টাওয়ার হ্যামলেটস নির্বাচনের শেষ সময়ের বিশ্লেষণ –

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

টাওয়ার হ্যামলেটসে আগামীকাল ৫ মে মেয়র নির্বাচন

আমার বিশ্লেষণঃ দ্বিতীয় ও শেষ খণ্ড

আব্দুল হাই সঞ্জুঃ 

রাজনৈতিক বিরোধিতায় নিষ্ঠুরতা আছে আর গ্রুপিংয়ের রাজনীতি হয় বর্বর। পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা সেই বর্বরতাকেই প্রত্যক্ষ করছি। এক সময় জন বিগস, লুতফুর রহমান এবং রাবিনা খান- তিন জনই লেবার পার্টিতে ছিলেন। এখন তাঁরা তিন দল থেকে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। লেবার পার্টিতে থেকে যাওয়ার কারণে জন বিগস ভালো আর অন্য দু’জন নষ্ট হয়ে গেছেন- এমন দাবি করা অসম্ভব। অবশ্য বড় দলের প্রার্থী হিসেবে জন বিগস নির্বাচনে বেশী সুবিধা পেতে পারেন।

এই তিন প্রার্থী এখন তিন দল থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হলেও তাদের তিন জনের ক্যাম্পেইনারদের আচরণ আসলে গ্রুপিং রাজনীতির বর্বরতার সাথেই তুলনাযোগ্য। নির্বাচনে সবচেয়ে আগ্রাসী ক্যাম্পেইন করছেন লুতফুর রহমান এবং তাঁর সমর্থকেরা। কেননা, এসপায়ার পার্টির কোনো ভোট ব্যাঙ্ক নেই। লেবার পার্টির বড় একটি ভোট ব্যাঙ্ক আছে; অন্যদিকে রাবিনা খানের দল লিবডেমের ছোট একটি ভোট ব্যাঙ্ক আছে। লুতফুর রহমান চেষ্টা করছেন এই দুই দলের ভোটার এবং ভাসমান ভোটারদের নিজের দিকে টেনে তাদের ভোটেই জয়লাভ করতে। কিন্তু লুতফুর রহমান কি পারবেন জয়লাভ করতে? আগের লেখায়ই আমি বলেছি, আমি লুতফুর রহমানের বিজয়ের সম্ভাবনা দেখিনা। কারণ, তিনি এই নির্বাচনে পরাজিত হলে রাজনীতিই ছেড়ে দেবেন। একই সাথে তাঁর দল ‘এসপায়ার’ থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়া ৪৪ জনের রাজনীতির ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। গত কাউন্সিল নির্বাচনেও ‘এসপায়ার পার্টি’ একটি কাউন্সিলর পদেও জয়লাভ করেনি।

লুতফুর রহমানের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা আরও কমিয়ে দিয়েছে ২০১৫ সালের পর থেকে তাঁর নানা ধরনের খারাপ রেকর্ড। অথচ, ২০১৪ সালের মেয়র নির্বাচনে জন বিগসকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন লুতফুর রহমান। ২০১৫ সাল থেকে ক্ষমতাসীন জন বিগসের জনপ্রিয়তাও অনেক কমেছে। কিন্তু এরপরও জন বিগসকে এবার পরাজিত করা লুতফুর রহমানের পক্ষে সম্ভব হবে না। কারণ লুতফুর এবং জন বিগস -উভয়েরই জনপ্রিয়তা কমলেও ব্যাক্তিগত রেকর্ড অগ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে লুতফুরের। এর ফলে অনেক ভোটার বিকল্প প্রার্থীর দিকে ঝুঁকতে পারেন।

গত কয়েক বছরের ভোট প্রয়োগের প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, টাওয়ার হ্যামলেটসের ২০ থেকে ২৫ হাজার ভোটার রয়েছেন, যারা লুতফুর রহমান, রাবিনা খান এবং অহিদ আহমেদকে মেয়র পদে ভোট দিয়েছেন। ভোটারের এই সংখ্যা বাড়েনি; কারণ গত কয়েক বছরে এদের অনেকে টাওয়ার হ্যামলেটস ছেড়ে চলে গেছেন। যারা নতুন এসেছেন, তাঁরা লুতফুরের শাসনামল দেখেননি। নতুন যারা টাওয়ার হামলেটসে বসবাস শুরু করেছেন, তারা সাধারণত সচ্ছল এবং লুতফুরকে চেনেন না। এসব ভোটার লুতফুর রহমানের দিকে ঝোঁকার সম্ভাবনা কম। আবার আসি, সেই ২০ থেকে ২৫ হাজার ভোটার প্রসঙ্গে। রাবিনা খান এবং অহিদ আহমদ যখন মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন, তখনও এই ভোটের অধিকাংশ পেয়েছিলেন রাবিনা। এবার এই ভোট বিভক্ত হবে লুতফুর রহমান এবং রাবিনা খানের মধ্যে। এবার লুতফুর এই ২০ থেকে ২৫ হাজার ভোটের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ পেলেও অন্ততঃ ৩০শতাংশ যাবে রাবিনার ভাগে। গ্রুপিঙয়ের রাজনীতিতে লুতফুর রহমান একটা বড় অংশের কাছে অজনপ্রিয় হয়েছেন। এর ফলে ২০-২৫ হাজার ভোটের সবগুলো লুতফুরের ভাগে যাবেনা।

ক্যাম্পেইনের মাঠে লুতফুর রহমানের সমর্থকেরা জন বিগস এবং রাবিনা খান উভয়ের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। জন বিগসের সমর্থকেরা লুতফুরের বিরুদ্ধে অনেক কঠিন প্রচারণা চালাচ্ছে। এর ফলে জন বিগস এবং লুতফুর- উভয়েরই ভোট আগের চেয়ে তুলনামুলকভাবে কমবে। রাবিনার ভোট বাড়বে, কিন্তু মেয়র নির্বাচিত হওয়ার মতো পর্যায়ে যেতে হলে নাটকীয় একটা কিছু ঘটতে হবে। কিন্তু আশার কথা হলো, রাবিনা খান মেয়র না হলেও কাউন্সিলার নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা তাঁর উজ্জ্বল। ফলে তিনি স্থানীয় জনগণের সেবায় থেকে যেতে পারবেন। অন্যদিকে লুতফুর পরাজিত হলে রাজনীতি  থেকে একেবারেই হারিয়ে যাবেন। তিনি নিজেই এই স্বার্থপর পরিকল্পনা করেছেন। তাঁকে মেয়র নির্বাচিত করলে তিনি রাজনীতির মাঠে থাকবেন, অন্যথায় নয়। আর লুতফুর না থাকলে, এসপায়ার পার্টির ৪৪ কাউন্সিলর প্রার্থীর ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত।

আব্দুল হাই সঞ্জু
৪ মে ২০২২
লন্ডন

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০