শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের ঢল
জুয়েল রাজঃ
বাঙালিদের প্রাণকেন্দ্র ব্রিকলেনের, ব্রিকলেন জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হলো, সাংবাদিক, কলামিস্ট, সাহিত্যিক আব্দুল গাফফার চৌধুরীর প্রথম নামাজের জানাজা।
প্রথম জানাজা শেষে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানাতে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পূর্ব লন্ডনের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের হাইকমিশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে কফিনে জাতীয় পতাকা ও ফুলের তোড়া দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন হাই কমিশনার সৈয়দা মুনা তাসনিম, পরে মুক্তি যোদ্ধা গণ শ্রদ্ধা জানান। ব্রিটেনের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ একে একে মরদেহে শ্রদ্ধা জানান।
গতকাল ১৯ মে বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক অসুস্থ্যতায় লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি সাংবাদিক। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিদের মাঝে ছড়িয়ে পরে শোক। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী সহ দেশে বিদেশে নানা সংগঠন , প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন শোক।
হাই কমিশনার সৈয়দা মুনা তাসনিম জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশ হাই কমিশন গাফফার চৌধুরীর এই শেষ বিদায়ের যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। তিনি বলেন, আশা করছি আগামী সোমবার যুক্তরাজ্যের অফিসিয়াল যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে, এবং বুধবার বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে প্রয়াত গাফফার চৌধুরীর মরদেহ দেশে পাঠানো সম্ভব হবে। এবং বৃহিস্পতিবার তাঁর মরদেহ বাংলাদেশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা আছে।
ব্রিকলেন মসজিদে, জানাজায় গাফফার চৌধুরীর একমাত্র ছেলে অনুপম চৌধুরী তাঁর বাবার জন্য সবার কাছে দোঁয়া চান। তিনি বলেন আমার বাবা যেমন তাঁর পরিবারের কাছে একজন আদর্শ বাবা ছিলেন, তেমনি দেখেছি আমার মায়ের জন্য তাঁর ত্যাগ, ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটির জন্য, বাংলাদেশের জন্য ও তিনি আমৃত্যু কাজ করে গেছেন।
দল মত নির্বিশেষে নানা শ্রেণী পেশার মানুষের ঢল নেমেছিল শহীদ মিনারে।
জীবিত গাফফার চৌধুরীর মতাদর্শের বিপক্ষ মতাদর্শ যারা লালন করেন, সেই সব মানুষ ও সমবেত হয়েছিলেন তাঁকে শেষ বিদায় জানাতে।
সাংবাদিক উদয় শংকর বারবার বলছিলেন, প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক মানুষ যাকে বুঝায়, গাফফার চৌধুরী ছিলেন তাই। তাঁর এই শূন্যতা আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি।
লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, জনমত পত্রিকার সাবেক সম্পাদক নবাব উদ্দীন বলেন, গাফফার ভাইয়ের মৃত্যু এক মহাপ্রাণের মহা প্রয়াণ। দীর্ঘ চল্লিশ বছরের আত্নিক সম্পর্ক ছিল আমাদের। আমার বহু নাটকের নাট্যরূপ দিয়েছেন তিনি। শুধু ব্রিটেন নয় সারা পৃথিবীর বাঙালির মুখপাত্র ছিলেন তিনি। তাঁর ক্ষুরধার রাজনৈতিক লেখনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহু পথের সন্ধান দিয়েছে বহুবার। মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি এই জাতীয়তাবাদ ইস্যুতে তিনি অনড় ছিলেন আমৃত্যু। তার এই শূণ্যতা কোনদিন পূরণ হওয়ার নয়।
সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব অপু চৌধুরী জানান, গাফফার ভাই তিনটা নাটক রচনা করেছিলেন যার দুইটি আমি নির্দেশনা দিয়েছিলাম, আরেকটি রক্তাক্ত আগষ্ট এবং একজন তাহমিনা। তাঁর পলাশী থেকে ধানমন্ডি তে ও আমি অভিনয় করেছিলাম।
বাংলাদেশের প্রতিটা দুঃসময়ে তিনি কলম কে অস্ত্র করে রুখে দাঁড়িয়েছেন। সেই যায়গাটা শূন্য হয়ে গেল।