লন্ডনে নাগরিক স্মরণসভায় বক্তারা
জুয়ল রাজ:
গতকাল ১অক্টোবর, শনিবার কিংবদন্তী সাংবাদিক ও কলামিষ্ট, অমর একুশের গানের রচয়িতা প্রয়াত আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে স্মরণ করতে পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি সেন্টারে জড়ো হয়েছিলেন, বিলেতে বসবাসরত কবি, সাংবাদিক, সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ, বিপুল সংখ্যক সুধীজন,স্মরণ সভায় শ্রদ্ধায় নত হয়েছেন বাঙালি’র অন্যতম সূর্য্যসন্তান আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর প্রতি।
লন্ডনে নাগরিক উদ্যোগে আয়োজিত আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর এই স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন, বিলেতে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, প্রবীন রাজনীতিক সুলতান শরীফ।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মারা যাওয়ার পর গত ৪৭ বছর ধরে বাংলাদেশকে বুকে ধারন করে রেখেছিলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। তাঁর মৃত্যু আসলে মৃত্যু নয়, এই মৃত্যু তাকে অমর করে রেখেছে।
বাচিক শিল্পী ও সংবাদ পাঠিকা, মুনীরা পারভীনের সঞ্চালনায় নাগরিক স্মরণসভার আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, সত্যবাণী সম্পাদক সৈয়দ আনাস পাশা।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মিনিষ্টার (পলিটিক্যাল) জাহিদুল ইসলাম। ঢাকা থেকে ভিডিওবার্তায় সম্পৃক্ত হন সাংস্কৃতিক সংগঠক, নাট্য ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ও অধ্যাপক সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম। আবদুল গাফফার চৌধুরীর পছন্দের রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে ভিডিওবার্তা পাঠান রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন, আবদুল গাফফার চৌধুরীর মেয়ে তনিমা চৌধুরী । তিনি বলেন, আমার বাবা সারাজীবন বাংলাদেশ ও আদর্শের কথা লিখেছেন। তিনি যেমন বাংলাদেশের অভিভাবক ছিলেন, তেমনি অসাধারণ বাবাও ছিলেন আবদুল গাফফার চৌধুরীর পছন্দের রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে ভিডিওবার্তা পাঠান রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, কবি শামীম আজাদ,বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক আবু মুসা হাসান, জনমত সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা, ভয়েস অব আমেরিকার সাবেক সাংবাদিক শামীম চৌধুরী, বিবিসি বাংলার প্রাক্তন সাংবাদিক উদয় শংকর দাশ, জনমত’র সাবেক সম্পাদক নবাব উদ্দিন, কমিউনিটি এক্টিভিষ্ট হাবিব রহমান, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি হরমুজ আলী, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির যুক্তরাজ্য সভাপতি সৈয়দ এনামুল ইসলাম, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব বুলবুল হাসান, কাউন্সিলার সায়েমা আহমেদ, কবি ময়নুর রহমান
বাবুল, অজন্তা দেব রায়, যুক্তরাজ্য জাসদ সভাপতি হারুনুর রশীদ, ৭ই মার্চ ফাউন্ডেশনের নুর উদ্দিন আহমেদ, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের এস এম জাকির হোসেন, আব্দুল আহাদ চৌধুরী, সাংবাদিক আ স ম মাসুম ও জামাল খান।
স্মরণসভায় আবদুল গাফফার চৌধুরীর কবিতা আবৃতি করেন উর্মি মাজহার , মুনীরা পারভীন, স্মৃতি আজাদ। গাফফার চৌধুরীর লেখা গান পরিবেশন করেন শিল্পী হিমাংশু গোস্বামী , গৌরি চৌধুরী ও ফজলুর রহমান বাবু।
নাগরিক আয়োজন বিষয়ে বক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির উদ্যেক্তা, দৈনিক কালের কন্ঠের যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি জুয়েল রাজ। তিনি বলেন, আব্দুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুর দীর্ঘ ৪ মাস পর, এই স্মরণ সভায় উপস্থিতি প্রমাণ করে গাফফার চৌধুরী কতোটা আপন ছিলেন আমাদের। তাঁর শারীরিক বিদায় হয়েছে, কিন্ত, আদর্শিক গাফফার চৌধুরী’ ধ্রুবতারার মতো অন্ধকারে আমাদের পথ দেখাবেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ১ মিনিট নিরবতা পালন ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে প্রয়াত আবদুল গাফফার চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে দেয়া স্বাগত বক্তব্যে সৈয়দ আনাস পাশা বলেন, গাফফার চৌধুরী ছিলেন আমাদের বাতিঘর। বাঙালি স্বাধীকার, ভাষা, মুক্তিযুদ্ধ ও একটি প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক সমাজ নির্মাণের আন্দোলনে আমৃত্যু তিনি ছিলেন সক্রিয়। বাংলাদেশকে বুকে ধারন করেই তিনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন। ব্যাক্তি আবদুল গাফফার চৌধুরীর চেয়ে আদর্শিক আবদুল গাফফার চৌধুরী ছিলেন আমাদের বটবৃক্ষতুল্য ছায়া। তার প্রয়াণের পর তিনি আরো বেশী প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছেন আমাদের কাছে ।
শোক বইয়ের পাতা ভরে উঠেছে নানা স্মৃতিকথায়, যারা উপস্থিত হয়েছিলেন, সাবার সাথেই কোন কোন স্মৃতি জড়িয়ে আছে গাফফার চৌধুরীর, ভালবাসায়, বেদনায় সে সব স্মৃতিকথা লিখে গেছেন শোক বইয়ের পাতা জুড়ে।
অন্যান্য বক্তারা আবদুল গাফফার চৌধুরীর জীবন ও কর্মের নানা দিক তুলে ধরেন তাদের বক্তৃতায়। একই সাথে তাঁর কর্মকে বাঁচিয়ে রাখতে রাখেন নানা প্রস্তাব।দীর্ঘ ৫ ঘন্টার নাগরিক স্মরণসভার শেষ হয় সমবেত কন্ঠে আবদুল গাফফার চৌধুরীর লেখা একুশের অমর গানের মধ্য দিয়ে।