শৈলেন কুমার দাশ:
জগৎ নন্দিত ব্রাজিলীয়ান শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক পাওলো ফ্রেইরীর উদ্ধৃতি দিয়ে আজকের লেখা শুরু করছি। এই দার্শনিক বলেছেন “Education is a practice of freedom and education should be an activity of freedom.” শিক্ষা হচ্ছে মানুষের মননে স্বাধীনতার সুন্দর প্রকাশ অনুশীলনের আয়ত্বকরণ। এবং শিক্ষা এমনই সুন্দরতম কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভূক্ত হওয়া প্রয়োজন যা মূলতঃ স্বাধীনতার দীপ্ত মন্ত্রে উজ্জিবিত। তিনি আরও বলেছেন “Education is for humanization, libaration and conscientization.” শিক্ষার কাজ হচ্ছে মানুষকে মানুষের মত সুশীল আচরণ করতে উদ্বুদ্ধ করা, স্বাধীনতাকে বুঝতে, মনে ধারণ করতে এবং এর প্রসারে সহায়তা করা। শিক্ষা মানুষের মনে সচেনতার শক্ত ভীত তৈরী করে এবং এর পরিবর্তন ও বিকাশে অনবরত শক্তি যোগায়। মানবিকতার মত অমিত সুন্দর মূল্যবোধ মানুষের মনে জাগিয়ে তোলাই শিক্ষার ধর্ম। আর এই মহতী কর্মযজ্ঞে অনন্য ও অনুপম ভূমিকায় অবতীর্ণ হন একজন সৌম, সুন্দর মানুষ, তিনিই হচ্ছেন শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের সাথে জ্ঞানের মিথ্ষক্রিয়ায় এবং তথ্যের আদান প্রদানে যিনি সর্বদাই মূর্ত ও সজীব। অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান প্রয়োগের কলাকৌশল আয়ত্বকরণ এবং শিক্ষার্থীদের সাথে তা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে মনোমুগ্ধকর এক পরিবেশ রচনা তারই হাতে। জ্ঞানের শৈল্পিক প্রয়োগ তারই হাত ধরে অগ্রসর হয়। শিক্ষককেরাই গড়ে তোলেছেন মহান মানুষ, মহান জাতি যুগে যুগে। যাদের মাধ্যমে স্বপ্ন দেখিয়েছেন সুন্দর-স্বাধীন, সোনালী ভবিষ্যতের। তাইতো শিক্ষককেরা পুজ্য, আরাধ্য যুগে যুগে। এ বিষয়ে প্রাচীন মহাভারতবর্ষের একটি উদাহরণ দেয়া যাক। প্রায় পাঁচ হাজার বছরের আগের ঘটনা। মহাভারতের মহারথী কর্ণ বিদ্যা শিক্ষার জন্য মহাশাস্ত্র ও মহাসস্ত্রজ্ঞ, মহাঋষি, মহাজ্ঞানী শ্রী পরশুরাম এর শরণাপন্ন হয়ে নিজের পরিচয় গোপন করার মত কিঞ্চিত মিথ্যা বলে শিষ্যত্ব বরণ করেন। মহাকঠোর পরিশ্রম ও সুদীর্ঘকালের সাধনায় শিক্ষা পূর্ণ হলে মহাতপস্যী, মহাগুরু যখন তাঁর শিষ্যের আসল পরিচয় জানতে পারেন তখন তিনি তাকে এই মিথ্যা বলার অপরাধে অভিশপ্ত করেন এই বলে – ‘যে প্রবঞ্চনার মধ্য দিয়ে তুমি আমার বিশ্বাস, আরাধনা, ভালোবাসা ও পুজায় সাজানো শিক্ষা অর্জন করেছ, উপযুক্ত সময় উপনীত হলে এ শিক্ষা তুমি ভুলে যাবে; প্রয়োগ করতে পারবে না।’ বজ্রসম এ কঠিন বাণী শুনে শিষ্য মহা বিচলিত এবং ক্ষণিক পরে মহাগুরুর অভিশাপকে আশির্বাদ হিসাবে গ্রহণ করে গুরুদেবকে অধিক সম্মান ও সমাদর করেন। সময় উপনিত হলে গুরুকুল থেকে প্রস্হান করেন এবং গুরুদেবের অভিশাপের কথা ভুলে যান। তবে সত্যি সত্যিই জীবনের কঠিনতম সময়ে যখন গুরুদেবের শিক্ষা জীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজন ছিল তখন শত চেষ্টা করেও স্মরণ করতে পারেননি। আর তখনই মনে পড়ে গুরুদেবের অভিশাপের কথা। বুঝতে পারেন অধর্মের বিনাশ আর ধর্মের প্রকাশে তার এ পরাজয় ও বিনাশ অনিবার্য। কারণ তিনি মিত্রতার অন্ধমোহে মোহগ্রস্ত হয়ে অর্ধমের সঙ্গী হয়েছিলেন। এই পাপ থেকে মুক্তির জন্যই গুরুদেবের বাণী তার প্রতি আশির্বাদ স্বরুপ। তাই স্বহাস্য বদনে নিজের পরাজয় ও বিনাশকে আমন্ত্রণ জানান। আর প্রণাম করেন গুরুদেবকে স্বশ্রদ্ধ চিত্তে বারংবার।
এখন দৃষ্টি দেয়া যাক আমাদের দেশে আমাদের বর্তমান সুসভ্য ইলেকট্রনিক সভ্যতায় কেমন আদরে, সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন আমাদের শিক্ষককেরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমি ছাত্র। ক’বছর আগে এক মহান শিক্ষক খুন হয়েছেন তাঁরই প্রিয় এক ছাত্রের হাতে। যিনি এই ছাত্রকে হাত ধরে নিজ বিভাগের শিক্ষককের আসনে অধিষ্টিত করেছিলেন। এই মহান শিক্ষককের অপরাধ তাঁর এই ছাত্রের অবৈধ প্রমোশন লালসা পূরণ করতে সায় দেননি বলে। শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদকে অত্র অঞ্চলের এক এমপি মহোদয় বেত্রাঘাত করবেন বলে প্রকাশ্যে স্বদর্প ঘোষণা করেছিলেন। কারণ ঐ মহতী শিক্ষাবিদ এক অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা বিরোধীদের মনস্তাত্ত্বিক গড়ন এবং ‘৭১ সালে এদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এই আলোচনায় নাকি এমপি মহোদয় দারুণভাবে মর্মাহত ও এই শিক্ষকের প্রতি ক্ষুদ্ধ হন। কারণ হিসাবে জানা যায় এই শিক্ষকের বক্তব্যের সাথে ‘৭১ সালে এমপি মহোদয়ের পরিবারিক ভূমিকা মিলে যায় বলে।
পরবর্তীতে দেশব্যাপী শিক্ষকদের প্রতি অশোভন আচরণ অন্য রকম রুপ নেয়। নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত চরমভাবে লাঞ্চিত হন স্হানীয় প্রভাবশালী এমপি মহোদয়ের হাতে। তাঁর এই শিক্ষকের প্রতি এ হেন আচরণ দেশের সুশীল সমাজকে স্তম্বিত করে দেয়। মুন্সীগঞ্জের শিক্ষক হৃদয় কুমার মন্ডল, বাগের হাটের শিক্ষক কৃষ্ণপদ মণি এবং অশোক কুমার ঘোষাল এর চরম লাঞ্চনা ও অবমাননা একই সুত্রে গাঁথা। আর সাম্প্রতিক সময়ে নড়াইল কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পড়ানো হয় পুলিশ প্রশাসন ও স্বয়ং জেলা প্রশাসক এর উপস্থিতিতে। সাভারের আশুলিয়ায় ছাত্রের শুভ সুন্দর কামনায় কাউন্সিলিং করতে গিয়ে এই ছাত্রের হাতেই নির্মমভাবে খুন হন নিরীহ, শান্ত ও ভদ্র শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার। এই শিক্ষকের অশিতিপর বৃদ্ধা মায়ের কান্না সমগ্র দেশের আকাশ বাতাসকে ভারী করে তোলেছে।
এসব শুধুই কি নিছক কোন ঘটনা প্রবাহ? না এর পেছনে রয়েছে অন্য কোন কুটিল চক্রান্ত যা আমরা দেখতে পাচ্ছিনা? সমাজ-মনোতত্ত্ববিদ ও মিডিয়া স্পেশালিষ্টরা তো বলছেন এগুলি হচ্ছে দেশে অশান্তি ও অস্হিতিশীলতা তৈরী করে মেধা, জ্ঞান ও সুন্দর সংস্কৃতির বিকাশকে বাঁধাগ্রস্হ করা। আর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, পুজায় ও সুন্দরে সাজানো সনাতন ধর্মীয় সংস্কৃতি শুন্য করার কুটিল প্রয়াশ। যাতে দেশের বর্তমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়। এগুলি এত প্রসার লাভ করতে পারতো না যদি দেশে প্রকৃত অর্থে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হতো এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিকশিত না হতো। এগুলি মূলতঃ আইন প্রণেতা এমপি মহোদয়দের দেখানো পথ আর বিচারহীনতা সংস্কৃতির অনুপ্রেরণার ফসল।
তাহলে কি হারিয়ে যেতে বসেছে আমাদের চিরচেনা সুন্দর সংস্কৃতির আবাসভূমি? বিশ্ববরেণ্য কবি রবীঠাকুরের কথা অনুযায়ী – কথায় মাধুর্য্য, কর্মে কল্যাণবোধের ব্যঞ্জনা, চোখে প্রীতির প্রভা, আচরণে সুরুচির সামগ্রিক লাভণ্য আর ভালোবাসার মধুর বন্ধনে আবৃত হয়ে শুভ সুন্দরের বাসনা প্রকাশই সংস্কৃতি। সমাজ জীবনে বনোস্পতির অনুরোপ রুপান্তরের নামই সংস্কৃতি। যেমন কোন বনে একই ধরনের বৃক্ষরাজি জন্মালে তাকে বনোস্পতি বলা যায় না। তেমনিভাবে কোন সমাজে একই বর্ণের বা ধর্মের মানুষের বর্তমানে সমৃদ্ধ, সুন্দর, বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল গড়ে উঠে না। বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণের মানুষের মিলনে ও জীবনাচরণের রঙ্গিন মধুর রঙ্গে মূর্ত হয়ে উঠে মহান সুন্দর সংস্কৃতি। যা প্রতিটি সভ্যতারই আরাধ্য। দেশ বরেণ্য পন্ডিত কাজী মোতাহের হোসেনের সুন্দর কথায় – সংস্কৃতি হচ্ছে প্রেমবান হওয়ার পথে অগ্রসর যাত্রা, যা মানুষকে মানবতার গন্ডি পেরিয়ে ঈশ্বর প্রেমের দিকে ধাবিত করে। মানুষে মানুষে ভালোবাসার মধুর বন্ধনে আবদ্ধ; মিলনের এক তীর্থভূমি, যা সোনালী কর্মের সুন্দর অগ্রযাত্রায় জাগ্রত। তারই নাম সংস্কৃতি। সংস্কৃতির এই প্রাঞ্জল প্রকাশ আর কোন ভাষায় আছে কিনা আমার জানা নেই। তাহলে কি হারিয়ে যাবে আমাদের আদি, আনাদি সুন্দর সংস্কৃতি? যার সাথে আমাদের সুশীল চিন্তা, সুন্দর কর্ম ও উন্নয়নের মানবিক রুপরেখা প্রোথিত। আমাদের সুচিন্তা, শুভকর্ম, ভালোবাসা, বিশ্বাস,সম্মান, শ্রদ্ধা, শিক্ষা ও চিরচেনা মধুর সম্পর্ক আমাদের উন্নয়নে প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে উন্নয়ন আমদের জীবন ও শুভকর্মের সঙ্গী হয়ে স্হায়িত্বশীলতার পথে অগ্রসর হবে না। সামায়িক সুনাম, যশ, প্রভাব, প্রতিপত্তির সংস্কৃতিকেই ধারণ করবে মাত্র।
সমাজের মৌল কাঠামোর (রাস্তাঘাট, পদ্মাসেতু ইত্যাদি) উন্নয়নের সাথে সাথে সম গুরুত্ব দিয়ে সমাজের উপরিকাঠামোর (জ্ঞান, শিক্ষা, সংস্কৃতি ইত্যাদি) উন্নয়ন প্রয়োজন। তা না হলে সম্পদের চরম অপচয় হবে। রাষ্ট্রীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হবে জনগণ। উপরে বর্ণিত আমাদের চিরচেনা উন্নয়ন বান্ধব সংস্কৃতি আইন প্রণেতা থেকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে প্রসার ও জাগরণ প্রয়োজন। তা না হলে নির্যাতন, নিপীড়নের সংস্কৃতি আমাদেরকে বারে বারে গ্রাস করবেই। যা কোন সভ্য সমাজের নির্ণায়ক