে আসেন। জাতীয় নির্বাচনে তাঁকে নমিনেশন দিতে হবে, এবং কেন্দ্রীয় বিএনপিতে সহ সভাপতি পদ দিতে হবে। তারেক রহমান বলেছেন সময় হলে দেখবেন। মানে দুইটি বাকী আশ্বাস  নিয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

 

তাহলে দীর্ঘ এক মাস এতো নাটকীয়তা কেন।  কোন গ্রীন সিগন্যাল এর জন্য? তিনি তো এসেই ঘোষণা দিতে পারতেন দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে আমি নির্বাচন করব না। কিন্তু তিনি তা না করে, বিগত  একমাস নির্বাচনী মাঠ জরীপ  করেছেন, তিনি কতটা ঝুঁকি নিবেন।

 দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন গাজীপুর সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় গত ১৬ মে ২৯ জন নেতাকর্মীকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিএনপি। সিলেটে ২৫ জনের তালিকা গেছে কেন্দ্রে তো এইসব হিসাব নিকাষ তো ছিলই, সাথে,  তিনি  যে দুইবার নির্বাচিত হয়েছিলেন যতোটা না বিএনপির ভোটে, তার চেয়ে বেশী আওয়ামী লীগের কোন্দলে। কারণ দুই নির্বাচনের ভোটেই আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর পাশ করেছেন কিন্ত  একই সেন্টারে মেয়র পাশ করেন নি। আরিফুল হক এখনো সিলেটে  প্রয়াত বদর উদ্দিন কামরানের চেয়ে বেশী জনপ্রিয় নেতা নন। কিন্ত সেই  কামরানই দুই  দুইবার পরাজিত  হয়েছেন আরিফুল হকের কাছে। আরিফুল হক হয়ত এবারও দলীয়   রেড সিগন্যাল অমান্য করেই ঝুঁকি নিতেন, কিন্ত বিএনপি তাঁকে বহিস্কার করলে  যে সমস্যা, কোন নেতা কর্মীকে আর  প্রচার প্রচারণায় পাবেন না। সব সেন্টারে এজেন্ট দেয়ার মানুষ ও খুঁজে পাবেন না। আভ্যন্তরীণ দলীয় রাজিনীতিতে কোণঠাসা আরিফ।  স্থানীয় নেতারা তাঁকে পছন্দ করেন না  আবার নেতাদের বিরোধীতার মুখে ও মেয়র নির্বাচিত হওয়াতে কর্মীদের কাছে তিনি আস্থার জায়গা তৈরী করেছেন। তেমনি দলীয় কর্মী হত্যা,র অভিযোগে ও দলের একটা অংশ তার বিরোধী আছে। তাই  সব মিলিয়ে বিএনপির নিজেদের  ঘরে আরিফুল হকের  এক হিসাব,  আবার আওয়ামী লীগের ঘরে তাঁর হিসাব ভীন্ন। প্রথমত প্রবাসী প্রার্থী হিসাবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে কেমন প্রভাব পড়ে তা তিনি অবলোকন করেছেন, বুঝতে চেষ্টা করেছেন।  হাওয়া কোনদিকে বহে। আর সেই হাওয়াতে তিনি বুঝে গেছেন,  এবার আর আওয়ামী লীগকে পাশে পাচ্ছেন না আরিফ,  মূলত আওয়ামী লীগের  এই রেড সিগিন্যালেই তিনি আটকে গেছেন। আর সেই রেড সিগিন্যালটি হচ্ছে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

 কারণ গত দুই নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতাকে দেখা যায়নি দলীয় প্রার্থীর প্রচারে। নীরব থেকে তারা বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষে কাজ করেছেন বলে  বাজারে প্রচলিত ছিল।  আর ভোটের মাঠের হিসাব ও তাই বলে। সব বড় বড় নেতাদের সেন্টারে নৌকার ভরাডুবি হয়েছিল। মূল গ্রীন সিগন্যাল টি আওয়ামী লীগ থেকে পাননি বলেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আরিফুল হক। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় রেকর্ড ভোটে  সিলেটে মেয়র নির্বাচিত  হয়েছিলেন বদর উদ্দীন কামরান।  বড় ধরনের কোন অভিযোগ ছাড়াই সেই একই প্রার্থী সরকারী দলের প্রার্থী হিসাবে পরাজিত হয়েছিলেন প্রয়াত এই নেতা। অভিযোগের তীর ছিল দলের নেতাদের দিকে।

কিন্ত আনোয়ারুজ্জামান প্রার্থী হওয়াতে, জনাব আরিফের হিসাব নিকাশ উলঠ পালট হয়ে গেছে। তিনি যে আওয়ামী লীগের নৌকায় পা দিয়ে নির্বাচনী  বৈতরণী  পাড় হয়েছেন  সেই সুযোগ এবার  হচ্ছে না।  এখন দলের প্রতি শ্রদ্ধা,  লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, ইত্যাদি অজুহাতে রেড সিগিন্যালে আটকা পড়ে গেছেন আরিফ। ইতিহাস আপন গতিতে চলে,তাই রাজনীতিতে  আরিফের ফিরে আসা কিভাবে হবে সেটি আগামীর গ্রীন সিগন্যাল  বলে দেবে।

 

লেখক – সম্পাদক – ব্রিকলেন নিউজ, যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি, দৈনিক কালের কন্ঠ।

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০