নারীর ক্ষমতায়নে রাষ্ট্রের দায় আছে
সুব্রত দাশ খোকনঃ

আমাদের দেশে ইউনিয়ন পরিষদে, উপজেলা পরিষদে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন হয় কিন্তু সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়না। হওয়া উচিত, যতদ্রুত সম্ভব হওয়া উচিত। আমাদের সংসদের অর্ধেক সংসদ সদস্য যেনো নারীদের মধ্য থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে আসতে পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সরকারি বেসরকারি সকল চাকরিতে ৫০% নারীদের মধ্য থেকে নিতে হবে, নেওয়া উচিত।নারীদের নেতৃত্বে যদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয় তাহলে ১% সুদে বা ৫ বছর সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা নেয়া উচিত।প্রাইমারি থেকে পিএইচডি পর্যন্ত নারী শিক্ষার্থীদের জন্যে বৃত্তির ব্যবস্থা করেন।নারীদের পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকার পুরষের সমান নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব।
কথাটা খুব পরিষ্কার করে বলি যতভাবে সম্ভব নারীদের ক্ষমতায়ণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্রকে সেই দায়িত্ব পালন করা উচিত।
নারীদেরকে পূজা করতে রাজী থাকলে সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার দিতে আপত্তি নানানরকম। নানা অজুহাতে তা করা হয়না। এইটা পাপ এবং অপরাধ । নারীকে মানুষই যদি মনে করেন তাহলে সম্পত্তিতে সমানাধিকার নিশ্চিত করুন। ধর্মের দোহাই দিয়ে আর কতদিন এই প্রতারণা চালাবেন? এই প্রতারণার শিকার তো আপনার স্ত্রী মা বোন কন্যা সবাই হচ্ছে। আর নারীরাই বা তা কতদিন মেনে নিবেন?
মায়ের পায়ের নীচে অনেকের স্বর্গ, মায়ের ঋণ সুদ করতে না পারা নিয়ে কত গান কবিতা কিন্তু সেই মাকে সম্পত্তি দেবার বেলায় যত ধানাই পানাই। আর মা মানে সব নারীই ত আদতে মা কারো না কারো!
রাত ১২ টায় একজন নারী কেন একা হেটে যেতে পারেনা, এমনকি শহরে? রাত ১২ টায় বাদই দেন, রাত ৮ টায় কী পারে একা একা বের হতে? যদি বা কোন কারণে বের হয় তাহলে তার নিরাপত্তা নিয়ে পরিবার কী উদ্বিগ্ন থাকেনা?
আচ্ছা, শহরের কথা বাদই দেন। শহরে কেউ কাউকে চিনেনা। গ্রামে সবাই সবাইক চিনে। প্রায় সবাই কোননা কোনভাবে আত্মীয় পরিজন। সেই গ্রামে যে নারীপুরুষ সবাই দিনে একসাথে চলাফেরা করতে পারে, সেই একই গ্রামে রাতের বেলা একজন নারী কেন একা একা বের হতে ভয় পায়?
১৯৭১ সালে নারীদের উপর নেমে এসেছিল ভয়াবহ অত্যাচার নির্যাতন। স্বাধীনতা অর্জনে নারীদের অবদান পুরুষের চেয়ে কী কোন অংশে কম? ১৯৫২ সালের ভাষার জন্যে সংগ্রামী মিছিলের ছবিগুলোতে নারীরাও সেই আন্দোলনের অগ্রভাগেই ছিলো।
দেশ স্বাধীন। প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধীদলেত নেত্রী নারী। চাকরিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে, গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি পুরোটাই প্রায় চালাচ্ছেন নারীরা। নারীরা কর্মে সততার এবং সৃজনশীলতার সাক্ষর রেখে চলেছেন শুরু থেকেই।
২০২২ সালে নারী দিবসের তাই রাষ্ট্রের বহুমুখী উদ্যোগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া সবার দায়িত্ব। একইসাথে নিজের পরিবারের নারীদের সমান অধিকার নিশ্চিত করুণ। নিজের প্রাণাধিক প্রিয় কন্যার দোহাই লাগে, মেয়েকে এমনভাবে তৈরি হতে দিন যাতে করে আপনার মেয়েকে জায়গা করে দিতে আকাশকে আরেকটু উঁচুতে দাঁড়াতে হয়।
লেখক- আইনজীবী