জীবনের শেষ ট্রেনে উঠে গেলেন প্রিয় গাফফার ভাই

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

অজয় পালঃ 
ঠিক তিন মাস আগে এই দিনে অর্থাৎ গেলো ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে আমার সর্বশেষ ফোনে কথা হয়েছিলো শ্রদ্ধাভাজন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সাথে । এর মাত্র কিছুদিন আগে তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে শয্যাশায়ী ছিলেন । আমার ফোনটি রিসিভ করে গাফফার ভাই-ই সর্বপ্রথম জানতে চাইলেন , ” কেমন আছো অজয় ” ? পাল্টা প্রশ্ন করলাম ,
“আপনি কেমন আছেন বলুন”? টানা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন ,
” এইতো শেষ ট্রেনের অপেক্ষায় প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছি”। জবাবে বলেছিলাম ,”আপনার ট্রেন আসার এখনো অনেক বাকি, আপনি শতায়ু হবেন গাফফার ভাই “। মৃদু হেসে সেদিন বলেছিলেন , “সময় যে একদম ফুরিয়ে এসেছে , সেটা বুঝতে
পারছি হাঁড়ে হাঁড়ে । সবাই দোয়া করো আমার জন্য” । তাঁর ধারণা মোটেই অমূলক ছিলো না । তিনি বুঝতে পেরেছিলেন , মৃত্যুর হিমশীতল করা ট্রেনটি তাঁর দিকেই ধেয়ে আসছে এবং শেষমেষ এসেও গেলো , আর তিনি উঠেও গেলেন মহাপ্রস্থানের শেষ ট্রেনে । কি অলৌকিক সংযোগ , আমার সাথে সর্বশেষ কথা বলেছিলেন ১৯ ফেব্রুয়ারি , শেষ যাত্রার ট্রেনেও চাপলেন ঠিক তিন মাসের মাথায় আজ ১৯ মে।
বহু বছর ধরে নন্দিত সাংবাদিক , কলামিস্ট , গল্পকার ও গীতিকবি শ্রদ্ধাভাজন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সঙ্গীত জীবন নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টায় ছিলাম । কিন্তু যৌক্তিক নানা কারণে সেটা সম্ভব হয়ে উঠেনি । এবারের একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে এই লেখাটি শেষ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম এবং এই সুবাদেই এই প্রিয় মানুষটির সাথে আমার গত ১৯ফেব্রুয়ারি ছিলো সর্বশেষ যোগাযোগ । ইচ্ছে ছিলো , এরই মধ্যে একবার হাসপাতালে গিয়ে তাঁকে দেখে আসার । কিন্তু হঠাৎ করেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর আকস্মিক মৃত্যু সেই নিশ্চিত সুযোগ থেকে আমাকে বঞ্চিত করলো । কি দুর্ভাগ্য আমার !
গাফ্ফার ভাইকে জড়িয়ে আমার ভান্ডারে স্মৃতির কমতি নেই । বন্ধুবর নন্দিত সংগীতশিল্পী হিমাংশু গোস্বামীর মাধ্যমে ১৯৮৪ সালে তাঁর সাথে আমার সামনা সামনি প্রথম পরিচয় । তিনি তখন পূর্ব লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক জাগরণ পত্রিকায় কর্মরত । গাফ্ফার ভাই আমাকেও নিয়ে এলেন এই পত্রিকায় । প্রতি সপ্তাহে দুদিন কাজ করতাম এখানে । এই সুবাদে বরেণ্য এই মানুষটির দ্রুত ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠতে মোটেই সময় লাগেনি । তাঁর সান্নিধ্যে এসে কাজ করার সুবাদে অনেক অনেক অভিজ্ঞতায় আমি ঋদ্ধ হয়েছিলাম , আজ তা অকপটে স্বীকার করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই । ‘৮৬ সালে আমি দেশে ফিরে যাবার পর গাফ্ফার ভাই লন্ডনে যখনই কোনো নতুন প্রকাশনার সাথে যুক্ত হয়েছেন , তার সাথে সিলেট থেকে আমাকেও যুক্ত করেছেন । এ কারণে এই মানুষটির কাছে আমার কৃতজ্ঞতারও শেষ নেই ।

১৯৮৫ সালে সাপ্তাহিক সুরমা পত্রিকা কার্যালয়ে এবং লন্ডনে একটি অনুষ্ঠান শেষে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর সাথে

পূর্ব লন্ডনে একসময় আমার একটি মাসিক প্রকাশনা ছিলো “হৃদয়ে বাংলাদেশ”। প্রথম সংখ্যা থেকেই তিনি নিয়মিত এতে লিখে গেছেন । যখন যে বিষয় নিয়ে লেখার অনুরোধ করেছি , তিনি সানন্দে লিখে গেছেন । এই প্রকাশনার পূর্ব লন্ডনস্থ নিউ রোডের কার্যালয়ে এসে বহুদিন তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা জম্পেশ আড্ডা জমিয়ে আমাদের উজ্জীবিত করে যাবার স্মৃতি এখনো স্মৃতিপটে অমলিন । বেশ কয়েকবার হিমাংশু আর আমি তাঁর এজওয়ারের বাসায় গিয়ে গানে-গল্পে দীর্ঘ সময় কাবার
করেছি । এসবই এখন স্মৃতির অনুষঙ্গ মাত্র ।
আপনাকে ভুলার নয় , ভুলবো না কোনোদিন গাফ্ফার ভাই । আপনার শেষ যাত্রার ট্রেনটির গন্তব্য হোক অমৃতলোকে , ঈশ্বরের কাছে এ আমার বিনম্র প্রার্থনা ।
লন্ডন: ১৯/০৫/২০২২

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০