সুন্দরের জন্য সাধনা প্রয়োজন

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

শৈলেন কুমার দাশঃ

সুন্দরের সোনালী স্বপনে, মিলনের মধুর রঙ্গে যে শ‍্যামল প্রান্তর অনুরাগের শত রঙ্গে অনুরণিত হতো। ভোরের মাধবী হাওয়ায় হাতছানি দিত প্রীতির আলপনা প্রাণে প্রাণে। নব অনুরাগে জীবনের নবীণ গল্প মেঠো সুর আর গানে। শিশির ভেজা পথে পথ চলা একসাথে পাখির গান শুনে। নদীর বাঁকে শ‍্যামল ছায়ে বসে দুঃখ সুখের কথা বলা পরম বিশ্বাসে। গায়ের পিরাণ ঘাসের বুকে ভালবাসায় বিছিয়ে দেয়া আরাধনা কিংবা নামাজের তরে। আবার হাসি উচ্ছাসে কেটে যেত কত দূরন্ত সময় শ‍্যামলী কিনারে। এইতো চিরচেনা আমাদের শ‍্যামলী বাংলা। আজ এই বাংলায় অশান্তির অশনি সংকেত। অগ্নিসন্ত্রাসের মহা হুলিখেলায় মত্ত আজ একদল মানুষ। ধ্বংসের মহোৎসবে মেতে উঠে ভুলে যাচ্ছে মধুর সম্পর্ক প্রিয় প্রতিবেশীদের সাথে। মধুর প্রীতির বন্ধন আজ উন্মাদনা আর চরম হানাহানিতে হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেন এই অসুন্দর, মানবতাহীন হানাহানি? কি এমন মহাঅর্জনে ভরে উঠবে তাদের গোলা, যারা এই অশান্তির অনল প্রজ্বলনে এত অগ্নিশর্মা স্মৃতিময় সব সম্পর্ক ভুলে?

তাই আজ আমার ব‍্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে এ লেখার মূল অবতারণা। আমি সবেমাত্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের অনুদ্বৈপায়ন ভবনের ৩৩২ নম্বর রুমে এসে উঠি। কারণ ঐ রুমে আমার অনুজ সরোজের বসতি। আমার বড়দা বীর মুক্তিযোদ্ধা সুকুমার দাশ তখন নবীগঞ্জের এক সাহসী সুপুরুষ চেয়ারম্যান। এক সকালে এক বিনয়ী সুন্দর প্রৌঢ় ভদ্রলোক আমাদের বাসায় এসে আমার মায়ের কাছে কান্নাসিক্ত কণ্ঠে জানতে চান মেজদাবাবু (অর্থাৎ আমি) কোথায় আছি? মায়ের কাছে কান্নার কারণ ব‍্যাক্ত করে আমার ঠিকানা নিয়ে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। মাত্র একবার আমাদের বাসায় তাঁর সাথে আমার দেখা। সুন্দর, বিনয়ী, মধুর ব‍াক‍্যালাপে সজ্জিত, ধবধবে সাদা ধূতি ও পাঞ্জাবী পরিহিত অতি সজ্জন মানুষ। একবার দেখলেই যাকে অতি আপন মনে হয়। নবীগঞ্জের সমরগাঁও অঞ্চলের এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারের লোক। বলছিলেন তিনি তাঁর যৌবনের কথা। এতদোঞ্চলের পাঁচ গ্রামের মধ‍্যে লেখাপড়া জানা কোন ছিল না। মূলত: কৃষি নির্ভর গ্রাম গুলি মুসলিম বসতি ছিল। একটা চিঠি পড়ানোর জন‍্য ও প‍্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসতো মানুষ তাঁর কাছে। সবাই ভালবাসতো তাঁকে আর সম্মান করতো মাস্টারবাবু বলে। এসব গল্প শুনে আমিও তাঁকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তিনিও সেটি বুঝতে পেরেছিলেন বলেই সেদিন তাঁর এক জীবন মরণ সমস‍্যা নিয়ে ঢাকায় অনুদ্বৈপায়ন স্মৃতি ভবনে এসে হাজির হন ভোরের সোনালী আলোয় জগন্নাথ হল যখন শুভ্র, সুন্দর হয়ে উঠছিল তখন। তাঁকে দেখে আমিও সরোজ  একেবারে হতবাক। এত বিনয়ী মানুষ তিনি তাঁর প্রৌঢ় বয়সেও আমার মাকে মাঠাকুরুণ, আমার বড়দাকে বড়দাবাবু, আমাকে মেজদাবাবু আর সরোজকেও ছোড়দাবাবু বলে সম্বোধন করতে থাকেন। আমি  তাঁকে প্রণাম করতে গেলে জোর করে আমার হাত ধরে  আমাকে নিবৃত করেন। তারপর তিনি আসার হেতু বর্ণনা করতে গিয়ে যা বলেন, তা শুনে ভাবতে কষ্ঠ হয় যে মানুষ এত নিকৃষ্ঠ কাজ করতে পারে? তাঁর পাশের বাড়ীর নিজ বৃদ্ধ শরীককে ভয় ভীতি প্রদর্শন ও অস্ত্রের মূখে রাতের আঁধারে ভারতের সীমানায় পৌঁছে দিয়ে শরীকের বাড়ী দখল করে নেয় এক মুসলিম ভদ্রলোক। পরে জাল দলিল কার্যও সম্পন্ন করে নেয়। এ বিষয়টি নিয়েও এই মাস্টারবাবুর কোন অভিযোগ ছিলনা। এরপর এই ভদ্রলোকের নজর মাস্টারবাবুর বাড়ীর প্রতি। হেন অন‍্যায় আচরণ নেই যে এই মুসলিম ভদ্রলোক নিরীহ, সুন্দর, বিনয়ী, দেবতুল‍্য মানুষটির সাথে করেননি। শেষ পর্যন্ত যে অতি ঘৃণিত কাজটি তিনি মাস্টারবাবুর সাথেকরেন যা আমি এখানে বর্ণনা করতে পারছি না। মস্টারবাবুর সব শুনার পর আমি তাঁকে সদ‍্য প্রতিষ্ঠিত বাংলাবাজার পত্রিকা অফিসে নিয়ে যাই। সেখানে তখন আমার পরিচিত চুনারুঘাটের লুৎফর রহমান ও নবীগঞ্জের নির্মল নাথ নবীন সাংবাদিক। তারা দুজনে মাস্টারবাবুর কথা শুনে চিঠিপত্র কলামে মাস্টবাবুর নামে একটি চিঠি লিখতে বলেন। আমি পত্রিকা অফিসে বসেই মাস্টারবাবুর মনের কথা অনুযায়ী বিস্তারিত একটি চিঠি লিখি। তখন বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। চিঠিটির শিরোনাম ছিল “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলার শ‍্যামল প্রান্তরে কি আমার মূখাগ্নি হবেনা?”পরদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুন্দর একটি ছবির পাশে সুন্দর ডিজাইনে ছাপা হয় মাস্টারবাবুর চিঠি। তাতেই মাস্টারবাবু খুসী। অনেক গুলি পত্রিকা কিনে তিনি নবীগঞ্জে চলে যান। আমার বড়দা বীর মুক্তিযোদ্ধা চেয়ারম্যান সুকুমার বাবুর বদৌলতে নবীগঞ্জের ১৩টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহোদয়রা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হন এবং বাংলাবাজার পত্রিকায় সুন্দর প্রধানমন্ত্রীর ছবির পাশে আবেগ, ভালবাসায় সাজানো সুন্দর চিঠিটি পড়েন। ফলে স্হানীয় প্রশাসন মাস্টারবাবুর জন‍্য বিশেষ কিছু না করলেও ঐ সমস‍্যা সৃষ্ঠিকারী লোকটিকে আর উৎকুচ নিয়েও আর সহযোগিতা করেনি। আর আমার বড়দার নিয়মিত খবরাখবর নেয়ার কারণে মাস্টারবাবুর সমস‍্যাটি বেশ ভালভাবেই সমাধান হয়। কিন্তু বিধির কি নির্মম পরিহাস। মাস্টারবাবু বেঁচে থাকতেই ঐ মুসলিম ভদ্রলোকের নিজ ছেলে মেয়েদের সাথে জীবন সায়াহ্নে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। চরম আর্থিক সংকটের মধ‍্যে দিয়ে চলতে চলতে এক সময় সে প‍্যারালাইজড হয়ে যায়। নিজের মল মূত্রের মধ‍্যে সে পড়ে থাকতো কেউ দেখার ছিল না। তখন এই মাস্টারবাবুই সহযোগিতার জন‍্য এগিয়ে আসেন। যে মল মূত্রের মধ‍্যে সে পড়ে থাকে এ ধরনের এক জঘন‍্য অপকর্মই সে মাস্টারবাবুর সাথে করেছিল। মাস্টারবাবু শেষ নিশ্বাস ত‍্যাগ করার সময় তিনি তাঁর ছেলে মেয়েদের ঐ ভদ্রলোককে দেখাশুনা করতে বলে যান। ইতোমধ্যে মাস্টারবাবুর দুই ছেলে ব‍্যবসা করে খুব উন্নতি লাভ করে এবং নিজ বাড়ীতে বড় বিল্ডিং নির্মাণ করে। কিন্তু ঐ ভদ্রলোক নিত‍্যদিন তাদের বিল্ডিং এর সামনে এসে বসে থাকতেন এবং তারাই ভরণ পোষন করতো। এভাবে দীর্ঘদিন কষ্ঠ ভোগের পর তার মৃত‍্যু হয়। এ ঘটনা থেকে সহজেই বুঝা যায় সব অপকর্ম ও অনাচারের বিচার এখানেই। কেউ হয়তো বলবেন আমি আধ‍্যাত্ববাদের কথা বলছি। তা মোটেও নয়; প্রকৃতির কার্যকারণ সম্পর্কও তাই বলে। আর বিশ্বনন্দিত বিজ্ঞানী তাঁর বিখ‍্যাত তৃতীয় সূত্রে এমনই সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন। যা অহরহ সত‍্যে প্রমাণিত হচ্ছে। His 3rd Law “states that for every action in nature there is an equal and opposite reaction.” অমিত শক্তির আধার এই বিশ্বপ্রকৃতির প্রতিটি কর্মকান্ড বা ক্রিয়ার ঠিক সমরুপ ও সমধর্মী, বিপরীত ও সমান প্রতাক্রিয়া বিদ‍্যমান। আজ যাকে দুর্বল ভেবে চরম নিপীড়ণ, নির্যাতন করছি। সময়ের সুশীতল পরশ তাকে সবল করতে কতক্ষণ! আর যারা অন্ধমোহে আসক্ত হয়ে নিজেকে সবল হিসাবে জাহির করে ঘৃণ‍্য অনাচারে লিপ্ত। তারাই বা দুর্বল হতে কতক্ষণ!

আজ যারা facebook এ উন্মাদনা ছড়িয়ে মূহূর্তেই শান্ত, সুন্দর প্রতিবেশীদের বাড়ীঘর জ্বলিয়ে দিচ্ছেন, লুটতরাজ করছেন, তারা কি মানুষ হিসাবে একবারও ভাবছেন না। এই  প্রতিবেশীই বিপদ আপদে সহায় শক্তি ও আশার বাণী হয়ে পাশে ছিলেন? তাহলে আজ কেন মিথ‍্যা বানোয়াট উন্মাদনায় নিমিষেই সব ভুলে গিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছেন তাদের বাড়ীঘর? একবার একটু ভাবলেই তো উত্তর পাওয়া যেতো, যে সোনালী স্মৃতিময় অতীত জড়িয়ে রয়েছে আপনার প্রতিবেশীর সাথে। তাকে কি করে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিস্ব করে দিচ্ছেন মূহূর্তেই? তাতে কি আপনারা খুব একটা লাভবান হচ্ছেন? উত্তর তার না। একদিকে সুন্দর শান্ত প্রতিবেশীর কাছে ভয়ানক জীবে পরিণত হচ্ছেন। যা মানুষের জীবনের কোন উদ্দেশের মধ‍্যেই পড়েনা। আর অন‍্যদিকে গোটা বিশ্বময় ঘৃণিত মানুষ হিসাবে পরিচিত হচ্ছেন। এটি কি সুন্দর জীবনের লক্ষ‍্য? নিশ্চয় তা নয়। তাহলে কেন এত হানাহানি, কেন এত উন্মত্ত পেশী শক্তির প্রয়োগ? একবার দিনের শেষে নিরিবিলি নিজের সাথ‍ে কথা বলুন। উত্তর পেয়ে যাবেন। ইউরোপ ও নর্থ আমেরিকাতে কেউ কাউকে গালিগালাজ করলে বা পেশীশক্তি প্রয়োগ করতে উদ্ধত হলে তারা তাকে বলে “বন‍্য”। এখনও সভ‍্য সমাজের উপযুক্ত হয়নি। তার সঙ্গ পরিহার কর। এসব দেশে এর চেয়ে অপমানজনক আর কিছু নেই।

সুন্দরের জন‍্য সাধনা প্রয়োজন। সুন্দর মনে ধারণ করতে হলে সুন্দরের মধ‍্যে বেড়ে উঠা প্রয়োজন। ধ্বংসের জন‍্য কোন সাধনার প্রয়োজন নেই।  লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ, হত‍্যা এক ধ্বংসাত্মক মনস্তত্বের বহিঃপ্রকাশ যা মূলতঃ এক শ্রীহীন সামাজিকায়নের ফলেই সৃষ্ঠ। কিন্তু সুন্দর মানব জীবনের উদ্দ‍েশ‍্য এটি নয়। মানুষের সুখে-দুঃখে, আনন্দ-অভিযোগে, আশায়-নিরাশায়, ভালবাসা-বেদনায় যদি পরম বিশ্বাসে সে আপনার সান্নিধ্য কামনা করে তবে আপনার মানব জীবন ধন‍্য। ভয় ভীতি প্রদর্শনের মধ‍্য দিয়ে ভয়ানক জীব হওয়ার মধ‍্য দিয়ে নয়। এ অবস্হা সৃষ্টির মূল কারণ হচ্ছে পারিবারিক পরিমন্ডল সুন্দর মানুষ তৈরীতে সম্পূর্ণ ব‍্যর্থ। আর সে সুযোগে কিছু সামাজিক প্রতিষ্ঠান তাদের  উদ্দ‍েশ‍্য চরিতার্থ করার জন‍্য সুন্দর স্বপ্নবিহীন ধ্বংসাত্মক মনস্তত্ত্ব সম্পন্ন মানুষ তৈরী করছে। সেই সাথে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিচারহীনতার সংস্কৃতির মধ‍্য দিয়ে তাদের বিকাশের অগ্রযাত্রাকে স্বাগত জানাচ্ছে।

আজ দেশে একটার পর একটা জায়গায় অগ্নিসন্ত্রাস, লুটতরাজ, হত‍্যা, জমি, বাড়ী, ব‍্যবসা দখলের লীলাভূমিতে পরিণত হচ্ছে। যার চরম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন সনাতন ধর্মের নিরীহ, শান্ত, সুন্দর মানুষগুলি। যারা মূলতঃ রাষ্টের বড় সম্পদ। কারণ এদের জন‍্য রাষ্ট্রকে বাড়তি কোন সামাজিক মূল‍্য নির্ধারণ করতে হয় না। এই আগুনের শিখা আজ রামু, নাসিরনগর, গংঙ্গাছড়া,  কুমিল্লা,শাল্লা, পীরগাছা পেরিয়ে লোহাগড়ায় এসে পৌঁছেছে। সবক্ষেত্রেই facebook এ উন্মাদনা ছড়িয়ে একশ্রেণীর হীন চিন্তার মানুষ নিজ স্বার্থ চরিতার্থ তথা সম্পদ লুটতরাজের জন‍্য সন্ত্রাসী অবস্হা তৈরী করছে। আর সব ক্ষেত্রেই তাদের সাথে জড়িত হয়েছে এলাকার মানুষ, তার দীর্ঘদিনের রচিত সুন্দর সহবস্হানের সংস্কৃতি ও পরিবেশকে ভুলে। তাহলে কি সাধারণ, সুন্দর মানুষ গুলি সেই বিপথগামীদের পথই অনুসরণ করছে? লোহাগড়ার দিঘুলিয়ায় সাহা পাড়ার আশে পাশের অনেক বুনিয়াদি মুসলিম পরিবার যাদের সাথে সাহা পাড়ার লোকেদের মধুর সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তাদের মধ‍্য থেকে কেন ১০জন মানুষ দাঁড়ালেন না সাহা পাড়াকে রক্ষা করতে? মুসলিম সম্প্রদায়ের ১০জন মানুষ দাঁড়ালেই এ ঘটনা অন‍্য রকম হতে পারতো। তাহলে কি সব সুন্দর মানুষ গুলো facebook এর মিথ‍্যা উন্মদনায় হাজারো স্মৃতির মধুর সম্পর্ককে ভুলতে বসেছেন? আপনাদের নীরবতা কি আপনাদের লাভের পাল্লাকে ভারী করছে? না মোটেও তা নয়। আপনি নীরব থেকে যে আগুন জ্বলতে সাহায‍্য করেছেন, সে আগুনে একদিন আপনিও নিপতিত হবেন। সেটি হয়তো শুধু সময়ের অপেক্ষা। আপনারা নিজে বুকে হাত দিয়ে একটু গভীরভাবে ভেবে বলুন তো কোন নিরীহ, শান্ত হিন্দু ছেলের পক্ষে বাংলাদেশের বাস্তবতায় facebook এ ইসলাম ধর্মের অবমাননা করবে বা করার দুঃসাহস রাখে? উত্তর পাবেন অবশ‍্যই না। তবে কেন এটি বার বার প্রমাণিত হওয়া সত্বেও  আপনারা নিজ এলাকায় এসব উন্মত্বতা ও জঘন‍্য অনাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান না? কারণ কি শুধু হিন্দুদের বাড়ীঘর পুড়ানো ও লুটতরাজ হচ্ছে  বলে? সাথে সাথে যে আপনার  এলাকার সুনাম, সম্মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে? সোশ‍্যাল মিডিয়ার সুবাদে গোটা বিশ্বময় ঘৃণিত হচ্ছে আপনার এলাকা। দেশে থেকে মনে হয় আপনারা তা বুঝতে পারেন না। বিদেশ থেকে বুঝা যায় কত ঘৃণার সাথে মানুষ বর্ণনা করছে এসব এলাকা গুলিকে। কিন্ত একটি এলাকার সব মানুষ তো এসব দুষ্কর্মে অংশ নেয়নি। আপনারা নীরব থেকে প্রতিবাদ না করে সম দোষে দোষী হয়ে গেছেন। একবার ভেবে দেখবেন গণ‍্যমান‍্য মুসলিম লোকেদের ভূমিকা কি হওয়া প্রয়োজন ছিল। আমি এ বিষয় গুলি নিয়ে ভাবতে পারছি কারণ আমি দেখেছি আমার বড়দা বীর মুক্তিযোদ্ধা চেয়ারম্যান সুকুমার বাবু অবিচ্ছিন্নভাবে  চেয়ারম্যান হিসাবে দীর্ঘ ৩০ বছর কিভাবে সামাজিক সমস‍্যা মোকাবেলা ও সমাধান করেছেন।  আপনাদের নীরব সমর্থনে শান্তির জনপদ অশান্তিতে পরিণত হবে। ব‍্যাহত হবে দেশের উন্নয়ন, প্রগতি ও মননের বিকাশ। বিকাশ ঘটবে অসুন্দর মানুষের; যারা দীর্ঘমেয়াদী অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সেদিন আপনিও এ অশান্তি, অবিচার থেকে পরিত্রান পাবেন না। চিন্তার জায়গাটিকে যদি একটু পরিশীলিত না করে এই অনাচারের বিরূদ্ধে না দাঁড়ান তবে এ অশান্তি চলতেই থাকবে। এই সন্ত্রাসের দাবানল এক অঞ্চল থেকে অন‍্য অঞ্চলে দাপিয়ে বেড়াবে। জ্ঞান, বিজ্ঞান, মনোজগতের উন্নয়ন ও বিকাশের সাধনা ব‍্যাহত হবে এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নের পশ্চাৎপদচারণ হবে। এটি শুধু আমার কথা নয়; বিশ্বখ‍্যাত জ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীদের ও অভিমত তাই।

এই সামাজিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বাগ্রে এগিয়ে আসা উচিত দেশের যুব সমাজকে মননে সহবস্হান, মানবিক, প্রগতি ও শান্তির সংস্কৃতিকে ধারণ করে। কারণ তাদের সোনালী ভবিষ‍্যত দেশের উন্নয়ন ও স্হিতিশীলতার সাথে জড়িত।  তাই তাদের ভবিষ‍্যত তাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। তারাই পারবে এই উন্মাদনাকে বন্ধ করে দেশের শিক্ষা, প্রগতি, শান্তি ও উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে প্রতিটি সামাজিক দুর্যোগ মোকাবেলায় রয়েছে যুব সমাজের সোনালী ভূমিকার ইতিহাস। এবারও নতুন ইতিহাসের দিকে যাত্রা শুরু হোক সুর্যসেন, প্রীতিলতা, সালাম,বরকত, রফিক, জগৎজ‍্যোতি, নূর হোসেনসহ স্বাধীনতা সংগ্রামে নাম না জানা অগণিত বীর সেনানীদের উত্তরসুরী অদম‍্য অসীম সাহসী বাংলার যুবসমাজের। সেই সাথে দেশের সুশীল সমাজের সঠিক-সুন্দর পরামর্শ ও নির্দেশনা তাদেরকে এ দুর্যোগ বিজয়ের পথ দেখাবে বলে আমার বিশ্বাস।

রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করতে হবে ‘৭২ এর সংবিধানের সুশীতল ছায়াতলে সবার সুরক্ষা প্রদানে প্রকৃত অর্থে নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ও বিচার কাঠামো গড়ে তোলতে। এ জন‍্য রাষ্ট্রের যদি কোথাও ভীতির জায়গা থাকে তা থেকেও রাষ্ট্রকে বেড়িয়ে আসতে সহযোগিতা করতে  হবে। রাষ্ট্রের  উন্নয়নের স্বপ্ন ঘিরে যদি যুবসমাজ ও সাধারণ মানুষের কল‍্যাণের ছবি দৃশ‍্যমান হয়। তবে সব পেশা ও বর্ণের মানুষ এ রাষ্ট্রকে সমর্থন করবে নিজেদেরই প্রয়োজনে। সে জন‍্য রাষ্ট্রকে সুন্দর, সোনালী পথ ছেড়ে ধূসর পথে পদচারণার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমার মত অনেকেই মনে করেন না। রাষ্ট্রের সুশীল, নিরপেক্ষ অবস্হান সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের মনে স্হায়িত্বের আসন অলংকৃত করতে হলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে রাষ্ট্রকে দ্রুত বেরিয়ে  আসা প্রয়োজন।  জ্ঞানী, বিদ‍্যান সর্বোপরী মানুষের সম্মান অগ্রে স্হান  দিয়ে শান্তির পরিবেশ বিনির্মাণের মধ‍্য দিয়ে অগ্রসর হলে, রাষ্ট্রের  উন্নয়নের চলমান অগ্রযাত্রা নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে বলে জ্ঞানীজনের বিশ্বাস। কুটিল চিন্তা, কুপরামর্শ শুধু ত্রিশংকু অবস্হাই সৃষ্টি করবে যা মানুষের বিশ্বাস ও ভালবাসা থেকে দূরে নিয়ে যাবে রাষ্ট্রকে। তাই রাষ্ট্রের  সজ্জন, সুশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত মানুষের পরামর্শ প্রয়োজন; যাদের অতীত সোনালী, সুন্দর, মানবিক ও দেশ প্রেমের মন্ত্রে আলোকিত।

বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞজনেরা বলছেন facebook এর মত সামান্য একটি উন্মাদনা যে রাষ্ট্র বন্ধ করতে পারে না বা এধরনের উন্মাদনা থেকে বার বার তার নিরীহ, সুন্দর, সুধীর মানুষগুলিকে রক্ষা করতে পারেনি, সে রাষ্ট্রের  সক্ষমতা প্রশ্নসাপেক্ষ। আজ এই উন্মাদনা বন্ধের দায়িত্ব যুব সমাজকেই নিতে হবে। সমাজের এই কলুষিত পরিচয় যেন আর বিশ্বময় ছড়িয়ে না পড়ে। বড়ই ঘৃণার চোখে দেখছে মানুষ আমাদেরকে। কত লজ্জার বিষয় লোহাগড়ার  ভিকটিম আকাশ সাহার বৃদ্ধ পিতাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। কি সুশাসন! এখন পুত্রের বিরুদ্ধে সাজানো মিথ‍্যা অপরাধের বিচার হবে পিতার! এর চেয়ে নির্লজ্জ উদাহরণ আর কি হতে পারে? পুলিশ প্রশাসন কি বিষয়টি ভেবে দেখবে তারা কেন এমন হঠকারী কাজ করছে। যা তাদের ইমেইজকে অসম্মানজনক করে তোলছে। সাজানো নিরাপত্তার নামে ভাল মানুষকে জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর অপরাধীরা আরও অপরাধ প্রবণ মানসিকতা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাইরের নির্মল হাওয়ায়। এ কেমন নির্মমতা, কেমন বিচার আর কেমন দেশ? পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তুপে বসে মায়ের করুণ আর্তনাদের ছবি বিশ্ববিবেককে ভাবিয়ে তোলেছে। এমন দেশ দেখার জন‍্য শিক্ষক, সুধীসমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খৃষ্ঠান সবাই মিলে মুক্তিযুদ্ধ করেননি।

জ্বালাও, পুড়াও, নির্মমতা ও নিপীড়নের সংস্কৃতি দেখা এদেশের সাধারণ মানুষের যেমনি কাম‍্য নয়। তেমনি তারা দেখতে চায় না মোল্লা ওমরের আফগানিস্তান কিংবা জিয়াউল হকের পাকিস্তানের  দৃশ‍্য এ বাংলায়। এ বিষয়টি সম্পূর্ণ হৃদয়াঙ্গম করতে এবং এর শুভ পরিত্রাণে কাজ করতে রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করতে হবে। এ বিষয়ে দেশের সম্ভাবনাময় অমিত শক্তির আধার যুব সমাজ ও সুশীল বিদ‍্যাবুদ্ধির আধার সুশীল সমাজকে অন‍্য সময়ের চেয়ে  অধিক সচেতন ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ দেশের বর্তমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় স্হিতিশীল সামাজিক সম্পর্ক, সুশীল আচরণ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বড়ই প্রয়োজন।

বিজ্ঞজনের অভিমত সংখ‍্যালঘু সুরক্ষা আইন, সংখ‍্যালঘু কমিশন গঠন এবং দেশের যে ৬২টি নির্বাচনী এলাকায় জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নির্ধারিত শক্তি। সেসব নিবাচনী এলাকা গুলিতে শুধু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়া। ফলে তাদের সম্মান এবং দায়িত্বশীলতার ক্ষেত্রে যুক্ত হবে নতুন মাত্রা। এতে দেশ আরও অধিক মাত্রায় তাঁদের সেবার রঙ্গিন আলপনায় রঞ্জিত হয়ে  উঠবে। ফলে স্হিতিশীল ভারসাম্যমূলক সামাজিক সম্পর্ক বিনির্মাণের মধ‍্য দিয়ে উন্নয়নের সচল রথ আরও  অগ্রগামী হবে উন্নয়নের প্রত‍্যাশিত সোনালী  ঠিকানায়। এ বিষয় গুলি নিয়ে এখনই ভাবার সময়। সময়কে এর পারিপার্শ্বিকতার মধ‍্যে বুঝা ও এর উপযুক্ত মূল‍্যায়ন উন্নত রাজনৈতিক প্রজ্ঞারই নামান্তর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সজ্জন সুশীল সমাজ ও যুব সমাজের প্রতিনিধি নিয়ে এ বিষয়ে  সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁর সমৃদ্ধ রাজনৈতিক প্রজ্ঞার উদাহরণ সৃষ্টি করবেন বলে আমার বিশ্বাস। তা নাহলে এ নির্মমতা, নির্যাতন, এ অনল শিখা বার বারই নিরীহ, শান্ত, সুন্দর মানুষের অবর্ণনীয় কষ্টের কারণ হবে এক জনপদ থেকে অন‍্য জনপদে। জানতে পারবো না আমরা কোথায় হবে এর শেষ গন্তব‍্য।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০