নবাব উদ্দিনঃ পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসে বইছে নির্বাচনি উত্তাল হাওয়া। সে হাওয়ায় উত্তপ্ত অলিগলি। চলছে বেশুমার প্রচারণা। সকাল থেকে রাত অবধি প্রার্থী, সমর্থকরা কড়া নাড়ছেন ভোটারের বাড়ির দরজায়। তবে সব দরজা খুলছে না। হচ্ছে না ভোটারের সঙ্গে সাক্ষাৎ। তবে তাতে তেমন সমস্যা নেই। ভোটারের দরজা বন্ধ থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় দরজায় নেই তালার বন্দোবস্ত। ঘরে থাকা ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটার আর হাতের মোবাইলে ঠিকই উঁকি দিচ্ছেন প্রার্থী। ফেইসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপ এখন প্রচারণার সবচেয়ে বড় ক্যানভাস। এসব মাধ্যমে প্রচারণার পাশাপাশি চলছে পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক-বিতর্ক। কখনো সেটা উপভোগ্য, কখনো সেটা বিব্রতকর।
নানান কারণে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মেয়র নির্বাচনে তীক্ষ্ন নজর রেখেছে গোটা দেশ। আর পূর্ব লন্ডনের সব আড্ডায় গল্পে ঘুরেফিরে নির্বাচনী প্রসঙ্গের আনাগোনা।
টাওয়ার হ্যামলেটস নির্বাচন নিয়ে আগেও নিবন্ধ লিখেছিলাম, তাতে পাঠকের অভাবনীয় সাড়া পেয়ে মনে হলো, এই ইস্যুতে আরো কিছু লেখা প্রয়োজন।
মজার ব্যাপার হল, আমি মূলত মেয়র প্রার্থী লুৎফুর রহমান, জন বিগস ও রাবিনা খানের নির্বাচনী ইশতেহার ও অন্যান্য প্রচারপত্র পড়েছি। সাথে সাথে তাদের অনেকগুলো ভিডিও প্রমোও দেখেছি। এছাড়া হাউজিং ইস্যু নিয়ে কেএম আবু তাহের চৌধুরী ভাই ও শামসুল হক তালুকদারের ফেইসবুক ও সোস্যাল মিডিয়ার পোস্ট পড়ে আমার আগ্রহ জাগে এই ইস্যু নিয়ে কিছু লিখতে। সাপ্তাহিক ব্রিকলেন পত্রিকা (৮-১৫ এপ্রিল ২০২২ সংখ্যা) হাউজিং সম্পর্কিত একটি গবেষণামূলক নিবন্ধ প্রকাশ করেছে; এছাড়া আবীর মাহমুদ (ব্যাক্তিগত পরিচয় নেই), ‘এলবি ২৪’ এর তরুণ সাংবাদিক জুবায়ের আহমদ, প্রাক্তন কাউন্সিলার ও কমিউনিটি নেতা সোনাহর আলী হাউজিং নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি ও তাদের মতামত ফেসবুকে তুলে ধরেছেন। যেগুলো অত্যন্ত কৌতূহলোদ্দীপক মনে হয়েছে।
অন্যদিকে, সাবেক কাউন্সিলার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহেদ আলী গত ১৭ এপ্রিল, রবিবার ফেসবুকে এক পোস্টে উল্লেখ করেছে, লিজহোল্ডারদের বড় বড় কাজের বিল অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। শাহেদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কটা চমৎকার। এক সময় সে আমার মঞ্চ নাটকের প্রযোজনায় অনেক কাজ ও সহযোগিতা করেছে। এখনও সেই আগের মতই আমাদের সম্পর্ক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নির্বিশেষ। আমি তার কাছে জানতে খুবই আগ্রহী, সে কীভাবে এই সিদ্ধান্ত উপনীত হল যে বড় কাজের বিল বৃদ্ধি পেয়েছে? গত বিলের সাথে কীভাবে বর্তমান বিলের তুলনা করেছে? আমি সত্যিই অবাক হয়েছি যে, বড় কাজগুলো বিল্ডিংএ প্রতি বছর করানো হয় না। এটি কোন মাসিক মোবাইল ফোন বা অন্য কোন ইউটিলিটি বিলের মতো নয় যে আপনি তুলনা করতে পারবেন। এটি সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে বিল্ডিং এর কম্পোনেন্ট (উপাদান) লাইফ সাইকেলের উপর, কখন বড় ধরনের কাজগুলো করা প্রয়োজন। ল্যান্ডলর্ড (টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল) কোন ভাবেই লিজলোন্ড বিল্ডিং বা বাড়িতে আইনি ‘সেকশস টুয়েন্টি’র পরামর্শ প্রক্রিয়া ছাড়া বড় ধরনের কাজ করতে পারবে না, যদি কাজগুলি ২৫০ পাউন্ডের উপরে হয়। ‘সেকশন টুয়েন্টি’র বিভিন্ন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপ রয়েছে, যেখানে লিজহোল্ডারদের অনেক ক্ষমতা রয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে যখন লিজহোল্ডাররা বড় কাজের নোটিশ পান তখন তারা প্রতিটি খরচের ব্যাখ্যা চাইতে পারেন কাজ শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত, যতক্ষণ না লিজহোল্ডারদের প্রশ্নের উত্তরের সমাধান হয়; ততক্ষণ পর্যন্ত ল্যান্ডলর্ড বিল্ডারকে কাজের অনুমতি দিতে পারবে না। সাধারণত বড় কাজগুলো প্রতিযোগিতামূলক টেন্ডাররের ভিত্তিতে কনট্রাক্টরদের কাজ প্রদান বা নিয়োগ করা হয়। যদি বড় কাজের খরচের উপর মতবিরোধ থাকে তবে লিজহোল্ডাররা লিজহোল্ড ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার সুবিধা রয়েছে চূড়ান্ত সমাধানের জন্য। আমি পুরোদমে অবাক হয়েছি, শাহেদ কীভাবে এটাকে নির্বাচনী প্রচারণার বিষয় হিসেবে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে।
এখন হাউজিং নিয়ে বাস্তবতার কথা বলি। মেয়র প্রার্থীদের ইশতেহারে হাউজিং এর পরিসংখ্যান খুবই আকর্ষণীয়। যেহেতু আমি বহু বছর ধরে হাউজিং সেক্টরে কাজ করে আসছি সেহেতু আমি উপলব্ধি করেছি, যে কিছু তথ্য বিভ্রান্তিকর বা ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে প্রার্থীরা হয়তো সেইভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন যাতে তারা হাউজিং ইস্যুতে নির্দিষ্ট ভোট জিততে পারেন।
আমার মনে হয় হাউজিং বিষয়ে কিছু লিখার শুরুতেই পাঠকদের বলা উচিত, হাউজিং ইস্যুতে কেন আমি এত আগ্রহী। শ্রদ্ধেয় এ কে এম আবু তাহের চৌধুরী আমার কাছে বড় ভাইয়ের মত, তিনি অ্যাস্পায়ার পার্টির চেয়ারম্যানসহ যুক্তরাজ্যের অনেকগুলো সংগঠনের নেতৃত্বে আছেন। মাঝে মাঝে অবাক হই যে, কীভাবে একজন ব্যক্তি অনেক পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেন এবং অনেক সংগঠন পরিচালনা করতে পারেন। আমি তার সাহস এবং শক্তির জন্য তাকে অভিনন্দন জানাই। বিলেতের বাঙালি কমিউনিটির প্রতি তার ত্যাগ, উৎসর্গ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার । প্রতিদিন তিনি ফেসবুকে একটা না একটা পোস্ট দিচ্ছেন, তাও আবার সুদীর্ঘ লেখা। কিন্তু তাহের ভাই ও অন্যান্যরা অনেকই হয়তো জানেন না যে, সাংবাদিকতার পাশাপাশি আমি আরেকটি মূলধারার পেশায় আছি। বলা যেতে পারে, হাউজিং আমার নেশা ও পেশা। হাউজিং শব্দটি মিশে আছে আমার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। গত ৩৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন, লোকাল কাউন্সিল, বড় বড় হাউস বিল্ডারর্স এর সাথে কাজ করে আসছি। আমি উইস্পি হোমস, ম্যানসেল, ওয়াল্টার জেনকিন্স, সিটি অব ওয়েস্টমিনস্টার কাউন্সিল, লন্ডন বারা অব এন্ডফিল্ড, টয়েনবি হাউজিং, রডিংলি হাউজিং, ওয়ান হাউজিং, আইল অফ ডগস হোমস, এল এন্ড কিউ এবং বর্তমানে ব্রিটেনের শীর্ষ এবং অন্যতম বৃহৎ একটি হাউজিং এর শীর্ষ পদে কর্মরত আছি। আমাদের হাউজিং বর্তমানে প্রায় ৬০,০০০ হাজার বাড়িঘর পরিচালনা করে এবং প্রতি বছর প্রায় ১,০০০ হাজার নতুন বাড়ি নির্মাণ করে। এ থেকে অন্তত কিছুটা প্রতীয়মান হয় যে, হাউজিং সেক্টর কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে আমি হয়তো কিঞ্চিত ধারণা রাখি।
আমাদের হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন বর্তমানে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে বাড়ি নির্মাণ করছে এবং অনেকগুলি বাড়ি পরিচালনা করে।
সৌভাগ্যবশত বা দুর্ভাগ্যবশত আমি আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়টাকে পূর্ব লন্ডনের বাংলা টাউনে কাটিয়েছি। প্রায় ৩০ বছরেরও বেশি সময় স্পেলম্যান স্ট্রীটের সাপ্তাহিক জনমত অফিসে ছিলাম, যেখানে আমার প্রথম পরিচয় লুৎফুর রহমানের সাথে। পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন আমার বন্ধু, প্রাক্তন লিডার ও কাউন্সিলর হেলাল আব্বাস। লুৎফুর রহমান ২০০২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত স্পিটালফিল্ড এবং বাংলা টাউন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। আমি যখন ওয়ান হাউজিং, টয়েনটি হাউজিং এবং আইল অফ ডগস হোমসে কর্মরত ছিলাম তখন শত শত বাঙালি বাসিন্দার সাথে ব্যাক্তিগত পরিচয় ঘটে। শুধু তাই নয়, এই এ্যাসোসিয়েশনগুলো টাওয়ার হ্যামলেটসে প্রচুর নতুন বাড়িঘর নির্মাণ করে এবং যেখানে আমি সরাসরি জড়িত ছিলাম। এছাড়াও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের যখন স্টক ট্রান্সফার হয় টয়েনবি হাউজিং এ তখন সেই প্রক্রিয়ায় আমি জড়িত ছিলাম। তাই স্বাভাবিক ভাবেই টাওয়ার হ্যামলেটসের হাউজিং ইস্যুগুলি আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে প্রাধান্য পায়।
এখন মূলকথায় আসা যাক, আবু তাহের ভাই ও শামসুল তালুকদারের ৭ এপ্রিল হাউজিং বিষয়ক ফেসবুক পোস্ট এবং সর্বশেষ মেয়র প্রার্থী লুৎফুর রহমানের নির্বাচনী প্রচারপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, লুৎফুর রহমান মেয়র থাকাকালীন কাউন্সিলের নিজস্ব ২৬,০০০ হাজার বাড়িঘরের নতুন কিচেন, বাথরুম ইত্যাদি সংস্কার করা হয় এবং ব্যয় করা হয় ১৬৮ মিলিয়ন পাউন্ড। এই তথ্য নির্বাচনি প্রচারণা সামগ্রীর জন্য ভালো, আকর্ষণীয়। কিন্তু আমার মনে হয় তথ্যগুলি আদৌ সঠিক নয়, বা ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। হাউজিং ইস্যু নির্বাচনে একটি আলোচিত বিষয় হওয়ায় এটি সহজেই ভোটারদের মন কাড়ার একটি কৌশল হতে পারে। আমি পাঠকদের কাছে সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরতে চাই। আমি মনে করি, অতীতে যখন লুৎফুর রহমানকে হাউজিং এর তথ্য তার টিম সরবরাহ করে তখন তারা যাচাই বাছাই করে নি।
টাওয়ার হ্যামলেটস হোমস হল একটি আলমো (ALMO) আর্মস লেংথ ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশন, যা অলাভজনক কোম্পানি। ২০০৮ সালে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিরের ২১,৬০০টি বাড়িতে বসবাসকারী টেনান্টসদের হাউজিং পরিসেবা সরবরাহ করার জন্য এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার মধ্যে ১১,৬০০ টি রয়েছে জেনারেল সোস্যাল রেন্টটেড বাড়ি, ৯,৬০০টি হচ্ছে লিজহোল্ড বাড়ি এবং ৩৬০টি ফ্রি হোল্ডার বাড়ি।
আগেই বলেছি, লুৎফুর রহমান তার নির্বাচনী ইশতেহার উল্লেখ করেছেন যে, তিনি ও তার কেবিনেট ১৬৮ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে কাউন্সিলের নিজস্ব মালিকাধীন ২৬,০০০ হাজার বাড়ির নতুন কিচেন, বাথরুম পুনঃনির্মাণসহ নানা উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করেন সফলতার সাথে। আমার সহজ প্রশ্ন হলো, যেখানে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল ২১,৬০০০ বাড়ির মালিক, যা টাওয়ার হ্যামলেটস হোমস দ্বারা পরিচালিত হয়, সেখানে কীভাবে ২৬,০০০ হাজার বাড়ির নতুন কিচেন, বাথরুম ইত্যাদি পুনঃনির্মাণ করলেন?
মূলত, ২১,৬০০টি বাড়ির মধ্যে ৯,৬০০টি বাড়ি লিজহোল্ড, আর লিজহোল্ড মালিকাধীন বাড়িগুলির অভ্যন্তরীণ সংস্কার কাজ কাউন্সিলের দায়িত্বে নয়, বরং লিজ চুক্তি অধীনে লিজহোল্ডাররা নিজেই কিচেন, বাথরুম ইত্যাদি নিজ খরচে সম্পন্ন করেন। এর অর্থ হচ্ছে কাউন্সিল মোট ১১,৬০০ বাড়িতে নতুন বাথরুম কিচেন ইত্যাদি পুনঃনির্মাণ করে। তাই আমি ২৬,০০০ বাড়ির হিসাব মিলাতে হিমশিম খাচ্ছি, কোনোভাবেই মিলাতে পারছি না । অতি সহজ হিসাবেই এটা পরিষ্কার হল যে, টাওয়ার হ্যামলেট হোমস তাদের অধীনের ১১,৬০০ বাড়িতে নতুন কিচেন, বাথরুম ইত্যাদি পুনঃনির্মাণ করেছে। কষ্মিন কালেও ২৬,০০০ হাজার বাড়িতে নয়। তবে কোত্থেকে এই অভিনব তথ্য আবিষ্কার হলো?
ডিসেন্ট হোমস স্ট্যান্ডার্ড মানদন্ড এবং রিকসের নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতিটি বিল্ডিং কোম্পোনেন্টের একটি লাইফ সাইকেল রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, কিচেনের লাইফ সাইকেল হলো ২০ বছর, বাথরুমের ৩০ বছর, জানালার ২৫ থেকে ৪০ বছর (নির্ভর করে উপাদানের উপর। যথা- অ্যালুমিনিয়াম, টিম্বার, বা মেটাল ইত্যাদি)। আমি বলছি না যে, তারা ডিসেন্ট হোমস স্ট্যান্ডার্ড মানদন্ডের অধীনে বাড়িগুলিতে নতুন কিচেন, বাথরুম স্থাপন করে নি, তবে বাড়ির পরিসংখ্যান স্পষ্টতই একটি বিভ্রান্তিকর তথ্য। এটি হয়তো বা ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে বা অজান্তে হয়েছে, নতুবা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রচারের উদ্দেশ্য বড় সংখ্যা তুলে ধরা হয়েছে। আমি অবাক হলাম, গত কয়েক বছরের মধ্যে কেউ একজন পর্যন্ত এ তথ্য নিয়ে কথা বলেনি, এমনকি কোন কাউন্সিলর বা বাসিন্দারাও। আবার যদি টাওয়ার হ্যামলেটস হোমস লিজহোল্ডারস ব্লকে ছাদ বা জানালা পুনঃনির্মাণ করে থাকেন, তখন লিজহোল্ডাররা সেই ব্যয় বহন করে থাকেন তাদের লিজের চুক্তি অনুযায়ী।
আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, যুক্তরাজ্যের বেশিরভাগ কাউন্সিল তাদের হাউজিং ঘর-বাড়ি ভালভাবে মেরামত অবস্থায় রাখতে পারে নি এবং হাউজিংয়ের ঘরবাড়ির অবস্থা ছিল বসবাসের অযোগ্য। কিচেন, বাথরুম, জানালা বা ছাদের মেরামত দীর্ঘদিন না করায় ২০০২ সালে টনি ব্লেয়ার লেবার সরকার নন-ডিসেন্ট বাড়িগুলির জন্য ডিসেন্ট হোমস স্ট্যান্ডার্ড মানদন্ড চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং হাউজিংগুলিরর বকেয়া মেরামত ও পুনঃনির্মাণ সমপন্ন হয়। বাসিন্দারা যাতে কাউন্সিলের বাড়িতে আরও ভাল অবস্থায় ও আরামদায়কভাবে বসবাস করতে পারেন সেই লক্ষ্যে সরকার ২০১০ সালের মধ্যে যাতে নন-ডিসেন্ট বাড়িগুলোর কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা বা তারিখ নির্ধারণ করে। তখন স্থানীয় কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ এবং হাউজিং এসোসিয়েশনগুলো মেরামত বা পুননির্মাণ কাজগুলি সম্পূর্ণ করার জন প্রচুর চাপের মধ্যে ছিল এবং এই বকেয়া কাজের অর্থের জন্য অর্থ খুঁজতে পুরোদমে তাদের সংগ্রাম করতে হয়েছিল।
সেই সময় কিছু কাউন্সিল হাউজিং পরিসেবা প্রদানের জন্য এবং বকেয়া কাজগুলি সম্পূর্ণ করার জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য আলমো (ALMO) স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সময়কালে ২০০৮ সালে টাওয়ার হ্যামলেটস হোমস স্থাপন করা হয়, যাতে তারা প্রয়োজনে কাজগুলো সম্পূর্ণ করার জন্য তাদের সম্পদের বিপরীতে অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন। একই সময়ে টয়েনবি হাউজিং এসোসিয়েশনসহ অন্যান্য এসোসিয়েশনগুলোতে বিশাল হাউজিং স্টক স্থানান্তর করা হয়।
অন্যদিকে, ডেনিস জোন্সের স্থলাভিষিক্ত হয়ে ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে লুৎফুর রহমান কাউন্সিলের লিডার নির্বাচিত হন এবং মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি কাউন্সিলের লিডার ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে, কেন তারা ২০১০ সালের মধ্যে লুৎফুর রহমান কাউন্সিলের নেতা থাকাকালীন দীর্ঘ বকেয়া নন ডিসেন্ট কাজগুলির কর্মসূচি সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন? ২০১০ সালের আগে কিচেন ও বাথরুমের বেহাল দশা কেন সৃষ্টি করা হয়েছিল? কেন এগুলো ২০০২ সাল থেকে ২০১০ সারের মধ্যে সম্পন্ন করা হয় নি? এর দায়ভার কোন প্রশাসনের উপর বর্তায়? টেনান্টসরা যে ভাড়া পরিশোধ করেন তার মধ্যে সার্ভিস চার্জ এবং মেরামতের খরচের এক অংশ থাকে। কেন টেনান্টসদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল খারাপ হাউজিং এর জন্য?
যেহেতু কিছু হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন এবং স্থানীয় কাউন্সিলের পক্ষে ২০১০ সালের মধ্যে ডিসেন্ট হোমস স্ট্যান্ডর্ড প্রোগ্রাম সম্পূর্ণ করা কঠিন হয়ে উঠে এবং নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়, তখন হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন ও স্থানীয় কাউন্সিল সেন্টার সরকারকে সময় বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছিল এবং সেটি ২০১২ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। যদিও কিছু কিছু কাউন্সিল এই মেয়াদের পর অসম্পূর্ণ কাজগুলি সম্পূর্ণ করেন। যার ফলে সম্ভবত টাওয়ার হ্যামলেট হোমস তাদের কাজগুলি লুৎফুর রহমান মেয়র থাকাকালীন সমাপ্ত করে।
সত্য কথা বলতে কি, হাউজিংয়ের বাড়ির কিচেন, বাথরুম ও অন্যান্য কিছু মেরামত বা প্রতিস্থাপনের কৃতিত্ব যে কোন মেয়র বা লিডার কেন নিবেন? কেন এই কাজগুলি যখন করার কথা ছিল তখন সম্পন্ন হয় নি? যখন দেরিতে সম্পন্ন হলো লুৎফুর রহমানের মেয়র আমলে তখন এটাকি মেয়রের কৃতিত্ব? টেনান্টসরা ভাড়া দিবে, আবার ভাড়ার মধ্যে সার্ভিস চার্জেও মেরামতের অংশ থাকে তখন এটা টেনান্টসদের হক বা প্রাপ্য; তাদেরকে সেই সার্ভিস দেয়া উচিত সঠিক সময় মতো। দীর্ঘ বকেয়া কিচেন ও বাথরুম প্রতিস্থাপন করে কাউকেই এই কৃতিত্ব নেয়া সঠিক নয়। আবার যে পরিসংখ্যা তুলে ধরা হয়েছে তাতেও আবার বিভ্রান্তি! আমি কোন ভাবেই হিসাব মিলে পারি নি।
আগেই বলেছি, আরেকটি মজার ব্যাপার হল টাওয়ার হ্যামলেটস হোমসের অধীনে ৯,৬৪০ জন লিজহোল্ডারস রয়েছেন। উদাহরণ স্বরূপ, যখন লিজহোল্ড ব্লকে বা মিস্কর্ড ব্লকে জানালা, ছাদ বা পেইন্টিং করানো হয় তখন লিজহোল্ডারাই সেই খরচের ব্যয় বহর করেন, তাদের নিজস্ব রিজার্ব ফান্ড বা সিন্কিং (sinking) ফান্ড থেকে। আর যদি রিজার্ভ ফান্ড না থাকে তখন তারা মেজর ওয়ার্কস বিলের মাধ্যমে কাউন্সিলকে পাওনা অর্থ পরিশোধ করেন।
৮,৫৯০ ঘর নির্মিত !
একইভাবে লুৎফুর রহমান তার সর্বশেষ ইশতেহারে উল্লেখ করেছেন যে, তার প্রশাসনের সময় তিনি অন্য কোন স্থানীয় কাউন্সিলের তুলনায় ব্রিটেনে সর্বোচ্চ সংখ্যক সোস্যাল হাউজিং নির্মাণ করেন। ৫,৫৯০টি নতুন সোস্যাল হাউজিং এবং ৩,০০০ হাজার পাইপ লাইনে রেখে যান। নিশ্চিতভাবেই এটা একটি বিশাল কাজ এবং তিনি অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। কারণ তার শাসন আমলেই বাড়িগুলো তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে পরিসংখ্যানটা পরিষ্কার নয়। আমি স্বাভাবিকভাবেই হতভম্ব। তিনি দাবি করেছেন তার শাসনামলে তিনি বাড়িগুলো নির্মাণ করেছেন।
আমার প্রশ্ন হল, এই বাড়িগুলো কে নির্মাণ করেছে? এগুলি কি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল একা নির্মাণ করেছে না অন্যান্য হাউজিং এসোসিয়েশন বা ডেভেলপারদের পার্টনারশীপের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে? যদি পার্টনারশীপের মাধ্যমে নির্মাণ হয়ে থাকে তবে নির্বাচনী ইশতেহারের কথাগুলো সঠিক নয়। আবার সোস্যাল ভাড়ার জন্য সত্যিকার অর্থে কয়টি বাড়ি তৈরি করা হয়েছিল? নিশ্চয় ৫,৫৯০টি বাড়ির মধ্যে সম্ভবত শেয়ার্ড ওয়ানশিপ এবং মার্কেট রেন্টের বাড়ি ছিল।
বর্তমানে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে প্রায় ৪৫টিরও বেশি হাউজিং এসোসিয়েশন রয়েছে, যারা স্থানীয় টেনান্টসদের হাউজিং পরিসেবা প্রদান ও নতুন বাড়ি নির্মাণ করে থাকেন; তাদের মধ্যে রয়েছে সোস্যাল রেন্ট, মার্কেট রেন্ট এবং শেয়ার্ড ওনারশীপ ইত্যাদি ধরনের বাড়ি। স্বাভাবিকভাবেই, সবগুলি হাউজিং এসোসিয়েশন, ডেভেলপার, স্থানীয় কাউন্সিল লন্ডন মেয়র এবং সেন্ট্রাল সরকারের হাউজিং চাহিদা ও লক্ষ্য পূরণের জন্য একে অপরের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন। হাউজ অব কমন্স লাইব্রেরির তথ্য অনুযায়ী, ২০১১-১২ সালে ১৮১২টি, ২০১২-১৩ সালে ৪৪৯টি, ২০১৩-১৪ সালে ৮৯৭টি, ২০১৪-১৫ সালে ১২০৬টি নতুন বাড়ি নির্মাণ করা হয়। সেই হিসাব অনুযায়ী ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত হিসাব ধরলে মোট নতুন ঘর নির্মাণ হয় ৪,৩৬৪টি। কিন্তু তথ্যের মধ্যে এটা তুলে ধরা হয়নি যে, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে যেসব বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলি একা টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল তৈরি করেছে না অংশীদারিত্বে। যাই হোক এখানে প্রশ্ন হল হাউজ অব কমন্স লাইব্রেরির তথ্য এবং লুৎফুর রহমানের নির্বাচনি ইশতেহারের তথ্য ভিন্ন! তাহলে কে সঠিক? হাউজ অব কমন্স লাইব্রেরি না অ্যাস্পায়ার পার্টির নির্বাচনী ইশতেহার?
স্বভাবতই, হাউজ অব কমন্স লাইব্রেরি যে তথ্য সংগ্রহ করে তা টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল সরবরাহ বা প্রদান করে থাকে। আমার মনে হয় পাঠকরা নিজেই বুঝে নিতে পারবেন, এটি স্ব-ব্যাখ্যামূলক।
অন্যদিকে, লেবার মেয়র জন বিগসের সময়কালে ২০১৬ সাল থেকে (যদিও তিনি ২০১৫ সালে মেয়র নির্বাচিত হন) ২০২১ সাল পর্যন্ত সব মিলিয়ে মোট ঘরবাড়ি নির্মাণ হয়েছে ৫,৩৫১টি। এর মধ্যে সোস্যাল রেন্ট ৫১৪টি এবং অ্যাফরডেবল রেন্ট ২০৬০টি, সম্ভবত বাকিগুলি শেয়ার্ড ওনারশিপ। যদিও জন বিগস ১০০ অর্জনের লিফলেটের ৮৭ এবং ৮৮ বোলেট পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়েছে, “২০১৫-২০২১ সময়কালে ৬,০০০টির বেশি বাড়ি সোস্যাল হাউজিং পার্টনারশিপের মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়, যা লন্ডনের সবগুলো বারার মধ্যে সর্বোচ্চ।” আমার মতে, নির্বাহী মেয়র জন বিগস দাবি করেছেন না যে, তার মেয়াদে টাওয়ার হ্যামলেটসে ৬,০০০টি বাড়ি তিনি এককভাবে নির্মাণ করেছেন; তিনি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, তার আমলে বাড়ি নির্মাণ হয়েছে অন্যান্য হাউজিং এ্যাসোসিয়েশনের পার্টনারশিপের মাধ্যমে। এর জন্য আমি মনে করি তার বক্তব্য সঠিক, তিনি একা কৃতিত্ব নিতে চান নি।
অন্যদিকে লুৎফুর রহমান মেয়র ছিলেন ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত। তার সময়ে নতুন বাড়ি নির্মাণ হয় ৫,৫৯০টি (লুৎফুর রহমানের তথ্য অনুযায়ী) কিন্তু হাউস অব কমন্স লাইব্রেরির তথ্য অনুযায়ী ৪,৩৬৪টি। আর জন বিগস মেয়র ছিলেন ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এবং তার আমলে নতুন বাড়ি নির্মাণ হয় ৬,০০০ হাজারের কাছাকাছি। তাহলে আমরা উপরের তথ্যের ভিত্তিতে ধরে নিতে পারি, জন বিগসের আমলে বেশি নতুন বাড়ি নির্মাণ হয়।
যেহেতু আমার লেখাটি দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে, তাই আমি আর ৭৪ মিলিয়ন পাউন্ড অতিরিক্ত বোনাস নিয়ে কথা বাড়াতে চাচ্ছি না। লুৎফুর রহমানের শাসন আমলে সর্বোচ্চ সংখ্যাক বাড়ি নির্মাণ করে যে অতিরিক্ত বোনাস পেয়েছেন, জন বিগসের শাসন আমলে তেমনি সর্বোচ্চ সংখ্যক বাড়ি নির্মাণ করে বোনাস পেয়েছেন। অংক যাইহোক না কেন, আমি নিশ্চিত তারা দুজনই এই অতিরিক্ত বোনাস আরও নতুন বাড়ি নির্মাণের খাতে ব্যয় করেছেন।
হাউজিং স্বল্পতার চাহিদা কমাতে নতুন বাড়ি-ঘর নির্মাণের জন্য কাউন্সিল মেয়রের যেমন নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি থাকে তেমনি কেন্দ্রীয় সরকার ও লন্ডন মেয়রেরও ঘরবাড়ি নির্মাণে প্রতিশ্রুতি থাকে। তাই কাউন্সিল, হাউজিং এসোসিয়েশন ও ডেভেলাপাররা সেই চাহিদা মেঠাতে যৌথভাবে কাজ করেন। যদিও প্রত্যেকেরই আলাদা বাজেট ও আলাদা ডেভেলাপমেন্ট প্রোগ্রাম থাকে।
নির্বাচনী ইশতেহার !
আমার বোধগম্য হয় যে, লন্ডন মেয়র, কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় কাউন্সিলর হাউজিং চাহিদা মেটাতে পুরনো বিল্ডিং ভেঙে ফেলা এবং নতুন বাড়ি নির্মাণ করা একটি চলমান প্রক্রিয়া, যে কেউই মেয়র নির্বাচিত হন না কেন।
জন বিগস লেবার পার্টির ইশতেহারে উল্লেখ করেছেন, নতুন কাউন্সিল হাউজিং সংখ্যা বাড়ানো তাদের কর্মসূচিতে ১০০০ হাজারের বেশি অতিরিক্ত বাড়ি রয়েছে এবং পরবর্তীতে আরও ১০০০ হাজার বাড়ি আসছে। আরও উল্লেখ করা হয়, “আমরা আরও ৪,৫০০টি নতুন সোশ্যাল হাউজিং নির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে বারাতে অন্যান্য হাউজিং এসোসিয়েশনের সাথে কাজ করছি”। জন বিগসের নতুন বাড়ি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি মোটামোটি স্পষ্ট, যদিও তিনি উল্লেখ করেন নি কতগুলা সোস্যাল রেন্টের বাড়ি নির্মাণ করবেন। তা সত্তেও, কাউন্সিল ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে যে, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল প্রতিশ্রুতিবদ্ব দুই হাজার (২,০০০) নতুন বাড়ি শনাক্ত ও সরবরাহ করতে। এর মধ্যে বেশিভাগই হবে নতুন বাড়ি এবং কিছু ক্রয় করা হবে।
লুৎফুর রহমান তার পার্টির ইশতেহারে উল্লেখ করেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে প্রতি বছর ১০০০ হাজার নতুন সোস্যাল মূল্যের নতুন ভাড়া বাড়ি তৈরি করবেন। তিনি পরিষ্কার বলেন নি যে, এগুলা কি কাউন্সিল একা নির্মাণ করবে না অন্যান্য হাউজিং এ্যাসোসিয়েশনের পার্টনারশিপ সাথে।
অন্যদিকে লিব ডেমের মেয়র প্রার্থী রাবিনা খান তার নির্বাচনি ইশতেহারে উল্লেখ করেছেন, হাউজিং এসোসিয়েশনগুলোকে জবাবদিহিতার সম্মুখীন করবেন এবং তিনি ২,০০০ হাজার নতুন বাড়ি নির্মাণ করবেন, যেগুলা হবে সোশ্যাল হাউজিং ফ্যামালি ইউনিট। তিনি পরিষ্কার বলেন নি যে, ২,০০০ হাজার নতুন বাড়ি কি প্রতি বছর নির্মাণ করবেন না তা হবে পরবর্তী চার বছরের মধ্যে। যদি চার বছর মধ্যে হয় তবে অবশ্যই এটি অর্জনযোগ্য প্রতিশ্রুতি। আর যদি প্রতি বছরের প্রতিশ্রুতি হয়, তবে পার্টনারশিপ ছাড়া একা কাউন্সিলের পক্ষে এটা অর্জন করা বাস্তবে সম্ভব নয়।
বর্তমানে টাওয়ার হ্যামলেটস হাউজিং ওয়েটিং লিস্টে ১৯,০০০ লোক অপেক্ষায় রয়েছেন এবং এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন বাড়ি নির্মাণের বিশাল চাহিদা রয়েছে।
নির্বাচনে লুৎফুর রহমান, জন বিগস বা রাবিনা খান যেই জয়ী হবেন, হাউজিং এর চাহিদা মেটানো হবে তাদের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। লন্ডন মেয়রের খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী (২০২২-২০৩২ সাল) লন্ডনে হাউজিং এর প্রয়োজনীয়তা মেটাতে বছরে ৬৫,০০০হাজার নেট নতুন বাড়ির জন্য ক্ষমতা নিশ্চিত করা হয়েছে, যার ৫০ শতাংশ হবে সোস্যাল হাউজিং।
যেই মেয়র নির্বাচিত হন না কেন, লন্ডন মেয়রের খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলসহ অন্যান্য হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন ও ডেভেলাপাররা লন্ডনের হাউজিং চাহিদা মেটাতে একযোগে কাজ করবেন এবং তা মেটানোর জন্য লন্ডন মেয়র এবং কেন্দ্রীয় সরকার ডেভেলপমেন্টের উপর ভিত্তি করে গ্রান্ট প্রদান করে থাকে। যারাই বিজয়ী হবেন তারা চলমান প্রক্রিয়ার সাথে কাজ চালিয়ে যাবেন।
টাওয়ার হ্যামলেটস নির্বাচনে বরাবর বড় ইস্যু হাউজিং। এই ইস্যু নিয়ে বিভ্রান্তিও কম তৈরি করা হয়নি। বাড়ি নিয়ে এ অতিরঞ্জন, বুঝি কেবল টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলেই সম্ভব।
লেখক: নবাব উদ্দিন, হেড অব প্ল্যানড ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে একটি প্রধান হাউজিং এ্যাসোসিয়েশনে কর্মরত।
সাবেক সম্পাদক, সাপ্তাহিক জনমত ও সাবেক প্রেসিডেন্ট, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব।