ব্রিকলেন নিউজঃ আগামী ৫ই মে টাওয়ার হ্যামলেটস নির্বাচনে লেবার দলের মেয়র প্রার্থী জন বিগস, ভোটারদের উদ্দেশ্য প্রকাশ করেছেন তাঁর খোলা চিঠি৷ যা ব্রিকলেন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
প্রিয় বাসিন্দা,
নির্বাচনকে সামনে রেখে আপনি দুটি পছন্দের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।একটি হচ্ছে শক্তিশালী নেতৃত্ব। যার রয়েছে ইতিবাচক স্বপ্ন নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি।
অন্যটি হচ্ছে অতীতের বিশৃংখলা এবং নৈরাজ্যে ফিরে যাওয়া।
আর এজন্যই আমি আপনাদের আহবান জানাবো আমাদের অতীতের রেকর্ড এবং আমরা কি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা সতর্কতার সঙ্গে যাচাই করতে।
একমাত্র আমার পক্ষেই সম্ভব সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে টাওয়ার হ্যামলেটসের উন্নয়নের গতিধারাকে অব্যাহত রাখা, যাতে করে আমরা একে আরো বেশি বসবাসযোগ্য করে তুলতে পারি।
আমার নেতৃত্বে আপনারা সত্যিকারের উন্নয়ন দেখেছেন। ২০০০ কাউন্সিল বাড়ি, হাজার হাজার এফোর্ডেবল বাড়ী, স্কুলগুলোর ভাল ফলাফল, চাকুরীর সুযোগ সৃষ্টি, ওয়ার্কপাথ কর্মসূচির মাধ্যমে ট্রেনিং, ফ্রি স্কুল মিল, সরকারের অব্যাহত বাজেট কাটের বিপরীতে কাউন্সিল ট্যাক্স রিডাকশন স্কিম, কাউন্সিল ফান্ডেড পুলিশ অফিসার, তাদের সাথে কাজের মাধ্যমে ড্রাগ ডিলারদের জেলে বন্দি আরো অনেক কিছু।
আমরা আপনাদের জরুরী ফ্রন্ট লাইন সার্ভিসকে রক্ষা করেছি। রক্ষা করেছি আইডিয়া স্টোর, লাইব্রেরী, চিলন্ড্রেন সেন্টার, জিম, লেইজার সেন্টারগুলো। বিনিয়োগ করেছি এওয়ার্ড বিজয়ী পার্কগুলোতে।
গর্বের সাথে বলতে পারি গত ৩০ বছর ধরে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে বিভিন্নভাবে এই বারাকে আমি প্রতিনিধিত্ব করে চলেছি। এটি আমার জন্য একটি অনন্য সম্মান। টাওয়ার হ্যামলেটস রাজধানী লন্ডনের শ্রেষ্ঠ একটি বারা। এই রারার জন্য আমি গর্বিত। জাতী, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আমরা কাঁধে কাঁধ রেখে চলি। সত্যিকারের ঐক্যই এখানকার শক্তি। ৩ লাখের বেশী বাসিন্দা আর শত শত মিলিয়ন পাউন্ড বাজেটের এই বারা পরিচালনার জন্য তাই দরকার শক্তিশালী এবং সিরিয়াস নেতৃত্ব।
আমার দায়িত্বকালের একটা বড় সময় কেটেছে সাবেক মেয়রের ফেলে যাওয়া বিশৃংখলা দূর করতে। এর সাথে যোগ হয়েছে করোনা মহামারী, জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি আর টোরী সরকারের অব্যাহত ব্যয় সংকোচন। তারপরও আমরা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছি।
আমরা এই বারায় এমন মেয়রের কাছে ফিরে যেতে চাই না যিনি অতীতে টাওয়ার হ্যামলেটসের নামকে কালিমালিপ্ত করেছেন এবং এর ক্ষমতা কেড়ে নিতে দিয়েছেন। এই কাউন্সিলের করদাতা হিসেবে আমাদেরকেই মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে এর মূল্য দিতে হয়েছে।
মেয়র থাকা অবস্থায় কাউন্সিল মিটিংয়ে তিনি কোন প্রশ্নের উত্তর দিতেন না। তিনি ভোট জালিয়াতী মামলায় আদালত কর্তৃক দোষী সাবস্ত্য হয়েছেন। তিনি আগের একটি নির্বাচনে কারচুপি করেছেন এবং এই মামলার বিচারকের ভাষায় ‘তিনি সত্যবাদী নন, প্রশ্নের সরাসরি জবাব দিতে গিয়ে তিনি স্বভাবগত অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন বহুবার (He proved himself almost pathologically incapable of giving straight answer)’ । এসব কারনে তার সলিসিটির লাইসেন্স কেড়ে নেয়া হয়েছে। তিনি কখনোই কোন অপকর্মের দায় শিকার করেন না।
লুৎফুর রহমানের অধীনে আমরা একটা সন্দেহবাতিকগ্রস্থ এবং গোপন প্রশাসন পরিচালিত হতে দেখেছি। যখনই কোনো ভুল হয়েছে তিনি অন্য কারো ওপর দোষ চাপিয়েছেন। এটা কোন নেতৃত্ব বা নেতৃত্বের গুনাবলী হতে পারে না। এটা নিজেকে ভূক্তভোগী এবং অন্যকে বিপদে ফেলার রাজনীতি। এটি অনৈতিক।
ভুলে গেলে চলবে না যে, লুৎফুর রহমানের আমলে ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে আইনে যতদিন বেড অ্যান্ড ব্রেকফার্স্টে রাখা যায়, তার চাইতে অনেক দীর্ঘ সময় ধরে রাখা হতো। তাঁর আমলে কাউন্সিল ঘরের ভাড়া ছিলো অনেক বেশি, যাকে এখন আমি সত্যিকার অর্থে প্রকৃত সোশ্যাল রেন্টের সীমায় নিয়ে এসেছি।
