শৈলেন কুমার দাশ, কেলগেরী:
আজ ২৬শে মার্চ, ২০২৩ ভোরের আলোয় কনক রঙে যখন সেজে উঠেছিল কানাডার অপূর্ব সুন্দর নগরী কেলগেরী। আর তখনই কেলগীর ঐতিহ্যবাহী সিটি হল প্রাঙ্গনের পরিশীলিত আয়োজনের ছোঁয়ায় সেজে উঠেছিল আমাদের ৫২তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের আয়োজন। আমাদের প্রিয় স্বাধীনতার অনেক স্মৃতিময় বর্ণালী, বেদনার আয়োজনে সাজানো ছিল পুরো অনুষ্ঠানটি। সুন্দর পরিকল্পিত এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ কম্যুনিটির অন্যতম সংগঠন Bangladeshi Society of Calgary (BSC)। অগণিত মানুষের মিলন মেলায় স্বাধীনতার অগ্নিঝরা দিনের স্মৃতিচারণের আসরে পরিণত হয় পুরো অনুষ্ঠানটি। নগরীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাংলাদেশ কম্যুনিটির সদস্য ও নেতৃবৃন্দ দলে দলে অনুষ্ঠান স্হলে উপস্হিত হন। সেজে উঠে লাল সবুজের পতাকা, ব্যানার ও ফেস্টুনে সিটি হল প্লাজা। শিশু, কিশোর, নারীদের লাল সবুজে সাজানো পোষাক অনুষ্ঠান চত্তরকে আকর্ষনীয় করে তোলে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথি সিটি মেয়র Jyoti Gondek ও প্রধান অতিথি মুক্তিযোদ্ধা মেজর মইনুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সিটি প্লাজা প্রাঙ্গনে। তখন অগণিত মানুষের করতালিতে মূখরিত হয় অনুষ্ঠান স্হল। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ড. আহমেদ আল- ইমরান, ডিরেক্টর, বাংলাদেশী সোসাইটি অফ কেলগেরী, নাসরীন আখতার, হৃদয়ে বাংলাদেশ, জ্যোতি গনডেক, মেয়র, কেলগেরী সিটি, এক্স মেজর মইনুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম ব্যাচের কমিশন প্রাপ্ত অফিসার, বাংলাদেশ আর্মি, ইরফান সাবির, এমএলএ, আলবারটা ও রাজ ধালিওয়াল, কাউন্সিলর, ৫নং ওয়ার্ড, কেলগেরী সিটি।
ড. আহমেদ আল ইমরান ও নাসরীন আখতার তাঁদের বক্তব্যে দীর্ঘ নয় মাসের পাক হানাদারের বিরুদ্ধে এক সাগর রক্তের ও কঠোর সংগ্রামে বিনিময়ের অর্জিত আমাদের মহান স্বাধীনতা অর্জনের কথা অন্তর দিয়ে বর্ণনা করেন। প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর মইনুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গনের দুঃসহ স্মৃতি উল্ল্যেখ করে বলেন বহু ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। মেয়র জ্যোতি গনডেক বলেন আমি আজ এই অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত হতে পেরে নিজেকে খুব গর্বিত অনুভব করছি। বাংলাদেশের মানুষকে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাঁদের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ১৯৭১ সালে। স্বাধীনতা আন্দোলনের অনুভূতির সাথে আমিও আজ একাত্ম হয়ে গেছি। তিনি আরো বলেন কেলগেরীতে বাংলাদেশ কম্যুনিটির প্রায় পনর হাজার সদস্য আগামীতে বাংলাদেশ ও কানাডার উন্নয়নে আরো কার্যকরী ভূমিকা রাখবেন বলে আমার বিশ্বাস। এমএলএ ইরফান সাবির তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমি পূর্ণ সহানুভূতি প্রকাশ করছি বাংলাদেশের আপামর মানুষের প্রতি যারা ১৯৭১ সালে শেখ মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বিরাট এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করে। কাউন্সিলর রাজ ধালিওয়াল বলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের সাথে আমিও একাত্ব। শেখ মুজিবুর রহমানের নৃতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এক বিশাল অর্জন বাংলাদেশের মানুষের। শেখ মজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষনের একটি।
পরে মনোমুগ্ধকর এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনেক আয়োজনে সাজানো ছিল যেখানে মুক্তিযোদ্ধের গান, কবিতা, স্মৃতিচারণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের তাঁদের প্রিয়জনদের রনাঙ্গন থেকে লেখা পত্রাবলী পাঠ স্হান পায়। বেদনা-বিদুর রঙ্গের পরশে সাজানো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষলগ্নে পুরো অনুষ্ঠানটিকে বর্ণিল আয়োজনের প্রাঞ্জল রুপে তোলে ধরে।পরিশেষে সুন্দর এই আয়োজনের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য ফটো সেসন ছিল মিলনের এক অভূতপূর্ব রঙ্গে সাজানো আনন্দ হাসির এক মধুর সময়। অনুষ্ঠানটি যাদের সুন্দর উপস্থাপনায় আকর্ষণীয় হয়ে উঠে তাঁরা হলেন প্রখ্যাত Social Woker সায়মা জামাল এবং ডা. আখতার উজ্জামান। স্বাধীনতার স্বপ্ন মিলনে, প্রীতি ও মহান অর্জনে ভরে উঠুক এই বাণী ছিল আয়োজকের মনে।