রুমা মোদকঃ
নুহাশ চাইলেই অস্বীকার করতে পারবেন না তিনি হুমায়ুনের পুত্র। জিনও অস্বীকার করতে পারবেন না,অস্বীকার করতে পারবেন না খ্যাতির উত্তরাধিকারও।
আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ এবং দায় দায়িত্বের জায়গা থেকে পিতা হিসাবে হুমায়ুন আহমেদের যতোটুকু দায়িত্ব পালন করার কথা কিংবা গুলতেকিন সহ তাঁর প্রথম পরিবারের যে প্রত্যাশা ছিলো তা তিনি পালন করেন নি। হতে পারে দু পক্ষের প্রত্যাশায় পার্থক্য ছিলো আকাশ পাতাল। একবার এক সাক্ষাৎকারে গুলতেকিন বলেছিলেন তিনি চান হুমায়ুন লেখালেখি ছেড়ে দিয়ে সংসারে মন দিন। জাতির সম্পদ হুমায়ুন লেখা ছেড়ে দিয়ে নিরীহ মাস্টার হয়ে গৃহকর্তার জীবন কাটানোর বাঞ্চা করেন যে নারী, জাতি তাঁর উপর মহা ক্ষিপ্ত হতে পারে।
কিন্তু একজন হুমায়ুনকে হুমায়ুন হতে দেয়া, চার/পাঁচজন সন্তানের জন্ম দেয়া তাদের লালন করা, সংসারের দায় এবং দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে দুর্বহ যাপনের বেদনা বোধকরি কেবল তিনিই জানেন যিনি সে অকূল সমুদ্র পাড়ি দিয়েছেন।বহুদিন চুপ করে থাকার পর ইদানিং তিনি একটু আধটু মুখ খুলছেন।লেখকের প্রেমে পড়ে বিয়ে করার অপরাধে তিনি আজীবন সংসারের জোয়াল টানার শাস্তি ভোগ করবেন এরকম দাসখত তো তিনি দেননি৷ হুমায়ুন আহমেদ হুমায়ুন আহমেদ হলে গুলিতেকিনের জীবনের যাপিত দিনের ভার কি হালকা হয়? হয়না,হয়নি৷ তিনি হাল ছাড়েননি। নুহাশ মূলত সেই গুলিতেকিনের পুত্র।
কিন্তু পিতা হুমায়ুনের নাম নুহাশের নামের সাথে লেগে আছে জন্মদাগের মতো। তিনি চাইলেও একে অস্বীকার করতে পারবেন না। এই যে নির্মাতা নুহাশ, তাঁর নির্মাণ নিয়ে তাঁর বক্তব্য নিয়ে এতো হৈচৈ হুমায়ুনের পুত্র না হলে তার এক আনাও হতো না।
এই ফেইসবুক জামানায় আমি কতো মেধাবী নির্মাতাকে দেখছি অসাধারণ মেধা আর সৃষ্টিশীলতা নিয়ে হয় অর্থাভাবে নয় প্রচারের অভাবে হতাশ হয়ে বসে আছেন! নামের শেষে নক্ষত্রের মতো পিতার নাম নেই বলে তাঁরা নির্মাতা হবার প্রবল সম্ভাবনা আর তুমুল ইচ্ছা নিয়ে অকূল সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছেন,থৈ পাচ্ছেন না। অথচ নুহাশ কতো সহজে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এলেন!
হয়তো নুহাশ খুব মেধাবী নির্মাতা,হয়তো নুহাশের হাত ধরেই বাংলা চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাবে। হুমায়ুনের কারণে তাঁর অর্জন, এই মতামত দেয়া তাঁর জন্য দুর্ভাগ্যই বটে,এতে তাঁর প্রতিভাকে অবমূল্যায়ন করা হয়। ন্যায় আচরণ হয় না গুলতেকিনের সংগ্রামের প্রতিও। কিন্তু এই যে শুরুতেই দেশ নুহাশকে নিয়ে এতো উত্তাল তা শুধুই হুমায়ুন আহমেদ এর কারণেই। সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য তিনি তা চাইলেই অস্বীকার করতে পারবেন না।
এত্তো আলোচনার পর নুহাশের নির্মাণ না দেখা অপরাধ হবে। খুব শিগগিরই দেখে নেবো।
নুহাশের দুর্ভাগ্য এবং সৌভাগ্যের নাম হুমায়ুন
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin