বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অক্সফামের ভূমিকা ছিল অনন্য-
লন্ডন, ০৭ অক্টোবর: ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক দাতব্য সংগঠন অক্সফাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল থেকে বহুমুখী সেবা প্রদান করে আসছে। দীর্ঘ ৫০ বছর যাবত সংগঠনটির বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকার এই অনন্য অবদানকে বিশেষ আয়োজনে উদযাপন করলেন যুক্তরাজ্যের প্রবাসীরা।
গত বুধবার (৫ অক্টোবর) পূর্ব লন্ডনের ইম্প্রেশন ব্যাঙ্কুয়েটিং হলে অক্সফামের কাজের নানা চিত্র প্রদর্শনী, চ্যারিটি ডিনার ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্যদিয়ে উদযাপিত হয় বাংলাদেশে অক্সফামের ৫০ বছর। একই সঙ্গে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠার ৮০ বছর পাড়ি দেয়ার মাইলফলকও উদযাপন করা হয়। ‘বাংলাদেশি ব্রিটিশ ফ্রেন্ডস অফ অক্সফাম’ এ উদযাপনের আয়োজন করে।
এ আয়োজনে বাংলাদেশি কমিউনিটির গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পাশাপাশি অক্সফামের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ ছিলো দেখার মত। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম। অতিথি ছিলেন যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির চেয়ারম্যান এনেলিজ ডডস, মুক্তিযুদ্ধকালীন অক্সফামের শরণার্থী ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমের সমন্বয়ক জুলিয়ান এইচ ফ্রান্সিস ওবিই, ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী, বাংলাদেশের মাদার তেরেসা খ্যাত ভ্যালারি টেইলর, কিংবদন্তী ক্রিকেটার স্যার গর্ডন গ্রিনিস, ব্রিটিশ এমপি স্টিফেন টিমস ও লিন ব্রাউন প্রমূখ।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা জুলিয়ান এইচ ফ্রান্সিস ওবিই মুক্তিযুদ্ধকালীণ শরণার্থী সংকট ও স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে অক্সফামের নানা কার্ক্রমের কথা তুলে ধরেন। যুদ্ধপরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কাছে জানতে চেয়েছিলাম বাংলাদেশের মানুষের জন্য জরুরি ভিত্তিতে কি ধরণের সহায়তা প্রয়োজন। জবাবে তিনি পাল্টা জানতে চান ওই সময়ে কি করে আমি ঢাকা যেতে সক্ষম হলাম। বলেছিলাম- ভারত সীমান্ত থেকে সড়কযোগে এসেছি। তখন বঙ্গবন্ধু বললেন, আপনি তো আমার চাইতে বেশি দেখেছেন আমার দেশের মানুষের অবস্থা। আপনি আমার চাইতে ভালো জানেন তাদের কি প্রয়োজন।’জুলিয়ান বলেন, ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে ওই সাক্ষাতের কয়েকদিন আগে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন হয়ে ঢাকায় ফিরেছিলেন।
ভ্যালেরি টেইলর বাংলাদেশের মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার অসীম ক্ষমতার প্রসংশা করেন। তিনি বলেন, বন্যা, ঘূর্নিঝড়, দারিদ্রতাসহ নানা প্রতিকুলতাকে অতিক্রম করে বাংলাদেশের মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে।
অক্সফামের কর্মকর্তা এন্ডি বাস্টেবল ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশে যাতায়ত করেন জানিয়ে বলেন- তিনি দেখেছেন, বাংলাদেশের মানুষ কতটা সহজে নানা কঠিন সমস্যার সমাধান বের করে নিতে পারে। উদাহরণ হিসেবে তিনি আর্সেনিক মোকাবেলা ও স্বাস্থ্যকর টয়লেট নির্মাণের কথা তুলে ধরেন।
লেবার দলের চেয়ারম্যান এনেলিজ ডডস্ ব্যতিক্রমী এই আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অক্সফামের মত সংগঠনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মানবসেবায় যুক্তরাজ্যের অগ্রণী ভূমিকা আরো বেগবান করতে আগ্রহী তাঁর দল।
অক্সফামের পেট্রন মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, মানুষকে সাবলম্বী করা, জীবন রক্ষা এবং দুর্যোগ-দুর্বিপাকসহ নানা সংকটকালে নানা উদ্ভাবনী উপায়ে সাহায্য নিয়ে পাশে দাঁড়ায় অক্সফাম। যার সরাসরি উপকারভোগী আমরা বাংলাদেশিরা। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় থেকে অক্সফাম বাংলাদেশে চমৎকার সব কাজ করে চললেও তারা নিজেরা এসব নিয়ে খুব একটা প্রচার করে না। কিন্তু উপকারভোগী হিসেবে আমাদের উচিত তাদের ধন্যবাদ জানানো।
সাংবাদিক উদয় শঙ্কর দাস ১৯৭১ সালে অক্সফামের শরণার্থী ত্রাণ কার্ক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা স্মরণ করে বলেন, আমাদের মাতৃভূমির মানুষের জীবন-মান রক্ষা ও উন্নয়নে সংস্থাটির ভূমিকা সুদূরপ্রসারী এবং প্রসংশাযোগ্য। আমরা যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছি; তখন এই স্বাধীন বাংলাদেশে অক্সফামের মত আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থার চমৎকার মানবিক কাজগুলোর দিকে ফিরে তাকানো এবং এর সাফল্য উদযাপনও জরুরি। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে শরণার্থী অধ্যায়টিকে আরও গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা উচিত বলে অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।
প্রধান অতিথি সাইদা মুনা তাসনীম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীণ সময় থেকে দীর্ঘ ৫০ বছর যাবত অক্সফামের সেবার জন্য ধন্যবাদ জানান। ভবিষ্যতেও অক্সফাম এমন সেবা অব্যাহত রাখবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে অক্সফামের দাতব্য কাজের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হয়। কিংবদন্তী ক্রিকেটার ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক কোচ স্যার গর্ডন গ্রিনিস তাঁর এবং ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রপি বিজয়ী বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের সাক্ষর সম্বলিত একটি ব্যাট নিলামের জন্য দান করেন।
এ আয়োজনের মূল সমন্বয়ক ছিলেন উদয় শঙ্কর দাশ, মাহির আহমদ, মমতাজ খান ও রাজিয়া লতিফ। উপস্থিত অতিথিরা অক্সফামের চমৎকার কাজগুলোর উদযাপনের সুযোগ করে দেয়ায় আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।