তিনি ইয়ুথ সার্ভিস নিয়ে বেশ বড়াই করেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- তার ইয়ুথ সার্ভিসের অনেকগুলোই ছিলো কেবল কাগজে-কলমে। সেখানে মেয়েদের অংশগ্রহনের সুযোগ ছিলো নগণ্য। তিনি তার লিফলেটে সব বিষয়ে সংখ্যাকে বাড়িয়ে দেখাতে আগ্রহী। অতিরঞ্জনের মাধ্যমে অর্জনকে বড় করে দেখাতে ভালবাসেন তিনি। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন।
সাবেক মেয়র ভলান্টারি এবং কমিউনিটি সেক্টরগুলোকে এলোমেলো করে দিয়েছিলেন। তদন্তকারীরা নানা অনিয়ম আর বিশৃংখলার প্রমাণ পান। আবেদনই করেনি এমন অনেক সংগঠনকে দেয়া হয় গ্র্যান্ট! আমি পাবলিক অর্থ খরচের এই অনিয়মকে শৃংখলার মধ্যে এনেছি, কমিউনিটির কল্যানে ব্যয় করেছি এসব অর্থ। অন্যবারাগুলোতে যে সার্ভিস কাট হয়েছে সে সার্ভিস এখানে আমরা রক্ষা করতে পেরেছি।
টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দাদের সামনে এখন দুটি বিকল্প। রাজনীতির মূলধারার সঙ্গে থাকা। অথবা এক ব্যক্তি নির্ভর একটি দলের দিকে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। আমাদের দরকার একটি শক্তিশালী, বৈচিত্রপূর্ণ এবং মেধাবী টিম। আমাদের লেবার দলের প্রার্থীরা সেটারই প্রতিনিধিত্ব করেন। আমাদের সাথে আছেন রুশনারা আলী এবং আফসানা বেগম এমপি। আরো আছেন লন্ডন মেয়র। আমরা তাদের সাথে নিয়ে কাজ চালিয়ে যাব। আমাদের কমিউনিটির দরকার এরকম একটা ঐক্যবদ্ধ টিম যাতে আমরা ব্যয় সংকোচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারি এবং আমাদের নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে পারি।
আমার প্রশাসন অন্যান্য পার্টনারদের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করে গেছে। বাসিন্দাদের ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করার জন্য বিভিন্ন পাবলিক সার্ভিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ভলান্টারি এবং কমিউনিটি সেক্টরগুলোকে একসূত্রে গাঁথার জন্য মেয়র অফিস কাজ করেছে। আমরা জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারনে বাসিন্দাদের সহায়তার জন্য কাউন্সিল ট্যাক্সের একটা অংশ ফ্রিজ করেছি।
বারা থেকে বর্ণবাদী দাস ব্যবসায়ীর ভাস্কর্য অপসারণ থকে শুরু করে ব্ল্যাক এশিয়ান এন্ড মাইনোরিটি ইনইক্যুয়ালিটিস কমিশন গঠন করে আমরা সমতার মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করেছি। মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ড বঞ্চিত করার জন্য ডেভেলপারদের সাথে সরকারের বিলাসী ডিল রুখে দিয়েছি। আমরা বাসিন্দাদের সাথে থেকেছি।
টাওয়ার হ্যামলেটস একটি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই পটভূমিতে এর ঐতিহ্য রক্ষা আর উদযাপনের জন্য আমরা বাংলা টাউনের গেইটিকে সংস্কার করেছি, বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে ব্রিক লেইনে উন্মোচন করেছি বিশেষ ম্যুরাল, গুণী জনদের নামে প্রতিষ্টা করেছি কাউন্সিল ভবন, হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনের বাংলা নাম সংযোজনের খরচ বহন করেছি।
বাসিন্দারা যাতে মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেন এজন্য উচ্চাভিলাসী পরকিল্পনা নিয়ে এবারের মেনুফেস্টু সাজানো হয়েছে। আমরা ৫ হাজার বাসিন্দাকে চাকুরী অথবা ট্রেনিং দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছি। এছাড়া আরো ১২শ ৫০ জন এপ্রেন্টিসশিপসের সুযোগ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৪ হাজার ৫শ এফোর্ডেবল বাড়ী সরবরাহেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।
আমি প্রত্যেকটি ভোটের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি।সময়ের চাকাকে পিছনে ঘুরতে দেয়া যাবে না। যাতে করে টাওয়ার হ্যামলেটস আবারো খারাপ খবরের জন্য সংবাদ শিরোনাম হয়।
আসুন সেদিকে না গিয়ে মনোনিবেশ করি এর সেবাগুলোর দিকে। আসুন সকলে মিলে পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ এবং ন্যয়ভিত্তিক একটি বারা প্রতিষ্টার জন্য কাজ করি।
আমি সকলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই, জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারনে কষ্টে থাকা বাসিন্দাদের জন্য কাজ করতে চাই, আমাদের তরুণদের জীবনের শুরুটা সুন্দর করতে চাই।
আপনার পরিচয় যাই হোক না কেন জীবনমানের উন্নয়নের জন্য এই বারা থাকুক সবার জন্য উন্মুক্ত।
আসুন সকলে মিলে টাওয়ার হ্যামলেটসকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই।