আব্দুল হাই সঞ্জুঃ
লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মেয়র নির্বাচনে আবারও প্রার্থী হয়েছেন লুতফুর রহমান। সাবেক এই মেয়রের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা আমি দেখিনা। কারণঃ
১) এই নির্বাচনকে তিনি লটারি হিসেবে নিয়েছেন। জিতলে তিনি মেয়র হিসেবে থাকবেন; আর হারলে তিনি রাজনীতিতেই থাকবেন না। গত পাঁচ বছর যেমন তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে ছিলেন না, নির্বাচনে পরাজিত হলে তিনি রাজনীতি একেবারেই ছেড়ে দেবেন। অথচ, গত পাঁচ বছর তিনি নির্বাচনে নিষিদ্ধ ছিলেন, রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ছিলেন না। অর্থাৎ, স্থানীয় জনগণের প্রতি আসলে তাঁর কমিটমেনট নেই; ‘মেয়র বানাইলে আছি, নাইলে নাই’।
২) লুতফুর রহমানের কমিটমেনট প্রমাণ হতো তখন, যদি তিনি মেয়র প্রার্থী হওয়ার পাশাপাশি একটা কাউন্সিলার পদেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। তিনি সহজেই কাউন্সিলার নির্বাচিত হতে পারতেন। এর ফলে যেই মেয়র নির্বাচিত হোক না কেন, কাউন্সিলের মিটিঙে তিনি স্থানীয় জনগণের পক্ষে প্রবল চাপ সৃষ্টি করতে পারতেন। এই সুযোগ তিনি সচেতনভাবে হাতছাড়া করেছেন। কিন্তু রাবিনা খান কিন্তু এই ভুল করেননি। প্রতিবারই তিনি মেয়র পদের পাশাপাশি কাউন্সিলার পদেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে স্থানীয় জনগণের পাশে থাকার সুযোগ হাতে রেখেছেন। এমনকি অহিদ আহমেদের মধ্যেও এই কমিটমেনট আছে। ২০১৮ সালের মেয়র নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর ২০১৯ সালে একটি ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কাউন্সিলের রাজনীতিতে থেকে যেতে চেয়েছিলেন। পরাজিত হয়ে এবার আবারও নির্বাচন করছেন। লুতফুর রহমানের রাজনীতির কোনো পথরেখা নেই। যে রাজনীতিবিদের কোনো ‘প্ল্যান-বি’ নেই, তাঁর ওপর ভরসা করা যায়না।
৩) মেয়র নির্বাচনকে লুতফুর রহমান লটারি হিসেবে নিয়েছেন, এই বক্তব্যের পক্ষে আরও একটি প্রমাণ হলো ‘এসপায়ার পার্টি’ এর নিষ্ক্রিয়তা। গত পাঁচ বছরে এই পার্টির কোনো কর্মসূচি ছিলনা। নির্বাচন করতে হবে বলেই এই পার্টিকে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে আবার সক্রিয় করা হয়েছে। গত কয়েক বছরে জন বিগসের প্রশাসনের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অনেক সফল ক্যাম্পেইন হয়েছে। যেমনঃ নার্সারি বন্ধের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন, বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস বন্ধের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন, ব্রিকলেইনে ওল্ড ট্রুম্যান ব্রুয়ারিতে দোকান, রেস্টুরেন্ট বানানোর বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন, হোয়াইটচ্যাপেলে ওসমানী স্কুলের নাম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন ইত্যাদি। এসব একটা ক্যাম্পেইনের সাথেও ‘এসপায়ার পার্টি’ দলীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি পালন করেনি; তাদের কোনো অবস্থানও ছিলনা। লুতফুর রহমানকে ব্যক্তিগতভাবেও এসব ক্যাম্পেইনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিতে দেখা যায়নি। মেয়র পদ্ধতি নিয়ে অনুষ্ঠিত গণভোট এবং একটি ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছিল লুতফুর রহমানকে। অর্থাৎ, নির্বাচনকেন্দ্রিক ক্যাম্পেইনে তিনি থাকেন, অন্য কিছুতে থাকেন না। সম্প্রতি মেয়র নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘শীতনিদ্রা’ ভেঙ্গে আবার উদীত হয়েছেন লুতফুর রহমান। মোট কথা, স্থানীয় কমিউনিটির প্রয়োজনের সময়ে নিষ্ক্রিয় থাকার মধ্যে লুতফুর রহমানের কমিটমেনটের ঘাটতি স্পষ্ট।
৪)লুতফুর রহমানের শত্রু লুতফুর রহমান নিজেই। তাঁর গ্রুপিং রাজনীতির ধারাবাহিকতায় এক সময়ের রাজনৈতিক মিত্ররা এখন তাঁর শত্রু। অগণতান্ত্রিক আচরনের শিকার হয়ে অনেকে গ্রুপ ছেড়ে চলে গেছেন; গ্রুপ ভেঙ্গে কয়েক টুকরো হয়ে যাওয়ায় তাঁর শত্রুও বেড়েছে। এখন তাঁর পুরনো মিত্ররাই নির্বাচনী প্রচারণায় লুতফুরের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন করছেন। গ্রুপ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে ভোট ব্যাঙ্কও ছোট হয়ে গেছে।
৫)লুতফুর রহমান মেয়র থাকাকালে স্থানীয় জনগণের পছন্দের কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন; সেগুলো প্রশংসিতও হয়েছিল। কিন্তু সুনামের চেয়ে লুতফুর রহমানের দুর্নামের পাল্লা ভারি। শুধুমাত্র মেয়র থাকাকালে দুই-চারটি ভালো পলিসি নেয়ার কারণেই একজন প্রার্থীকে মেয়র নির্বাচিত করা যায়না। কয়েকটি ভালো কাজ খারাপ রেকর্ডকে মুছে দিতে পারেনা। আর সর্বোপরি রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং কমিটমেনট না থাকলে তিনি অবশ্যই একজন ভালো রাজনীতিবিদ নন এবং এ কারণে অবশ্যই তিনি একজন ভালো মেয়র প্রার্থীও নন।
আব্দুল হাই সঞ্জু
১ মে ২০২২
লন্ডন
(লেখকের ফেইস বুক থেকে নেয়া)