ব্রিকলেন নিউজঃ চ্যারিটি সংগঠন জাস্ট হেল্প ফাউন্ডেশন ইউকে এর উদ্যোগে সিলেটের গোয়াইনঘাটে প্রতিষ্ঠিত চক্ষু হাসপাতালের জন্য অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি ক্রয় এবং চিকিৎসা সেবা প্রদান সহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহের জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
পূর্ব লন্ডনে এক প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে, আগামী ৯ রামাদান চ্যানেল এস টেলিভিশনে ‘জাস্ট হেল্প সিলেট প্রাইড রোটারি আই হসপিটাল’ এর চ্যারিটি আপিলে অর্থ সহায়তা করার জন্য কমিউনিটির প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন জাস্ট হেল্প ফাউন্ডেশন এর ফাউন্ডার চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, শেখ সুরত মিয়া আসাব, মোহাম্মদ আজাদ, তাজ চৌধুরী, শেখ শামসুল আলম, আবু সায়িদ চৌধুরী সাদি, সৈয়দ নাহাস পাশা, উদয় শংকর দাশ, মুসলেহ উদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ জুবায়ের প্রমুখ।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের শুরুতে জাস্ট হেল্প ফাউন্ডেশন এর ১৬তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে এর চেয়ারম্যান সাংবাদিক মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, জাষ্ট হেল্প ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে। আর চ্যারিটি রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত হয় ২০০৭ সালের মার্চ মাসে। ২০০৭ সালেই সিলেট শহরের মিরাবাজারের আগ পাড়া জামে মসজিদের জন্য আমরা সর্বপ্রথম লক্ষ টাকা অনুদান সংগ্রহ করে দিতে সমর্থ হই। যেটা ছিল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের জন্য কোন মসজিদের তহবিল সংগ্রহের জন্য প্রথম টেলিভিশন চ্যারিটি আপিল।
জনাব মিজান আরো জানান, ২০০৮ সালে বাংলাদেশে সিডর ও সাইক্লোনে আক্রান্ত মানুষদের জন্য আমরা খাদ্য, নগদ অর্থ সাহায্য ও বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েল প্রদান করেছিলাম বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরীর সহযোগিতায়।
২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত আমাদের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের মধ্যে ছিল অসহায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ, ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু শিহাব শাহরিয়ার ও কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত হাফেজ ইকবাল এর চিকিৎসা তহবিল সংগ্রহ, সিলেট জল্লারপাড় মসজিদ ও বোরহানউদ্দিন মাদ্রাসার জন্য তহবিল হস্তান্তর।এছাড়াও আমাদের চলমান সাহায্য হিসেবে অসচ্ছল ছাত্রদের আর্থিক অনুদান, বিধবাদের সেলাই মেশিন ও অসহায় পুরুষদের রিকশা প্রদান, রমজান মাসে খাবার ও শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত থাকে। আর ২০২০ সালে সাংবাদিক ইকবাল মনসুর এর চিকিৎসা সহযোগিতায় আমরা এগিয়ে এসেছিলাম।
সংবাদ সম্মেলনে চক্ষু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, “অন্ধজনে দেহ আলো” – এই স্লোগানে বিশ্বাসী হয়ে আমরা ২০১২ সালে ঠিক করি আমাদের প্রধান কার্যক্রম হবে সুন্দর এই পৃথিবীতে মানুষের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়া। এই উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে আমরা সিলেট শহর থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার অদূরে শিক্ষা ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর এলাকা গোয়াইনঘাটে নিজস্ব ভূমি ক্রয় করি। সেখানে আমরা নিজস্ব ভবনে একটি চক্ষু হাসপাতাল স্থাপনের জন্য চ্যারিটি ডিনার, টিভিতে আপিল ও ব্যক্তিগত চেষ্টায় তহবিল সংগ্রহ শুরু করা হয়।অবশেষে ২০১৩ সালে ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে কাজ শুরু করা হয়। ২০১৪ সালে হাসপাতালের প্রথম তলা ও ২০১৬ সালে দ্বিতীয় তলা নির্মাণ সম্পন্ন হয়। ২০১৭ সালের শুরুতে নিজস্ব ভবন থেকেই বিনামূল্যে সাধারণ স্বাস্থ্য সেবা ও স্বনামধন্য বার্ড হাসপাতালের সহযোগিতায় চক্ষু শিবির এর কার্যক্রম শুরু করা হয়।
“২০১৭ সালে টেইমসাইড রোটারি ও গ্লোবাল সলিউশন এর ৪ জন ডেলিগেট আমাদের হাসপাতাল ও কার্যক্রম পরিদর্শন করে অত্যন্ত খুশি হন। তাদের সাহায্যে ২০১৯ সালে আমরা উত্তর আমেরিকার রোটারি গ্লোবাল গ্র্যান্ট এর জন্য আবেদন করি। ৪টি ধাপে পর্যালোচনার মাধ্যমে অবশেষে ২০২১ সালে আমরা ১৪৩ হাজার ডলার হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ক্রয়, স্থাপনা ও প্রশিক্ষণ বাবদ পেতে সমর্থ হই। তাদের বরাদ্দের শর্ত অনুযায়ী হাসপাতালের নামকরণ করা হয় ‘জাস্ট হেল্প সিলেট প্রাইড রোটারি আই হসপিটাল’। বর্তমানে হাসপাতলে তিন দিন সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা ও দুই তিন মাস অন্তর অন্তর চক্ষু শিবির কার্যক্রম চালু আছে। ২০১৭ সাল থেকে প্রায় ছয় বছরে আনুমানিক ছয় হাজারের বেশি রোগীর স্বাস্থ্যসেবা ও ১৫৬০ জনের অন্ধত্ব দূরীকরণে আমরা সমর্থ হয়েছি।”
তিনি বলেন, আমাদের দানের ১০০% সেবা কার্যক্রমে ব্যয় হয়। কারণ ট্রাস্টিরা যাতায়াত, প্রশাসনিক খরচ, লিফলেট বা অন্যান্য খরচ দানের অর্থ থেকে ব্যয় না করে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ব্যয় করেন।
“হাসপাতালের নিজস্ব ভবন ও যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের বেতন এবং প্রতিদিনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অর্থ সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে” উল্লেখ করে জনাব মিজান বলেন, এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আসছে ৯ম রমজানে ‘চ্যানেল এস’ টেলিভিশনে একটি চ্যারিটি আপিলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সর্বস্তরের মানুষ আমাদের এই আপিলে সাড়া দিবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।