নয়। ফলে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসিন থেকেও বুঝতে পারবোনা পদের গুরুত্ব। মানুষের জীবন মরণের মূহুর্তেও দিতে পারবোনা সঠিক সিদ্ধান্ত। প্রয়োজনে থাকবো নিষ্ভ্রব এবং অপ্রয়োজনে করবো অতিরঞ্জিত আচরণ। এমন মানুষের সংখ্যা দেশের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও প্রয়োগের জায়গায় বেড়ে যাওয়ার কারণেই এমন সব জঘন্য প্রমাদের আবর্তে আবর্তিত হচ্ছে দেশ।
সুদর্শন যুবক খুলে নিয়ে যাচ্ছে পদ্মাসেতুর নাট-বল্টু। কারণ তার মধ্যে এই সেতু তার নিজের সম্পদ ভাবার সংস্কৃতি এবং এই কর্মের প্রতি শ্রদ্ধার সংস্কৃতি বিকশিত হয়নি। মটর বাইকারদের জায়গা পদ্মাসেতুর পরিবর্তে চিরচেনা কানুন বর্জিত ফেরী। কারণ পদ্মাসেতু ব্যবহারের নিয়ম ও অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সংস্কৃতি তাদের মধ্যে বিকশিত হয়নি বলে অহেতুক জটিলতার সৃষ্টি।
ক’দিন পরে হয়তো দেখা যাবে যে যুবক পদ্মাসেতুর নাট-বল্টু খুলেছে তার কঠিনতম শাস্তি হয়েছে। আর শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পড়ানোর মত জঘন্য অপরাধ যারা করলো তাদের শাস্তির কোন খবরই নেই। এমন ধারণা শুধু আমার নয় অনেক গুনীজনেরও। তাদের অভিমত অতি উৎসাহী লোকের সংখ্যা দেশের সবত্র আধিক্য ঘটেছে। যাদের দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধার চেয়ে প্রদর্শনের বাতিক বেশী। সুতরাং এ বিষয়টি ঘটতেই পারে। তাই বুঝতে হবে দেশের অফিসিয়্যাল কাজকর্ম ও আইনের শাসনের ইমপ্রেশন আজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। তাই রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় ও কর্তাব্যক্তিদের অপকর্ম রোধে সঠিক ও দেশপ্রেমিক যোগ্য ব্যক্তি কতৃক ফলোআপ, মনিটরিং ও কাউন্সিলিং বাড়ানো প্রয়োজন। রাষ্ট্রের প্রতি আস্হাশীল এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে জনস্বার্থ ও রাষ্টের কল্যাণে গুরুত্ব প্রদানকারী ব্যক্তিদেরকে জনগুরুত্বপূর্ণ পদে আসিন করতে হবে। সেই সাথে তাঁদেরকে মূল্যবোধ ও দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণে নিয়মিত অংশগ্রহণের সুযোগ ও আন্তরিকতা সৃষ্টি করতে হবে। এ বিষয়ে প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্ণধার আপাদমস্তক সুন্দর, অসাম্প্রদায়িক, পন্ডিত, দেশে বিদেশে উন্নয়ন বিষয়ক অনেক অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের অধিকারী এবং সর্বোপরি দেশের তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রায় অর্ধশত বর্ষের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডঃ কাজী ফারুক আহমদের পরামর্শ নেয়া বাঞ্চনীয় বলে মনে করি। এই সুন্দর মানুষটি জীবন সায়াহ্নে এসে উপনীত হয়েছেন। তাঁর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের বর্তমান যুব সমাজের মূল্যবোধ পরিবর্তনসহ সময়োপযোগী অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মধ্য দিয়ে দেশের উন্নয়নের গতিকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। সুতরাং এ বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গভীরভাবে বিবেচনার প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমি হলফ করে বলতে পারি তাঁর মত মানুষের দ্বারা দেশের কল্যাণ ছাড়া অকল্যাণকর কিছু হবার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। তাই এই সুন্দর মানুষটির মহান অভিজ্ঞতাকে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে অতি দ্রুত কাজে লাগানো প্রয়োজন।
আজকাল প্রায়শই Facebook এ ধর্মীয় উন্মদনা ছড়িয়ে নিরীহ মানুষের উপর নির্যাতন বড় দুঃখজনক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। অথচ আমরা Facebook সৃষ্টি করিনি এবং এর ব্যবহারও আমরা জানিনা। শুধুমাত্র এর বাজারে আমরা বড় এক মূর্খ ক্রেতা। না জেনে এ পণ্য কিনি এবং যত্রতত্র এর ব্যবহার করি। এটি ধারণ করার সক্ষমতাও আমাদের নেই। যারা এটি সৃষ্টি করেছে তাঁদের এটি নিয়ে কোন সমস্যা নেই। তাঁদের দেশে এটি নিয়ে কোন মাতামাতিও নেই। এ বিষয়ে যতদিন পর্যন্ত প্রকৃত অপরাধীদের কঠিনতম আইনের আওতায় না আনা হবে ততদিন এ অশান্তি চলতেই থাকবে। অশান্তির মাঝে জ্ঞান, বিজ্ঞান, উন্নয়ন ও সৃষ্টিশীল কাজের প্রকৃত সাধনা হয় না বা সাধনার ক্ষেত্রই তৈরী হয় না। নড়াইলের কলেজ শিক্ষককের প্রতি জঘন্য অপরাধের গ্লানি জাতিকে যে কলংকিত করেছে তাও এই উন্মাদনা ও অশান্তির ফসল। যদি এ বিষয়ে কঠিনতম শান্তির বিধান রেখে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা হয় তবে এধরনের দুষ্কর্মের পুনরুন্থান হবে না বলে আমার বিশ্বাস। তৈরী হবে না পারস্পরিক অশ্রদ্ধাবোধ, অবিশ্বাস ও অশান্তির পরিবেশ। যা উন্নয়ন ও জ্ঞান-বিজ্ঞান বিকাশের চরম পরিপন্থী।
সুতরাং নিপীড়ন, নির্যাতন, পারস্পরিক অসম্মান ও অশ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি নয়, শুদ্ধ সংস্কৃতি ও শিক্ষার পূণ্যভূমি হোক আমাদের প্রিয় স্বদেশ। আত্মপ্রত্যয়, আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদাবোধ বিকশিত হোক সবার মনে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের হৃত গৌরবের পুনঃসৃজন হোক সব পেশা ও কর্মে। শিক্ষার পরিবেশ হোক ছাত্র শিক্ষক মিলনের তীর্থভূমি। শিক্ষকের সম্মান সর্বোচ্চ সম্মানের অলংকারে অলংকৃত হোক।শুভ বুদ্ধির উদয় হোক সবার মনে সুন্দর সোনার বাংলা গড়ার দীপ্ত প্রত্যয়ে। পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ ব্যাপ্তিলাভ করুক আমাদের পরিবার থেকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্টান পর্যন্ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের সুশীল সমাজসহ সব পেশা ও কর্মের মানুষকে নিয়ে এ বিষয় গুলির প্রতি দৃষ্টি দিবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। তবেই তাঁর সোনার বাংলার স্বপ্ন রঙ্গিন দিন হাতছানি দিবে তাঁরই সাজানো উন্নয়নের সোনালী সৈকতে।